
প্রেমকান্ত নামের ছেলেটা ভারতে ফিরে গেছে, তার সাথে যা হয়েছে সেইটা দু:খজনক, সে ফিরে গেছে এইটাই তারজন্য ভাল হয়েছে। কিন্তু তারে নিয়ে লেখা একটা পোস্ট শেয়ার করতে দেখলাম কিছু মানুষকে। পোস্টের ভাষ্য হচ্ছে বাঙালি মেয়েরা প্রেমিকা হিসেবে সলিড না, যতোটা সলিড বাঙালি পুরুষ। মানে বাঙালি নারী প্রেমিকা হিসেবে ছলনাময়ী, তা সে পোস্টদাতা উনার মতামত জানাতেই পারে। কিন্তু বরন্তু উনি উদাহররণ হিসেবে দিয়েছেন দেবদাস আর পার্বতীর উদাহরণ🥱। বাঙাল দেশে দেবদাস যেমন অনেক জন্মে, তেমনি পারুর মতো ছলনাময়ী নাকি বেশি জন্মে যারা দেবকে রেখে আনন্দে সংসার করতে যায়।
একেতো এরা উপন্যাসের কল্পিত চরিত্র, তারপরও যদি সেই চরিত্র নিয়েও বলি তাহলে ভাই যে এই পোস্ট লিখেছে উনি কি খালি মুভি দেখেছেন নাকি মূল উপন্যাসও পড়েছেন? পারু ছলনাময়ী বরগুনার ওই মেয়ের মতো? পারু? পারু আজীবন দেবকেই ভালবেসেছে, ছোট থেকে। দেব নিজেকে নিয়ে ছিলো, খামখেয়ালী, পারু ছিলো তার কাছে হাতের কাছেই সহজে পেয়ে যাওয়া কিছু অথবা পারুকে যে সে ভালবাসতো এইটা সে বুঝতেই পারেনি পারুকে হারানোর আগে। পারু অপেক্ষা করেছে, পারু সমাজের লজ্জার ভয় না করে সেই যুগে রাতের আঁধারে ছুটে গেছে দেবের কাছে। দেব তাকে ফিরায়ে দিয়েছে। এরপর দেব যখন ফেরত এসেছে পারু কি করতে পারতো? সেই যুগের একটা মেয়ে যার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে সে কি করতে পারতো? তা বলে সে দেবকে ভালবাসেনি? দেবকে বুকের মধ্যে নিয়েই তো সে সংসার করতে যায়। বিয়ের পরে অকাতরে সৎ মেয়েরে সব দিয়ে দেওয়া, সংসারের মধ্যে থেকেও সংসারে না থাকার হিন্টস কি শরৎবাবু দেয়নি? ধর্মদাসের কাছে দেবের মদ খেয়ে শরীর নষ্ট করার কথা শুনে পারু ভেবেছিলো সে পরের অন্ন সংস্থান করছে আর তার সর্বস্ব যে সে শেষ হতে চলেছে। দেবদাস উপন্যাসে সবচে করুণ লেগেছিলো আমার দেবের বাবার মৃত্যুর পরে দেব পারুর কথপোকথন, পারু কিভাবে কেঁদেছিলো।
‘আমি যে মরে যাচ্ছি দেব-দা, কখনও তোমার সেবা করতে পেলুম না, আমার যে আজন্মের সাধ, স্বর্গের ঠাকুর আমার এই সাধটি পূর্ণ করে দাও, তারপর মরি তাতে দু:খ নেই।’
এই পার্বতী ছলনাময়ী? এসএসসির পরে প্রথম এই উপন্যাস পড়ি। দেবের মৃত্যু করুণ তাতে সন্দেহ নেই, তার মৃত্যুতে কষ্ট লেগেছিলো। কিন্তু হাহাকার ওঠে পারুর জন্য, দেব তো মরে গিয়ে বেঁচে গেছে আর পারু? বাঙালি মেয়ের ভালবাসা সলিড নাকি তারা ছলনা করে, নাকি বাঙালি পুরুষ বেশি প্রেমিক এর পরিসংখ্যান কোথায় আছে জানি না, কিন্তু পারু বা পারুর মতো কোনো মেয়ে কখনওই ছলনাময়ী ছিলো না, হতে পারে না।
কালের কন্ঠের খবর টি পড়ুন : ভারতের তামিলনাড়ুর প্রেমকান্ত প্রেমের টানে বরিশাল এসেও প্রেমের দেখা পায়নি
https://www.google.com/amp/s/www.kalerkantho.com/amp/online/country-news/2022/08/04/1169768
পুস্পিতা আনন্দিতা
নিউইয়র্ক, আমেরিকা।
৪টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
দেবদাস কথা শুনলেই বুকের মাঝে হু করে উঠে
এই উপন্যাসের স্বাদ যুগ যুগ থাকবে————–
রোকসানা খন্দকার রুকু
শুধু নারী নয়, পুরুষও অনেক সময় ছল করে। এরকম অনেক ঘটনা ছিল হয়তো সেটি ভাইরাল হয়নি কারন মেয়েরা সম্মানের ভয়ে প্রেমিক খুঁজতে বের হতে পারে না। কষ্ট পায়, কাউকেই হয়তো বলতে পারে না।
তবে প্রতারনা কেউ কারও সাথে না করুক এটা চাই। এটি গর্হিত অপরাধ সে ছেলে/ মেয়ে সবার জন্যই!!!
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
প্রতারণা সবাই করে। ছেলা বা মেয়ে।
হালিমা আক্তার
প্রতারনা করা অপরাধ। সে ছেলে বা মেয়ে যেয়েই হোক। একক ভাবে কাউকে দোষী করা যায় না। আর মেয়েদের কথা বলতে হয়, তাদের সামাজিকতা দেখতে হয়। যারা মেয়েদের ছলনাময়ী বলে, তারাই আঙ্গুল তুলে বলবে কেমন মেয়ে, মা বাবার কথা ভাবলো না। শুভ কামনা রইলো।