সংসারে বসবাসকারী আমাদের আশেপাশের মানুষের আবেগীয় আচার-ব্যবহারে আমরা যা পাই তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। কার মনে কি আছে তা আমাদের দেখবার প্রয়োজন নেই, অন্তঃত আমি দেখিনা। মানুষের মনের খবর নিতে গেলে এবং তাদেরকে নিয়ে তাদের সাথে অপরিপক্ব সম্পর্ক করতে গেলে অনেক সময় তার সম্পর্কে প্রকৃত সত্য খুঁজে পাওয়া যায় না। এতে নানাবিধ বিড়ম্বনায় পতিত হতে হয় কারণ মন দুর্জ্ঞেয়। সংসারের দেনা-পাওনার, চাওয়া-পাওয়ার, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিগুলোর পিছনে মনের অনেক জটিলতর কিছু প্রশ্নের সমাধান হয়তো আছে তবে সেসব মেনে না চলাই ভালো। আমি দেখেছি, মানুষভেদে কেবল বাহিরে সন্তুষ্ট থাকতে পারলেই জীবনকে আনন্দময়ভাবে উপভোগ করা যায়।
মাঝেমধ্যে ভাবি, ভাগ্য মাঝি মুক্তিক্ষেত্র পার করে দিতে পারে এরকম কত ছেলে মেয়েকে পার করে তাদের অন্ধকারের মধ্যে কত ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে তার হিসেব নেই। মর্তের উপর তাদের নব নব জীবন আবার বিচিত্র সুখে-দুঃখে গড়ে উঠছে। যেকোনো বন্ধন কোনও অচল পরিস্থিতির মধ্যে অবরুদ্ধ হলে জীবনের প্রকৃত আনন্দময় স্বরূপের উপলব্ধি হয়না, সংসারের সঙ্গে তার অন্তরতম অন্তরঙ্গতাও তখন আর সাধিত হয়না। জীবনের সঙ্গে এই মুক্তিক্ষেত্রের সুষম রচনা হওয়ার প্রয়োজন। জীবনের সার্থকতা কিন্তু অন্যের জন্য ভালো কিছু করতে পারার মধ্যেই রহিত থাকে সবসময়।
কিন্তু শুধু নিজস্ব কিছু কর্মের মাধ্যমেই স্বার্থকতা অর্জন কি করে সম্ভব সবসময়? পলাতক জীবনের স্নেহ প্রেমও যে পলাতক, একবার এদিকেতো আরেকবার অন্যদিকে। মনরসায়নের ক্রিয়াবিধিতো এমনই। যে স্মৃতি আমরা পেছনে ফেলে যাই তার বেদনা তার উপলব্ধি মানুষের কাছে নির্মম ও বৃহৎ সত্য। একবার আঘাত পেলে আর সেমুখো হতে চায় না। পরিবর্তনশীল মানব জীবনের প্রকৃত স্বরূপ আমি বুঝিনা ঠিকই কিন্তু এদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, স্নেহ-প্রেম যে জীবনের গভীর তলদেশ হতে উৎসারিত হয় এবং এদের অস্তিত্বই যে জীবন সেটি আমি অর্থহীন ভাবে উপলব্ধি করছি প্রতিনিয়ত।
বিশ্ব প্রকৃতি তার সৃষ্টিকে একবার ভাঙছেন আবার গড়ছেন তার খেয়ালে। তিনি একবার ভাঙ্গেন আবার গড়েন, ধুলোমাটির কাটাকাটি খেলারত সব সময় তিনি একটা না একটা কিছু গড়ছেন। একটা কিছু করা শেষ হতেই আবার সেটা ভেঙে দিয়ে নতুন কিছু করছেন। এই খেলাতেই যেন তার আনন্দ। বিশ্বের সৃষ্টি প্রবাহের মধ্যে কোনো কিছু আঁকড়ে ধরে রাখা যায় না। তাই আবেগীয় অনুভূতিগুলি মাঝেমধ্যে নিজের মনে সঞ্চয়ের চেষ্টা করা বৃথা।
মন থেকে কেউ চলে গেলে দুঃখ-শোক করা অর্থহীন আমার কাছে। সৃষ্টির মধ্যে এই ধরনের ঘটনা চলছে এর কারণ হচ্ছে, ধ্বংস না হলে নতুন সৃষ্টি সম্ভব হয় না। একবার ধ্বংস হচ্ছে আবার নতুন সৃষ্টি হচ্ছে। আবার তা ধ্বংস হচ্ছে আবার নতুন সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে নিত্যনতুন সৃষ্টি হচ্ছে নতুন ধ্বংস হচ্ছে। সৃষ্টির এই লীলাখেলায় কোনো অংশেই যেন আমাদের কোন দুঃখ নেই, কষ্ট নেই।
যে মানুষ নিজের সমস্ত দুঃখকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কষ্ট বলে মনে করছে তাকেই বলি, সৃষ্টি রহস্যের মর্ম বুঝতে। উপরে বসে তিনি সুনিপুণ হাতে ভাঙা গড়ার খেলা খেলছেন অথচ আমরা কষ্ট পাচ্ছি অনেক কিছু হারানোর বেদনায়। তবে কি এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমাদের মাঝে আবেগ অনুভূতি দিয়ে তিনি নিজেই আবেগহীনভাবে বিচরণ করেন?
একদিকে মানুষের প্রতি মানুষের স্নেহ-প্রেম, অন্যদিকে নিষ্ঠুর মৃত্যু- সৃষ্টির অপরিবর্তনীয় একটি বিধান। এদের দ্বন্দ্বে আমাদের জীবনের একটা চিরন্তন ট্রাজেডি লুকিয়ে আছে। এটাই মানব বেদনার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। নির্মমতার রহস্য, ধ্বনিতত্ত্ব, মানুষের স্নেহ, প্রেমলীলা এসবকিছুকে প্রকৃতি নিত্যনতুন বিচিত্রতা ও সংগীত দিয়ে সুর করেন সবসময়। এই সুরেই রচিত হয় প্রেম-বিরহ, না পাবার কষ্ট, সুখ-দুঃখ এসব সাময়িক আবেগানুভূতি। কাজেই মানুষ হয়ে এই আবেগীয় গড্ডালিকায় গা না ভাসিয়ে কিছু নিজস্বতা বজায় রেখে অন্যের জন্য ভালো এবং মহৎকর্ম করার মাঝেই নিহিত রয়েছে অপার মানসিক সুখ-শান্তি। সেই কর্মপ্রণালী আমাদের নিজেদেরই খুঁজে নিতে হবে।
এই সংসার নন্দনকাননে এসবের মাঝখানে যে চিরন্তন সত্য বসে আছে সেটা হচ্ছে, আমরা কোন এক সময় তাঁর কাছেই ফিরে যাবো, সবাই সেই রাজ্যেরই অধিবাসী হবো। সবাইকে এক সময় তার দিকেই নির্নিমেষ নয়নে চেয়ে থাকতে হয়, আর এটাই জীবনের একমাত্র ও চিরন্তন সত্য।
*******
*******
১৬টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
শুভ কামনায় হাজিরা দিলাম।
তৌহিদ
আবার আসবেন কিন্তু, চা খেয়ে যাবেন ভাইজান। ☺
জিসান শা ইকরাম
ছবিটির দিকে তাকিয়েই আছি মুগ্ধ দৃষ্টিতে,
লেখা পড়বো কখন!
তৌহিদ
ছবিটি আসলেই দৃষ্টিনন্দন কিন্তু! আমি যখন প্রথম দেখেছিলাম তখন নিজেও অনেক্ষন তাকিয়ে ছিলাম। চোখের ব্যায়াম হলো কি বলেন ভাই?
জিসান শা ইকরাম
হ্যা তা হলো 🙂
নিতাই বাবু
তিনি পাক্কা খেলোড়! তাঁর লীলা কে বুঝিতে পারব? অন্তত আমি অধম বুঝি না। এই বুঝ আমার অনুভবেও আসে না। শুধু বাঁচি বাঁচি। খাই খাই। নাই নাই। আরও চাই আরও চাই।
তৌহিদ
আমাদের চাওয়ার শেষ নেই দাদা। কিছু না পেলেই তার প্রতি মনঃক্ষুণ্ণ হই। অথচ তিনি যা কিছু করেন সব ভেবেচিন্তেই করেন তাইনা?
আমার প্রতিটি লেখায় আপনার মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করে দাদাভাই। শুভেচ্ছা রইলো।
আরজু মুক্তা
নজরুলের ঐ গানটা শুনেছেন? “খেলিছো এ বিশ্বালয়ে বিরাট শিশু আনমনে খেলিছো। প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা, আনমনে প্রভু, আনমনে খেলিছো।”
এই গানটির ভাবার্থকের মতো আপনার লিখা।
ভালো লাগলো।
তৌহিদ
আমার লেখায় নজরুলকে খুঁজে পেলেন। তাহলেতো লেখাটি স্বার্থক।
আসলেইকি এমন ভাবের লেখা এটি? কি জানি, পাঠকই ভালো বলতে পারবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ছবির আঙ্গিকে কিছু বলতে হয়।
পাতারা ঝরে পড়লে পঁচে যায়-
শেওলার আজ আগন্তুক নয় তাই তার প্রশংসার দ্বার খুঁজে।
এই বিশ্বচরাচরে অজস্র তাঁহার লীলা।
এই অজস্র তাঁর লীলা আমরা তা অনুভব করতে পারিনা। তাই বুঝে উঠতে পারি না।
.
এমন ভালো লেখনীর জন্য অজস্র সাধুবাদ জানাচ্ছি দাদা।
ভালো থাকুন অহর্নিশ।
তৌহিদ
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই। লেখায় আপনার উপস্থিতি আসলেই ভালোলাগে আমার। শুভকামনা রইলো।
মোঃ মজিবর রহমান
ছবি আমাকে মুগ্ধতর থেকে মুগ্ধ করেছে তৌহিদ ভাই।
স্রিস্টিকরতার ইচ্ছে কি বাহির করা অসম্ভব। তার নীলা বুঝা কঠিন।
তৌহিদ
মন্তব্যে অনেক ভালোলাগা রইলো ভাই। শুভকামনা জানবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যা আপনিও ভাল থাকুন
সাবিনা ইয়াসমিন
মানুষ যতটুকু দেখায় তা দেখেই সন্তুষ্ট থাকা ভালো। কারো মনের ভেতর তলিয়ে দেখতে গেলে হয়তো নিজেদেরও তলিয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। যে আসে তাকে স্বাগত, যে স্বেচ্ছায় মন থেকে দূরে চলে যেতে চায় তাকেও শুভ বিদায়। আসা-যাওয়ার চক্করে ঘুরে বেড়ানো মানুষদের এর থেকে বেশি কি-ইবা দেয়া যায়? মানুষ ইচ্ছেয় বা অনিচ্ছেয় অগ্রসর হবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। বাস্তবতা যে মেনে নিতে পারে তাকে দুঃখ-ব্যাধি ধরে রাখতে পারেনা। সে এগিয়ে যায় তার নিজ পথে, আপন গন্তব্যে।
লেখাটি খুব ভালো লেগেছে তৌহিদ ভাই। লেখার সাথে ছবি নির্বাচন– যথার্থ হয়েছে। ” ততো টুকুই দেখো যতটা বাহিরে দেখা যায় ”
শুভ কামনা 🌹🌹
তৌহিদ
বাস্তবতাই মানতে চাইনা আমরা। অযাচিতভাবে অন্যের ভিতরে প্রবেশ করতে চাই যা মোটেও উচিত নয়। অন্যের ইচ্ছে অনিচ্ছার মুল্য দিতে হবে। তবেইতো ভালোবাসা প্রাপ্তি হবে।
মন্তব্যে অনেক ভালোলাগা রইলো আপু।