
আমি তোমার জন্য এসেছি- (পর্ব-৪২)
জাপান যাবার আগে একদিন প্রিয়াদের বাসায় দেখা করতে যাই, পিচন থেকে নুপূরের আওয়াজ চোখ ফেরাতেই একটা নীল পরী দৌঁড়ে আমার চোখের আড়ালে হারিয়ে গেল।
অনেকক্ষন খোঁজার পর নীল পরীর হাতে দুটো নীল কাচের চুড়িতে চোখ পড়ল।
শরীরে তার ফিরোজা রংয়ের জামা, চোখে কাজল ওরে বাবা এটা তো আমাদের পিচ্চি প্রিয়া।
কি ব্যাপার আমাকে ভয় দেখানো হচ্ছে নাকি! প্রিয়া তখন হাসতে হাসতে মায়ের আঁচলে মুখ লুকাল কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আরাফ মনের অজান্তে হেসে দিল।
আচ্ছা পিচ্চি প্রিয়া কি এখনো ফিরোজা রং পছন্দ করে,ওর প্রিয় বলেই তো ফিরোজা রংটা আজো আমার প্রিয়।
ওই সময়ে পাঞ্জাবীটা কেনা ভেবেছিলাম অনেক কিছু, হয়ত কোন এক বিকালে নদীর পাশ ঘেষে হেঁটে যাব প্রিয়ার হাত ধরে। প্রিয়ার পড়নে থাকবে ফিরোজা শাড়ী আর আমি ফিরোজা পাঞ্জাবী।
শ্রেয়া আজ নীল শাড়ী পড়েছে তার ইচ্ছা আমাকেও ফিরোজা পাঞ্জাবী পড়তে হবে।
শ্রেয়ার আবদার গুলো কখনো আলাদাভাবে পূরন করা সম্ভব হয়না, তবু নিজের পছন্দের সাথে মাঝে মাঝে মিলে যায় তাতেই শ্রেয়া বেশ খুশি।
ছোট ভাইজান আপনার মোবাইল বন্ধ তাই রোহান বাসার ল্যান লাইনে ফোন করছে আপনারা কখন যাবেন.?
বলো ২০ মিনিট পরে আসতেছি।
আচ্ছা ছোট ভাইজান।
আরাফ মায়ের আলমারিটায় চোখ পড়ল ওখানে ৮ বছর আগের একটা ফিরোজা পাঞ্জাবী আছে।
আলমারির কোণে এক কর্ণারে পরে থাকা ধুলোবালি জমা পাঞ্জাবীটা যখন হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে ওঠল।
তখন মুহূর্তের মধ্যে আরাফ কোথায় যেন হারিয়ে গেল!!
স্মৃতির গভীরে ডুব দেয় যেখানে কষ্ট আর না পাওয়ার হাহাকার আরাফের মনটা খারাপ করে দেয়।
সেই সুন্দর মুখটা,তার চেলাফেরা, ভালোলাহা,ভালোবাসা একসাথে কাটানো বেশ খানিকটা সময়,কতশত পুরনো কথা মুহূত্বের মনে পড়ে গেল।
অতঃপর চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল এসে মনে করিয়ে দিল, আজ তোমায় মনে পড়া বারন!!
আরাফ পাঞ্জাবীটা ছোঁয়ে দেখে রংটা ঠিক আছে তবে সময়ের ব্যবধানে কাপড়টা তার চাকচিক্য হারিয়ে ফেলছে।
আলতু স্পর্শে ছিঁড়ে যাবে, পরার উপযোগী না তাই প্রিয়ার স্মৃতি ভেবে রেখে দিল।
নিজের আলমারি খুলে হলুদ একটা পাঞ্জাবী পড়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামল।
মিতু তোর ভাইয়া জিসানের বাসায় পৌঁছল কিনা একবার ফোন করে খোঁজ নেও তো।
জ্বী ভাবী বলেই মিতু রোহানকে কল দিল, ভাবী রিং হচ্ছে রিসিভ করছে না।
তুমি ফ্রি হয়ে ভাইয়াকে কল করে নিও, আমি প্রিয়া আপ্পির কাছে গেলাম।
মিতু আজকের দিনেও তুই হাঁটাহাঁটি করছিস, একটু শান্ত হয়ে রুমে বস যা লাগে আমি পাঠিয়ে দিব।
ভাবী নিজের বাসায় হাঁটছি পরের বাসায় তো যাচ্ছি না!
পাগলি, আচ্ছা যাও।
রোহান দেখ তো দরজায় কে আসলো -আসসালামু আলাইকুম জিসান ভাইয়া।
-ওয়া আলাইকুম সালাম।
-কেমন আছো.?
-জ্বী ভালো।
-রোহান কে আসছে.!
-আন্টি আসসালামু আলাইকুম।
-আরে বাবা যে কেমন আছো.?
-জ্বী ভালো।
-বেয়াই কেমন আছেন.?
ভালো।
-বসো বসো।
-জ্বী।
প্রিয়াও জিসানের পাশে সোফায় বসলো।
-প্রিয়া ওনি রোহানের মা।
-প্রিয়া সালাম করলো।
বেঁচে থাকো মা।
-আন্টি আমার ফুপির একমাত্র মেয়ে প্রিয়া, মিতুর বিয়েতে আসছে।
-আমি জোর করেই নিয়ে আসছি। বললাম দেখে আসো কেমন বাড়িতে তোমার বোনকে বিয়ে দিচ্ছি বলে জিসান হাসল।
-প্রিয়া লজ্জা পেয়ে বললো নাহ্ আন্টি ভাইয়া আমাকে সাথে আনতে চায়নি।
-আমি জোর করেই আসছি বুঝলে রোহান বলেই প্রিয়া মুসকি হাসল।
-খুব ভালো করছো মা, আমি খুব খুশি হয়েছি খুব মিষ্টি মেয়ে তোমার ফুপাত বোন বলেই প্রিয়ার গাল টিপল।
-তা তোমরা বসো আমি চা,নাস্তার ব্যবস্থা করছি বলেই ভিতরের রুমে যাবে।
-প্রিয়া ওঠে হাত ধরলো না আন্টি একদম ব্যস্ত হবেন না।
-আমরা কিচ্ছু খাব না বাসায় অনেক কাজ বাকি,ওদিনে আপনাদের হলুদ পাঠালে মিতুর হলুদ সন্ধ্যা হবে।
-দেখলে আম্মু ভাইয়া,ভাবি রহিমা এখনো আসলো না ওরা কখন যাবে মিতুদের বাসা।
-দেখ আমার ছেলেও মন খারাপ হচ্ছে কখন বউয়ের গায়ে হলুদ দিবে এটা নিয়েও তার চিন্তা।
সবাই হেসে ফেলল।
– আম্মু তুমি যে কি বলো না.. বলেই মাথা নিচু করে হাসলো রোহান।
-হচ্ছে আর লজ্জা পেতে হবে না, তোমরা গল্প করো আমি চা,নাস্তা পাঠিয়ে দিব আর শোন তোমরা খেয়ে তারপর যাবে।
-নাহ্ আন্টি আজ না, পরে একদিন আসবো।
আচ্ছা বসো আমি আসছি বলেই রোহানের মা কিচেনে চলে গেল।
প্রিয়া রোহানের সাথে বেশ ভালোই গল্প জমে উঠল, জিসানও মাঝে মাঝে যোগ দিচ্ছিল।
মিতুর ফোন প্রিয়া রিসিভ করে বললো কি রোহান তো বেশ সুন্দর।
-মিতু উচ্ছাসিত কন্ঠে বললো আপ্পি বলছো.?
-হ্যাঁ সত্যি আমরা গল্প করছি রোহান সাহেব খুব ভালো মানুষ।
প্রিয়া আপ্পি ভাবী তোমার সাথে কথা বলবে, দেও।
প্রিয়া?
হ্যাঁ ভাবী বলেন..
হঠাৎ দরজায় কলিংবেল বেজে উঠল, রোহান প্রশ্ন করলো কে.?
রোহান ভাইয়া আমি রহিমা ছোট ভাইজান, ভাবীকে নিয়ে আসছি।
ওহ্ ১ মিনিট আপু আমার ভাইয়া,ভাবী আসছে আসছি বলেই রোহান দরজা খুলতে চলে গেল।
প্রিয়া উঠে দাঁড়াল জিসান ভাইয়া মনে হয়ে পুরুষ মানুষ আসবে আমি আন্টির কাছে ভিতরের রুমে যাই।
হ্যাঁ যাও, আমি এখানে থাকছি।
ওকে বলেই প্রিয়া মোবাইল হাতে জিসানের বউয়ের সাথে কথা বলতে বলতে, ভিতরের রুমে রোহানের মায়ের কাছে চলে গেল…
….চলবে।
১৫টি মন্তব্য
শায়লা ইলিয়াস
বাহ
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ আপু।
মুগ্ধ হলাম সুন্দর মন্তব্যে, দোয়া করবেন আমার জন্য।
সময় করে বাকি পর্ব গুলো পড়ার অনুরোধ রইল আপু।
সময় পেলে পরের পর্ব পড়বেন, ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন,
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
বরাবরের মতোই ভাল লাগা। ধন্যবাদ।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম, পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আরাফের এমন ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া যায় না আজকাল। আরাফ , প্রিয়ার দেখাদেখি হবার অপেক্ষায় আছি। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দিদি ভাই।
সত্যিকারের ভালোবাসা হয়ত এমনি হয়, প্রিয়ার প্রতি আরাফের ভালোবাসাই তার প্রমান।
আমিও প্রিয়া আরাফের দেখা হোক, সুন্দর একটা পরিনতি ঘটুক।
ভালো থাকবেন।
ফয়জুল মহী
অনন্য, লেখা পড়ে বিমোহিত হলাম।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম, পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন
সঞ্জয় মালাকার
বরাবরের মতোই ভাল লাগা দিদি,
ধন্যবাদ আপনাকে।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দাদা।
অনেকদিন পর মন্তব্য পেলাম,খুব ভালো লাগছে।
পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ,শুভ কামনা রইল দাদা।
সঞ্জয় মালাকার
কাজের চাপে খুব একটা আশা হয়না,
তাই আপনার লেখা গুলো মিস করি।
ধন্যবাদ দিদি।
হালিম নজরুল
এমন প্রেমময় ভালবাসা আজকাল বড়ই অভাব।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইজান
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল।
জিসান শা ইকরাম
আরাফ গভীর ভাবেই প্রিয়ার স্মৃতিকে আকড়ে ধরে আছে।
অপেক্ষা করছি আরাফ প্রিয়ার দেখা হবার।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইজান।
অনেক পরে হলেও গল্পটা পড়লেন কৃতজ্ঞতা জানাই।
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল।