এপিটাফ

আগুন রঙের শিমুল ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:৩৭:৩৫অপরাহ্ন অন্যান্য ২৬ মন্তব্য

শুনশান আলপথ যেইখানে শেষ সেইখানে এসে দাড়াতেই ছায়া মুখ তুলে তাকায় তার কায়ার মুখপানে। বলে, পরম যত্নে আগলে রেখেছিলে হে। ভুলেই গেছিলাম প্রায় আমি ছায়ামাত্র। তোমাকে ছাপিয়ে নিজের মুর্তি গড়েছিলাম নিজেই।
কায়া নিশ্চুপ।
ছায়া বললে, খেলা তো ফুরোল কি করবে এবার?
কায়া বলল তুমি জানো
ছায়া অপলকে একটুখানি দেখে কায়ার লালচে চোখ, ভাবে একি ঘুমহীন রাত্তিরের নাকি জমাট অশ্রুর লাল ….. ভাবতে ভাবতে প্যাকেট থেকে শেষ সিগারেট বেড় করে ঠোঁটের কাছে ধরতেই কায়া দেশলাই এগিয়ে দেয়।
কায়া জানে ফায়ারিং স্কোয়াডের আসামিদের শেষ একটা সিগারেট খেতে দেওয়া হয়, বহুদিনের পুরনো নিয়ম।
ছায়া শেষ টান দিয়ে সিগারেটের অবশিষ্টাংস জুতোর তলায় পিষে কায়ার চোখে চোখ রেখে হাঁটু গেড়ে বসে। নির্বিকার।

কায়া পকেট থেকে রিভলবার বের করে একবার দেখে নেয়, একটা মাত্র কার্তুজ ঠিক হেডশট নিতে হবে।

ছায়া হঠাৎ বলে ওঠে, ওকি হাত কাপছে কেন? এতো খুন নয়, এতো মুক্তি। চিয়ার আপ ম্যান , কায়া একবার থমকায় তারপর হঠাৎ রিভলবার উচুঁ করে ট্রিগার টেনে দেয়।
ছায়া অপলকে তাকিয়ে ছিলো রিভলবারের দিকে, তাই সে দেখে হ্যামার পিছনে সরে যাচ্ছে, ড্রাম ঘুরতে শুরু করেছে আর সেকেন্ডের ভগ্নাংশ মাত্র এখুনি ছুটে আসবে তপ্ত সীসা।

এই মুহুর্তের ভগ্নাংশের মাঝেই তার চোখে খেলে যায় সবটুকু, সে যা কিছু ভালোবাসত পাগলের মতো। একলা হাঁটার পথ, আদিগন্ত জলরাশি, একলা একটা জলের পাখি ।তার ভালো লাগা ….. সব মনে পরে। কয়েকটা গাছের স্বপ্ন খেলে যায় তার চোখে, আটপৌরে গেরস্থালী গাছেরা সব। আর একটা টব… শুন্য টব নিঃসঙ্গ বারান্দায়। হেটে যাওয়ার আদিগন্ত পথ ইতিহাসের … একটা বাচ্চাছেলে গান গায় ”মিলন হবে কতদিনে… ”

তারপর হঠাৎ মিলিয়ে যায় সব কিছু। ভূতুড়ে নীরবতা।

কায়া কিছুক্ষন ছায়ার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে থেকে মমতায় তুলে নিয়ে বন্দী করে একটা চন্দন কাঠের কৌটায়। তারপর স্মৃতির অতলে তাকে কবর দেয় চিরতরে …… টিল টু দ্যা রেসারেকশন।

তারপর কাঁচা হাতে এপিটাফ লেখে ” এইখানে এক স্বপ্নভুক কবির মৃত ছায়া পরে আছে, যে স্বপ্নের চাষাবাদ করতো কাজল চোখের জমিনে। এইখানে মৃত এই ছায়া তার স্বপ্নের ওমে নিদ্রামগ্ন তাকে জাগানো নিষেধ ”

তারপর , কায়া তার স্বনামে ডেকে বলে সবাইকে ” এই হচ্ছি আমি , দশজনের ভেতর যাকে আলাদা করে চোখে পরেনা। কিন্ত আমার একটা ছায়া ছিলো যার ছিলো ঈশ্বরের মতো একা এবং খেয়ালী হৃদয় ” এই বলে সে কবিতার খাতা উল্টায় আনমনে, যা লিখে গেছে ছায়া। অক্ষমতায় তার চোখ জ্বালা করে।

আর সেইযে জলের পাখি , সে চোখ মুছে নেয় বাস্তবতার রুক্ষ কিন্ত সুগন্ধি টিস্যুতে। তাকে যেতে হবে বহুদুর…… নিয়ম হলো যা হারানোর হারিয়ে গেলেই দামী

বৈরি বাতাসে হায়েনার উল্লাস আর নেই নেই হাহাকার ।

 

 

১১৫৫জন ১১৫৫জন
0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ