চারিদিকে সবুজ বৃক্ষরাজি আর মাঝ খানে রঙ্গন ফুলের ঝোপ আর পাতা বাহারের বেড়া দিয়ে দিয়ে ঘেরা সেমিট্টি ইয়ার্ড। নীরব, নির্জন দৃষ্টিনন্দন স্থান হিসেবে এ স্থানটির অতুলনীয়। সৈনিকদের ঘুমিয়ে থাকার জন্য এর থেকে শান্তির জায়গা যেন আর হয়না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চট্টগ্রাম থেকে বার্মা ফ্রন্টে তৎকালীন বৃটিশ ভারত, বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, বার্মা, পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকা, হল্যান্ড এবং জাপানের যেসমস্ত সৈনিক নিহত হন তাদের ৭৫৫ জনের সমাধি আছে এখানে। এই সংরক্ষিত সমাধি কেন্দ্রের সার্বিক তত্বাবধান এবং ওখানকার কর্মচারীদের বেতন ভাতা ইত্যাদি কমনওয়েলথ গ্রেইভস কমিশন থেকে প্রদান করা হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অদূরে গোলপাহাড় মোড়ে যেতে বাম দিকে তাকালে চোখে পড়বে বাদশা মিয়া রোডের পাশে ওই আকর্ষণীয় যুদ্ধ সমাধির অবস্থান। ওয়ার সিমেট্রির প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই সমাধিস্থলের মাঝখান বরাবর একটি অপূর্ব ক্রুশ চিহ্নিত বেদি চোখে পড়বে। তবে আমার মনে হয়েছে এটা ক্রুশ এবং তরবারির সম্মিলিত কোন একটা নকশা। সিমেট্রি ফটকের উভয় দিকে লাল ইটের গাঁথুনি ও কাঠের ছাউনির ছোট্ট দুটি দোচালা কুটির। দক্ষিণ পাশের কুটিরে রাখা হয়েছে মেমোরিয়াল বুক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাণিজ্যিক নৌবহরে যে সাড়ে ছয় হাজার নাবিক মারা যান, তাদের নাম ও পদবি এই মেমোরিয়াল বুকে লিখিত আছে। পাশের কুটিরে সংরক্ষিত একটি রেজিস্টারে ৭৫৫ জন সৈনিকের নাম, পদবী ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই ওয়ার সিমেট্রিতে ৭৫৫ জন সৈনিকের প্রত্যেককে স্বস্ব ধর্মীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
(২) মেইন রোড থেকে ঢোকার সময়ই কেমন যেন একটা পবিত্র আবহ মনটাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। বিশেষ করে বাম পাশের কাঠ গোলাপ গাছগুলোর জন্য।
(৩) কাঠ গোলাপে সব সময় কেমন যেন একটা পবিত্র বা আধ্যাত্মিক আবহ থাকে, যদিও এই সময়টাতে গাছগুলো ফুল ছিল কমই।
(৪) ওয়ার সিমেট্রির প্রধান ফটক। সিমেট্রি ফটকের উভয় দিকে লাল ইটের গাঁথুনি ও কাঠের ছাউনির ছোট্ট দুটি দোচালা কুটির। সমাধিস্থলের মাঝখান বরাবর একটি অপূর্ব ক্রুশ বা তরবারি চিহ্নিত বেদি এবং তারপরে রয়েছে আরো একটা লাল ইটের গাঁথুনি যুক্ত কুটির।
(৫) মেইন ফটক পার হলেই পড়বে এই সাইবোর্ড, যাতে লেখা রয়েছেঃ এখানে ৭৫৫ জনের কবর শায়িত আছে। দৌড়াদৌড়ি করা, কাপড় বদলানো, গাছে উঠাও পাথরের চিহ্ন বস্তু নষ্ট করা যাবে না। বসে থাকা এবং গল্প করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সম্মানের সাথে শান্ত ব্যবহার করুন তাদের প্রতি যাহারা এখানে শায়িত আছেন।
(৬) তারপর মাঝখানে ফাকা মাঠের মতো। দুইপাশে সৈনিকদের কবরের নাম ফলক ওপারে ক্রুশ বেদি।
(৭) বেদির মাঝে এটা ক্রুশ বা তরবারি দুটোই চিহ্নিত করা হয়েছে কিনা আমি নিশ্চিৎ না।
(৮) বেদির পাশে সবুজ ঘাসগুলোকে পাইপ দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছিল একজন।
(৯) অন্য একজন কাজের ফাকে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিল।
(১০/১১) ফুল গাছের ফাকে ফাকে নাম ফলকগুলো যেন বেশ চমৎকার দেখা যাচ্ছিল।
(১২/১৩) মুসলিম নাম ফলকগুলো এমন।
(১৪) খৃষ্টানদের নাম ফলক।
(১৫) নাম ফলকগুলো এবং পুরো সেমিট্রিতেই রয়েছে শৈল্পিকতার ছাপ।
(১৬) দক্ষিণ পশ্চিম কর্ণার থেকে তোলা ছবি এটি।
(১৭) আমার অতি পরিচিত ও প্রিয় ফুল ল্যান্টানা, ওদের ছবি না তুলে কি আমি পারি? 🙂
(১৮) এখানে ছোট এই বেদিটিতে লেখা রয়েছেঃ ১৯৩৯-১৯৪৫ যে ৬৫০০ নাবিক ও বাণিজ্য জাহাজের লস্কর দেশ মাতৃকার সেবায় মৃত্যু বরণ করিয়াছে সমুদ্রের অতল তল ভিন্ন যাহাদের আর কোথাও সমাধি নাই এই পুস্তকে তাহাদের নাম রহিল।……এমনটা পড়ে সত্যিই মনটা খারাপ হয়।
(১৯) বইটার একটা পৃষ্ঠা এমন।
(২০) ফিরে আসার আগে শেষ ক্লিক।
১৬টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
আবার আসব পড়তে কামাল ভাই।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ মজিবর ভাই, শুভ কামনা সব সময়।
আলমগীর সরকার লিটন
কামাল দা যদি এটা পোস্ট না করতেন জানতামি না চট্টগ্রামে ওয়ার সিমেট্রি আছে
সব সময় ভাল থাকবেন———
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আলমগীর ভাই, আপনিও ভালো থাকুন সব সময়।
ছাইরাছ হেলাল
বহুদিন পরে এসে কবর দেখিয়ে ভ্য় দেখাচ্ছেন না তো?
কামাল উদ্দিন
এটা তো আমাদের অমোঘ নিয়তি, ভয় পেয়ে আর লাভ কি?
হালিমা আক্তার
ইচ্ছে ছিল দেখার, সময় হয়নি।
কামাল উদ্দিন
একদিন হয়তো হয়ে যাবে আপু…….
মোঃ মজিবর রহমান
ইতিহাস স্বাক্ষি হয়ে আছে। বীর ঘুমিয়ে থাক শান্ত হয়ে।
কামাল উদ্দিন
হুমম, ওখানে গেলে মনটা বিশাল উদাস হয়ে যায়। কোনখানকার মায়ের কোল খালি করে কোথায় কে ঘুমিয়ে আছে।
মোঃ মজিবর রহমান
কার সন্তান কোথায় মহান স্রষ্টা ভালো জানে।
কামাল উদ্দিন
হুমম, ঠিক বলেছেন বড় ভাই
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার সুন্দর বর্ণনায় নতুন করে এই স্থান সম্পর্কে জানা ও দেখা হলো। বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইল এইসব বীরদের প্রতি। ওরা শান্তিতে ঘুমাক।
কামাল উদ্দিন
এফিটাফের বর্নণাগুলো পড়লে খুবই মন খারাপ হয় আপু।
নার্গিস রশিদ
এ রকম জায়গাতে মরেও শান্তি । এতো সুন্দর! শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
হয়তো তাই, কিংবা না……শুভ কামনা জানবেন আপু।