
সুমনা এবং রবিন একে অপরকে ভালোবাসে, কিন্তু তাদের ভালোবাসাকে পরিবারের জন্য বিসর্জন দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে। যেখানে বিয়ে করে সেখানে রবিনের নতুন বউ অথবা সুমনার নতুন স্বামী হয় শয়তান প্রকৃতির অথবা একসময় মৃত্যুবরণ করে। তখন তারা আবারো নিজেদের পুরাতন ভালোবাসাকে জাগ্রত করার বাসনায় লিপ্ত হয়।
অন্যদিকে কিছুদিন পরে রবিনকে অন্য এক মেয়ে জেরিন এবং সুমনাকে অন্য এক ছেলে বাদল ভালোবাসতে শুরু করে। সুমনা এবং রবিন যেহেতু নিজেদের অন্যত্র বিয়ের পরেও নিজেরা একে অপরের পরকীয়ায় মশগুল, এসব দেখে তাদের বর্তমান প্রেমিক প্রেমিকা জেরিন ও বাদল শয়তানিবশতঃ নিজেদের মধ্যে মিলে গিয়ে অনিশ্চিত স্বার্থপরতার টুরু টুরু লাভ খেলা খেলে।
নানান ঘাত প্রতিঘাতে রবিন ও সুমনা সেই শয়তান প্রেমিক জেরিন ও বাদলের হাত থেকে একে অপরকে বাঁচাতে আবারো তাদের প্রেমকে জলাঞ্জলি দিতে বাধ্য হয় এবং এই বর্তমান খলচরিত্রের দুষ্টু প্রেমিক জেরিন ও বাদলকে বিয়ে করে। অর্থাৎ জেরিন এবং বাদলেরও বিচ্ছেদ ঘটে। তবে পুরাতন প্রেমের মশাল রবিন ও সুমনার মনে দাউদাউ করে জ্বলতেই থাকে।
একই অভিনেতা অভিনেত্রীরা সেই টুরু টুরু লাভ নিয়ে বিভিন্ন চ্যানেলে এত এত প্রেমঘটিত সিরিয়ালে অভিনয় করে যে রিমোট হাতে নিয়ে আমি নিজেই মাঝেমধ্যে ভুলে যাই ঠিক কোন সিরিয়ালটি দেখছিলাম।
সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বেশিরভাগ সময় নায়ক হয় বড়লোক এবং নায়িকা হয় শ্যামলা বরণ মিষ্টি বিক্রেতা, ঢোলী, কিষাণী, কাপড় বিক্রেতা, অফিসের কর্মচারী থেকে গ্রামের হতদরিদ্র মেয়ে। যাকে অসম প্রতিযোগীতার মধ্য দিয়ে স্বামী, শ্বশুরকুল এবং বজ্জাত আত্মীয়স্বজনকে প্রতিমূহুর্তে টেক্কা দিয়ে চলতে হয়।
শেষপর্যন্ত নিজের বিরল গ্রুপের রক্তসহ কিডনী, চোখ দিয়ে স্বামীর জীবন বাঁচানোর পরেই নায়ক রবিনের চোখে নায়িকা সুমনা হয়ে ওঠে একজন অনন্য স্ত্রী আর শাশুড়ির চোখে জগতের একমাত্র মেয়ে যে তার ছেলের যোগ্য বউ। অন্যের বউ হবার পরেও আবারো তাদের পুরাতন ভালোবাসাকে এক করতে বর্তমান সম্পর্কের (সুমনার সাথে বাদলের এবং রবিনের সাথে জেরিনের) বিচ্ছেদ ঘটে এবং রবিন এবং সুমনা পুনরায় দ্বিতীয়বার বিয়ে করে। তাহলে এক সিরিয়ালে নায়ক নায়িকার মোট বিয়ে হলো তিনবার!
এসব সিরিয়ালে ২৪ ঘন্টা একজন মেয়ে এবং ছেলেকে আর তাদের বন্ধনগুলোকে যেভাবে বিভিন্নভাবে হেয় করে দেখানো হয় সেটাই বর্তমানে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন বা লিঙ্গ বৈষম্যের অন্যতম কারন বলে মনে করি।
আকাশ সংস্কৃতিতে চ্যানেলের টিআরপি বাড়াতে বিভিন্ন নাটকে জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশনকে একটি উপভোগ্যতার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর দায়ভার কে নেবে? [লেখার খাতিরে নামগুলি কাল্পনিক নেয়া হয়েছে]
[ ছবি- নেট থেকে ]
১২টি মন্তব্য
পপি তালুকদার
কি আর বলব! আমি সিরিয়াল দেখিনা তাই যদি কাউকে উপদেশ দিতে যাই অনেক কিছু শুনতে হয়।এ-ই সিরিয়াল আমাদের সাংস্কৃতিক আমাদের পারিবারিক জীবনে অনেক আঘাত করছে।এখন ঘরে ঘরে সিরিয়ালের কূটনামি গুলো চলে।
ধন্যবাদ এই বিষয়ে লেখার জন্য।
তৌহিদ
পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপু। মন্তব্যে প্রীত হলাম। শুভকামনা জানবেন
ইসিয়াক
এই সব সিরিয়ালগুলো একেবারে জঘন্য ,এই সব সিরিয়ালগুলো জন্য পারিবারিক মূল্যবোধ ,নীতি নৈতিকতা হারাতে বসেছে আমাদের সমাজ। মানুষ এইসব দেখে ভালো কিছু শিখতে পারে না । শুধু কুটনামী আর শয়তানি ছাড়া।
ধন্যবাদ
তৌহিদ
সুন্দর এবং সত্য বললেন ভাই। ধন্যবাদ আপনাকেও।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সিরিয়ালের কথা শুনলেই বিরক্তি চলে আসে। আমাদের সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান কে জঘন্যতম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। পারিবারিক বন্ধন, মূল্যবোধ নিম্নস্তরে চলে গেছে, নিজস্বতা হারিয়ে ফেলেছে।
অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
তৌহিদ
এই সিরিয়ালগুলি সমাজে বৈষম্য ছড়াচ্ছে। আমি পারতপক্ষে এড়িয়ে যাই।
ভালো থাকুন দিদিভাই।
জিসান শা ইকরাম
জেন্ডার বৈষম্যকে সিরিয়াল গুলোই বাঁচিয়ে রাখে,
এসব সিরিয়ালের কুফল বুঝতে পেরে আমাদের বাসায় এসব আর কেউ দেখে না।
ভালো লেখা।
নায়ক নায়িকা না লিখে প্রতিকী নাম দেয়া যেতো।
তৌহিদ
ভাই গ্রেট আইডিয়া! কাল্পনিক নাম দিয়ে ঠিক করে দিলাম। আরেকবার পড়বেন কি? লেখাটি এতক্ষণে পূর্ণতা পেলো।
ধন্যবাদ অশেষ! এই জন্যেই বলে সিনিয়রদের উপদেশ মেনে চলা উত্তম।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সিরিয়াল কি আর বলব, দাদা।
দুচোখে দেখতে পারিনা।
সিরিয়াল দেখে মানুষ কতটুকু সফল হয়েছে তা আমার জানা নেই। কেবল কুফল বয়ে এনেছে।
.
যথার্থ বিষয় তুলে ধরেছেন, দাদা।
তৌহিদ
হ্যা, বাস্তবিকই সমাজ পরিবারে ইফেক্ট পড়ে এসবে। ভালো থাকুন দাদা।
আরজু মুক্তা
আমি তো টিভি দেখি না। সেই ১০/১২ বছর হলো। তাই এসব বুঝিনা বা ভালো লাগে না।
তৌহিদ
আমি মাঝেমধ্যে দেখি। সময় কাটে আর কি!