আমি তো আজীবন খ্যাত । স্মার্ট মানুষজন এই কারণে একটু এড়ায় চলি । কারণ তাদের সাথে আমার ঠিক যায় না । কিন্তু এমুন কপাল শেষে কিনা প্রেমে পড়লাম লুতুপুতু শো পিস টাইপের এক আহ্লাদী মাইয়ার সাথে । আর্থিক বিচারে তারা আর আমরা প্রায় সমান সমান হলেও তার ব্যবহৃত একটি লিপিস্টিকের যা দাম সেই দামে এখনো একটা প্যান্ট আমি কিনতে পারি নাই । যাই হোক প্রথম প্রথম যখন তার সাথে আমার প্রেম শুরু হইল তখন ডেটে যাওয়ার আগে একটু ফিটফাট হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম । যেমন ধরেন ঘাম ও বিড়ির দুর্গন্ধ মুক্ত টি-শার্ট পরতাম , শার্ট পরলে তার ভাজ ঠিক আছে কিনা খেয়াল রাখতাম । রঙ ওঠা প্যান্ট না পরে একটু কম পুরানো প্যান্ট পরতাম , ইত্যাদি ইত্যাদি । ভদ্রলোক নাকি চেনা যায় জুতায় । আর আমার জুতা আজীবন হয় ছেড়া থাকবে না হলে ধুলায় মলিন থাকবে । একদিন তো ওই বালিকা খোলাখুলি বলেই দিল “আপনার পা দেখলে মনে হয় ধান কাটার কিষাণ” । যাই হোক এই বানী শোনার পর থেকে স্যান্ডেল সব সময়ে পরিষ্কার করে তার সাথে দেখা করতে যেতাম ।
প্রথম অবস্থায় উক্ত লুতুপুতুকে যথেষ্ট ভয় পেতাম । কি পছন্দ করে না করে সে ব্যাপার সব সময়ে হুশিয়ার থাকতাম । আর এই সময়ে আমার ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল । যদিও সময়ের সাথে সাথে উক্ত বালিকা নিজেই আমাকে সিগারেট কিনে দিয়েছে , তবে প্রথম দিক দিয়ে সে আমার সিগারেট একদমই সহ্য করতে পারত না । আর আমিও তার সাথে দেখা করার কমপক্ষে ২ ঘন্টা আগে থেকে ধূমপান বর্জন করতাম,ভয়ে । তখনো আমাদের প্রেম ওই হাত ধরা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল ।
একদিন ঠিক হল আমরা দুজন রিকশায় ঘুরব । কিন্তু কেন জানি না সেদিন খুব টেনশন হচ্ছিল আমার । হাত পা কাপতেছিল । বুকের মধ্যে খুব বেশি ঢিপ ঢিপ করছিল । আর এই টেনশনের গুতোয় বালিকা আসার মাত্র এক ঘন্টা ধুম করে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেললাম । এতে টেনশন তো কমলই না , উল্ট বিড়ির ঘ্রাণ পাইলে কি থেকে কি হয় তাই ভেবেই ঘেমে উঠছিলাম বার বার । ফলাফলে চুইংগাম,চকোলেট সব এক সাথে মুখের মধ্যে নিয়ে চর্বন করতে থাকলাম । আমার অবস্থা দেখে বন্ধু মঙ্গল কইল “পান খা,পুলিশ হইলেও ঘেরান পাবে না” । এই শুনে দোকানে পান কিনতে যাবো ঠিক সেই সময়ে বালিকার ফোন “হ্যালো,আমি বটতলায়,ছায়ারানীর মেসের সামনে রিকশায়” । পান কেনা আর হইল না । ছুটলাম বালিকার উদ্দেশ্যে ।
রিকশায় উঠলাম । হুড তোলা রিকশায় । কারণ আমাদের হাতের তালুর মত শহরের প্রতিটি অলিগলিতে পরিচিত মানুষে ছয়লাব । আর প্রেম বাংলাদেশে কোন মধুর বিষয় না , এটা সম্পুর্ন একটি অপরাধ । যাই হোক পরিচিত জনের চোখ বাঁচিয়ে হাই ওয়েতে গেলাম । রিকশায় এই মাথা থেকে ওই মাথায় চক্কর দিচ্ছিল । আর আমরা স্বল্প সাউন্ডে সমানে কিচির মিচির করছিলাম ।
সময়টা এরকমই গ্রিষ্মের সকাল । ফাঁকা হাই-ওয়েতে উথাল পাথাল মাতাল হাওয়া । চকচকে রোদ,মসৃণ পিচ-কোটেড রাস্তায় দূরে মরীচিকা দেখা যায় । এক পাশে চেচানিয়াকান্দির হালকা হলুদ হয়ে আসা বিল আর নিচুপাড়ার ওই সাইডটা তখন বাড়িঘর দখল করতে পারে নি । এর মধ্যে আমি হঠাত করে বালিকার ঠোঁটে একটি চুমো দিয়ে দিলাম , তারপরে আরেকটা,তারপরে আরেকটা । ঠোঁট দুইটি বালিকার ঠোঁটে গুজে দিলাম । আকস্মিক এই দুর্যগে বালিকা নিজেকে ছাড়িয়ে নিল । না, সিনেমার নায়িকার মত চড় মারল না । শুধু ধ্যাত বলে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল । মনে হচ্ছিল আমার হার্ট কাঁচা বাঁশের খাচা ভেঙে বেরিয়ে আসবে । এদিকে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল । কাজটা ঠিক করলাম না মনে হচ্ছিল । বালিকা মুখ ফিরিয়ে রেখেছে আবার কথাও বলছে না । মানে শিওর সে রাগ করেছে । আমার প্রেমটা বুঝি এইবার ভেঙ্গেই গেলো । আক্ষরিক অর্থেই কাঁদো কাঁদো ভয়েসে বালিকাকে বললাম “সরি,ভুল হয়ে গেছে । আই কান্ট কন্ট্রোল মাই-সেলফ” । কথাটার মধ্যে একটুও মিথ্যা ছিল না । এর আগেও আমি বহুবার বালিকার সাথে নির্জনে সময় কাটিয়েছি । বাট এরকম আচমকা চুমো বালিকাকে এই প্রথম এবং কাউকে চুমো খাওয়াও আমার জীবনে এই প্রথম ।
বালিকা আমাকে ক্ষমা করবে কিনা বুঝতে পারছিলাম না । আর এইভাবে রাস্তায় বসে চুমো খাওয়াটা নিশ্চয়ই অসভ্যতা । ইত্যাদি ইত্যাদি ভেবে আমার অবস্থা আরও কাঁদো কাঁদো হচ্ছিল । এই অবস্থায় বালিকা মুখ ঘুরিয়ে আমার অপ্রস্তুত মুখে উল্ট আরেকটা চুমো একে দিল । জাস্ট ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম । কি হল !!! রাগ হইল আবার চুম্মা দিল !!! ক্যান ? ক্যান ? ক্যান ? আমার ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা কাটার আগেই বলল “এভাবে কেউ করে ? কেউ যদি দেখে ফেলত?আজকে আর না , ঠিক আছে?
উপসংহারঃ রিকশা থেকে নামার আগে আমাকে বলল “আপনি সিগারেট খাইছেন,তাই না?” “সাবধান এরপরে সিগারেট খেয়ে আর আমার কাছে আসবেন না” ।
মোরাল অব দি স্টরিঃ মা,বোন,বৌ,প্রেমিকাদের নাক খুব সেন্সেটিভ । ফোনে কথা বলার সময়েও এরা সিগারেটের গন্ধ পায় ।
(এটা একটি গল্প,এর সাথে জীবিত কারো কোন সম্পর্ক নেই)
১৬টি মন্তব্য
নীহারিকা
মোরাল লেসন ভালো হয়েছে তবে এর থেকে কেউ কিছু শিখবে বলে মনে হয় না। বউ তালাক দিতে পারবে, প্রেমিকা ছাড়তে পারবে, মা-বোন ছাড়তে পারবে কিন্ত সিগারেট ছাড়তে পারবে না।
বায়রনিক শুভ্র
হা হা হা হা । ভালো বলেছেন ।
ইঞ্জা
দাদী, গাইল্লান ক্যারে? 😁
নীহারিকা
ইয়াল্লাহ! গাইল্লাইলাম কোথায়? আমি শুধু সিগারেট খাদকদের আসল রূপটা তুলে ধরলাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
সিগারেটের গন্ধ আমি মোটেও নিতে পারিনা। আমার বাপি সিগারেট খেতো, বড়ো হয়ে আমি ছাড়িয়েছি। শুধু বলেছি তুমি যদি খাও, তাহলে আমিও খাবো। 😀
সিগারেটে কি এমন স্বাদ, আমি তো একটুকুও স্বাদ পাইনি। :p
বায়রনিক শুভ্র
আমারে এক বালিকা বলেছিল “তুমি যদি খাও, তাহলে আমিও খাবো” । আমি সেই বালিকাকে একটি ডানহিল সিগ্রেট কিনে দিছিলাম , ১২ টাকা দিয়া । 😀
নীলাঞ্জনা নীলা
তারপর?
আগুন রঙের শিমুল
ইয়ে এইসব ক্ষেত্রে মেন্থল চুইংগাম খুব উপকারী 😉 বাস্তব অভিজ্ঞতা আচে
বায়রনিক শুভ্র
লাভ হয় না রে ভাই । চুম্মা দিলে ঠিকই টের পেয়ে যায় ।
ইঞ্জা
ভাউ ঠিকই কইছে, মেন্থল চুইংগাম উপকারী, সমস্যা সব কাপড়ে যা থাকে। 😜
বায়রনিক শুভ্র
হ ভাই ।
ইঞ্জা
(y)
মৌনতা রিতু
সিগারেট অসহ্য অসহ্য। একদমই অসহ্য। মেজাজ গরম হয় খুব। আমার এর থেকে ভাল লাগে হালকা ড্রিংক। সিগিরেট খাওয়া লোক ও ছেলেদের দেখলে মূর্খ ছেলে মনে হয়। খ্যাত মনে হয়।
মুখে এসব ছাইপাস নিয়ে মেয়েদের সামনে আসাই তো লজ্জার কথা!
বায়রনিক শুভ্র
সিগারেট টানা ছেলেরা আসলেই মুর্খ ও খ্যাত । তবে হালকা ড্রিংক ও সিগারেট যে খায় সে কেমন ?
ইঞ্জা
অনেক মেয়ে বলে সিগারেট না খেলে নাকি পুরুষই মনে হয়না। :p
চাটিগাঁ থেকে বাহার
এটা একটি গল্প,এর সাথে জীবিত কারো কোন সম্পর্ক নেই