তোমার বাবা এলো কলকাতা থেকে।তুমি আমাকে উপহার দিলে কলকাতার বরোলিন,দুলালের তাল মিসরি আর একটি লাল পাঞ্জাবি। তোমার অনুরোধে তখনি পরে দেখাতে হলো পাঞ্জাবি ঠিক ঠাক ফিটিং আছে কিনা। তুমি আশ্বস্ত হলে।
দুলালের তালমিসরি খেতে গিয়ে বোতলের গায়ে লেখা কবিতার দুটি লাইন দেখে একটু জোরে সোরেই তা পাঠ করলাম– “আসল নকল নিয়ে কেন এত হৈ চৈ কোন দিন ছিল নাতো ছবি আর সই”। দুজনেই শব্দ করে হাসলাম। তাল মিসরি মুখে দিয়ে দাঁতে কড় কড় করে ভেঙে খেতে গিয়েই তুমি বললে, তাল মিসরি চুষে খেতে হয়,চিবিয়ে নয়।
– তা কেমন করে চুষবো?
তুমি আমার ঠোঁটে মুখ লাগিয়ে ক্ষণিক চুষে দিয়ে বললে– এই ভাবে! আমরা আবারো শব্দ করে হাসলাম!
বৈশাখের প্রথম দিন।লাল পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে বাঙালি বাবু হয়ে তোমাকে নিয়ে বের হলাম।তুমিও সাজলে আবহমান কালের বাঙালি নারী সাজে। খোঁপায় কৃষ্ণচুড়া ফুল দেখে মুগ্ধ হলাম।
দু’জন উড়ে বেড়ালাম সারা ঢাকা শহর।ফিরতে সন্ধ্যা হলো।বাসার কাছে আসতেই তোমার মা’য়ের মুখোমুখি হলাম।তিনি আমার গায়ে লাল পাঞ্জাবি দেখে কপালে চোখ তুললেন!তবে মুখে কিছুই বললেন না।
দুই দিন তোমার খবর নাই।খবর নিতে গিয়ে দেখি,তোমাদের বাসা ভরতি মেহমান।তিনদিন পর তোমার ছোট বোনের দেখা পেলাম।তার মুখে শোনলাম – আমাকে পাঞ্জাবি দেওয়ার অপরাধে তোমার মা তোমাকে খুব মারধর করেছে।আমি তখনি পাঞ্জাবিটা ফেরৎ দিতে চাইলাম।তোমার বোন দৌড়ে পালালো।
ভার্সিটি খোলার দিন আমি আগে ভাগেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোমার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।শ্রাবণের আকাশের মতো মুখ অন্ধকার করে তুমি এলে।আমরা রিক্সা নিলাম।তুমি আমার দিকে একবারও তাকালে না।কেমন মুখ ভার করে চুপটি মেরে রইলে।তোমার মৌনতা ভাঙতে কত কথা,কত রকম গল্প বলেও তোমার কোন সাড়া পেলাম না। একটি নোংরা চুটকীও বললাম- কাজ হলো না– তুমি হাসলে না।
কী হয়েছে তোমার?অত ভাব নিচ্ছো কেন?কোনদিন তো এমন করোনি।আজ কেন এমন করছো?রিক্সায় তুমি সারাক্ষণ ট্যাঁ ট্যাঁ করে এটা কি ওটা কি, এই গল্প সেই গল্প বলে আমাকে জ্বালিয়েছো।না,শোনলে চিমটি কেটেছো।হঠাৎ আজ কি এমন হলো? কেন মোড অফ?কারণটা বলো শুনি।
তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি চোখের জলে ভাসছো!আমার বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠলো।তোমাকে জড়িয়ে ধরে হাতটা শক্ত করে ধরে শত চুমু দিয়ে বললাম–কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো।যত কঠিনই হোক তা আমি সহজ ভাবে নেবো। তোমার মা মেরেছে?
তুমি কিছুই বললে না। চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়াচ্ছে। চোখে কাজলও নেই,ভেজা চোখ সুন্দরও লাগছে না।শেষমেশ বই খাতার ঝুলি থেকে তোমার দেওয়া উপহার সেই লাল পাঞ্জাবি খানি তোমার কোলে রাখতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলে।সে কি কান্না!তোমার কান্নার শব্দে রিক্সার গতি শ্লথ হয়ে এলো।রিক্সা চালক পেছনে ফিরে বলে ওঠলো-কি অইছে আফার– আফা কান্দে কেরে?
মামা,তুমি সামনে তাকিয়ে রিক্সা চালাও,এক্সিডেন্ট করবে তো!
১২টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
আমিও জানতে চাই আফামনি ক্যান কান্তেসে?
তালমিসরি চিবিয়ে খেতেই ভালো লাগে।
শুভ কামনা 🌹🌹
জিয়া আল-দীন
আফামনি কবিরা গুনা করেছে। শাস্তি স্বরূপ তার মা দোররা মেরেছে!
তালমিসরি চুষে খাওয়াই ভালো,শব্দ দূষণ হয় না।
ধন্যবাদ।শুভকামনা নিরন্তর।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ও মোর আল্লা প্রত্যেকদিন কাঁন্দে যে!!!!
রোমান্টিক কিছু চাই! একটু বড় করে।।।
এটা পড়ে মনে হলো হইয়াও হইলো না শেষ!!!!
শুভ কামনা।।।
জিয়া আল-দীন
কান্দাইতে ভালা লাগে। চোখের কাজল লেপ্টে যায়।আদর করার সুযোগ পাই!
ধীরে ভাইয়া,বয়স হইছে,কিন্তু রোমান্টিকতা এখনো আমাকে ছেড়ে যায়নি।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
শুভ কামনা।🌹
নার্গিস রশিদ
এতো বড়ো মেয়ের গায়ে হাত তোলা ? এ কেমন মা।
জিয়া আল-দীন
আমরা ভিন্ন ধর্মী ছিলাম।মা বার বার নিষেধ করেছিল আমার সংগে না মিশতে। সে মা’য়ের কথা শোনেনি।বিদ্রোহ করেছিল।তাই দমন নিপীড়ন ছিল অনিবার্য।
আপনার সদয় সহানুভূতির জন্য ধন্যবাদ।শুভ কামনা।
তির্থক আহসান রুবেল
এখনো রিক্সার প্রেম টিকে আছে টুকটাক। চার দেয়ালের বাইরে রিক্সার প্রেমটাও টিকিয়ে রাখা জরুরী
জিয়া আল-দীন
রিক্সা যতদিন আছে রিক্সার প্রেমও থাকবে। রিক্সা প্রেম যেন ধীরে মুছে না যায়– নক্ষত্রের যেন মরে যেতে না হয় তেমনি প্রত্যাশা।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
হালিমা আক্তার
খুব জানতে ইচ্ছে করছে, আফা মনি এখন কেমন আছে। এতো বড় মেয়ের গায়ে হাত তোলা অন্যায়। সময় পরিস্থিতি ন্যায় অন্যায় বুঝে না।
শুভ কামনা রইলো।
জিয়া আল-দীন
জ্বি,পরিস্থিতি অনুকূলে ছিল না।
আফা এখন অন্য আলোতে আছে।সেখানে কেমন আছে জানি না। তবে সেই আলোতে ভালো থাকুক এইটুকু প্রার্থনা।
ধন্যবাদ।শুভ কামনা।🌹
অনন্য অর্ণব
তাল মিস্রির সাথে লাল পাঞ্জাবী !!
তারপর কি পাঞ্জাবীটা মায়ের দরবারে গেছে?
রিতু জাহান
হা হা,, অপরাধ তো মারাত্মক!
পাঞ্জাবি তবে কি ফেরত গেলো?