
সভ্যতার অগ্রগতি, প্রগতিশীলতা, মানুষের জীবন যাত্রা পরিবর্তনের এযুগে মানুষের মানবিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতার উন্নতির পরিবর্তে বেশকিছু মানুষের মধ্যে যৌন কামনা, যৌন লালসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে ধর্ষকামীতাও। সীতাকুন্ডে এক মসজিদের মোয়াজ্জিনের বিরুদ্ধে ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া এক স্কুল ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। {সূত্রঃ দৈনিক আজাদী, ২৫ সেপ্টেম্বর’২১}। জানা যায়, আর আর জুট মিল জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন তৌহিদুল আলম হৃদয় (১৯) একই কলোনির ভেতরের বাসিন্দা মোঃ দুলাল শরীফের বাড়ীতে তাঁর শিশু কন্যাকে কায়দা পড়াতেন। সে সুযোগে পরিচিত হৃদয় গত ২১ সেপ্টেম্বর’২১ তারিখে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে দুলালের ১৫ বছর বয়সী মেয়েকে ডেকে তাঁর কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে কথাবার্তার এক পর্যায়ে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পড়ে তাকে একথা কাউকে না বলার হুঁশিয়ারি দিয়ে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। পরে মেয়েটি এ ঘটনা তার মাকে জানায়। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে কোনো প্রতিকার না পেয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর’২১ তারিখে ধর্ষিতার পিতা সীতাকুণ্ড থানায় মামলা দায়ের করেন।
সমাজের উঁচু তলা থেকে নিচু তলা, শিক্ষিত থেকে মূর্খ কারো হাত থেকেই মেয়ে শিশু থেকে বয়স্কা নারী কারোরই যেন রেহায় নেই। নেই রক্ষা। অতীব দুঃখের বিষয়, ৪৫/৫০ বয়সের ঊর্ধ্ব শিক্ষক কর্তৃক ৩য়, ৪র্থ শ্রেণীর কোমলমতি শিশুরা পর্যন্ত যৌন লালসার শিকার হচ্ছে অহরহ। এমনকি মানসিক প্রতিবন্ধী, মস্তিষ্ক বিকৃত পাগল মহিলা পর্যন্ত হায়েনাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। পাশাপাশি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কত বিপথগামী পুরুষের যৌন লালসার শিকার হচ্ছে দেশের অসংখ্য মেয়ে শিশু এবং বিভিন্ন বয়সের নারী। পথে হাটে মাটে ঘাটে রাস্তায় বস্তীতে অভিজাত এলাকায় নারীদেরকে উত্যুক্ত করা হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করছে। দুঃখের বিষয় চলন্ত গাড়ীতেও আমাদের মা-বোনদের ইজ্জতের নিশ্চয়তা নেই। পাশাপাশি অর্থাভাবে মানুষের ঘরে কাজ করা গৃহকর্মীদের যৌন নিপীড়ন, জোর পূর্বক অবৈধ সম্পর্ক, জন্ম নেয়া কত অবৈধ সন্তানকে ফুটপাথে, ডাস্টবিনে ফেলে মেরে ফেলা হয়েছে তার হিসাব কে রাখে! কত গৃহকর্মী ইজ্জত আভ্রু হারিয়ে আত্মহত্যা করেছে, অবৈধ সম্পর্কে রাজী না হওয়ায় নির্যাতিত হয়েছে, মর্মান্তিকভাবে খুনের শিকার হয়েছে।
অবাধ তথ্য প্রবাহের এবং আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন, নীল ছবির দংশন, হাতের নাগালে নেশাদ্রব্য এসে যাওয়া, প্রগতিশীলতার নামে অবাধ মেলামেশা, ধর্মকে অবজ্ঞা করা বা না মানার পাশাপাশি জ্ঞান বুদ্ধির চর্চার জন্য স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্টূ সাংস্কৃতিক চর্চা না থাকা, মানবিক মূল্যবোধ এবং জ্ঞান বুদ্ধি উন্নতকরণের জন্য বই না পড়া, খেলাধুলার জন্য মাঠের অভাব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন না করা দায়ী। তাছাড়া শিশুদের হাতে স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ তুলে দিয়ে ঘর বন্দী করে রাখা এবং তাদের মেধাকে মননশীল এবং সৃষ্টিশীল কাজে না লাগিয়ে মূল্যবোধকে আর মেধাকে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। যা তাঁদের মানবিক, নৈতিক, সৎ চরিত্রের অধিকারী হওয়ার বিরাট অন্তরায়। শিশু কিশোর তথা শিক্ষার্থীদের মুক্ত-বুদ্ধির চর্চা, মননশীলতা, সৃষ্টিশীলতার উন্মেষ প্রকাশ আর বিকাশের পাশাপাশি ধর্মীয় বিধিনিষেধ যতক্ষণ না মানা হবে ততক্ষণ আমরা মানুষের মতো মানুষ তৈরি করতে পারবো না। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলে যত দ্রুত সম্ভব উপলব্ধি করতে পারবেন ততোই জাতির জন্য মঙ্গলজনক এবং আমাদের মা-বোনদের জন্যেও।
১০টি মন্তব্য
বোরহানুল ইসলাম লিটন
ধর্ষণ আজ এক প্রকার সামাজিক ব্যাধি।
ধর্মীয়, সামাজিক, নৈতিক ও আন্তরিক মূল্যবোধই
পারে এ বেহায়া অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন করতে।
আন্তরিক শুভ কামনা জানবেন সতত।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
হ্যাঁ সঠিক বলেছেন ধর্ষণ এখন সামাজিক ব্যাধি হয়ে গেছে। আপনার মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
এটা সমাজের ব্যাধি হয়েছে।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
জি , পুরোপুরিই সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধন্যবাদ।
আলমগীর সরকার লিটন
যুগউপযোগি পোষ্ট আলম দা মনে হচ্ছে পৃথিবী যতদিন থাকবে ধর্ষণ ততদিন থাকবে———–
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আমাদের মানবিক এবং নৈতিক মূল্যবোধের পরিবর্তন না হলে ধর্ষণ থামবে না। ধন্যবাদ।
হালিমা আক্তার
এটি একটি ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি। নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এর প্রধান কারণ। একমাত্র কঠোর আইনের প্রয়োগ করতে পারলে, হয়তো মুক্তির দেখা মিলতো। শুভ কামনা রইলো।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সঠিক বলেছেন আপু — “এটি একটি ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি। নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এর প্রধান কারণ। একমাত্র কঠোর আইনের প্রয়োগ করতে পারলে, হয়তো মুক্তির দেখা মিলতো”।
শুভ কামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
ধর্ষণ করা একটা পৈচাশিক কাজ। আমরা মনে করি ছেলেদের প্রাতিষ্ঠানিক এবং ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করা গেলেই বোধকরি ধর্ষণ কমে যাবে, কিন্তু এটা যে একটা ভুল কথা তার প্রমাণ হলো এইসব ইমাম,মোয়াজ্জেম আর স্কুল শিক্ষক নামের কুলাংগার গুলো।
কোন শিক্ষাই এই পিশাচদের বিরত রাখতে পারে না। দেশের আইনে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে এদের শাস্তি দেয়া দরকার।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ধর্ষণের মতো এমন পৈশাচিক এবং অমানবিক কাজগুলো আমাদের চোখের সামনে প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। আপনার সঙ্গে একমত — ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিৎ। শুভ কামনা রইলো।