তোমার আর আমার ব্যাপারটা নিয়ে অনেকদিন ধরে লিখব ভাবছিলাম । কিন্তু বার বারই মনে হচ্ছিল লিখে কি হবে?? তারপরও লিখতে ইচ্ছা করছে । তাই লিখেও ফেললাম। আবার পোস্ট ও করে দিলাম । আমি জানি তুমি এই লেখা পড়বে না ।আমার পরিচিত কেউও পড়বে না । যারা আমাদের ঘটনা শুনতে আগ্রহী তারাও পড়বে না ।কয়েকজন অপরিচিত মানুষ, যাদের সাথে কোনদিনই হয়ত দেখা হবে না তারা হয়ত পড়বে । তারা হয়ত জানবে তেলের সাথে জলের সম্পর্কের কথা । কেউ হয়ত কষ্ট পাবে । কেউ আবার মনে মনে ভাববে এরকমই হওয়া উচিৎ হয়েছে ।
তোমার সাথে আমার প্রেমটা কিভাবে হল ?? এই প্রশ্ন পরিচিতদের কাছে অনেক বার শুনতে হয়েছে,আবার জবাবও দিতে হয়েছে । এমনকি আমার পরিবারের কাছেও জবাব দিতে হয়েছে । এক এক জনের কাছে এক এক ধরনের গল্প বলেছি । কারো কাছে বলেছি মিসকলের মাধ্যমে পরিচয় । কারো কাছে বলেছি তুমি আমার ছাত্রি ছিলে । কারো কাছে বলেছি বাংলা ছিনেমার গল্প,এক ধাক্কায় প্রেম।যে যেটা হজম করতে পেরেছে তাকে তাইই খাইয়েছি ।
তবে আসলে তোমার আর আমার প্রেমটা কিভাবে হল তা কি আমরা নিজেরাই জানি!!মনে হয় না । দুইজন দুই পৃথিবীর মানুষ । তুমি ভালো ছাত্রি,ভালো নাচতে পারো,সামাজিকভাবে নম্র-ভদ্র,ধর্মভীরু,গৃহকর্মনিপুণা,স্মার্ট,সুন্দরী,ফ্যাশান সচেতন— এক কথায় যাদের লক্ষ্মী এবং আধুনিকা মেয়ে বলা হয় তুমি তাদের দল ভুক্ত । আর আমি ঠিক তার উলট। পড়াশুনায় ভালো না, সামাজিকভাবে ফাজিল ধরনের,নাস্তিক,খ্যাঁত, আনস্মার্ট, ফ্যাশান কি তাইই বুঝি না,বিড়ি খাই,কৈশোরে বন্ধুরা মিলে মারামারিও করেছি,আধ পাগলা—– এক কথায় যাদের হাফ বখাটে বলা হয় আমি তাদের দল ভুক্ত ।কিন্তু তারপরও প্রেম হল, শেষ পর্যন্ত আমার সাথে তোমারই প্রেম হল ।যাকগে সেসব কথা । কিন্তু কিভাবে হল সে প্রসঙ্গে আসি ।
সেদিন ছিল ১১ ই ফেব্রুয়ারি ।স্বরসতী পূজার দিন ।২০০৫ সাল । আমি পুরোপুরি এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি । বাসা থেকে বের হইনা।৩ জন শিক্ষক বাসায় পড়াতে আসেন । সারাদিনই লেখা পড়া নিয়ে থাকি । যেহেতু তখনও পুরোপুরি নাস্তিক হতে পারি নি তাই পুজা উপলক্ষে একটা ব্রেক নিয়েছিলাম।প্রতিবারের মত সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে স্কুলে গেলাম প্রসাদ প্যাকেট করার নামে মিষ্টি খাওয়ার লোভে।খেয়েদেয়ে অঞ্জলি দিয়ে গেলাম পিসির বাসায়,পূজার দাওয়াত খেতে ।পুজা শেষ হয়ে গেছে তাই বাড়ি প্রায় ফাকা।বসার ঘরে আমি আর আমার বড় পিসতুতো বোন বসে গল্প করছিলাম ,এর মধ্যে মেজ বোনটা এসে বলল “দাদা আমার অনেকগুলা বান্ধবী এসেছে,চল তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই” । ফাজিল হলেও মেয়েদের সামনে যেতে খুব ভয় লাগত । তাই ইতস্তত করছিলাম, কিন্তু এতগুলো মেয়ের সাথে পরিচিত হওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না।গেলাম পরিচিত হতে । মোট পাঁচটা মেয়ে ।তুমি আর তোমার মামাতো বোন ছাড়া সবার নাম এখন ভুলে গেছি ।৫ জনের মধ্যে ৪ জনের সাথেই বেশ কথা হল । কিন্তু কথা হল না শুধু তোমার সাথে । তুমি ছাড়া বাকি চারজনই ছিল স্বাভাবিক ও সতস্ফুর্ত । কিন্তু তোমাকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল তুমি যথেষ্ট বিব্রত আমার উপস্থিতর জন্য । সবাই অনেক কথা বলল,অনেক গল্প করলাম, এক সাথে দুপুরের খাবার খেলাম শুধু তোমার সাথেই কোন কথা হল না । At last তোমাকে আর তোমার মামাতো বোনকে রিকশায় তুলে দিতেও আমি গেলাম । তোমার মামাতো বোন আমার ফোন নম্বর টা চাইল, দিয়েও দিলাম । জদিও নিজের ফোন ছিল না,বাসার ফোনটা ভাব দেয়ার জন্য এনেছিলাম । বেশ রোমাঞ্চ অনুভূত হল।একটা মেয়ে আমার নম্বর নিয়েছে ,ফোনে কথা হবে —-আহা ।
প্রথম দেখায় তোমার ব্যাপারে যে ধারনা হয়েছিল সেটা বলি———- “তোমাকে দেখলেই নিষ্পাপ মনে হয়,কেন জানি মনে হয় তুমি কোন পাপই করতে পারো না । তোমার জগত সংসার সম্বন্ধে কোন ধারনা নেই । তুমি কোন ধরনের শয়তানি,ফাজলামি করতেই পারো না।তুমি কথা খুব কম বল এবং তুমি খুবই লাজুক” । এককথায় যাকে বলা যায় বলদ(ছেলেদের ক্ষেত্রে)।আর এধরনের ছেলে এবং মেয়ে আমার দুই চোখের বিষ ছিল তখন । স্কুলে এদের নাজেহাল করে আমি আর আমার বন্ধু নিয়াজ অনেক মজা করেছি , এখনও সুজোগ পেলে করি ।
যাহোক তোমার সুপার স্মার্ট মামাতো বোনের সাথে বেশ কয়েকবার ফোনে কথা হল । ২/১ বার মনে হয় দেখাও করলাম । কিন্তু বেরসিক কল রেট ও আমাদের শহরে ডেট করার জায়গার অভাবে ঠিক জমল না । পরীক্ষা হয়ে গেল। আমি আবারও ছন্নছাড়া হয়ে গেলাম । ধিরে ধিরে তোমার ও তোমার মামাতো বোনের কথাও ভুলে গেলাম ।
চলবে…………
১৬টি মন্তব্য
যাযাবর
ভালো লেগেছে । পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম । ইংরেজী লেখাগুলো কিসের ?
"বাইরনিক শুভ্র"
ভাই নেট প্রবলেম এর জন্য কিছু ইংরেজি ঢুঁকে গিয়েছিল । লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
জিসান শা ইকরাম
দারুন লাগলো । জমজমাট কাহিনী ।
এস এস সি তে বসেই প্রেম ডেটিং ? 🙂
"বাইরনিক শুভ্র"
ভাই এখন প্রেম বা ডেট বলতে যা বুঝি তখন তা বুঝতাম না । প্রেম তো করি নাই। আর ডেট বলতে তাহার মামাতো বোনের সাথে রাস্তা দিয়ে ভয়ে ভয়ে হেঁটে যাওয়া ।
বনলতা সেন
সত্যি কাহিনি ? কিশোর প্রেম ।
"বাইরনিক শুভ্র"
সত্যি না মিথ্যা তা বলব না । 😛
ছাইরাছ হেলাল
স্বপ্নময় কৈশোর স্মৃতিচারণ ভাল হয়েছে ।
"বাইরনিক শুভ্র"
ধন্যবাদ ।
আদিব আদ্নান
এখনই পরের পর্ব পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে ।
"বাইরনিক শুভ্র"
🙂 ।পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
প্রজন্ম ৭১
আপনার লেখার স্টাইলটি বেশ ভালো । লিখতে থাকুন ভাই। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
"বাইরনিক শুভ্র"
ধন্যবাদ।
বেল পাকলে কাকের কি
ভারতিও সিরিয়ালের মতন একটা উৎকণ্ঠা না দিলেও পারতেন। পুরটা সোনার ইছা আরও বেঁড়ে গেল।
"বাইরনিক শুভ্র"
আসলে তাকে নিয়ে হাজার হাজার ঘটনা আর লক্ষ কোটি স্মৃতি মগজে জমা আছে । তাই মেগা সিরিয়ালের মত একটু লম্বা হবেই ।
লীলাবতী
একটি সুন্দর প্রেমের শুরু এখানে । দেখি কোথায় যায় এটি ?
"বাইরনিক শুভ্র"
ধন্যবাদ। পড়ার জন্য ।