
মিনি কফি শপ। স্যুপ খেতে খেতে আশেপাশে চোখে চোখে চক্কর দেয়া আমার পুরোনো দুষ্টু অভ্যেস। হ্যানডু টাইপ দু-একটা ছেলে না দেখলে যেন কফি শপের বিল দেয়াই বৃথা। মনের ভেতর খচখচানি থেকেই যায়।
– পুস্পিতা, দেখ কি টসটসে,ফোলা ফোলা গোলাপী, খেতে ভালোই হবে কি বলিস!
-কি টসটসে গোলাপী, মিষ্টি?
দুটেবিল সামনের গোলাপী ঠোঁটের ছেলেটিকে দেখিয়ে ইশারা করতেই সে বুঝে গেল। ছি! আপু, ওয়াক বলে খেতে খেতে পুস্পিতা বমি করে দিল ।
তারপর চোখ লাল করে বকতে শুরু করলো – আপু তুমি কি কোনকালে ভালো হবা না? তোমার বয়স যতো বাড়ছে চরিত্র ততো লোপাটের দিকে যাচ্ছে।
– কাউকে দেখলেই চরিত্র যদি চলে যায় যাক, এমন চরিত্র দিয়ে করবোটা কি? তাছাড়া ছেলে তো দেখার জন্যই। না হলে ওই বৃথা চুলের মতোই–” ধ্যুত তেরী ছাই, লম্বা চুল দিয়ে হবেটা কি, যদি কারও শার্টের বোতামেই না আটকায়”! তো এ জীবন,,,,কথা শেষ হলো না।
– ছোট ছেলেদের নিয়েও বাজে কমেন্ট করবে? তোমার যথেষ্ট বয়স হয়ে গেছে সেদিকে খেয়াল আছে? সিগারেটও মাঝেমধ্যে সবার সামনেই খাও। এ বয়সে এসব মানায় বলো।
– বয়স আর সিগারেটের গায়ে কি লেখা আছে, মেয়ে এবং বেশি বয়সের জন্য গোপনে ধুম্রপান!
– অসহ্য,যা খুশি করো, আমার কি?
আমি আর কোন জবাব ছাড়াই মনোযোগ দিয়ে খাওয়া শেষ করলাম।
ঢেকুর তুলে বললাম, – কফি শপে গান না থাকলে খাওয়া যেন ঠিকঠাক জমে না। কেমন যেন পানসে, চিমসেপরা লাগে। কানের কাছে কিছু একটা বাজলে তবেই মনে হয় আরাম করে খেলাম।
এতক্ষনে সে বুঝে ফেলে রেগে গিয়ে সামনের টিসু বক্স তুলে আমাকে মারা শুরু করল। সামনে রাখা পানির বোতল মারতে গিয়ে ফেলে দিল। আর লোকজন তখন আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে। এসবের জন্য বেশ কবার আমাদের বেরও করে দিয়েছিল। এটা পরিচিত কফি শপ বলে রক্ষা।
পুস্পিতা রাগে ঘামছে দেখে আমি বললাম,- তারাতারী খাবার শেষ কর, বাসায় যেতে হবে তো।
– এখনি কেন? কেবল তো সন্ধ্যাও হয়নি। তার মানে আমাকে ভাগিয়ে তুমি ওই গোলাপীর সাথে যাবা।
– কি করবো বল! কাউকে না কাউকে তো লাগেই!
তিনি আবার লেকচার শুরু করলেন – একটু বাদে নিশ্চয়ই সিগারেট ধরাবা। বলেছিলাম দিনে তিনটার বেশি সিগারেট খাবে না, অথচ তিনপ্যাকেট খাও। সামান্য ঘাটতি কোন জীবনে থাকেনা বলো, তা বলে এসব। আন্টিমনি জানলে কি হবে জানো? হার্ট এটাক করে মারা যাবে। অসহ্য লাগে তোমাকে, কেন যে আসি।
– অসহ্য লাগলে আর আসিস না। আর খাওয়া শেষ করে অনেকক্ষণ আগেই সেই ছেলে উধাও হয়েছে। টেনশানের কিছু নেই।
তবুও পুস্পিতা ঘামতে থাকে আমাকে নিয়ে। আর আমি দুচোখ ভরে তার ভালোবাসায় ঘেমে উঠি।
পুস্পিতা, আমার কাজিন। আমার থেকে ছ’বছরের ছোট। তবুও তিনি সবসময় ভাবেসাবে মা মা। সারাক্ষণ মায়ের মতো শাসন করেন আমাকে। আমি ভুল না করলেও মাথা পেতে নেই। মনে মনে অবশ্য হাসি তার এসবে। কিন্তু কিছুই বলি না। এনজয় করি।
চাকুরীর সুবাদে আমাদের একই শহরে বসবাস। আমি বাউন্ডুলে মানুষ, খুব কাজ থাকে না তাই হাতে অঢেল সময়। তবে অঢেল সময় কাটাবার জন্য বন্ধু- বান্ধব নেই। কারন আমার যারা বন্ধু ছিল তারা আজ প্রজাতন্ত্রের অনেক উপরে চড়ে বসে গেছে। আমার মতো রান্নার রেসিপি বিক্রি করে কেউ জীবন চালায় না।
এদিকে পুস্পিতা সাকসেস। সে সরকারী কলেজে পড়ায়, ভালো শিক্ষক হিসেবে নাম- ডাক বেশ। তাছাড়া একজন পরিপূর্ন নারীর যতোসব ভালো গুন সবই তার আছে। বন্ধু- বান্ধব সব ঢাকায় ফেলে এসে এখানে একা। আর এজন্যই বোধহয় সে আমাকে ছাড়তে পারে না।
প্রায় সকল বিকেল আমাদের একসাথেই কাটে। অন্যান্য কাজের পরের বরাদ্দ সময়টুকু নদীর পাড় আর রেস্টুরেন্ট চষে বেড়ানোই আমাদের সফল উদ্দেশ্য।
সাতসকালে বাজারের উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছি, নতুন রেসিপি মাথায় এসেছে তার ইনগ্রিডিয়েন্স কিনতে হবে। এ সময় পুস্পিতা আমাকে ফোন দিয়ে প্রায় তুলে নিয়ে চলে গেল। তার কলেজে আজ নাকি কোন প্রোগ্রাম।
একেবারে ফেস্টিভ মুডের সাজগোজ। পুস্পিতা আজ পরেছে কাঁথাবুটিকের শাড়ি। সাথে ম্যাচিং গ্রামীন চেকের ব্লাউজ, গলায় স্টোনের মালা, কপালে টিপ। দারুন লাগছ।
তার সাথে আমাকে বড্ড বেখাপ্পা লাগছিল। একেবারে বেমানান মরি মরি একটা অবস্থা। পোশাক তো রীতিমতো লবডঙ্কা টাইপ। তিনশ টাকার জিনস আর পাঁচশ টাকার লং শার্ট। শীতকাল তাই চাদর ছিল গায়ে।
আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল। তার কলিগরা কয়েকজন আগাগোড়া অবজার্ভ করলো। তাদের চোখের ভাষা বলছে- তোর কি পোশাক সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই। এর চেয়ে বরং বস্তা গায়ে চলে আসতি।
ভোট শেষ, পুস্পিতাদের দল জিতে গেল। সবাই হৈ হৈ করে হোটেলে খেতে চলে এলো। এতোক্ষনে পুস্পিতা একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল যিনি ভোটে জিতে গেছেন। খেয়াল করলাম, পুস্পিতা তার সাথে কথা বলতে সামান্য লাল হয়ে যাচ্ছ। তবে এ ভদ্রলোককে অনেকবারই তার ফেবুতে দেখেছি। তখন তাদের স্পেশালিটি কোনকিছু চোখে না পরলেও, আজ স্পেশাল বলেই মনে হল।
ছবিতে অতোটা ভালো লাগেনি। ছবির চেয়ে সামনা- সামনি ভদ্রলোককে কিছুটা ভালো লাগছে। একটু বেশিই কালো। ছেলে- মেয়ে দুটোই কালোতে সবাইকে মানায় না।
নোটিশ করলাম, ভদ্রলোক কোন কারন ছাড়াই পুস্পিতাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছেন আর আমরা দুটেবিল পরে হলেও মুখোমুখি বসা দুজনেই একে অপরকে দুর থেকেই গোগ্রাসে গিলছে। বুঝতে বাকি রইলো না বোন আমার প্রেমে পড়েছে। আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন আতঙ্কে ভরে উঠল। আমি আর কোন কথাই বলতে পারলাম না। আর আমার আতঙ্কের সবচেয়ে বড় কারন হলো ছেলে বিবাহিত এবং দু- বাচ্চার বাবা।
চলবে—
ছবি- নেটের।
১৬টি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। শুভ রাত্রি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অশেষ কৃতজ্ঞতা আপা। এতো ব্যস্ততায়ও পড়েন এতে অনুপ্রাণিত হই। ভালোবাসা জানবেন 🥰
সঞ্জয় মালাকার
পড়ে মুগ্ধ হলাম,
ভালো লাগলো খুব, ভালো থাকবেন শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কৃতজ্ঞতা দাদা।
ভালো থাকবেন।
আলমগীর সরকার লিটন
আসলে গল্প লেখা হয়ে উঠে না তারপরও একটু ভাবি গল্প লিখবো
যাক অনেক শুভেচ্ছা রইল আপু————
রোকসানা খন্দকার রুকু
লিখে ফেলুন। আশেপাশে যা আছে জড়িয়ে নিলেই কিছু একটা হয়।।।
আলমগীর সরকার লিটন
গল্প লেখতে অনেক সময় লাগে
এই সময়গুলো হয়ে উঠে না—–
রেজওয়ানা কবির
দুই বোনের খুনশুটিময় সময় কাটে ব্যাপারটা ভালো লাগল। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
থাকুন! কাল দেবো, আজ হাত ব্যথা।।।ভালো থাকবেন।।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
শেষে তো মনে হলো বিপদজনক প্রেম
চলতি সভ্যতার এ যেন গেম!
পরের পর্বের আশায় রইলাম আপু।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কৃতজ্ঞতা ভাই 🌹
নার্গিস রশিদ
পড়ের পর্বের আশায় থাকলাম। শুভ কামনা ।
নার্গিস রশিদ
দুঃখিত ‘পরের’
রোকসানা খন্দকার রুকু
লেখা জমা দেবার জন্য একটু ঠিকঠাক করছিলাম। দুষ্ট ছেলে পাশে খেলছিল। এ ফোনটা নাকি তার, টানাটানি করতে গিয়ে হয়ে গেল ডিলিট। পুরোটা লিখতে কি যে কষ্ট, তাও আগের মতো উঠছেও না। দুঃখিত দেরী হবার জন্য😭😭
হালিম নজরুল
এটা গল্প? নাকি সত্যি ঘটনা। চমৎকার উপস্থাপন। ভাল লেগেছে। আগামীতেও ভাল লাগবে, সেই প্রত্যাশায় রইলাম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
জী ভাই, ছেলে লেখাটা ডিলিট করে ফেলেছে তাই পরপর দিতে পারিনি। দিয়ে দেব। কৃতজ্ঞতা অশেষ 🌹