
“আমি তোমার জন্য এসেছি -(পর্ব-৫১)
মিতুর থেকেই সাইন নেওয়া হলো বড় মামীর কান্না যেন থামছিলো না, মিতু কবুল বলতে গিয়ে জ্ঞান হারাল কোন রকমে প্রিয়া শান্ত করে সাইন করাল।
কাজী সহ ৩জন সাক্ষী ওনারা মিতুর সাইন নিয়ে চলে গেল। বেয়াই সাহেব সবকিছু একটু তাড়াতাড়ি শেষ করে দিলে ভালো হয়।
আমাদের ফিরতে সুবিধা হবে, জ্বী আঙ্কেল আমি সব ব্যবস্থা করছি আপনারা ভিতরে গিয়ে বসুন।
জিসানের কথায় ওনারা পাশের রুমে গেল বাড়ির মুব্বিরা বিদায় নিচ্ছে।
প্রিয়ার কথায় সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেল, রুম খালি করো বর ঘরে আসবে। কিছু ফর্মালিটি আছে শেষ করতে হবে আমাকেই দায়ীত্ব দেওয়া হয়েছে। ভাবী জিসান ভাইয়াকে বলো বর পক্ষকে জানিয়ে বরকে এখানে মিতুর কাছে নিয়ে আসতে।
রোহানের বান্ধবী তনিমা বললো আপ্পি আপনারা ব্যবস্থা করুন, আমি রোহানকে ভিতরে নিয়ে আসছি।
ও ভালো তো, আচ্চা যাও নিয়ে এসো আমি সব রেডি করে রাখতেছি।
মুরব্বিরা সবাই খেয়ে আরাম করছে, শেখর সাহেব, মেয়র সাহেব, সবাই বিশ্রাম রুমে বসে মিষ্টি খেল, পান সুপারি যারা খায় তাঁরা পান খেল।
ছেলে মেয়েদের কাছে তাঁরা যাবে না, আরাফ বাবা একটু দেখতো রোহানকে ভিতরে পাঠিয়ে দেও।
আচ্ছা আঙ্কেল আমি যাচ্ছি বলেই রোহানের কাছে গেল, সবাই আরাফকে দেখে ফাজলামু বন্ধ করে শান্ত ভাবে বসলো।
আবিদ,রিদম তোমরা রোহানকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে যাও কি সব ফর্মালিটি আছে শেষ করে আস আমি মেয়ে ছেলেদের মাঝে যাব না।
রোহান নামতে যাবে জুতা নেই, ভাইয়া আমার জুতা জোড়া নেই! মানে কি তুমি কি খালি পায়ে বিয়ে করতে আসছিলে।
আরাফের কথা শোনে সবাই হাসতে শুরু করলো, আবিদ মুচকি হাসল আমি আগেই জানতাম এমনটা হবে।
আরাফ ওদের থামিয়ে দিয়ে বললো আরে তোমরা না হেসে খোঁজ জুতা জোড়া কোথায় যাবে, এখানেই আছে।
রিদম বললো জুতা খোঁজে লাভ নেই ভাইয়া, বিয়ে বাড়িতে জুতা হারানো নতুন কোন ঘটনা না।
জুতা হারাবেই, মেয়েরা চুরি করে লুকিয়ে রাখছে টাকা দিলেই বের করে দিবে।
ওরে বাবা দারুন ব্যাপার তো বলেই আরাফ হাসলে শহরে,দেশের বাইরে অনেক বছর কাটিয়েছে তাই এসব বিষয়ে জ্ঞান নেই।
তাহলে এখন উপায়! ভাইয়া আমি রোহানের জন্য একই ডিজাইনের দু জোড়া জুতা কিনছি অন্য জোড়া গাড়িতে রাখছিলাম।
সবাইকে আবিদকে বাহ্বা দিল, আবিদ সার্টের ক্সলার উঁচু করে চলে গেল, কয়েক মিনিটের মধ্যে গাড়ি থেকে জুতা নিয়ে এসে রোহানকে পড়িয়ে দিল।
মিতুর বন্ধবী মাধবী, জিসানের বউ,বোন সবাই রোহানকে নিতে আসলো। তোমরা ভিতরে যাও আমি এপর্যন্তই, ভাইয়া! আরাফ রোহানের কাঁধে ভরসার হাত রাখল আরে পাগল ভিতরে যাও এনজয় করো।
রোহানকে নিয়ে মিতুর রুমে বসাল ভাবী,বোন, মিতুর বান্ধবী সবাই সেখানে উপস্থিত। তনিমা মিতুর পাশে বসল, সবাই মজার মজার কথা বলে হাসাতে ব্যস্ত, বিভিন্ন কৌতুক বলা। পাল্টা জবাব দেওয়াও চললো, প্রিয়া মিষ্টি নিয়ে রুমে আসলো প্রিয়া আপ্পি।এখানে সবাই পরিচিত দেখে রোহান এবার ভয় মুক্ত হলো।
সবাই শান্ত হয়ে বসো সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে রোহানদের বরযাত্রী নিয়ে ফিরতে হবে। আমরা ওদের বিদায় দিব তাই বড় মামী মানে মিতুর মা আসবে রোহানের সাথে কথা বলবে।
চারদিকে সন্ধ্যা বাতি জ্বলছে, দূরের আকাশে পাখিরা নীড়ে ফিরতে শুরু করছে, প্রিয়ার মনটা অশান্ত হয়ে গেল। কি যেন নেই হারানোর কষ্ট মনটা বিষাদময় হয়ে ওঠেছে।
প্রিয়া মা! ভিতরে আস বড় মামী রোহান ওনি তোমার শ্বাশুড়ী মা। রোহান বিছানা ছেড়ে নেমে মিতুর মাকে সালাম করলো, ওঠ বাবা রোহান বিছানায় উঠে বসল। রোহান বাবা হাতটা দেও তো বলেই রোহানের হাতের আঙ্গুলে হিরার রিং পড়িয়ে দিলেন।
রোহানের হাতের উপর মিতুর হাতটা রেখে বাবা আমার একমাত্র মেয়ে।
মিতু ও অবুঝ তুমি একটু মানিয়ে নিও বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
জিসানের বউ মিতুকে রোহানের হাতে সপে দিল দোয়া করি সুখি হও। মেজ মামী সহ একে একে সবাই মিতুকে রোহানের হাতে তুলে দিল।
এবার রোহানের বাবা শেখর সাহেব সহ কয়েকজন ভিতরে ঢুকলের বেয়াই সাহেব।
বলেই রোহানের বাবা হাতটা ধরে মিতুকে সপে দিতে গিয়ে কাঁদতে শুরু করলে শেখর সাহেব।
ভাইজান আর বড় আদরের মেয়ে মিতু ওরে পরের বাড়িতে পাঠালে, আমার এত কষ্ট হবে বুঝতে পারি নাই। আজ থেকে মেয়েটা আপনাকে দিলাম একটু দেখে রাখবেন।
এসব কি বলেন বেয়াই সাহেব, আপনার মেয়ে মিতু আমার বাড়ির বউ না মেয়ে হয়েই থাকবে বলে ভরসা দিলেন।
বাবা রোহান! বাবা আপনারা কোন চিন্তা করবেন না মিতু ভালোই থাকবে।
শেখরকে নিয়ে জিসান পাশের রুমে চলে গেল, প্রিয়ার পাশে বসল রোহান! কিছু বলার আগেই রোহান বললো আপ্পি আমি মিতুকে পছন্দ করে বিয়ে করছি। ওর অযত্ন কখনো হবে না, আমার আব্বু আম্মু খুব ভালো মানুষ মিতু সুখেই থাকবে।
প্রিয়া মিতুর হাতটা ধরে বললো মিতু আজ থেকে তুমি এবাড়ির মেহমান এটাই তোমার আসল পরিচয়।
তুমি রোহানের স্ত্রী কখনো তাকে অসম্মান করে কোন কথা বলবে না।
জীবনে যত কঠিন সময় আসুন রোহানের কাছে সব শেয়ার করবে, কখনো মিথ্যা বলবে না, শ্বশুড়,শ্বাশুড়ীকে বাবা মায়ের মতো সম্মান করবে, ওটাই তোমার আসল ঠিকানা।
শোন বিয়ে নিজের প্রিয় স্বামীর সাথে অনেক অনেক আনন্দে থাকা না…
বিয়ে মানে পরিবারের সবার সুখ,দুঃখ ভাগাভাগি করে আনন্দে থাকার নামেই জীবন।
বিয়ে মানে সুখের চাদরে শুয়ে থাকা না, বরের সাথে সময় কাটানো না..
বিয়ে মানে হল অনেকটা দায়ীত্ব,নিষ্ঠা,ত্যাগ,কর্তব্য পালন, আত্মত্যাগে নিজেকে সব রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখা।
তুমি এখানে সব সময় নিজের ইচ্ছা মত ঘুম থেকে উঠতে…
এখন থেকে তোমাকে সবার আগে ঘুম থেকে উঠতে হবে।
নিজের জীবন পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে চলবেনা..
তোমাকে ওই পরিবারের সবার যত্ন নিতে হবে।
সব সময় ইচ্ছে হলেই বাইরে ইচ্ছে মতো ঘুরতে যেতে পারবে না..
তোমাকে পরিবারের পাশে সব সময় থাকতে হবে, ওদের অনুমতি নিয়ে ঘুরতে যাবে।
তোমার ভালো লাগা,খারাপ লাগা গুলো পরিবারের সবার সাথে ভাগ করে নিতে হবে,,,
ওই বাড়িতে তোমার নতুন বাবা মা হবে,মৃত্যু পর্যন্ত তুমি সেখানেই থাকবে।
ভালোবাসা দিয়ে নতুন একটা জগৎ সৃষ্টি করবে,সুখ,শান্তি দিয়ে সংসারটা ভরিয়ে দিবে।
তুমি এবাড়ির, তোমার বাবা মায়ের সম্মান নষ্ট হয় এমন কোন কাজ করবে না।
ছোট ছোট বিষয়ে রাগ বা কষ্ট পাবে না, সততা না জেনে সন্দেহ করবে না, মানিয়ে নিয়ে, মেনে নিয়ে, বুঝি,শোনে কাজ করবে।নিজের বিবেক, বুদ্ধি দিয়ে সব কিছু নিজের মতো করে বিচার করবে।
শত আঘাতেও ভেঙ্গে পড়বে না, কারন কান্নার পরে সুখ আসবে হতাশ হবার কিছুই নেই।
মনে রাখবে দিনের পর যত তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসবে প্রভাত তত নিকটে আসে..
প্রিয়ার কথা শোনে উপস্থিত সকলে মুগ্ধ হলো মিতু কাঁদতে কাঁদতে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরল। প্রিয়া মিতুর কপালে চুমু দিল দোয়া করি দুজনেই সুখি হও, নতুন একটা জীবন শুরু করো। রোহানের চোখেও পানি, নারীকে কত সংগ্রাম করতে হয় সংসার বাঁচাতে, মিতুকে আমি সাহায্য করবো।
….চলবে।
১৬টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চমৎকারভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলো। বিয়ের খুঁটিনাটি বিষয় গুলো সুন্দর তুলে ধরেছেন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দিদি ভাই।
বিয়ের অনুষ্টান আমি খুব বেশি দেখি নাই তবে লোকে মুখে শোনা কথাগুলো গল্পে তুলে ধরলাম।
ভালো লাগছে আমার লেখাটা আপনাদের ভালো লাগছে, খুশি হলাম দিদি।
সব সময় পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ভালো থাকবেন,
শুভ কামনা রইল দিদি ভাই।
ইঞ্জা
আপু পড়ছি, বিস্তারিত কমেন্ট পরে করবো।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইজান।
জ্বী পরে ফি হয়ে পড়বেন, বিয়ে বাড়িতে হাসি আনন্দ সব কিছুই গল্পে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
ভালো তাকবেন,
শুভ কামনা রইল।
ইঞ্জা
আপু আমি সময় করে করে আপনার লেখা পড়ে যাচ্ছি কারণ বেশ পছন্দের এই লেখাটি।
সুরাইয়া নার্গিস
কৃতজ্ঞতা ভাইজান, আপ্লুত হলাম।
দোয়া রাখবেন।
ফয়জুল মহী
সুন্দর অনুভূতি প্রকাশ। সুস্থতা কামনা করি।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
বিয়ের বাড়িতে কি আনুষ্টানিকতা আমার জানা নেই, গল্পের প্রয়োজনে কিছু লিখলাম।
সুন্দর মন্তব্যে উৎসাহিত হলাম, পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ভালো থাকুন,
শুভ কামনা রইল।
খাদিজাতুল কুবরা
খুব ভালো লেগেছে আপু।
বিয়ে বাড়ির খুনসুটি হাস্যরস এবং একজন মেয়ের বিবাহিতাা নারী হয়ে উঠতে সুন্দর পরামর্শ সবমিলিয়। শিক্ষনীয় বার্তা আছে।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ আপু।
বিয়ের অনুষ্টান আমি খুব বেশি দেখি নাই তবে লোকে মুখে শোনা কথাগুলো গল্পে তুলে ধরলাম। আমি গল্পে কিছু বার্তা তুলে ধরেছি, একজন মেয়ে তার স্বামীর বাড়িতে কি ভাবে ভালো, সুখি থাকতে পারে তাই তুলে ধরেছি।
আমার লেখাটা আপনাদের ভালো লাগছে, খুশি হলাম আপু।
সব সময় পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ভালো থাকবেন,
শুভ কামনা রইল আপু।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
গল্পের ছলে সামাজিক দায়বদ্ধতা সুন্দরভাবে তুলে এনেছেন —- “শোন বিয়ে নিজের প্রিয় স্বামীর সাথে অনেক অনেক আনন্দে থাকা না…
বিয়ে মানে পরিবারের সবার সুখ,দুঃখ ভাগাভাগি করে আনন্দে থাকার নামেই জীবন।
বিয়ে মানে সুখের চাদরে শুয়ে থাকা না, বরের সাথে সময় কাটানো না..
বিয়ে মানে হল অনেকটা দায়ীত্ব,নিষ্ঠা,ত্যাগ,কর্তব্য পালন, আত্মত্যাগে নিজেকে সব রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখা”।
— আমারা জীবনে এসব কথা মনে রাখিনা বলে অনেকক্ষেত্রে এতো কলহ বিবাদ। ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
গল্পের মাধ্যমে আমি কিছু বার্তা তুলে ধরেছি, এগুলো প্রতিটা মেয়ের মানা উচিত।
সংসারটা সুখের করার জন্য কিছু মেনে নিয়ে, মানিয়ে নিতে শিখতে হয়।
কিছু ত্যাগ,কিছু নিষ্ঠা,কর্তব্য এগুলো মনে রাখলে সংসার সুন্দর করা সুখের করা যায়।
কৃতজ্ঞতা রইল দাদা সুন্দর মতামতে আপ্লুত হলাম।
ভালো থাকবেন,
শুভ কামনা রইল।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
লেখকদের কাজই মানুষকে মানবতা, মমতা, স্নেহ, শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় উদবুদ্ধ করা। জীবন, সংসারকে সুন্দর করার সুপরামর্শ দেয়া। আপনি সেকাজটি সুন্দর এবং আন্তরিকভাবে করে যাচ্ছেন সেজন্য অশেষ ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
সুরাইয়া নার্গিস
শুকরিয়াসহ আপ্লুত হলাম শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
চেষ্টা করছি ভালো কিছু লেখার বাকিটা আল্লাহ্ ভরসা।
দোয়া রাখবেন।
সুপায়ন বড়ুয়া
যাক বিয়েটা ভালোয় ভালোয় হলো
সামাজিক রীতিনীতি গুলো সুন্দর ভাবে
উপস্থাপন হলো।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা ভাই।
সুন্দর মতামতে আপ্লুত হলাম, কৃতজ্ঞতা রইল দাদা।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকুন,
শুভ কামনা রইল।