হাইকু এক ধরনের জাপানি কবিতা/ছড়া । যা তিন লাইনেই সীমাবদ্ধ । এই তিন লাইনেই কবি পাঠকের সামনে একটা চিত্র তুলে ধরেন আর পাঠক নিজের কল্পনা বা অভিজ্ঞতার দ্বারা সেটার পুর্নতা দান করেন । হাইকু সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ তাঁর জাপানযাত্রী বইয়ে লিখেছেন –
“জাপানি বাজে চেঁচামেচি ঝগড়াঝাঁটি করে নিজের বলক্ষয় করে না । প্রাণশক্তির বাজে খরচ নেই ব’লে প্রয়োজনের সময় টানাটানি পড়ে না । শরীর-মনের এই শান্তি ও সহিষ্ণুতা ওদের স্বজাতীয় সাধনার একটা অঙ্গ । শোকে দুঃখে আঘাতে উত্তেজনায়, ওরা নিজেকে সংযত করতে জানে । সেইজন্যেই বিদেশের লোকেরা প্রায় বলে, জাপানিকে বোঝা যায় না, ওরা অত্যন্ত বেশি গূঢ় । এর কারণই হচ্ছে, এরা নিজেকে সর্বদা ফুটো দিয়ে ফাঁক দিয়ে গ’লে পড়তে দেয় না ।
এই যে নিজের প্রকাশকে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত করতে থাকা, এ ওদের কবিতাতেও দেখা যায় । তিন লাইনের কাব্য জগতের আর কোথাও নেই । এই তিন লাইনই ওদের কবি, পাঠক, উভয়ের পক্ষেই যথেষ্ট । সেইজন্যেই এখানে এসে অবধি, রাস্তায় কেউ গান গাচ্ছে, এ আমি শুনি নি । এদের হৃদয় ঝরনার জলের মতো শব্দ করে না, সরোবরের জলের মতো স্তব্ধ । এপর্যন্ত ওদের যত কবিতা শুনেছি সবগুলিই হচ্ছে ছবি দেখার কবিতা, গান গাওয়ার কবিতা নয় । হৃদয়ের দাহ এবং ক্ষোভ প্রাণকে খরচ করে, এদের সেই খরচ কম । এদের অন্তরের সমস্ত প্রকাশ সৌন্দর্যবোধে । সৌন্দর্যবোধ জিনিসটা স্বার্থনিরপেক্ষ। ফুল, পাখি, চাঁদ, এদের নিয়ে আমাদের কাঁদাকাটা নেই । এদের সঙ্গে আমাদের নিছক সৌন্দর্যভোগের সম্বন্ধ-এরা আমাদের কোথাও মারেনা, কিছু কাড়ে না, এদের দ্বারা আমাদের জীবনে কোথাও ক্ষয় ঘটে না । সেইজন্যেই তিন লাইনেই এদের কুলোয়, এবং কল্পনাটাতেও এরা শান্তির ব্যাঘাত করে না ।”
আমার লেখা তিনটি হাইকু ছবিতে বসিয়ে পোষ্ট করলাম । জানি না পাতে দেওয়ার মতন হলো কি না !
[www.arafkarim.tk]
১২টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
হাইকু সম্পর্কে তেমন জানা ছিলো না, কিছুটা জানলাম।
আপনার প্রথম কবিতাটি কোথাও পড়েছি মনে হচ্ছে, কবির নাম অবশ্য খেয়াল করিনি।
আপনাকে স্বাগতম এখানে। এমন আরো লিখুন।
আরাফ করিম
হাইকু তিনটিই আমার লেখা। তারপরেও অন্য কোথাও পড়াটা বিরল কিছু নয়, ভার্চুয়াল জগতে অনেক কিছুই সম্ভব।
-{@ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
স্বাগত আপনি এখানে ।
আপনার লেখাটি পড়তে যেয়ে আরও অনেক অনেক পড়া হয়ে গেল ।
যদিও হাইকুতে এখনও স্বচ্ছন্দ বোধ করি না । হত পারে কম জানি , এজন্য ।
আরাফ করিম
আমিও কম জানি, তবে পড়তে ভালো লাগে। লেখার চেষ্টাতেও দোষ দেখি না তাই লিখি।
-{@ ধন্যবাদ আপনাকে।
ছাইরাছ হেলাল
আমি কিন্তু দোষ বা গুন নিয়ে প্রশ্ন রাখিনি , আমার অসম্পূর্ণতার কথা বলেছি মাত্র ।
যাক ভালই হলো , মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এর লেখাটি পড়া হয়ে গেল ।
ধন্যবাদ ।
আরাফ করিম
সম্ভবত আমিই বুঝাতে পারিনি। আমিও আপনার কথাকে ভুল বলছি না। শুধু আমার মতামত দিয়েছি মাত্র।
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় স্বাগতম ।
হাইকু সম্পর্কে ধারনা নিতে গিয়ে জাপানিদেরও জানলাম।
আপনার হাইকু তিনটি ভালোই লেগেছে
তিনটিই ভাবার জন্য যথেষ্ঠ ।
শুভ কামনা
শুভ ব্লগিং —
আরাফ করিম
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
-{@ শুভকামনা জানবেন।
প্রজন্ম ৭১
ছবির সাথে এমন হাইকু দিলে বড় লেখার কি প্রয়োজন ? (y)
আরাফ করিম
;? উপরের লেখাগুলোর প্রয়োজন নেই বলছেন?
প্রজন্ম ৭১
আপনার উপরের লেখা গুলো পঠন করিয়া , অনুধাবন করিয়া , সন্তষ্ট চিত্তে আপনার ছবি সম্পর্কে প্রশংসা সুচক মন্তব্য করিয়াছি। উপরের লেখা গুলো না থাকিলে হাইকু সম্পর্কে বুঝিতাম কিভাবে ? 🙂
আরাফ করিম
🙂 ও আচ্ছা, ধন্যবাদ।