
আমাদের শৈশবের ঈদ
আমাদের ছোট্টবেলার দিনগুলো ছিল খুব আনন্দের। সহজসরল জীবনযাপন ছিল আমাদের। এখনকার বাচ্চাদের মতো বইয়ের ভাড়ে নূহ্য হয়ে যাওয়া জীবন নয়।স্কুল মানে আমাদের কাছে কোনো জেলখানা ছিলনা।বরং একদিন স্কুল না যেতে পারলে অনেক মন খারাপ হতে।
আমাদের সময় শবেবরাত মানে এক অপার আনন্দের দিন।পাড়ার সব বাসা থেকে হরেকরকমের হালুয়া আর মিষ্টান্ন সমেত চালের রুটি আসতো।কোনো কোনো বাসা থেকে পোলাও, কোরমা,কাবাব,রেজালা আসতো।পাড়ার খালাম্মারা প্রতিযোগিতা করে হালুয়া বানাতেন।কে কত বেশি পদের হালুয়া বানাতে পারেন।আর কত বাহারি তার ডিজাইন। হালুয়ার উপরে নানারকম কারুকাজ থাকতো।কোনো কোনটির ডিজাইন এতোই সুন্দর খেতে ইচ্ছে হতোনা।
রোজার দিনগুলো ছিল দারুণ মজার।যেদিন ঘুম থেকে উঠতে পারতামনা সারাদিন গাল ফুলিয়ে বসে থাকা,না খেয়ে রোজা রাখার চেষ্টা।
ইফতারের সময়টা আমাদের কাছে অসাধারণ সময়।লেবুর শরবতে চুমুক দিলে স্বর্গীয় সুখ পাওয়া যেতো।
আমাদের সময় এলার্ম ঘড়ি খুবই কম ছিল।মোবাইলের যুগও নয়।মসজিদের হুজুরের ডাকের উপরই একমাত্র ভরসা ছিল। প্রায় বাসায় সেহেরিতে উঠার সমস্যা হতো।এক প্রতিবেশি উঠলে তিনি আশেপাশের সবাইকে ডেকে তুলতেন।না উঠতে পারলে বড়রা না খেয়ে রোজা রাখতেন।আর আমরা ছোটরা কে কতক্ষণ না খেয়ে থাকতে পারি তার প্রতিযোগিতা চলতো।যে সর্বোচ্চ সময় না খেয়ে কাটাতে পারতো খেলার আসরে এবং বন্ধুমহলে তার মর্যাদা আলাদা ছিল। তাকে নানান উপাধিতে ভূষিত করা হতো।এই যেমন,”পাটকাঠি”,”পাটখড়ি” ইত্যাদি ব্যঙ্গাত্মক উপাধি।
আমাদের সময় এতোবেশি কাপড়চোপড়ের প্রচলন ছিলনা।সারাবছর ২/৩ টা জামা আর ঈদের সময়ই সবচেয়ে দামী এবং আকর্ষণীয় জামা কেনা হতো।আমাদেরকে বেশিরভাগ ঈদে দর্জির তৈরি জামা পরতে হতো এবং আমাদের দুবোনের ঈদের সময় একই কালার এবং ডিজাইনের জামা পরতে হতো।
ক্লাস সিক্সে ওঠে যাওয়ার পর আমাদেরকে বাধ্যতামূলক পায়জামা পরতে হতো।আমার বাবা-মা দূজনেই সরকারি ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তা ছিলেন। তারপরও আমাদেরকে বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনে চলতে হতো।আমাদের আত্মীয় পরিজন বেশিরভাগই থাকতেন চট্টগ্রাম এবং সন্দ্বীপে।তাই পাড়া-পড়শী আর বাবা-মাকে নিয়েই আমাদের ছেলেবেলার জীবন আবর্তিত হতো।
আমাদের সময় ঈদের জামা-জুতা, ক্লিপ, কানের-দুল, নেইলপলিশ লুকিয়ে রাখার প্রচলন ছিল।আম্মুর আলমারিতে তালাবদ্ধ করে এগুলো লুকিয়ে রাখা হতো।
ছোটবেলায় কত বোকা ছিলাম। এখনো মনে হলে হাসি পায়।আমাদের বেশিরভাগ ঈদের জামা আম্মু পছন্দ করে আনতেন।একবার আম্মু অসুস্থ হওয়ায় আব্বুকে আমাদের ঈদের জামা কিনতে পাঠানো হলো।আব্বুর সাথে এলিফ্যান্ট রোডের এক দোকানে গেলাম জামা কিনতে।আব্বু আমাদেরকে দোকানে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজে কোনায় বসে রইলেন।আমরা দুবোন মহা উৎসাহে ঈদের জামা কিনে বাসায় ফিরলাম। বাসায় এসে আম্মুকে বললাম মনের মতো রং পছন্দ করেছি।আম্মু তো প্যাকেট খুলে ভীষণ চটে গেলেন আব্বুর উপরে।দুবোন দুটো নাইটি কিনে বাসায় ফিরেছি আমরা।সারাদিন চলল আম্মুর বকাবাদ্য।
ঈদের দিনটি ছিল আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো।পাড়ার সমবয়সী যতো বান্ধবী এবং বড় আপুরা এবং ছোটগুলো সহ সবাই একসাথে পাড়ার প্রতিটা বাসায় যেতাম।কারো বাসায় পোলাও কোরমা,কারো বাসায় চটপটি,কারো বাসা নুডলস কতরকম আয়োজন। একসময় পেটে আর জায়গা থাকতো না।সবাই মিলে চান্দা তুলে ফান্টা অথবা সেভেনআপ কেনা হতো।আমাদের সময় সেলামী ছিল,২টাকা, ৫ টাকা অথবা ১০ টাকার নতুন চকচকে নোট।
আমরা আসলেই অনেক আনন্দে আর সুখে ছোট্টবেলা পাড় করেছি।এখনকার বাচ্চাদের কাছে এগুলো স্বপ্নের মতো লাগতে পারে।
৪টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
নেই আর সেই দিনগুলী
আছে শুধুই মোবাইল টিপাটিপি
কম্পিউটারে গ্যামগুলি
নাই উঠানে মাঠে ঠাংগুলি।
নাই ঘরে ঘরে খাওয়াখাঅয়ায়ি
একই ঘরে সিরিয়ার মুভি ঘুরাঘুরি
নাই গাদন, বিউচি খেলার মনগুলি
শুধুই অনলাইনে চোখাচোখি।
আলমগীর সরকার লিটন
সত্য খুব সুন্দর বলেছেন আজ কে আমরা শুধু হাহাকার করি ফিরে আসুক সেই দিনগুলো
ভাল থাকবেন———–
রোকসানা খন্দকার রুকু
আহা কি মধুর সেইসব দিন!
যদি আবার ফিরে পাওয়া যেত।
শুভকামনা 🌹
হালিম নজরুল
সময় বদলেছে। দিন বদলেছে। প্রকৃতি ও সভ্যতা বদলেছে। পাশাপাশি বদলে গেছি আমি, আমরা, আমাদের সমাজ।