আমি ব্যক্তিগতভাবে কোণ মানুষকে আদর্শ ধরা বা দেবজ্ঞানে পূজো করায় মোটেও বিশ্বাসী না। কিন্তু তাজউদ্দিনের কথা আমি যখনই ভাবি তখনই মনে হয়যে এমন একটা অকৃতজ্ঞ জাতির মানুষ আমরা যারা এই মানুষটাকে তার প্রাপ্য সম্মান তো দুরের কথা, কুকুরের মত মেরেও ক্ষান্ত দেইনি। খুনীদের রাজকীয় সম্মান দিয়েছি। আইন করে বিচার নিষিদ্ধ করেছি। কোন ধর্ম বা নৈতিকতায় এমন আচরন জাষ্টিফাই করা যায়?

এই তাজউদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস কলকাতায় থাকা অবস্থায় একই শহরে নিজের পরিবারের সাথে দেখা করেছেন মাত্র হাতে গোনা কয়েকবার। তার সমগ্রধ্যান জ্ঞান ছিল শুধু বাংলাদেশ। ২৫শে মার্চ রাতেই তিনি স্ত্রী দুধের বাচ্চাদের আল্লাহর হাতে সমর্পন করে ভারতের পথে পালিয়ে যান। এরবেশ কয়েকদিন পর আবার পরিবারের সাথে নানান ঘাত প্রতিঘাতের পরদেখা হয় কলকাতায়। কিন্তু তিনি ৫ মিনিটের বেশী সেই সাক্ষাতে ব্যায়
করেননি। প্রিয় কন্যাদের শুধু ভাল থেকো বলেই চলে যান কর্তব্যে।

এমনও দিন গেছে তিনি একই বিল্ডিং এ থাকা দলের অন্য নেতার সাথে দেখা করতে গেছেন, কিন্তু নিজ পরিবারের সাথে দেখা না করেই ফিরে এসেছেন। দুধের ছেলে, ছোট ছোট মেয়ে সবার থেকে বড় করে দেখেছেন নিজ দেশ। কারন ১৭ইএপ্রিল মুজিব নগরসরকার প্রতিষ্ঠার পর তারা চার নেতা প্রতিজ্ঞা করেছেন যতদিন না দেশ স্বাধীন হবে ততদিন তারা পারিবারিক জীবন যাপন করবেন না। অক্ষরে অক্ষরে কথা রেখেছেন এইমানুষটি। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটা রাত যে অল্প কিছুক্ষন ঘুমাতেন থাকতেন থিয়েটার রোডের নিজের অফিসেই । এমনমানুষ কয়জন হতে পারে?

একবার তার স্ত্রী অন্যলোক মারফতখবরপান তিনি খুব অসূস্থ, অধিক পরিশ্রমে পুরনো ডায়াবেটিক বেশ ভোগাচ্ছে। তিনি ছুটে গেলেন তার অফিসে মেয়েদের নিয়ে। দেখলেন তিনি তার অফিসে নেই, জ্বর নিয়ে বাথরুমে কাপড় কাচছেন। জামা তো মোটে দুটি। পরদিন আবার টেড কেনেডীকে নিয়ে রনাংগনে যাবেন, তাই জ্বরের সূযোগে শার্ট কেচে নিচ্ছেন।

যুদ্ধের সময় ঈদের দিন ভারত সরকারের কেউ তার অফিসে একঝুড়ি ফল উপহার দিয়েছিল, তার পরিবার তখন এক পেটা আধা পেটা খেয়ে দিন চালাচ্ছে। তিনি একটি ফলও নিজ বাড়িতে পাঠাননি, পুরো ঝুড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন ফ্রন্টে প্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ছেলেদের জন্য।

কলকাতা সময় তখন ঢাকা থেকে আধা ঘন্টা পেছনে। এইমহান লোকটি তার প্রিয় মাতৃভূমির সম্মানে পুরো নমাস নিজের হাতঘড়িতে ঢাকার সময়ই রেখে দিয়েছিলেন, ভারতীয় সময় বদলাননি।

এমন মানুষের জন্য পৃথিবীর কোন ভাষায় উপযুক্ত কোন অভিধা আছে বলে আমার জানা নেই, তাই তাকে শুধু দেশপ্রেমিক মহান এসব বলে ছোট করতে চাই না। অথচএই লোকটিকেও আমাদেরই দেশের বেশ কিছু লোকে বলে বেড়ায় ভারতের দালাল, সেক্যুলার নাস্তিক হেনতেন। এই দূঃখ রাখি কোথায়? কুলাংগার সন্তান কাকে বলে?

তার নিজের বাক্যই আমরা সত্য প্রমান করেছিঃ “মুছে যাক আমার নাম, বেচে থাক বাংলাদেশ”।

তার যুদ্ধকালের সহকর্মীদে তিনি বলতেনঃ “আসুন আমরা এমনভাবে কাজ করি ভবিষ্যতে যখন ঐতিহাসিকরা বাংলাদেশের ইতিহাস রচণা করবে তখন যেন আমাদের খুজে পেতে কষ্ট হয়”।

৪৮৩জন ৪৮৩জন
0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ