
অজস্র না পড়া বই পড়ে আছে আমার হোম লাইব্রেরীর বুক সেলফে। কিন্তু সেগুলো খুলে দেখা তো দূর ছুঁয়েও দেখা হয়নি। অথচ একটা সময় ছিল যখন ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন, রাতের পর রাত জেগে জেগে, নাওয়া খাওয়া ছেড়ে বই পড়তাম। অনেক অনেক বই কিনতাম। কেউ বই পড়ার আগ্রহ দেখালে কিনে গিফট করতাম। কারো সাথে বাজিতে হেরে গেলে বা জিতে গেলে পুরুস্কার হিসেবে বই রাখতাম। কেউ কিছু উপহার দিতে চাইলে একগাদা বই এর লিস্ট পাঠিয়ে দিতাম। বিশেষ দিনগুলোতে বই পেলেই খুশি হতাম। কারণে অকারণে বই কিনতাম। মেয়ের বাবাকে বলেছিলাম প্রতিদিন না হোক প্রতি সপ্তাহে একটা করে বই দিতে। আর এখন বই কেনাও হয় না পড়াও হয় না।
এটা কি উদাসীনতা! যদি উদাসীনতা হয় তবে এর জন্য দ্বায়ী কে? আমি নাকি ব্যস্ততা! ব্যস্ততা নাকি চরম বাস্তবতা! ব্যস্ততা, বাস্তবতা নাকি উদাসীনতা কোনটা আমাকে পাঠ বিমুখ করে তুলেছে? কোনটা অধ্যবসায়ের পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! আগে আমার মাথায় শুধু পড়া ছাড়া আর কোনো চিন্তা ছিল না। কোনো রকমে দিনে একবার রান্নাবান্না করে সেই যে বসতাম বই নিয়ে আর উঠতাম না। আর এখন আমার মস্তিষ্কে সবচেয়ে বেশি যেটা ঘুরপাক খায় সেটা হলো আত্মসম্মান। ইদানিং আত্মসম্মান এতো পেয়ে বসেছে যে আর কিছুই মাথায় আসে না।(বর,বাবা, ভাইদের) অন্যের রোজগারে বসে খাওয়া, অন্যের ইনকামের টাকায় ফুটানি করা কিংবা প্রয়োজনে অন্যের থেকে টাকা চাওয়া মৃত্যুসম যন্ত্রণা দেয় আমায়। শুধু আমায় কেনো বোধসম্পন্ন প্রত্যেকটি নারীই হয়তো চান না অন্যের টাকায় জীবন যাপন করতে। সে যা হোক, তাই প্রতিটি মূহূর্তে কিছু না কিছু করছি যাতে কিছু টাকা আসে হাতে। নিজের সমস্ত ভরণপোষণ না হোক অন্তত নিজের হাত খরচ বা নিজের প্রয়োজন যেনো নিজেই মিটাতে পারি। তাই যখন যা কাজ পাই করি। কখনো বাইরে প্রজেক্টের কাজে, কখনো অফিসিয়াল কাজের অনলাইন এন্ট্রি, কখনো ফ্রিল্যান্সিং…ইত্যাদি। আর সবগুলো কাজই করতে হয়, হয় ল্যাপটপ নয় ডেস্কটপ অথবা ট্যাবে। দীর্ঘক্ষণ ধরে চোখের সামনে এগুলো থাকার জন্য আর ইচ্ছে করে না বই খুলে দেখতে।
মাঝে মাঝে ভাবতাম অবসর সময়ে পড়বো অনেক অনেক বই। এদিকে আবার বড়াপু সবসময় বলেন
‘যার ছয়ে হয় না তার নয়েও হয় না।’
তবে কী ব্যর্থ আমি? আত্মসম্মান আমাকে ব্যর্থতার সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে যাচ্ছে!
বসে বসে অন্যের অন্ন ধ্বংস করার চেয়ে নিজের রোজগারে খাওয়া অনেক শান্তির আমার আছে। আবার সাহিত্য প্রেমী মানুষটি সাহিত্য থেকে দূরে থেকে একটু একটু করে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে। সময়ের উপর সবটা ছেড়ে দিতে পারছি না আবার বাস্তবতাকেও উপেক্ষা করতে পারি না।
উদাসীনতা কখনোই আমায় আকৃষ্ট করতে পারে না। আবার আত্মসম্মান ত্যাগ করতে পারি না যা চরম বাস্তবতা। আর চরম বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না।
২৩টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
কি বলব? বুঝে উঠতে পারছিনা। এই আত্বসন্মান থেকে বাহির হতে হলে ধর্মীয় বই পড়ুন, নিজেকে স্রষ্টার নিকট অবনতমস্তকে ডাকুন আল্লাহ আপনার আমার এই দুর্বস্থা থেকে পার করবে ইনশা আল্লাহ।
বই পড়া শুধু আপনার না অনেকের নিকট থেকেই দূরে সরে গেছে।
সুরাইয়া পারভীন
আত্মসন্মান থেকে বের হবো কেনো? আত্মসন্মান না থাকলে সে মানুষ হয় কি করে?
যার আত্মসন্মান নেই যে কখনোই মানুষ হতে পারে না আমার দৃষ্টিতে। ধন্যবাদ
ভালো থাকুন সবসময়
প্রদীপ চক্রবর্তী
একি অবস্থা আমারও!
অনেকগুলো বই পড়ে আছে কিন্তু অলসতার জন্য পড়তে পারছি না।
আজ পড়ব না কাল পড়ব এভাবে চলছে।
তবে যাই গতকাল বুদ্ধদেব গুহের “ছেড়া ক্যানভাস” শেষ করেছি।
আজকে আরও নতুন কিছু পড়তে হবে।
পড়ার বিকল্প নেই।
.
যারা সাহিত্যচর্চা করে তারা এ চর্চা থেকে সরে দাঁড়াতে পারেনা।
বরং আপনি ব্যর্থ কেন হবেন কাজের ফাঁকে পড়ুন এবং লিখুন। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে,দিদি।
.
অনেক জায়গায় টাইপিং মিস্টেক আছে দেখে নিবেন।
সুরাইয়া পারভীন
একদম সঠিক বলেছেন
সাহিত্য চর্চাতে অধ্যবসায়ের বিকল্প কিছু নেই
চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইলো দাদা
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
হালিমা আক্তার
এ সমস্যায় আমিও আছি। বই পড়া নিয়ে আমি একটি পোস্ট দিতে চাচ্ছিলাম। একসময় খুব পড়তাম। এখন আর সেই নেশা টানেনা। শুভ কামনা রইলো।
সুরাইয়া পারভীন
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু চমৎকার মন্তব্যের জন্য
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
সান্তনা দিচ্ছি না, সান্তনা হয় না,
অনেক কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, ইচ্ছে করলেও অনেক কিছুই পাল্টাতে পারি না।
তবে হবে হচ্ছে না, তা হতেই পারে, তবুও কষ্ট করে হলেও কাজে লেগে থাকুন,
আর পড়া সে আপনি আবার ফিরে পাবেন। আমরাও অপেক্ষায় থাকবো তেমন আনন্দ-দিনের।
সুরাইয়া পারভীন
তেমন দিনের অপেক্ষায়
যাক কেটে যাক বিষণ্ণ ব্যস্ত সময়
চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইলো ভাইয়া
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
রোকসানা খন্দকার রুকু
এমন আমারও অবস্থা পড়া হয়ে ওঠে না কিন্তু পড়া উচিত। সফলতার জন্য চেষ্টা করা উচিত একসাথে রুটিন করে নিয়ে চলা। তাতে মোটামুটি ম্যানেজ হবে হয়তো।
শুভ কামনা আপু।।।
সুরাইয়া পারভীন
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইলো আপু
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার কথার মধ্যেই মনে হয় প্রশ্নের উত্তর রয়েছে –“বসে বসে অন্যের অন্ন ধ্বংস করার চেয়ে নিজের রোজগারে খাওয়া অনেক শান্তির আমার আছে। আবার সাহিত্য প্রেমী মানুষটি সাহিত্য থেকে দূরে থেকে একটু একটু করে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে। সময়ের উপর সবটা ছেড়ে দিতে পারছি না আবার বাস্তবতাকেও উপেক্ষা করতে পারি না”। আসলে কঠিন বস্তবতার কাছে আমরা সবাই অসহায়।
সুরাইয়া পারভীন
সব কিছু মেনে নিয়েই জীবন
চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনিও সুস্থ এবং ভালো থাকবেন। শুভ কামনা।
রেজওয়ানা কবির
আপনার প্রত্যকটা লাইন মনে হয় আমার নিজের কথা এসব প্রশ্নের উত্তর আমিও খুঁজে ফিরি।।।।
সুরাইয়া পারভীন
পেলে জানায়েন আপু😃
অনেক অনেক ধন্যবাদ রইলো
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
আরজু মুক্তা
সময় বন্টন করা উচিত। তাহলে সমস্যা হবে না
সুরাইয়া পারভীন
সবসময় নিয়ম মাফিক কাজ করা হয়ে ওঠে না
তবুও চেষ্টা করবো আপু
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইলো
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
সাবিনা ইয়াসমিন
বাস্তবতা উপেক্ষা করা কঠিন। বাস্তবতা আমাদের প্রতি মুহুর্তে বর্তমানে দাঁড় করিয়ে দেয়। বিষন্ন সময় পেরিয়ে যাক। শুভ কামনা 🌹🌹
সুরাইয়া পারভীন
ব্যস্ততা সমস্ত বিষন্নতাকে দূরে সরিয়ে রেখেছে
এখন আর বিষন্ন বিলাসী হবার সময় নেই
অস্তিত্বের লড়াইয়ে শুধু ঠিকে থাকতে হবে যে
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইলো আপু
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময় ❤️💖❤️
সঞ্জয় কুমার
আমার মনেহয় এখানে মূল ব্যাপারটা হলো অভ্যাস।
অভ্যাস টা আবার গড়ে তুলুন।
জোর করে হলেও ১ পৃষ্ঠা পড়ুন।
বইয়ের সাথে পুরনো বন্ধুত্ব আবারও জোড়া দিন।
সুরাইয়া পারভীন
সংসারের কাজ সামলে সারাদিন ল্যাপটপে অফিসিয়াল কাজ করার পর চোখের যা অবস্থা হয় তার উপর যদি আবার বই নিয়ে বসি তবে খুব স্বাভাবিক আর ধৈর্য্য থাকবে না পড়ার ।
চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
নার্গিস রশিদ
কঠিন বাস্তবের কাছে আমরা খুব অসহায় । এই অভিজ্ঞতা অনেকের আছে। আল্লহার ইচ্ছায় একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
সুরাইয়া পারভীন
ইনশাআল্লাহ। সেই অপেক্ষায় সামনের দিকে এগিয়ে চলা
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইলো
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময় ❤️