শুনশান আলপথ যেইখানে শেষ সেইখানে এসে দাড়াতেই ছায়া মুখ তুলে তাকায় তার কায়ার মুখপানে। বলে, পরম যত্নে আগলে রেখেছিলে হে। ভুলেই গেছিলাম প্রায় আমি ছায়ামাত্র। তোমাকে ছাপিয়ে নিজের মুর্তি গড়েছিলাম নিজেই।
কায়া নিশ্চুপ।
ছায়া বললে, খেলা তো ফুরোল কি করবে এবার?
কায়া বলল তুমি জানো
ছায়া অপলকে একটুখানি দেখে কায়ার লালচে চোখ, ভাবে একি ঘুমহীন রাত্তিরের নাকি জমাট অশ্রুর লাল ….. ভাবতে ভাবতে প্যাকেট থেকে শেষ সিগারেট বেড় করে ঠোঁটের কাছে ধরতেই কায়া দেশলাই এগিয়ে দেয়।
কায়া জানে ফায়ারিং স্কোয়াডের আসামিদের শেষ একটা সিগারেট খেতে দেওয়া হয়, বহুদিনের পুরনো নিয়ম।
ছায়া শেষ টান দিয়ে সিগারেটের অবশিষ্টাংস জুতোর তলায় পিষে কায়ার চোখে চোখ রেখে হাঁটু গেড়ে বসে। নির্বিকার।
কায়া পকেট থেকে রিভলবার বের করে একবার দেখে নেয়, একটা মাত্র কার্তুজ ঠিক হেডশট নিতে হবে।
ছায়া হঠাৎ বলে ওঠে, ওকি হাত কাপছে কেন? এতো খুন নয়, এতো মুক্তি। চিয়ার আপ ম্যান , কায়া একবার থমকায় তারপর হঠাৎ রিভলবার উচুঁ করে ট্রিগার টেনে দেয়।
ছায়া অপলকে তাকিয়ে ছিলো রিভলবারের দিকে, তাই সে দেখে হ্যামার পিছনে সরে যাচ্ছে, ড্রাম ঘুরতে শুরু করেছে আর সেকেন্ডের ভগ্নাংশ মাত্র এখুনি ছুটে আসবে তপ্ত সীসা।
এই মুহুর্তের ভগ্নাংশের মাঝেই তার চোখে খেলে যায় সবটুকু, সে যা কিছু ভালোবাসত পাগলের মতো। একলা হাঁটার পথ, আদিগন্ত জলরাশি, একলা একটা জলের পাখি ।তার ভালো লাগা ….. সব মনে পরে। কয়েকটা গাছের স্বপ্ন খেলে যায় তার চোখে, আটপৌরে গেরস্থালী গাছেরা সব। আর একটা টব… শুন্য টব নিঃসঙ্গ বারান্দায়। হেটে যাওয়ার আদিগন্ত পথ ইতিহাসের … একটা বাচ্চাছেলে গান গায় ”মিলন হবে কতদিনে… ”
তারপর হঠাৎ মিলিয়ে যায় সব কিছু। ভূতুড়ে নীরবতা।
কায়া কিছুক্ষন ছায়ার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে থেকে মমতায় তুলে নিয়ে বন্দী করে একটা চন্দন কাঠের কৌটায়। তারপর স্মৃতির অতলে তাকে কবর দেয় চিরতরে …… টিল টু দ্যা রেসারেকশন।
তারপর কাঁচা হাতে এপিটাফ লেখে ” এইখানে এক স্বপ্নভুক কবির মৃত ছায়া পরে আছে, যে স্বপ্নের চাষাবাদ করতো কাজল চোখের জমিনে। এইখানে মৃত এই ছায়া তার স্বপ্নের ওমে নিদ্রামগ্ন তাকে জাগানো নিষেধ ”
তারপর , কায়া তার স্বনামে ডেকে বলে সবাইকে ” এই হচ্ছি আমি , দশজনের ভেতর যাকে আলাদা করে চোখে পরেনা। কিন্ত আমার একটা ছায়া ছিলো যার ছিলো ঈশ্বরের মতো একা এবং খেয়ালী হৃদয় ” এই বলে সে কবিতার খাতা উল্টায় আনমনে, যা লিখে গেছে ছায়া। অক্ষমতায় তার চোখ জ্বালা করে।
আর সেইযে জলের পাখি , সে চোখ মুছে নেয় বাস্তবতার রুক্ষ কিন্ত সুগন্ধি টিস্যুতে। তাকে যেতে হবে বহুদুর…… নিয়ম হলো যা হারানোর হারিয়ে গেলেই দামী
বৈরি বাতাসে হায়েনার উল্লাস আর নেই নেই হাহাকার ।
২৬টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এই যে
শূন্যে হাওয়া হওয়া
আদিগন্তে চোখ চাওয়া
একাকী হেটে যাওয়া
নিজেকে খুঁজে পাওয়া
আমার ভালো লাগে।
সাইদ মিলটন
আমারও ভালো লাগে তাই একবার পাখি হয়ে জন্মাতে চেয়েছিলাম
কিন্ত বন্দুক আবিষ্কার হয়ে যাওয়ায় আর পাখি হওয়া হলোনা 🙂
জিসান শা ইকরাম
এমন লেখায় কষ্ট লাগে খুব
হৃদয় এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায়।
আপনাকে না চেনাই ভালো ছিলো
তাহলে, লেখার মান সম্পর্কে লেখা যেতো
কিন্তু পারছিনা তা এখন আর।
ভালো থাকুন প্রিয় মানুষ।
সাইদ মিলটন
শোকে উল্লাসে ক্রোধে ভয়ে যে সমান স্থির সেই সিদ্ধ পুরুষ জিসান দাদা , আর কবিকে প্রকৃত পুরুষ হতে হয়
জিসান শা ইকরাম
হুম , বুঝলাম ।
মোঃ মজিবর রহমান
জীবন কি জীবন নিয়ে কেন এত চুলচেরা বিশ্লেষণ তাও জানিনা।
নিজেও হারিয়ে যায় কথায় জানিনা।
খুব সুন্দর লাগলো তবে ব্যাথা ভরা মন।
সাইদ মিলটন
জীবন
চৈতি বাতাসে জলের ঘ্রাণ রুক্ষ মাঠের ফাটলে, একলহমায় পারি দেই তেপান্তর
অকাল বোধন, ভাংচুর ভাংচুর… কান্না হাসি , ভালোবাসা বাসি, এবং বিসর্জন 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
সহমত
বনলতা সেন
আরও লিখতে হবে অনেকগুলি এপিটাফ।আগে ভাগে শুরু করেছেন ভালই। দেখলাম । শিখেও রাখলাম।
বলাতো যায় না কখন কাজে লেগে যায়।
সাইদ মিলটন
তথাস্তু
কিন্ত স্বপ্ন ভঙ্গের এপিটাফ লেখার অর্থ কিনারাহীন এক আগুনের নদীতে নামা , পারবেন ?
বনলতা সেন
চিতায় দাঁড়িয়ে আগুনের ভয় কী? না পারলেও অসুবিধে নেই। আমরা প্রতি নিয়ত মারা যাচ্ছি।
বেঁচেও উঠছি কখনো কখনো।
সাইদ মিলটন
:c
শুন্য শুন্যালয়
তিন তিনটা লেখা পড়লাম আজ। আপনারা আসলে ভালো না। 🙁
সাইদ মিলটন
হু , বাকি দুজনের কথা জানিনা আমি আসলেই খারাপ 🙂
শুন্য শুন্যালয়
যা হারানোর হারিয়ে গেলেই দামী। যা দামী সবসময়ই দামী।
ছায়াকে হত্যা করা যায়না কখনো, চাইলেও না।
সাইদ মিলটন
ছায়াকে হত্যা করা যায়না কখনো, চাইলেও না। হাহাহাহাহাহা মানুষই নেই হয়ে যায় আর ছায়া 🙂
খসড়া
এপিটাপ শব্দটাই আমি পছন্দ করি না। কেন যে এত কষ্ট , এত আবেগ কেন দিয়েছে বিধাতা কিন্তু দেয়নি সক্ষমতা।
সাইদ মিলটন
“পৃথিবী ঠিক এক পুকুরের মতো, মাছের মতো মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে কোথায় কোথায়। বৃথা ছিপ ফেলে বসে থাকা, কোন দূরে হারিয়ে যাওয়া মানুষটিকে ধরে আনবে কাছে, এমন সাধ্য কী?” – শীর্ষেন্দু
মেঘাচ্ছন্ন মেঘকুমারী
এমন লেখা পড়তে কেন জানি ভয় করে আমার।
সাইদ মিলটন
ছায়ারে ভয় পাওয়ার কিছু নেই
লীলাবতী
এটি তো আত্মহনন ভাইয়া।
সাইদ মিলটন
নাহ আত্মহনন নয়, যেটা কাজের না ওইটারে দূর কইরা দেওয়ার চেষ্টা
ব্লগার সজীব
ভালো লেগেছে ভাইয়া। অকাজেরটা শ্যাষ 🙂
সাইদ মিলটন
হ 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
; নিয়ম হলো যা হারানোর হারিয়ে গেলেই দামী; এটি নিয়ম হলেও কষ্টের।
সাইদ মিলটন
জীবনের এটাও একটা দিক, মেনে নেয়াই ভালো