অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী (১০৩)  চলে গেলেন । রেখে গেছেন এই মহান ব্যক্তির  আর্দশ।যুগ যুগান্তার কৃর্তিমান বিনোদবিহারী জেগে আছেন থাকবেন মানুষের হ্নদয়ের মনিকোঠায়।  আজীবন সংগ্রামী অগ্নিপুরুষ শুধু দেহ ত্যাগ  করেছেন কিন্তু তাঁর কৃর্তিমান অধ্যায় চিরঞ্জিব। অমর তিনি। বাঙালির ইতিহাসের সঙ্গে বিনোদবিহারী চৌধুরীর জীবন যেন সমান্তরাল। যুদ্ধ, মহামারি, মন্বন্তর, দাঙ্গা, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, ভাষা আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ বহু ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন মহান আর্দশের এই ব্যক্তি।  ১০ এপ্রিল  বুধবার স্থানীয় সময় রাত নয়টা ৪০ মিনিটে কলকাতার ফর্টিজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মানবতার  কিংবদন্তী শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বিনোদবিহারী চৌধুরী’র জন্ম ১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে। বাবা কামিনী কুমার চৌধুরী পেশায় ছিলেন আইনজীবী। আর মা রামা চৌধুরী ছিলেন গৃহিণী। তাঁর স্ত্রীর নাম বিভা চৌধুরী। ছেলের নাম বিবেকান্দ্র চৌধুরী। চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার রাঙ্গামাটিয়া বোর্ড স্কুলে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু৷ সেখান থেকে তিনি ফটিকছড়ি করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়, বোয়ালখালির পি.সি. সেন সারোয়ারতলি উচ্চ বিদ্যালয়, চিটাগাং কলেজে পড়াশোন করেন।  ১৯২৯ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তাঁকে বৃত্তি প্রদান করা হয়৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৩৪ এবং ১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ রাজের রাজপুটনার ডিউলি ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী অবস্থায় থাকার সময় তিনি প্রথম শ্রেণীতে আই.এ. এবং বি.এ. পাস করেন। বিনোদবিহারী চৌধুরী ১৯৩০ সালে কংগ্রেস চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন।  ১৯৪০ – ১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস নির্বাহী কমিটির সদস্য থাকার পাশাপাশি ১৯৪৬ সালে কংগ্রেস চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ৩৭ বছর বয়সে পশ্চিম পাকিস্থান কংগ্রেসের সদস্য হন তিনি। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারির মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলকে বেআইনি ঘোষণা করলে রাজনীতি থেকে অবসর নেন তিনি ৷ এর মধ্যে তিনি ১৯৩৯ সালে দৈনিক পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৪০ সালে চট্টগ্রাম কোর্টের একজন আইনজীবি হিসাবে অনুশীলন শুরু করেন।  অবশেষে তিনি তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। বিপ্লবীদের দলে নাম লেখানোর অল্প দিনের মধ্যেই বিনোদবিহারী চৌধুরী মাস্টারদা সূর্যসেনের প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৩০ সালের ঐতিহাসিক অস্ত্রাগার লুন্ঠনে বিনোদবিহারী চৌধুরী তাই হতে পেরেছিলেন সূর্যসেনের অন্যতম তরুণ সহযোগী। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্রগ্রামকে তিন দিনের জন্য স্বাধীন করেছিলেন তিনি। টেলিগ্রাফ অফিস ধ্বংস করা, অক্সিলারি ফোর্সের সমসত্ম অস্ত্রশস্ত্র লুট করেছেন। দামপাড়া পুলিশ লাইন, এখানে অস্ত্রের গুদাম ছিল, সেটাও তিনি ও দলের সদস্যরা মিলে লুট করে। এ দলে ছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেনসহ ছিলেন হিমাংশু সেন, অনন্ত সিংহ, গণেশ ঘোষ ও আনন্দ গুপ্ত। ১৯৩০সালের এ ঘটনার পর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন জঙ্গি রূপ ধারণ করে। সেই দিনের এসব বিপ্লবীরা দুঃসাহসিক কর্মকান্ডে ব্যর্থ হয়নি। চট্টগ্রাম সম্পূর্ণরূপে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত ছিল চার দিন। এই কয়েক দিনে ব্রিটিশ সৈন্যরা শক্তি সঞ্চয় করে বিপ্লবী দলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত বিনোদবিহারীরাও বীর বিক্রমে জালালাবাদ পাহাড়ে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন। জালালাবাদ যুদ্ধ ছিল বিনোদবিহারী চৌধুরীর প্রথম সম্মুখযুদ্ধ। গলায় গুলিবিদ্ধ হয়েও লড়াই থামেনি তাঁর।  এই মহান সমাজ সংস্কারকে হারিয়ে শোকাতুর  চট্টগ্রামসহ গোটা দেশ । চলছে এপাড় ওপাড় বাংলায় শোক প্রকাশ।

লেখক : আহমেদ জালাল  (সাংবাদিক/রাজনৈতিক বিশ্লেষক)

Email : [email protected]

৭১৮জন ৭১৭জন
0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ