আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-চৌদ্দ)

সুরাইয়া নার্গিস ১৬ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০৯:৩৭:৪২পূর্বাহ্ন গল্প ২১ মন্তব্য

আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-চৌদ্দ)

-বন্ধুত্বের বাইরে কখনো দেখি নাই, তবে শীলা আমার খুব ভালো বন্ধু।

যার সাথে প্রান খুলে সব শেয়ার কথা যায়! প্রিয়ার সাথে কথা বলি। যদি রাজি থাকে তারপর বাসায় জানালে শীলার সাহায্য নিব।

মীরা! মীরা কই গেলে..?
কি হলো রে বাবা! বউমা তো একটু পাশের বাসায় গিয়েছে সকালে। রোহান আসছিলো ওই যে ছেলেটা প্রিয়ার সাথে পড়ে.? ওর মা নাকি যেতে বলছে। ওনি তো আবার প্রিয়ার স্কুলের ম্যাডাম হয়ত স্কুলের কোন দরকার ডেকেছে! এখনি ফিরে আসবে বললেন দাদুমনি।

আজাদ বাজারের ব্যাগ গুলো কিচেনে রাখল,
প্রিয়াও বাবার চিৎকারে পড়ার টেবিল ছেড়ে কিচেনে আসলো।
আব্বু কি হয়েছে..? তোমাদের কথার আওয়াজে আমি পড়তে পারছি না। জিবে দাঁত দিয়ে কামড় দিয়ে, আজাদ লজ্জিত হয়ে মেয়েকে বুঝাল ভুল হয়ে গেছে!
মা-মনি তুমি পড়তে যাও আর চিৎকার করবো না।
প্রিয়া ওর রুমে চলে গেল পড়াতে মনযোগ দিল, বাইরে একটা কোকিল তখনও কুহু কুহু বলে ডেকে চলছে।

আজ সকাল থেকে কুটুম পাখিটা প্রিয়ার রুমের উপরে সেগুন গাছের মগ ডালে বসে, ক্লান্তিহীন ভাবে ডেকেই চলছে। প্রিয়া দাদুমনির কাছে শুনছে বাড়ির আঙ্গিনায় কুটুম পাখি ডাকলে সেই বাড়িতে মেহমান আসে।

প্রিয়া জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকায় ভোরের আকাশ খুব পরিষ্কার দেখাচ্ছে। কুটুম ডেকেই চলেছে, তাহলে আজ কি বাসায় মেহমান কেউ আসবে..? প্রিয়ার মনে প্রশ্ন জাগলো। সে মনে মনে ভাবল এসব গ্রামের মানুষের মন গড়া কথা, তারপরও মাঝে মাঝে সত্যি হয়েছে।
প্রিয়া জানে তবু মিথ্যা ভেবে মুচকি হাসল।

ঢেঁড়স, পুঁই শাক,বেগুন, টমেটো, মিষ্টি কুমড়ো, ছোট মাছ,রুই মাছ,ইলিশ মাছ, মুরগি ৪ টা, শসা, লেবু, গরুর মাংস, আলু, পটল দেখে মনে হচ্ছে বাসায় বাজার বসছে ওহ্!
মিরা বিরক্তি ভাব নিয়ে আজাদের দিকে তাকাল! আজাদ অন্যদিকে চেয়ে হাসলো।

তুমি পারও বটে এত বাজার করছো কেন.? বাসায় ফ্রিজ আছে সময় মতো তরতাজা কিনে খাব সারা বছরের জন্য বাজার করে রাখতে হবে কেন.? বিরক্তের সুরে কথাগুলো বলেই মিরা বাজারের সব জিনিস গুছাতে মন দিল।

আজাদ হাসতে হাসতে বললো আল্লাহ্ রিজিকে যা রাখছেন তা খেতেই হবে।
রাগ করো কেন.?
ফ্রিজে রেখে দাও আজ শুক্রবার সময় পেলাম তাই বাজার করে নিয়ে আসলাম।
ছেলে, বউয়ের মিষ্টি ঝগড়া চলছে দাদুমনি হেসে তার রুমে চলে গেলেন।

ভাবতে ভাবতে আরাফ শীলার নাম্বারটা ডায়াল করে, রিসিভ হয়েছে বুঝতে পেরে আরাফ হ্যালো বললো।
প্লীজ একটা কিছু করো!বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
আমি তোমাকে ভালোবাসি। আঙ্কেলকে আব্বুর সাথে কথা বলতে বলো।
ওই শীলা তুমি কি পাগল হয়েছো! এসব তুমি কি বলছো!
শীলা আরাফের কথায় কর্ণপাত করে না,নিজেই মনের কথা গুলো একদমে বলেই চললো।
প্লীজ আরাফ! আমাদের বিয়ের ব্যাপারে আব্বুর সাথে কথা বলো।
আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে না পেলে বাঁচব না, বলতে বলতেই শীলার কান্না শুরু।
আরাফ কিছু বলার ভাষা পাচ্ছিল না,নিরব হয়ে গেল।
আরাফ তুমি শোনছো! আমি কি বলছি বুঝতে পারছো.?
আরাফ কিছুক্ষন পর অস্পষ্ট গলায় বললো,তুমি বলে যাও আমি শুনছি।

তাহলে আঙ্কেলকে বলো আজেই আব্বুর সাথে কথা বলতে কাল ছেলে পক্ষ আমাকে রিং পড়াতে আসবে।তারপর সামনে শুক্রবার বিয়ের তারিখ ঠিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আব্বু,আম্মু।
আরাফ তুমি রাজি থাকলে আমি এই বাড়ি,গাড়ি, বাবার প্রাচুর্য সব ছেড়ে এক কাপড়ে চলে আসবো।

শীলা তোমার বলা শেষ হয়েছে.?
আমি কয়েকটা কথা বলি মনদিয়ে শোনবে।
বলো আরাফ!
শীলা আমিও তোমাকে ভালোবাসি সেটা বন্ধু হিসাবে।
তুমি আমার জীবনের সেরা বন্ধু।
আমি সারাজীবন চাই তুমি আমার একজন ভালো বন্ধু হয়ে থাকো।
আমি তোমাকে বন্ধুত্বের বাইরে কখনো কিছু ভাবি নাই, ভালোবাসিনি।আমরা শুধু ভালো বন্ধু।

শীলা! জবাব নেই।
শীলা! হ্যাঁ বলো।
তুমি বাবা মায়ের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করো। আমি বলছি তুমি সুখি হবে, মা-বাবা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না রে পাগলি।
ওনারা আমার চেয়ে ভালো কাউকে তোমার জন্য ঠিক করেছেন,আমি বলছি তুমি সুখি হবে।

আরাফ বুঝতে পারছিলো শীলা কাঁদছে কিন্তু সে তো প্রিয়াকে ভালোবাসে। সেখানে শীলা কেন পৃথিবীর আর কাউকে বসানো যাবে না।
শীলা!
নাহ্ আরাফ আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু কখনো বলতে পারিনি।ভেবেছিলাম তুমি আমার মনের কথা বুঝবে কিন্তু বুঝার চেষ্টা করো নাই তাই আজ বললাম।
আমি তোমাকে ভুলতে পারব না তাকে সুখি করতে পারব না।তুমি আমাকে জোর করো না প্লীজ।
আরে পাগলী দেখবে বিয়ের পর আমাকে আর মনে পড়বে না। স্বামী তোমাকে এত ভালোবাসবে যে আমার মতো বন্ধুকে আর মনে পড়বে না।সব ভুলে যাবে নতুন জীবন শুরু করো।
শীলা চুপচাপ আরাফের কথা শোনছে।
শীলা আমি তোমার বিয়ের পরও ভালো বন্ধু থাকবো প্রমিস যদি তুমি মনে রাখ…!
শীলা, এক জীবনে একজন ভালো বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার, আমি তোমার মতো বন্ধুকে কোনদিন হারাতে চাই না।
আরাফের এমন কথায়
শীলা নিরবতা ভেঙ্গে বললো।
আরাফ তুমি কি কাউকে পছন্দ করো, ভালোবাসো..?
আরাফ আমতা আমতা করে বললো হ্যাঁ না মানে ভালোবাসি কিন্তু এখনো বলতে পারিনি।
আমি কি জানতে পারি সেই সৌভাগ্যবতী কে যে হাজার রমনীয় মনের রাজকুমারের এর মনে জায়গা করে নিয়েছে।

হা হা হা হা শীলা তুমি কি যে বলো না আজোও একটা প্রেম হলো না তার জন্য হাজার হাজার মেয়ে পাগল।
শোন আজ ময়মনসিংহে যাচ্ছি! ফিরে এসে তোমার সাথে মিট করবো।
এনগেজমেন্ট রিং যেন হাতে দেখতে পাই বলেই আরাফ হা হা হা হা করে হেসে দিল।
শীলাও একটু মুচকি হাসি দিল সেটা আরাফ দেখে নাই তবে শীলা বুঝল আরাফ অন্য কাউকে ভালোবাসে তাই তার বাবা মায়ের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করা উচিত।
অনেকক্ষন ধরে শীলা চুপচাপ কিছুই বলছে না শীলা..শীলা! কিছু তো বলো আমাকে বিয়ের দাওয়াত দিবে তো নাকি বরের হাত ধরে একাই চলে যাবে…!
-হা হা হা হা

তুমি না আসলে আমার বিয়েই হবে না, তুমি প্রথম আমাকে হলুদ ছুঁইয়ে দিবে। বিয়ে বাড়ির কাজের সব দ্বায়ীত্ব তোমার, জানো তো আব্বু একা মানুষ সবদিক ম্যানেস করতে পারবে না তোমাকে তার পাশে লাগবে।
কি আসবে তো..!
নাকি দ্বায়ীত্বের ভয়ে পালিয়ে যাবে।
যা হুকুম মাহারাণী এই বান্ধা হাজীর থাকবে আপনার আদেশের অপেক্ষায়। দাওয়াত লাগবে না আমি তো বন্ধু শুধু বিয়ের তারিখটা…

…..চলবে।

সুরাইয়া নার্গিস আলিফ।

৪৯২জন ৩৯১জন
0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ