
আত্মীয় স্বজন বোবা কান্নার মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে। বৃদ্ধ দাদিমা অঝোরে কেঁদেই চলছে। আর বারবার বলছে – আল্লাহ, তুমি আমাকে আগে নিলা না কেন? তুমি আমাকে আগে নিলা না কেন?
ছেলের বউ কেঁদে কেঁদে বেহুশ হয়ে পরে আছে। প্রতিবেশী কয়েকজন মহিলা গিয়ে মাথায় পানি ঢালছে। যখনই একটু জ্ঞান ফিরছে তখনই আবার সেই কান্না। এমন বুকচেরা কান্না, আহাজারি গ্রামগঞ্জে আগে কখনো দেখিনি।
বারান্দার খুঁটি ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আর ঢোক গিলতে পারছে না সুজন। চোখের পানিতে বুক ভিজিয়ে ফেলেছে। অবুঝ ভালবাসা বুঝি এটাকেই বলে। যেখানে হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের সম্পর্ক, দেহের সাথে দেহ মিশে নতুন সম্পর্ক তৈরি করে। সেই প্রিয় মানুষের চলে যাওয়া শুধু চলে যাওয়া নয় হৃদয় ক্ষরণ তৈরি করা।
হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির গড়ান দিয়ে উঠে আসলো ছোট মেয়ে। বিজয় মিছিলের মতো আবার কান্নার লহর পর গেলো। উমা! সে কি কান্না? উপস্থিত সবার চোখে তখন অশ্রু-শিশির গুলো টলমল করছিলো। যেন পলক পড়লেই দুফোঁটা গড়িয়ে যাবে বুক অবধি। ততক্ষণে কাঁদতে কাঁদতে দাঁত লেগে গেছে ছোট মেয়ের।
জামাল কাকুর কাঁধে বর করে উঠানে এসেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো সেজনু কাকু। বারবার বলতে লাগলো শেষ কথাটাও শুনতে পেলাম না। শেষবারের মতো মাফ চেয়েও নিতে পারলাম না। সুজন দৌড়ে এসে সেজনু কাকুকে জড়িয়ে ধরে আবার কাঁদতে লাগলো। বাপ-বেটার কান্নায় অশ্রুজলে ভেসে গেলো উপস্থিত সবাই। অনেকেই বলতে লাগলো এরকম নাতি, সন্তান, ছেলের বউ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। সবার কপালে কান্নার অংশীদার টুকুও জোটে না।
ইমাম সাহেব সেজনু কাকুকে বললো – আর দেরি করা সম্ভব নয়। যত তারাতাড়ি সম্ভব…..।
সেজনু কাকু কাঁদতে কাঁদতে বললো – আপনার যেটা ভালো মনে হয় তাই করুন।
থানা থেকে বেশ কয়েকজন কনস্টবল ও একজন এসআই এসেছে। কয়েকজন গ্রাম পুলিশও সেই সকাল থেকে বসে রয়েছে। এসআই’র কথায় দুইজন গ্রাম পুলিশ গিয়ে সেজনু কাকুকে বললো তার মায়ের কাছে অনুমতি নিয়ে আসার জন্য।
অনুমতি নিয়ে শেষবারের মতো স্যালুট দিয়ে বিদায় জানালেন পুলিশ সদস্যরা।
গুলির শব্দে বাড়িটা তখনও থমকে আছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ভয় পেয়ে ঘরের চৌকির নিচে গিয়ে পালিয়েছে। আর এদিকে মসজিদের মাইকে শেষবারের মতো সময় বলে দেওয়া হলো।
জানাজার জন্য মাঠের দিকে রওনা হলো সবাই। আর ওদিক দিয়ে নদীর স্রোতের মতো কাঁদতে থাকলো আত্নীয় স্বজন। মাঠে খাটিয়া রাখার মতো জায়গা নেই। এতো লোকজনের উপস্থিতি আগে কখনো দেখিনি। পুরো মাঠ কানায় কানায় ভরে গেছে। মুক্তিযোদ্ধা বলে কথা।
১১টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
এই ছবি দেখলেই মনের মাঝে কেমন করে উঠে। বুঝিনা!
লেখায় বানান দয়া করে ঠিক করুন যেমন ভর করে হয়ে গেছে বর করে যা বাক্যের অর্থ পাল্টিয়েছে। আর অর্থ বুঝতে পাল্লাম না গল্পের।
মুক্তুজোদ্ধার আর ভাল মানুষের জানাজায় লোক সমাগম হয়।
নৃ মাসুদ রানা
ঠি আছে।
মোঃ মজিবর রহমান
ধন্যবাদ ভাই
নিতাই বাবু
আমার মতে, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধার জীবনাবসান ঘটলো; সেই বীর মুক্তিযোদ্ধার নামটা লেখার মাঝে প্রকাশ আরও ভালো হতো। আবার কারোর মতে মনে হয় এ-ও ভালো হয়েছে। তবে বর্তমানে দেশের যেকোনো জেলাশহরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্তেকাল করলে, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধার নামাজে জানাজায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা এভাবেই দেওয়া হয়। দেখেছিও।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয়, নামটি যোগ করে দেব।
মনির হোসেন মমি
একজন মুক্তিযোদ্ধাকে দিয়ে জীবনের শেষ দৃশ্য চিত্রায়ণ সত্যিই প্রসংশনীয়।
মুগ্ধ!
নৃ মাসুদ রানা
ভালো লাগলো, পাশে রাখুন সঙ্গে থাকুন।
সুরাইয়া পারভিন
একজন যোদ্ধার অন্তিম সময় সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। চমৎকার লিখেছেন
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ, ভালো লাগলো খুবই
চাটিগাঁ থেকে বাহার
সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। যাবার জন্য প্রস্তুত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বানানঃ আত্মীয়
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয় ,