আমি তোমার জন্য এসেছি- (পর্ব-৪৭)
-রোহান মিতুকে রাগাতে মজা করে বললো ওকে জানু, তাহলে একটু আদর দিয়ে যাও রাতে ঘুমটা ভালো হবে।
-মিতু চমকে উঠে বললো একদম না।
-কেন!কেন.?
কাল তো বিয়ে একটা চুমু দিলে এমন কি সমস্যা আমি বুঝি না!
-সমস্যা কিছু না সোনা,তুমি ঘুমাও।
-রোহান আরো পাগলামী শুরু করলো, প্লীজ! প্লীজ দাও না জানু।
-মিতু আতুরে গলায় বললো সোনা কালকের পর ঘুমাতে যাবার আগে আমি প্রতিদিন তোমাকে আদর দিব। প্লীজ শুধু আজকে চাইবে না আমার রাগ হচ্ছে, আমি দিতে পারবো না।
-মিতুর কথায় এবার রোহান রাগি গলায় বললো আমার লাগবে না তোমার আদর।
যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
বাই
আল্লাহ্ হাফেজ।
-মিতু বুঝতে পারল রোহান এবার সত্যি সত্যি রাগ করছে।
কাল তো বিয়ে এখন রাগ করে থাকলে নিজেও কষ্ট হবে। তাই রোহানের রাগ ভাঙ্গানোর জন্য বললো সরি সোনা, এই কান ধরলাম।
আর এমন হবে না।
ওপাশ থেকে মিতু রোহানের কোন আওয়াজ পাচ্ছিল না।
-আচ্ছা সোনা মোবাইলটা তোমার গালে ধরো আমি তোমাকে আদর করে দিচ্ছি..!
-এবার রোহান চিৎকার করে বললো একদম না।
-মিতু অবাক হলো কেন সোনা, এখনো তোমার রাগ কমে নাই।
-রোহান হা হা হা হা করে হেসে দিল, জানো পাগলি গত ২ বছরে আমি অনেকবার পাগলামী করে তোমার কাছে আদর চাইতাম। তুমি সব সময় দিতে আপত্তি করতে তারপর আমি আর জোর করতাম না।
-হ্যাঁ। কারন আমি বিয়ের আগে এসব পছন্দ করি না।
-হুম আমি সেটা বুঝতে পারি! আমি জানি তো আমার জানু আমাকে কতটা ভালোবাসে তাই বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি।
আজও চাই না জাস্ট একটু পরীক্ষা করে নিলাম আমার জানপাখিটা আমার পবিত্র ভালোবাসা।
-মিতুর চোখে পানি সত্যি একটা ভালো মানুষকেই জীবন সঙ্গীহিসাবে পেতে চলেছি। এর থেকে বড় পাওয়া একজন মেয়ের জীবনে আর কিছুই হতে পারে না।
-আই লাভ ইউ সোনা।
-রোহান দেরি না করেই বললো, আই লাভ ইউ জানু।
-যাও ঘুমিয়ে পড়ে কাল তো অনেক ব্যস্ততা সকাল সকাল উঠতে হবে।
-হুম।
-জিসান ভাইয়াকে বলো কাল দুপুর ১.০০ টা আমরা তোমাদের বাসায় উপস্থিত থাকবো।
ওকে।
যাওয়া আসা,কতজন যাবে সব জিসান ভাইয়াকে আম্মু জানিয়ে দিয়েছে।
বাকি কথা কাল হবে, আমিও ঘুমাব তুমিও ঘুমিয়ে পড়।
-মিতু রোহানকে বিদায় থেকে রুমে আসলো ততক্ষনে প্রিয়া ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে।
মিতু আস্তে করে দরজা লাগিয়ে দিল যাতে অন্য রুমে আওয়াজ না যায় রাত তখন ১২.১০ বাজে।প্রিয়ার ঘুমের সমস্যা যাতে না হয়,তাই মিতু আস্তে করে প্রিয়ার পাশে ঘুমিয়ে পড়লো।
শহরে পাখির কিচিরমিচির ডাক এ যেন এক সর্গীয় অনুভূতির আগমন। আবিদের ঘুম ভেঙে গেল এক-পা, দু-পা করে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল।
নাহ্ কোথাও পাখি নেই, তাহলে আমি কি ভুল শুনলাম ভাবতে লাগলো আবিদ।
আরে আদিব!
জ্বী! আঙ্কেল। রাতে ঘুম কেমন হলো?
ভালো, আঙ্কেল আজ আমার ঘুম ভাঙ্গল পাখির কিচিরমিচির ডাকে, কিন্তু বাসায় কোথায় পাখি খোঁজে পেলাম না।
ও আচ্ছা, তাই বলো। আস আমার সাথে আবিদ পিচন পিচন চলল। হা হা হা হা সত্যি অসাধারন আঙ্কেল, খুব ভালো করছেন।
হ্যাঁ এটার পুরো কৃতৃত্ব তোমার আন্টির তিনি ফজর নামাজ পড়ে সিঁড়ির বেয়ে হেঁটে চলার আনন্দ উপভোগ করেন।
সকালে আমাদের বাসায় এই সিডি ক্যাসেড সাউন্ড বক্সে বাজে আর সবার ঘুম ভাঙ্গে। এই পাখির কোলাহল মূখর কিচিরমিচির ডাকে, প্রকৃতির নানা রং বাতাসের শব্দ সব মিলিয়ে চমৎকার।
এই ক্যাসেডটা তোমার আন্টি কিনে আনছিলেন, এই শহুরে জীবনে প্রাণের প্রশান্তি এনে দেয়…
আমিও এমন এমন ক্যাসেড কিনবো আঙ্কেল ধন্যবাদ।
আম্মু আমি একটু বাইরে যাব সার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো আরাফ।
এই সাঁঝ সকালে কোথায় যাবি বাবা? রাহাতের বাসায় যাব মা আমাদের নতুন ফ্যাক্টরীতে কিছু লোক নিয়োগ দিব তার বিষয়ে কথা বলবো।
ও, তাহলে চা খেয়ে বেরু বাবা কিছু মুখে না যাস নে, রহিমা।
-জ্বী খালামা বলেই রহিমা আসলো।
-না থাক এখন চা খাব না, রাহাতের বাসা কাছেই ঘন্টা দু-য়েক এর মধ্যেই ফিরবো চিন্তা করো না।
রহিমা শোন!
ছোট ভাইজান কিছু খেয়ে যান,আচ্ছা বলেন।
আমি একটু বাইরে যাচ্ছি শ্রেয়া ঘুমাচ্ছে তাই ডাকি নাই।
ওর ঘুম ভাঙ্গলে বলবে আমি রাহাতদের বাসায় যাচ্ছি, আমার আসতে দেরি হলে! শ্রেয়াকে বলবে ও যেন অমিকে নিয়ে রোহানদের বাসায় চলে যেতে।
ও, আচ্ছা ভাইজান আপনি যাবেন না.?
আমি যাব রাহাতদের বাসায় থেকে আগে ফিরে আসি, তোরা একটু আগে চলে যাবি তাই বললাম।
আচ্ছা আমি বেরুলাম বলে আরাফ বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
অনেকদিন হলো বাংলাদেশে ফিরছি একবার আজাদ আঙ্কল, মিরা আন্টি,দাদুমনি সবাইকে দেখতে যাওয়া উচিত।ওরা কেমন আছে জানি না,দাদুমনির কথা ভাবতেই আরাফের বুকটা আতৎকে উঠল প্রায় ৮বছর আগে শেষ দেখা হয়েছিলো।
দাদুমনি কি এখনো বেঁচে আছে,দাদুমনির মুখের হাসিটচ অনেক সুন্দর ছিলো, ফর্সা খাটো করে মহিলাটা। যার কথায় মিষ্টি ঝরতো অসম্ভব মায়াবতী একজন নারী।
আমাকে খুব স্নেহ করতেন,আচ্ছা প্রিয়ার কি বিয়ে হয়ে গেছে, ওর বরটা দেখতে কেমন হয়েছে?
ওর স্বামী কি করে, প্রিয়া কি বড় চাকরি করে নাকি পুরা সংসারী জীবনযাপন করছে।
হা হা হা হা আমি পাগলের মতো এসব কি ভাবছি।সামনে অনেকক্ষন ধরেই জ্যাম চলছে তাই আরাফ গাড়ির কাঁচটা একটু নামিয়ে বসে আছে। ভাইজান একটা মালা কিনেন!
১ টা মালা মাত্র ১০ টাকা, স্যার বকুল ফুলের মালা সকালে গাছের নিচ থেকে কুঁড়িয়ে আনছি। স্যার কিনবেন ১ দিন বকুল ফুলের মালা গন্ধ থাকবো কয়েক মাস.. আরাফ হাসলো।
সত্যি ছেলেটা কথায় খুব পটু এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে গেল।
আরাফ চেয়ে দেখল ছেলেটার বয়স আর কত হবে ১০-১২ বছর এই বয়সে স্কুল ব্যাগ ছেড়ে মালা বিক্রি করছে। স্যার একটা মালা নেন বলেই কাঁচের ভিতরে মালাসহ হাত ঢুকিয়ে দিল।
তোমার কাছে কয়টা মালা আছে.? ছেলেটা তড়িগড়ি করে মালা গুলো গুনে নিল। স্যার আমার এহানে ১১ টা মালা আছে, আপনি কয়টা নিবেন বলেন আমি দিতাছি।
স্যার রাতে কিছু খাই নাই ১০ টা টাকা দেন, রুটি খামু বলেই এক ভিক্ষক হাত বাড়াল।
সত্যি মানুষের কত অভাব, নেন চাচা ৫০ টাকা দিয়ে হোটেলে কিছু খেয়ে নিয়েন।
স্যার আল্লাহ্ আপনারে অনেক টাকা দেওক,আরো ধনী হওন আপনার মন অনেক বড় বলে ভিক্ষুক খুশি মনে চলে গেল। আরাফ ভিক্ষুকের যাওয়ার পথে চেয়ে আছে।
…..চলবে।
১৬টি মন্তব্য
মাহবুবুল আলম
“জিসান ভাইয়াকে বলো কাল দুপুর ১.০০ টা আমরা তোমাদের বাসায় উপস্থিত থাকবো।”
আমি তো চমকে ওঠলাম আমাদের জিসান নয়তো! হাহাহাহা!
রোহানের পাঠ শেষ না হতে রাহাতের আগমন বুঝতে
সমস্যা হয়েছে।
ভাল লাগলো। ভাল থাকবে।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।
গল্পটা লিখতে গিয়ে আমার চোখে ইকরাম জিসান মোঃ শামসুল ভাইয়াকেই মনে হয়েছে একজন দায়ীত্ববান মানুষ।
সবদিক খেয়াল রাখেন, সবার খোঁজ নেন, আমার প্রিয় একজন মানুষ জিসান ভাইয়া।
গল্পের নামটা মিলে গেল তবে গল্পের জিসান আমার কল্পনায় আগেই ছিলেন।
দুঃখিত ভাইয়া কিছুটা অমিল হবার জন্য জন্য, ধন্যবাদ গুছিয়ে পড়ার জন্য।
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল
ফয়জুল মহী
অপরূপ ভাবনা । সুনিপুণ প্রকাশ।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
সুন্দর মতামতে অনুপ্রণিত হলাম, ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইল
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সুন্দর পরিপাটি লেখা। প্রেম বিয়ে এগিয়ে চলুক। ভালো লাগা — মিতুর চোখে পানি সত্যি একটা ভালো মানুষকেই জীবন সঙ্গীহিসাবে পেতে চলেছি। এর থেকে বড় পাওয়া একজন মেয়ের জীবনে আর কিছুই হতে পারে না।
-আই লাভ ইউ সোনা। — আসলেই মনের মতো মানুষ পাওয়া খুব কঠিন । ভালো থাকবেন । শুভ কামনা ।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
আপনার সুন্দর মতামতে আপ্লুত হলাম, সত্যি বলতে রোহানের ছেলে ছেলেকে স্বামী হিসাবে পাওয়া যেকোন মেয়ের ভাগ্য।
কিন্তু বর্তমান সমাজে এমন মানুষের বড় অভাব আমরা অতি আধুনিক হয়ে যাচ্ছি, সাথে চরিত্রের অর্ধপতন হচ্ছে।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল,
ভালো থাকবেন ভাইজান।
শুভ কামনা রইল।
সুপায়ন বড়ুয়া
ও গল্পে জিসান ভাইকে নিয়ে এলেন ?
সাথে আমরাও থাকতে চাই।
ভাল লাগলো।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা ভাই।
গল্পের প্রয়োজন জিসান ভাইয়ার নামটা আসছে, আপনার মতামত বিবেচনায় রাখলাম ইনশাল্লাহ্ পরবর্তীদের আপনার নাম আসবে।
সুন্দর মন্তব্যে আপ্লুত হলাম দাদা, দোয়া রাখবেন।
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব ভালো লাগছে, নিয়মিত পড়লাম, পড়ছি । আলম ভাইয়ের কথাটাই আমিও বলছি। আরো একটু সাবধানতা অবলম্বন করবেন পোষ্ট করার আগে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দিদি ভাই।
জ্বী সামনে আরো সাবধানতা অবলম্বন করলো, কৃতজ্ঞতা রইল দিদি।
সুন্দর মতামতে উৎসাহ্ পেলাম নিয়মিত পর্ব গুলো পড়েন এটা দেখে আরো ভালো লাগছে।
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল দিদি ভাই।
তৌহিদ
দিন আনে দিন খায় মানুষ অল্প কিছুতেই সন্তুষ্ট হয়। চলুক গল্প।
ভালো থাকুন আপু।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনার সুন্দর মতামতে আপ্লুত হলাম, খুব ভালো লাগছে ব্যস্ততার পরও আমার লেখা পড়ছেন।
দোয়া থাকবেন, ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইল ভাইয়া।
নিতাই বাবু
যতই পড়ছি, ততই ভালো লাগছে। আপনার এই লেখা “আমি তোমার জন্য এসেছি” সবগুলো পর্ব একত্রিত করে বই আকারে বের করবেন। আমি আশা সফলতা অর্জন করা সম্ভব হবে।
শুভকামনা থাকলো।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা।
আপনার সুন্দর মতামতে আপ্লুত হলাম, ইচ্ছা রাখি বই প্রকাশ করবো বাকিটা আল্লাহ্ ভরসা।
দোয়া রাখবেন দাদা।
ভালো থাকবেন,
শুভ কামনা রইল।
হালিম নজরুল
যারা গরীব, তাদের চাহিদা খুব কম থাকে। তবে গল্পে বেশি দারিদ্র্য নেই, সুন্দর হচ্ছে।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
গল্পের প্রয়োজনে কাহীনি আসে তাই সব গুলো পরিবারেই সচ্চল হয়ে গেল।
তবে দারিদ্র্য একদম নেই তা ঠিক নয় মাঝে মাঝে উল্লেখ করেছি।
ভালো থাকবেন,
শুভ কামনা রইল।