
টয়লেট দিবস নিয়ে লিখতে বসেছি রম্য। তো যেহেতু আজ পুরুষদিবসও তাই ভাবলাম একত্র করেই শুভেচ্ছা জানাই। না হলে আমাকে আবার পুরুষবিদ্বেষী ভাবতে পারেন। মনে করেন, আই লাভ পুরুষ ভেরী মাচ!!
সাতসকালে দরজায় বাড়ির একমাত্র ছোটপুরুষ দাঁড়িয়ে হাগু করেছেন এবং তা প্যান্টের ফাঁক গলে পড়ে গেছে। তিনি ওভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এদিকে দরজায় তার জিনিস জানাচ্ছে, স্বাগতম সবাইকে পুরুষ বনাম টয়লেট দিবসের 🤪🤪
ভাবা যায়,হুমায়ুন আহমেদ, রুনা লায়লা ও আমার মতো বিখ্যাত মানুষদের জন্ম মাসেই নাকি এমন একটা দিবস হতে হয়!
সামনে এমন জিনিস দেখে অজান্তেই বেড়িয়ে এলো- উহুম! গন্ধ। বাবু এসব কি?
তিনি তখনও নির্বিকার দাঁড়িয়ে – দেখতেই পাচ্ছো নারী, বংশের শেষ পুরুষ হিসেবে আমি এটা করতেই পারি। ন্যাকামী বাদ দিয়ে যাও পরিস্কার কর?
ভাবী বললো- উহা তোমাদের বংশগত আরকি?
আমি তখন দুদিকেই বিপদে। সেদিনের মহিলা ঘরের কথা জানলো ক্যামনে??
আমাকে এনজিওতে পরিস্কার আপা ডাকা হতো। মনে মনে হাসতাম, বাপুরে ছোটবেলায় কি বস্তু যে ছিলাম, তা যদি জানতেন! কনডম, প্যাড, পিল এগুলোর পাশাপাশি কিভাবে টয়লেট ব্যবহার ও সেখান থেকে বের হয়ে হাত কিভাবে ধুতে হয়, তাও বাঙালীকে শেখাতে হয়েছে। লেট্রিন কে লেপ্টিন বলত গ্রামের পুরুষ/মহিলারা। তাও শেখানোর আপ্রাণ চেষ্টা হয়েছে।
অবশেষে ২০০১ সালের ১৯ নভেম্বর বিশ্বে টয়লেট দিবস ঘোষনা হল। ভাবা যায়, পুরুষ দিবসেই সেটা। এরপর ঘরে ঘরে টয়লেট করে দিল এনজিও গুলো। উপজেলা থেকে ইউনিয়নে ঘোষনা হলো আমরা পরিবেশ বান্ধব হাগুমুক্ত এলাকা। মানে আমাদের এলাকায় আর খোলা জায়গায় হাগু হয় না।
এখন আমরা এটাস্ট ঘরের ভেতর টয়লেটকে ওয়াশরুম বানিয়ে নিজেকে ওয়াশ করি। কমোডে বসে ফ্লাস দেই। আমাদের পুরুষ কতোটুকু ওয়াশ হয় বা হতে পেরেছে তা নিয়ে আমি চিন্তিত।
ভাবছেন, হাগুবিষয়ক রম্য লিখতে এসব কি? তাই সামান্য খোলাসা করি। না হলে আবার লোকে বলবো এক বুঝবে অন্যকিছু। ওই রুমিন ফারহানার খেলা হবে, আসেন খেলির মতো!
অনেকদিন ধরেই শুনছি, খেলা হবে, খেলা হবে বলে পুরুষগন গলা ফাটিয়ে ফেলছেন।
এর প্রতিউত্তরে রুমিন ফারহানা যখনই বললেন, এতো খেলা হবে, খেলা হবে করছেন। তো মাঠে আসেন খেলি!
আর কোথায় যায়! এই খেলা কিন্তু সেই খেলা নয় ভালো করে জেনেও পুরুষসমাজ ঝাঁপিয়ে পড়লেন।
– আপনার সাথে কে খেলবে। আর খেললে কি বাড়িতে বউ ঢুকতে দেবে?
ভাবুন আমাদের পুরুষগন জানেনই না কি হলে পুরুষ হওয়া যা। কেমন ওয়াশরুমে ওয়াশ হন যে পুরোপুরি ক্লিয়ারই হন নাই। হলে হয়তো একজন স্বনামধন্য মহিলার নামে কুরুচিপূর্ন শব্দ ব্যবহার হতো। আমাদের কিছু পুরুষ ঘোর সন্ন্যাসী, তবে সাত পাড়া ঘুরেই ঘোর সন্ন্যাসী আরকি!
তো অন্যকথা বাদ, পায়খানা দিবসে আসি। গ্রামের মেয়ে হিসেবে আমার এ বিষয়ক যথেষ্ট গ্যান রয়েছে। আম্মি প্রায়ই এক পুরুষের বিচার আব্বাকে দিতেন। সে হলো আমাদের বাড়ির সহকারী মতিন ভাই।
আব্বা বলতেন- পুরুষমানুষের খোলা আর ঢাকা কি?
মতিন ভাই আবার আমার ভীষন পছন্দের মানুষ। কারন হলো, মতিন ভাই গামলা গামলা ভাত- তরকারী খেত। এটা দেখতে অনেক মজার।
আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, তার ভাত শেষ হলে আমি দৌড়ে গামলায় ভাত আনতে যেতাম। দ্রুত ফিরে এসে দেখি সে পিক করে থু থু ফেলছেন। ভাত খেতে খেতে থু ফেলার মতো ব্যাপারটি জীবনেও আমি আর কারও দেখিনি।
আর আম্নির বিচারের কারন হলো, এই অনেক ভাত খাওয়ার জন্য সে আমাদের বাড়ির বাঁশঝাড়ের অবস্থার বারোটা বাজিয়ে ছাড়ত। সেখানে যাওয়া যেত না। তবে মতিন ভাইয়ের ঘোর আপত্তি ছিল এগুলো সব তার নয়।
আমি ভাবতাম, এই মহিলার কাছে কেউ স্বাধীন নয়! এর একটা বিহীত হওয়া দরকার। এতো জরুরী জিনিসের বিচার যদি বসে তাহলে আমিও ফেঁসে যেতে পারি। কারন আমারও বাঁশের তৈরি লেপ্টিন ভালোলাগতো না। খোলা জায়গাই বেটার!
সেই আমরা এখন সভ্যজাতি। শুধু খোলা জায়গায় মলত্যাগ বাদে অন্যসব কিছুই ত্যাগ করি।
তো আমাকে ভাবী যে কারনে বললেন বংশগত তা সামান্য বলি। ছোটবেলায় আমি প্রায়ই বিছানায় হাগু করতাম। ৪/৫ বছর হবার পরও এ কাজ করতাম।
আম্মিজান, দজ্জাল মহিলা ছেড়ে কথা বলেন না এটা মাথায় আসতেই হুশ হতো আরকি! খুব তারাতারী হাগু নিজ হাতে বিছানা থেকে সরিয়ে মাটিতে নামিয়ে ফেলতাম। এতোবড় উপকার করার পরও আম্মি,, ওরে বাবা,,,থাক আর না বলি।
আর একটু বড় হবার পর, আম্মি লাঠি নিয়ে পেছনে দৌড় দিলেই গিয়ে আম গাছে উঠে বসে থাকতাম। নিচে আম্মিজান লাঠি হাতে এদিক- সেদিক হুশ হুশ করছেন। ঠিক এসময়ই তিনিও দিলেন বেজায় চাপ। আর কতোক্ষন থাকা যায় বলুন!
ছোট ভাইয়া বলতো, চাপ কমালে টেনশানও কমে। আর এটা আসল চাপ নয়, ভয় চাপ। মার্বেল খেলার সময় বড় ভাইয়া পিছু নিলে এটা প্রায়ই করে। তো ফর্মূলা শিখলে বৃথা যায় না!
যা হয় হোক, বিসমিল্লাহ বলে আমিও ছেড়েই দিলাম। এতো শব্দ হবার কোন মানে হয়? আম্মি নিচ থেকে শব্দে বুঝে গিয়ে লম্বা হাঁক বেয়াদবের জাত, নেমে আয়। আজ তোর একদিন কি,,,,তুই কি ছেলে? তুই তো মেয়ে, মেয়েদের এসব মানায় না। ফলাফল ওরে বাবা রে বাবা,,,,
আজও জানলাম না মেয়ে/ নারীদের কি মানায় আর কি মানায় না।
পুরুষদিবসে অঢেল শুভেচ্ছা ও শুভকামনা সকল উত্তম পুরুষদের। যারা সমাজের উত্তম স্তরে বসে বিভিন্ন ক্ষমতায়, কৌশলে নারীদের সুখে রেখেছেন। নারীদের অবস্থা এমন যে, ছেড়ে দে মা; কেঁদে বাঁচি!
বাকি সব মধ্যম ও নাম পুরুষদেরও, যারা মোটামুটি কিংবা নামে পুরুষ হলেও আজও তার অর্থ বোঝেননি। তো পুরুষগন! আজকের টয়লেট দিবসে মনের সমস্ত টয়লেটকে অন্ততঃ ফ্লাস মারুন! দেখবেন ভালো লাগবে!!
ছবি- নেটের।
একটি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
টয়লেট দিবসে দারুন রচনা। তবে এর সাথে কেন যে পুরুষ দিবস যোগ হলো। আর কোন দিন মনে হয় দিবস বিহীন নাই। শুভ কামনা রইলো।