চৈত্রের কাঠফাঁটা রৌদ্রে কাজ কারাটা যে কতোটা কঠিন. তা একমাত্র ভুক্তভুগিই ভালো বলতে পারবে। খানিক পূর্বে ব্যাবোহারিত নলকূপ থেকে চুইয়ে পরার মতই, নোনতা জল জরছে শরীর থেকে। রৌদ্রের তাপ এতটাই প্রখর সামনে তাকিয়ে থাকা দায়। বুকের ভেতরটাও ধুকধুক করছে, এইবুঝি বেরিয়ে যাবে প্রাণ।
কর্ম যখন পরের অধিনে,এসব বলে কি আর রেহাই আছে? অসাধ্য,দুর্সাধ্য যাই হোক পারিশ্রমিকের আশায় সেটা করতেই হবে।
এই মানসে নিগুর মনোযোগের সহিত কাজ করছি, আমি আমার কর্মস্থল বগুরা চারমাথা’র একটি, মটর ওয়ার্কশপে। হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ একজন আমার পিঠে হাত রাখছে!
হকচকিয়ে উঠলাম, বিরক্তি মাখা ক্লান্ত চোখতুলে পেছনে তাকালাম।
নাহ্, তেমন বিরক্তিকর কেউ না সে।
নামে মাত্র পরিচিত দাদা। আমি ওনাকে দাদা বলে ডাকি, ওনি নাতি।
কিরে নাতি, কেমন আছোত?
এই তো দাদা, ভালোই।
আপনি কেমন?
ভালো কেমন থাকি বল! তোরা একটা বিয়েসাদি করবি, দওয়াত করবি, খাবো দাবো, আনন্দকরবো। তাতো করোসনা।
তো বিয়েটা করবি কবে বল? মেয়ে দেখবো! একটা ভালো মেয়ে আছে, একদিন সময়করে দেখে আসবি চল!
কিযে বলেন দাদা, বিয়ের বয়সটা তো হতে দিবেন নাকি!
তোর বিয়ের বয়সটা হবে কবে শুনি! আমার মরার পারে?
বুজছি তোর বিয়ে খাওয়া, সে গুড়ে বালি।
বিয়েসাদি করস নাই,এতো কাজ কইরা খাইবো কে। চল্ চা খাবি চল্।
একপ্রকার জোর করেই নিয়ে গেলো।
চাচা, কাচাপাতি মাইরা কড়া লিকারের দুইটা চা হবে। বস্ নাতি।
ভদ্র গোছের একজন লোক, দু আঙ্গুলের চিপার একটি পাঁচশতো টাকা নোট সামনে বাড়িয়ে দোকানে ঢুকলো। চাচা (ভাংতি)খুচরো হবে?
না, না হবেনা। খুচরা টাকা নেই।
কৌতুহলবসত চাচার ক্যাশে চোখ পরলো। সেখানে খুচরো টাকা অনেক, হাজার তো হবেই! আমি রিতিমতো অবাক হলাম. একজন বয়স্ক লোকের, অপ্রয়োজনে খুব সহজে গুছিয়ে এমন মিথ্যে বলা দেখে।
চায়ে দু,চার চুমুক দিতেই একজন লোক আসলো।
আদাব দাদা, আজ রোডে ব্যবসা খারাপ।
পকেট থেকে টাকা বের করে সামনে ধরলো।
এই নেন আজকের ক্যাশ, একহাজার।
দাদা রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে, একটা অশালীন বাক্যব্যায়ে জোরে ধমক দিয়ে বললো।
তেদের বলছিনা? আমার সামনে মিথ্যা বলবিনা!
আমি মিথ্যা শুনতে পছন্দ করিনা!
টাকা বের কর বলছি!
লোকটি পকেট হতে আরো একহাজার বের করে ওনার হাতে দিয়ে,স্থান ত্যাগ করলো।
দাদা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
বুজলি নাতি,দুনিয়াডা মিথ্যে দিয়ে ভইরা গেছে। কথায় কথায় মিথ্যা বলে সবাই।
কতো কইরা বললাম, আমি মিথ্যাকথা শুনতে পারিনা। তাও বলে।
কথার ফাঁকে একটা গানের টিউন বেজে উঠলো। দাদার ফোন বাজছে।
লাউডস্পিকার দিয়ে, ফোনটা সামনে ধরলো।
হ্যালো, আদাব দাদা,কেমন আছেন, আমি তো আপনার সাথে দেখা করতে চাই। কোথায় আছেন?
আছিতো ভালই, দেখা করতে চাস ভালো কথা, কিন্তু আমি তো বগুরায় নাইরে।
আমি একটা কাজে ঢাকা আসছি।
চা শেষ করে দাদা বললো,আজ উঠিরে, ভালো থাকিস।
ঠোটর কোনায় হাসিকে প্রশ্রয় দিয়ে ভাবলাম।
বাহ্ কি দারুন!
মানুষের আজব সকল কর্মকান্ড।
মিথ্যে শুনতে ভালো না বাসলেও,
নিজে বলতে খুব সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
৫টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভিন
হা হা হা হা মানুষ এমনি এক আজব প্রাণী
নিজের বেলায় সব ঠিক অন্যের বেলায় নয়
সাবিনা ইয়াসমিন
যারা প্রয়োজনে, অ-প্রয়োজনে মিথ্যা বলে, তারা অন্যর মিথ্যা বলা পছন্দ করেনা। তারা নিজেদের বাদে বাকি সবাইকে খারাপ ভাবে।
লেখাটি আরো কয়েকবার পড়ুন।
বানান কয়েক জায়গায় ভুল হয়েছে। ঠিক করে নিলে পড়তে ভালো লাগবে।
ব্যবহৃত
ঝরছে
পারিশ্রমিক
স্থান
বোধ,, এরকম ছোট ছোট অনেক বানান ঠিক করতে হবে।
শুভ কামনা 🌹🌹
হালিম নজরুল
দাদা,নাতি,খুনসুটি,সব মিলিয়ে ভাল লাগলো।
জিসান শা ইকরাম
সমাজের সত্যিকার চিত্র গল্পে এনেছেন।
এস.জেড বাবু
চালনী বলছে সূঁই-
তোর নিচে ছিদ্র
মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ মুদ্রাদোষ- অকারণেই মিথ্যে বলা।
চমৎকার গল্পে- বাস্তবতার সুন্দর প্রকাশনা।
দারুন।