সেহেরীর সময় মা সবাইকে ডেকে তুলে নাবিলের রুমে এসে দেখলো নাবিল সোফায় বসে আছে চোখ বন্ধ করে। মা এসেই জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে বাবা?
– মা আসছো? বসো। সবাই উঠছে?
– তোর বাবা উঠছেন অর্ক উঠবে না বললো কতবার ডাকলাম উঠলোই না। যা তুই ফ্রেশ হয়ে টেবিলে আয়।
-আচ্ছা মা তুমিও ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসো আমি অর্ককে নিয়ে আসছি।
– উঠবে বলে মনে হয় না। তাও দেখুঠে নাকি! বললাম আজ তো ২৭ রমজান আর কয়টা ই বা রোজা আছে শুনলোই না কথা। আচ্ছা আয় তোরা আমি ভাত বারি গিয়ে। বলেই মা উঠে চলে গেলেন। নাবিল ও ওয়াশরুমে ঢুকলো। ফ্রেশ হয়ে অর্কের রুমের দিকে যেতেই নাবিল গাঁজার গন্ধ পেলো। বুঝতে বাকিরইলো না এ কাঞ্চনের কাজ। অর্ককে ডেকে তুলে নাবিল খাবার রুমে গেল। অর্ক ও পিছু পিছু এলো। টেবিলে সবাই আছে কাঞ্চন ছাড়া। নাবিল মাকে জিজ্ঞাসা করলো কাঞ্চন কোথায়? মা বললো কাঞ্চন রোজা রাখে না। শুনেছি হাবিজাবি খায় সারাদিন নেশা-আড্ডার মধ্যে থাকে। তোর কাকা যদি কিছু বলে তাহলে মারতে আসে। খারাপ ই লাগে মাঝে মাঝে। তোর কাকিও অসুস্থ হয়ে গেছে ছেলেটার জন্য। এমন সময় বাবা বলে উঠলো খেতে দিবা ঠিক মত নাকি ঘেনর ঘেনর করবা এইগুলা নিয়ে। কত্তবার বলেছি এইগুলা বাসায় আলোচনা না করতে কিন্তু কথা ই শুনো না।
আচ্ছা বাবা আর কোনোদিন বাসায় কথা হবে না এইগুলা নিয়ে কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে একদিন কাকাকে রাস্তায় বসতে হবে। তোমার ই তো ভাইয়ের ছেলে তাই না?
-বাদ দে, খা তো আজানের সময় হয়ে গেল।
আচ্ছা বাবা বলেই সবাই খাওয়ায় মনযোগ দিলো। এমন সময় সাদ থেকে কাঞ্চন নিচে নেমে এসে দেখলো সবাই সেহেরী করছে। এটা দেখে সে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো! বললো বাহ্ আমাকে ছাড়াই সবাই খেতে বসে পরছো ভালই তো, ছেলে ফিরে আসছে এখন আর আমাকে দরকার কেন?
নাবিল উঠে গিয়ে কাঞ্চনের হাত ধরে নিয়ে বসাতে বসাতে বললো কি সমস্যা তোর কি হয়েছে?
– কিছু হয় নাই। তোরে না বলছি আমাকে আপনি করে বলতে? তুই তুকারি করছিস কেন? উত্তর না দিয়ে নাবিল বললো নেভাত খা, রোজা রাখবি? কাঞ্চন উত্তর না দিয়ে টেবিল থেকে উঠে গেল।
সবাই খাওয়া শেষ করেযে যার রুমে চলে গেল শুধু বাবা আর নাবিল বাদে। বানা নাবিলকে বললো
– নামাজে জাবি?
– হ্যা বাবা যাবো।
– অযু করে রেডি হয়ে আয় আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি।
– আচ্ছা বাবা বলে নাবিল একটা সিগারেট নিয়ে সাদে চলে গেল। একটু পরে নিচে এসে ওযু করে পাঞ্জাবী পড়ে বাহিরে গেল। ঠিক তখন ই ফজরের আজান দিচ্ছে। বাপ ছেলে বাসার নিচে নামতে নামতে নাবিল বাবাকে বললো চলো বাইকে যাই। বাবা বললো মসজিদে হেটে যাওয়া ই উত্তম।
আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে চলো হেটেই যাই। নামাজ শেষে বাবা নাবিক কে বললো একটু বোস কথা আছে তোর সাথে বলেই বাবা উঠে কোথায় যেন চলে গেল। নাবিল ভেবে পেল না বাবা কি বলতে চায়। একটু পরে বাবা ফিরে এসে বসলো নাবিলের পাশে।
– কিরে কি চিন্তা করছিস?
– এই হঠাৎ কী বলার জন্য বসাইলা তাই চিন্তা করতেছিলাম।
– না তেমন কিছু না জাস্ট বলতে চাচ্ছিলাম তোর গ্যাং, মারামারি সব বাদ দিয়ে দিবি। কি দিবি তো?
– জি দিবো।
– আর একটা কথা কোনো নেশা করিস?
– গাঁজা-সিগারেট খাই। গাঁজা-টা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেছি।
– পারলে সিগারেট টা ও ছেড়ে দিস।
– হুম চেষ্টা করবো। আর কিছু বলবা বাবা?
– হুম বলবো, কেন চলে বাসায় যেতে চাস?
– না একটু ওয়াশ রুমে যাবো, আচ্ছা বসো আসতেছি। বলেই নাবিল ওয়াশরুমের দিকে গেল। একটু পরেই ফিরে এসে দেখলো বাবা ইমামের সাথে কথা বলছেন, অনেক ইয়ং ইমাম বয়স ৩২-৩৫ ের বেশি হবে না। তাঁরা কথা বলছে দেখে একটু দুরে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শেষ হবার অপেক্ষায় রইলো। ইমাম নাবিলকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো ভাই আপনি এখানে? আসেন পরিচয় করিয়ে দেই উনি… নাবিল ইমামের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো উনি আমার বাবা। ইমাম মনে হলো যেন তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছে, মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরেছে।
কি হলো ইমাম সাহেব নাবিলের সাথে কি কথা বলেন? আগে থেকে চিনেন নাকি ওকে? দূর থেকেই বাবা জিজ্ঞাসা করলো।
নাবিল বাবার কাছে এসে বললো চলো বাবা বাসায় যাই তাহলে। শোন নাবিল ইনি এই মসজিদের ইমাম। অনেক ভাল লোক আগের ইমাম টা ছিলো বজ্জাতের হাড্ডি।আমরা সবাই চাচ্ছিলাম ওই ব্যাটা চলে যাক ইনাকেই ইমাম বানাবো কিন্তু ব্যাটা কোনোভাবে তো যাচ্ছিলোই না বরং ইনাকে জালাতন করতো। তারপর হঠাৎ একদিন কারা যেন এসে আগের ইমাম কে বের করে দিয়ে ইনাকে ইমাম করে। যেমন কুকুর তেমন মুগুর।
নাবিল মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলো কি ইমাম সাহেবকারা ছিলো আগের ইমামের উচ্ছেদের মুলে? নাবিল ইমাম কে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বাবার হাত ধরে হাটতে হাটতে বললো চলো তো বাবা বুঝলাম তো সবই।
– আমার কথা শেষ হয়নি নাবিল! আর ও একটা কথা জিজ্ঞাসা করার ছিলো!!
– জানি তো কি জিজ্ঞাসা করবা। যাও ওইটা ও ডান।
– আমি তো জিজ্ঞাসা ই করলাম না তুই কি ডান করলি?
– বাইক টা বেচে দিতে বলবা জানি, তাই বলে দিয়েছি ডান, বেচে পুরা টাকা ই স্কুলে টা দিয়ে দিবো বাসায় আসার আগেই চিন্তা করে রেখেছিলাম। স্কুলের অনেক কিছু কেনা বাকি আছে বাবা।
– কিভাবে বুঝলি তুই বাইকের কথা ই বলবো?
-তোমার চোখ ই বলে দিয়েছে মসজিদে আসার সময় যখন বাইকে আসার কথা বলছিলাম তখন।
– নাবিল! না বলতেও তুই অনেক কিছুই বুঝিস, নিজের ভালটা বুঝিস না ক্যান।
– আবার পড়াশুনা শুরু করবি নাবিল ?
আনমনে নাবিল চিন্তা করে হুম আবার পড়াশুনা টা শুরু করা উচিৎ। কিন্তু বাবাকে কিচ্ছু বলে না। চুপচাপ বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে স্কুলে যাওার জন্য রেডি হয়। এমন সময় মা নাবিলের দরজায় করা নেরে রুমে ঢুকেই বলে কোথায় যাচ্ছিস বাবা?
– মা আসো! তোমার কথা ই চিন্তা করতেছিলাম একটু বাহিয়ে যাবো বাইকটা বেচে দিবো তাই এক জন দেখতে আসছে পছন্দ হলে আজকেই নিয়ে যাবে টাকা দিয়ে।
– কেন বাবা বাইক বেচবি? কোনো সমস্যা?
– না মা আমার তো বাইক দরকার নেই তা ছাড়া বাড়িতেই তো আছি আর এখানেই থাকবো। যদি কিছু টাকা দিয়ে স্কুলে একটু সাহায্য করা যায় ক্ষতি কি বলেই হেসে দিলো নাবিল। মা জানে এই হাসির পেছনে অনেক কষ্ট লুকিয়ে আছে। নিশ্চয়ই নাবিলের বাবা কিছু বলেছে না হলে বেছবে কেন এই ভাবতে ভাবতে মা বলে আচ্ছা বেচে দে দরকার হলে পড়ে আরও সুন্দর বাইক কিনে দিবোনে।
গল্পের সকল স্থান, নাম ও চরিত্র কাল্পনিক কিন্তু গ্রাম-বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে অতি সাধারণ ঘটনা, কারো সাথে মিলে গেলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন”
চলবে…
৮টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যাঁ ভাল লাগ্লছে চালিয়ে যান সঙ্গে আছি।
রেজওয়ান
ধন্যবাদ ভাই পাশে থাকার জন্য (3
মোঃ মজিবর রহমান
শুভেচ্ছা রইলো। -{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
জীবন ভিত্তিক লেখা খুব ভাল লাগল। -{@
রেজওয়ান
দোয়া করবেন আপি -{@
রেজওয়ান
#ভাই :p
শুন্য শুন্যালয়
প্রথম পর্ব থেকে পড়ে তারপর জানাবো ভাই।
রেজওয়ান
অপেক্ষায় রইলাম (3