আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত দু’প্রার্থী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিরাজমান থাকায় কঠিন চ্যালেঞ্জের নির্বাচন বলে মন্তব্য সচেতন মহলের। সূত্র বলছে, বিএনপির’র দূর্গ খ্যাত বরিশাল। আর বরিশাল মহানগরীতে হিসেব নিকেশে বিএনপির ভোটের সংখ্যাই বেশি। এরমধ্যে আ’লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় দলের মনোনীত প্রার্থী  মহানগর শাখার সভাপতি শওকত হোসেন হিরনের সেকেন্ড টার্মের নির্বাচন হয়ে দাড়িয়েছে চ্যালেঞ্জ। এক সময়ের তুখোর ছাত্রনেতা যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন বিদ্রোহী প্রার্থী না হলেও দলের মনোনীত প্রার্র্থী হিরনের নির্বাচনী বৈতারনী পাড় হওয়াও একটা চ্যালেঞ্জ। বিগত নির্বাচনের ন্যায় ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে মেয়র পদে আসীন হওয়ার পরিস্থিতি আগামী ১৫ জুনের নির্বাচনে সম্পূর্ন প্রতিকুলে। কারন ভোট ব্যাংকের যুদ্ধ। বরিশাল বিএনপির কর্ণধর খ্যাত দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর আসনের এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার হাইকমান্ডের মনোনীত প্রার্থী জেলা শাখার সভাপতি  সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামালকে বিজয়ী করতে দলের সকল নেতা কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বলেছেন। বলেছেন,কোন বিভাজন নয়; দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। নগরীতে সরোয়ার কামালের শোডাউনের পর  বিএনপির নেতা কর্মী একাট্রা হয়ে মাঠে নেমেছেন হাইকমান্ডের মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করার প্রচার প্রচারনায়। আর দলের বিদ্রোহী প্রার্থী এবায়েদুল হক চাঁনও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে রয়েছেন। চাঁনের রয়েছে ব্যক্তিগত একটা ভোট ব্যাংক। তিনি দলের ত্যাগী নেতা হিসাবে পরিচিত কিন্তু বার বার মনোনয়ন বঞ্চিত হন। আহুত এক সংবাদ সন্মেলনে জানান দিয়েছেন হার জিত যাইহোক নির্বাচনী মাঠ ছাড়ছেন না তিনি। এরকম নির্বাচনী ডামাডোলে নানা মহলে চলছে হিসাবে নিকেশ।
বিশেষ করে সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন নগর উন্নয়নে বেশ ভুমিকা রেখে প্রচারনা চালাচ্ছেন। নগর উন্নয়নে প্রশংসিত ভুমিকায় হিরন এরকম প্রচারনায় রয়েছেন তার সমর্থকরা। কিন্তু অরুন বরুন তরুনদের নানা অন্যায় অনিয়মের ফিরিস্তি রচনায় জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ নানামুখী কর্মকান্ডে প্রশংসিত শওকত হোসেন হিরন।  প্রশংসিত কর্মকান্ড যে শুধুই নামকাওয়াস্তে ছিল বিষয়গুলো বেড়িয়ে আসায় এখন জনমনে প্রশ্ন জাগে জননন্দিত আর নিন্দিত নিয়ে। উন্নয়নের নামে লুটপাটতন্ত্র! নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন উন্নয়নের কর্মকান্ডে কোটি  কোটি টাকার লুটপাটতন্ত্রের বিষয়টি পরিস্কার হয়ে উঠে জনসাধারনের মাঝে। উন্নয়ন চিত্র’র বাস্তবতা নিয়ে খোদ দলের মধ্যেও কথা ওঠে। দলের মধ্যকার নেতা কর্মীদের বঞ্চিতের বিষয়টিতো রয়েছেই। গ্রুপিং রাজনীতির জন্ম দিয়ে রক্তের হেলিখেলায় মেতে উঠেছিল অরুন বরুন তরুনা। গ্রুপিং রাজনীতিতে নিজ দলের নেতাদের নিধনে মটরসাইকেল মহড়ায় আতংকের নগরীর পরিবেশ সৃষ্টি করে দাবড়িয়ে বেড়িয়েছে। লাঞ্চিত করা হয় ছাত্রলীগ যুবলীগের কয়েক নেতাকে। গুলিবর্ষনের ঘটনা ঘটে। সাবেক ছাত্রনেতা তারিক বিন ইসলামকে আক্রমন করতে হন্য হয়ে নগরজুড়ে মহড়া দিয়েছিল অরুন বরুনদের তরুনরা। টেন্ডারবাজীতে দপ্তরের দায়িত্বশীলদের মারধর করার নজীর রয়েছে। বরিশাল ২ আসনের এমপি আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম মনিকে লাঞ্চিত করে অরুন বরুনরা। সাংবাদিক নির্যাতনেরও ঘটনাও ঘটে। বিএম কলেজ অধ্যক্ষ’র ওপর হামলে পড়ার ঘটনায় তোলপাড় ঘটে গোটা দেশ।
সূত্রের ভাষ্য,কতটা বেশামাল হলে এসব জঘন্যতম ঘটনার জন্ম দিতে পারে। নির্বাচনী মাঠে হিরনামায় বিশাল খতিয়ানে কালো অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে দলের মধ্যে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী মাহমুদুল হক খান মামুনের ¯্রফে বক্তব্য জীবন উৎসর্গ হলেও তিনি নির্বাচনী মাঠ ছাড়ছেন না। দল তাকে বার বার বঞ্চিত করে রেখেছে। সেই বিএম কলেজে দীর্ঘ ছাত্ররাজনীতি থেকে। বিগত মেয়র নির্বাচনে দলের সমর্থন চেয়ে ব্যর্থ হন তিনি। এমনকি উপজেলা নির্বাচনেও তাকে দেয়া হয়নি দলের সমর্থন। আর এবারের নির্বাচনেও তিনি হাইকমান্ডের সমর্থন বঞ্চিত। এজন্য তিনি কোমর বেধে মাঠে নেমেছেন নির্বাচনী বৈতারনী পাড় করতে। ফলে দল তাকে বহিস্কারও করতে পারেন। কিন্তু এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই খান মামুনের। তার ভাষ্য, মহানগর যুবলীগের কমিটি এমনিতেই মেয়াদোর্ত্তীন হয়েছে অনেক আগে। তাছাড়া এটা পার্লাামেন্ট নির্বাচন নয়। এটা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন এখানে দল মুখ্য নয় ব্যক্তিই মুখ্য। আর ভোটাররা আগের চেয়ে অনেক সচেতন। তারা ব্যক্তিকে আইডেন্টিফাই করেই প্রার্থীকে ভোট দিবে। এক্ষেত্রে কোন দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই দিবেন না আম জনতা। সাধারন জনগন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যোগ্য প্রার্থীকেই বেচে নিয়ে নিরব ভোট বিপ্লব ঘটাবে এরকমই মন্তব্য খানের।
তথ্যানুসন্ধানে নির্বাচনী মাঠে এহেন ত্রাহিদশায় খান মামুনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ছিটকে ফেলতে আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থীর এখন চলছে নানা কৌশল। দেয়া হচ্ছে পদ পদবীর অফার। আরো কতো কিছু। রাজনীতিতে না বলতে নাকি কোন কথা নাই কখন গনেশ উল্টো যায় বলাও তো যায় না। এমনও খবর মিলেছে খানের দরবারে রয়েছে একজন গ্রেডি। খুবই লোভী। যদিও বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। যাইহোক ২১ মে মঙ্গলবার রাতে মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হক খান মামুনের বাসভবনে এসেছিলেন বরিশাল ১ আসনের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাড.তালুকদার মোহাম্মাদ ইউনুছ। উদ্দেশ্যে খানের সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা। বাসভবনে এসে দেখা মিলেনি খানের সঙ্গে এমপি ইউনুছের। তবে খান মামুনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিসহ সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেন এমপি ইউনুছ। বলেন, খানের নির্বাচনী ভীত কতটুকু শক্তিশালী। নির্বাচনে কি জয়ী হতে পারবে। দলের সমর্থনের বাইরে নির্বাচন করে কি জয়ী হওয়া সম্ভব প্রশ্ন তুলেন এমপি ইউনুছ। তখন খান মামুনের সমর্থকরা বলে উঠেন মাঠে খানের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। সাধারন জনগনের মাঝে তিনি খুবই প্রিয়। সমর্থকরা বলেন, খান মামুন বরিশালের সেলিনা হায়াত আইভি !
এমপি ইউনুছ সমর্থকদের উত্তরে বলেন আইভির প্রসঙ্গটা ভিন্ন। মিডিয়া আইভিকে সাপোর্ট দিয়েছে। মিডিয়ার সেই সাপোর্ট কি খান মামুনের রয়েছে ? সমর্থকরা বলেন,স্বচ্ছ রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত খান মামুন। টুডে এন্ড টুমরো তিনি  মিডিয়ার সাপোর্ট পাবেনই। প্রায় ঘন্টাখানেক খানের বাসভবনে অবস্থানের পর গাড়িতে নিজ গন্তব্যে চলে যান এমপি ইউনুছ। এরপর খানের সমর্থকরা বলেন, লোকাল মিডিয়ায় টাকার ছড়াছড়িতে খান মামুনকে ফুটিয়ে তুলছে না। যথার্থভাবে তাকে কাভারেজ দিচ্ছে না। তাদের ভাষ্য, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী যেন অধিকাংশ লোকাল মিডিয়া কিনে ফেলছেন। মেয়র পদে বনে যেতে অবৈধ পন্থার অর্থ ঢালছে লোকাল ও ন্যাশনাল মিডিয়ায়। অধিকাংশ ন্যাশনাল পত্রিকা নিশ্চুপ। অবশ্য লোকাল কয়েকটি পত্রিকায় খান মামুনকে কাভারেজও দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত : ১৯৮১ সালে বিএম কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন মাহমুদুল হক খান মামুন। বিএম কলেজের রাজনীতিতে ছাত্রদের বিভিন্ন দাবী দাওয়ায় সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়া ছিল যেন খান মামুনের নৈতিক দায়িত্ব। ১৯৯০ সালে কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস, ১৯৯৭ সালে ভিপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম বিএম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। একটানা ১৭ বছর সভাপতির দ্বায়িত্ব পালনে সংগঠনের সাংগঠনিক ভীত মজবুত হয়।  বিএম কলেজে চারটি বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন এই মেধাবী ছাত্রনেতা। ছাত্রনেতা ও জ্ঞান অর্জনে দক্ষিন বাংলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন খান মামুন। মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করা বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি,হিসাব বিজ্ঞান ও ইতিহাস। এছাড়া  এলএলবিও করেছেন তিনি। ক্লীন ইমেজের রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসাবে বেশ পরিচিত মাহমুদুল হক খান মামুন। খানের বাবা প্রায়ত সামছুল হক খান তৎকালীন এডিসি ছিলেন। মা প্রায়ত লুৎফুন্নাহার বেগম ছিলেন সুশিক্ষিতা। তৎকালীন পাকিস্তান আমলে খানের মা ডিগ্রী পাস করেন।

৬৮০জন ৬৮০জন
0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ