monir artএকা, খুব একা….!

নিজেকে আজ বড়ই একাকীত্ত্ব মনে হয়,

নিদ্রার মাঝেও শুনি তোমার নুপুরে ধ্বনি

বন্ধুদের আড্ডায়ও বসেনা এ প্রেমে পাগল মন।।

শীতের শুরুতে আলতু হিমেল হাওয়া

হেমন্তের আগমনে প্রশান্তি মন,তবুও,

নিজেকে নিজে চিনতে এখন বড় কষ্ট হয়

রঙ্গীন নেশায় তোমায় না পাওয়ার ব্যার্থটাকে খুজিঁ।।

জীবনের পৃষ্ঠাই যেন সারাংশ হয়ে গেল।প্রথম ভালবাসার ব্যার্থটার বিরহ নিজেকে ক্ষত বিক্ষত করছে প্রতিনিয়ত প্রতিদিন প্রতিটা মুহুর্ত।কিছুতেইপৃথিবীর অন্য সব নরমাল লাইফে নিজেকে মেলাতে পারছিনা।জীবন থেকে শান্তির পায়ড়াগুলো যেন এক যোগে বিয়োগ হয়ে গেল।সুস্হ মন নিয়ে সমাজে চলা দায়,হয়ে গেলাম বেপরোয়া।বাসায় কখন ফিরি,কখন বাহির হই কিছুই যেন ঠিক আগের মত নেই।মনে হয় চন্দ্রেরঁ জোৎস্নায় যে ভালবাসা মিশানো কবিরা কবিতা লিখে.গায়কেরা গায় গান,বাশের বাশুরীরা তুলে প্রেমের আবেগী সুর এ যেন মধু মিশ্রিত বিষের সুর।জগতের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা ভালবাসার পূজারী বিদ্রোহী রোমান্টিক কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমবিষয়াদি গল্প ,কবিতা,প্রবন্ধ যেন মিছে বন্দনা কথার কথা ।সব কিছুই কেনো যেন মিথ্যে মনে হয়।বহু দিন পর চোখে পড়ল রেকডিং ক্যাসেটের ডেক্সে সেই ক্যাসেটি “পাখিরে উড়ে যা..উরে যা”জহির আহম্মেদের যেটি সে আমাকে গিফট করেছিল।ক্যাসেটটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছি কেনো জানি গানটি শুনতে ইচ্ছে হল।ক্যাসেটটি অন করলাম বাজছে করুন সুরে হৃদয় মানুষের গান “পাখিরে উড়ে যা…উরে যা এখান থেকে বহু দুর…সুরটি শুরু করতে না করতেই কির কির শব্দে ক্যাসেটটি প্যাচ লেগে কেমন যেন গেঙ্গানো সুরে বাজছে, মনে রাগ এসে গেলো বিরহ আর বিরক্তের যোগে ব্রেন মাইনাস হয়ে গেলো।ক্যাসেটটি খুলে রাগে টেনে টেনে রেকডিং ফিতাগুলো বের করছি যেন বিরহের বিদায়ের ফিতে কাটছি।ফিতা কাটা শেষে মনে কিছুটা স্বস্তিবোধ মনে করছি।মাথাটা হালকা করে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লাম অজানা উদ্দ্যেশ্যে।

আড্ডা দিতে অনেক দিন পর এলাম শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় ।বেশ কয়েকজন বন্ধুরা মিলে নদীর তীরে বসে গল্পে মসগুল।সামাজিক,রাজনৈতিক আলোচনাই বেশী হয়।আমাদের মাঝে প্রয়াত এক বন্ধু রুমেল।সে ছিল যেমন জেদী তেমনই ডেঞ্জার।এলাকায় সবাই এক নামে চিনে।মুগড়া পাড়ার সন্ত্রাসী কামু ছিল তার ক্লোজ সন্ত্রাসী বন্ধু, এমন আরো নাম না জানা বন্ধু।সে দিন ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ শহর থেকেও এসেছি কয়েকজন বন্ধু।রুবেলের হঠাৎ চোখে পড়ল নদীতে নৌকা দিয়ে যাচ্ছে দুই নম্ভর মহিলা ব্যাবসায়ী।চমকে গেলাম তার চিৎকারের স্বরে ডাকা ডাকি শুনে।নৌকাওলাকে বাধ্য করল আমাদের সামনে নদীর পাড়ে নৌকা ভিড়াতে।নৌকা ভিড়ার সাথে সাথে রুবেল এগিয়ে গিয়ে মহিলাকে কাপড় খুলতে বলে।আমরা অবাক!কি বলে রুবেল?মহিলার কাপড় খুলতে?চোরে চিনে চোরেরে ,রুবেল যা ভেবেছিল তাই মহিলার কোমড়ে কাপড়ের ভাজেঁ রাখা পাচটি ডাইল অনায়াসে বের করে দিল রুবেলের কাছে।রুবেল ঢাকাইয়া আর নারায়ন গঞ্জ বন্ধুদেরকে আপ্যায়ন করল।আমি উদাস দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি শীতলক্ষ্যার শীতল স্রোতে বাকে চলে যাওয়া নৌকার গতিবিধি।সন্ধ্যা হয়ে এলো পাখিরা দলে দলে ছুটছে তার আপন ঠিকানায়।আড্ডায় ছিল আমার প্রিয় এবং সবচেয়ে কাছের বন্ধু বাশার।সিটি কলেজে পড়া লেখা করছে তার একটি স্মৃতি মনে পড়ে গেল।

হযরত শাহ পরান(আঃ) এবং হযরত শাহ জালাল(আঃ) মামা ভাগিনার পবিত্র মাজার শরীফের স্হান সিলেট।সবুজে ঘেড়া চা বাগানের ফাকে ফাকে উকিঁ দেয় চা পাতা তুলতে আসা নব বধুর মূখ।সেই সিলেট কুলা উরায় থাকে বন্ধু বাশারে স্কুল প্রেমিকা লাকী আমারও স্কুল বান্ধবী।যেই কথা সেই কাজ প্রয়াত কামালকে সাথে করে রওয়ানা দিলাম সিলেটের উদ্দ্যেশ্যে।বাসে উঠার আগেই রঙ্গীন কাজটি সেরে ফেলি।ফিলিংসের সহিত চলছে গাড়ী ।অতীতের কত  কথা যে মনে আসছে।লাকী,শিরিন,মীনা,সালমা,রোকসানা আরো ডজন খানেক মেয়ে বান্ধবী ছিল আমাদের।তাদের সাথে আমাদের সম্পর্কটা ছিল সমান লিঙ্গের মত।কারো বাসায় কারো যাওয়া আসা কিংবা দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা আড্ডায় কোন বাধা ছিলনা।এখন কে কোথায় চলে গেছে তা বলা মুশকিল।লাকিকে বাশার কি দেখে তার মনের কুনে ঠাই দিয়েছিল তা আমার জানা নেই তবে তার অমায়িক ভদ্রতার গুণটি ছিল,ছিল কোমরে নেমে পড়া দীঘল কালো চুল এ যেন “চুল তার কবে কার অন্ধকার বিদিশার দিশা,মুখ তার শ্রাবন্তীর কারুকার্য্য”।লাকীর পুরো ফ্যামিলী প্রায় ৪০/৪৫ বছর আমাদের এখানে সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে চলে যায় তার পৈত্তৃক বাড়ী সিলেট।আকাঁ বাকা পাহাড়ী রস্তায় চলতে চলতে একসময় বাস থেকে নেমে কুলাউড়া বাজারে ঢুকলাম থাকার হোলেটের জন্য।তখন ভোর বেলা হালকা কুয়াশা ভরা সতেজ পরিবেশ ।প্রান ভরে সলিট অক্সিজেন নিলাম নিঃস্বাসে নিঃস্বাসে।একটি হোটেলে তিনটি সিট ভাড়া করলাম শুধু একদিনের জন্য।সকালে গেলাম নাস্তা খেতে এক বাজরে তখন প্রায় সকাল দশটা।অবাক হলাম বাজারে কোন লোকজন না দেখে।এক ভদ্রলোকের সাথে কথা বললাম। -কি ব্যাপার ভাই নাস্তা খাবো কোন দোকান পাটতো দেখছিনা। লোকটি ভদ্রতার সহিত সিলেটি ভাষায় কথা বলল।আর একটু দূরে একটি দোকান দেখিয়ে দেয়। -ঐ যে খানে খোলা আছে।আর এটা হলো রাতের বাজার এখানে শুধু রাত হলে মার্কেট বসবে। লোকটিকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলাম একটু পথ হেটে একটি দোকানে।সেখানে গিয়ে আরো অবাক হলাম।লোকজন বলতে হাতে গুণা ২/৩জন মনে হচ্ছিল এ যেন ভুতের শহর।দোকান থেকে পারোটা নিলাম কিন্তু ভাজি হালুয়া নেই আছে ডিম।ডিম দিতে বলে দাম জিজ্ঞাসা করাতে শুনে চমকে গেলাম।এক ডিম ১০টাকা(১৯৯২সন)।প্রয়াত বন্ধু কামালের নাস্তা পছন্দ হয়নি পুরি আছে,পুরি দিতে না বলে সে দোকানীকে ইশারায় দেখায়,দোকানদার তারপরও বুঝতে পারছেনা আমি পুরি বলতে গেলে সে আমার মুখ চেপে ধরে,পরে যখন জানতে চাইলাম তখন সে বলল ‘আরে বেটা এখানে মেয়েদেরকে পুরি বলে।আমি নিশ্চুপ। দুপুরের মাঝা মাঝি হোটেল থেকে আমরা রওয়ানা হলাম লাকীদের বাড়ীর উদ্দ্যেশ্যে।কুলাউড়া স্টেশন থেকে আকা বাকা মেঠো পথে প্রায় ঘন্টা খানেক লাগল লাকীদের বাসায় পৌছতে।বেশ গুছানো পরিপাটি সান বাধানো পাকা ঘাটের পুকুর,চারপাশ অতি যত্নে গড়ে তুলা গাছ গাছালী বাড়ী মনে হয় এলাকার প্রভাবশীলদের তালিকায়।লাকীর ভাই লাভলু আমাদের বন্ধুর মত তাকে ফোন দেয়ার সাথে সাথে আমাদের আমন্ত্রন জানাতে আগেই আমাদের সাথে ছিল।বাড়ীর চারদিক খোলামেলা বাড়ীর ভিতর পা দিতেই চোখে পড়ল লাকীর ইমেডিয়েট বড় বোন বিউটি আমাদের বাড়ীর ভিতরে নিয়ে যায়।যার জন্য আসা তার কোন খবর নেই।প্রেমিকা হিসাবে না হউক ক্লাশমেট হিসাবে আমাদের আমন্ত্রন জানাবে সেই আশায় ছিলাম।কিন্তু না,সে আসেনি।লাভলুর রুমে বসার সময় দরজার ফাক দিয়ে বিজলী বাতির মত দেখতে পেলাম সেই প্রিয় মুখ……..

চলবে…

(পোষ্টের দুটো ছবি আমার ড্রইং)

৭২০জন ৭২০জন
0 Shares

৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ