
“আমি তোমার জন্য এসেছি” (পর্ব-৩৭)
-ওয়াও দারুন ব্যাপার তো!
তাড়াতাড়ি বলো।
সেই চিঠিতে কি লিখা ছিলো.?
-মিতু সেই চিঠি আমি পড়ি নাই।
-তা কেন আপ্পি.?
তোমরা এত ভালো বন্ধু হয়েছিলে,শুধুমাত্র তোমার জন্য সে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে আসছিলো। একবার দেখা করতে, একটু কথা বলতে।
অথচ তুমি সেই ডাইরিটা একবার খুলে দেখ নাই অবাক কান্ড।
-আপ্পি এখন কিন্তু তোমার প্রতি আমার রাগ হচ্ছে বলেই প্রিয়া মন খারাপ করে মুখ অন্য পাশে ঘুরাল।
-প্রিয়া বুঝতে পারলো মিতু কষ্টে পেয়েছে, এমন ঘটনা শোনার পর শুধু মিতু কেন! সবার কষ্ট লাগার কথা।
প্রিয়ারও লাগে কিন্তু সেটা অনেক দেরি হয়ে গেছে তার মনকে শান্তনা দেয়া ছাড়া কিছুই করার নেই।
-মিতু শোন।
-কান্না চোখে মুখে মিতুর প্রিয়ার চোখের দিকে তাকাল।
-গুন্ড ছেলেকে হয়ত সেদিন বিয়ের জন্য ভালোবাসতে পারি নাই এটাই সত্যি। কিন্ত বড় ভাই হিসাবে খুব ভালোবাসতাম, বন্ধু হিসাবে খুব ভালোবাসতাম।
আমার সাথে দেখা না করে চলে যাওয়াতে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
মনে মনে খুব অভিমান হয়েছিলো তাই ডাইরিটা আর খুলে দেখা হয়নি, পড়া হয়নি, রাগে অভিমানে ডাইরিটা পুরনো সেল্ফে রেখে দেই।
-ওহ্ বলেই মিতুর দু-চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা গরম লোনা জল গড়িয়ে পড়ল। তাহলে আর কি বলবো প্রিয়া আপ্পি আমি একটা জিনিস বুঝতে পারলাম আরাফ ভাইয়া তোমাকে খুব! খুব ভালোবাসতো।
-তুমি সেটা বুঝতে পারলে না, রাগ,জেদ অভিমান, আর তোমার অবুঝ মন মানসিকতা সুন্দর একটা সম্পর্কটা এভাবে শেষ করে দিল।
সত্যি বলছি আপ্পি সবটা মন থেকে মেনে নিতে পারছিনা, আরাফ ভাইয়ার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে।
-হ্যাঁ মিতু।
গুন্ডা ছেলেটার সারা পৃথিবী একদিকে অন্যদিকে পিচ্চি প্রিয়া ছিলো, খুব ভালোবাসতো আমাকে কিন্তু পিচ্চি প্রিয়া আরাফের ভালোবাসা বুঝতে পারে নাই।
আস্তে আস্তে সব ভুলে গেলাম এইচ.এস.সি পাশ করে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম।
নতুন ক্লাস, নতুন কলেজে নতুন নতুন বন্ধু হলো গুন্ডা ছেলেকে আর মিস করতাম না, পড়াশোনায় মন দিলাম।
-প্রিয়া আপ্পি তুমি একবার ডাইরিটা পড়ে দেখতে পারতে..!
-হ্যাঁ আমি ডাইরিটা পড়েছিলাম।
-এবার মিতু ওঠে বসলো।
ইস আপ্পি বলুনা, ডাইরিতে কি লেখা ছিলো..
-আমি তিন বছর পর যখন ভার্সিটিতে পড়ি,তখন পুরনো বই,খাতা, পত্রিকা,অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ভিড়ে ডাইরিটা খোঁজে পেলাম।
-কি লেখা ছিলো সেটা বলো, আর শোনার ধৈর্য ধরছে না।
ডাইরিতে লেখাছিলো,
“পিচ্চি প্রিয়া কেমন আছো.?
তোমাকে ছাড়া এই গুন্ডা ছেলেটা ভালো নেই।
………….
…….. …..
……. …..
পিচ্চি প্রিয়া আমি তোমার শহরে ময়মনসিংহে আসছিলাম, কিন্তু তোমার সাথে দেখা হলো না তাই চলে যাচ্ছি।
পিচ্চি আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি,তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
আমি জাপান চলে যাবার সিন্ধান্ত নিয়েছি,কিন্তু যাবার আগে জানা হলো না।এই পিচ্চি প্রিয়ার মনে গুন্ডা ছেলেটার জন্য কোন ভালোবাসার জন্ম হলো কিনা।
তুমি এখন বড় হয়েছো, নিজের ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছো।
যদি আমাকে ভালোবাস তাহলে নিচের মোবাইল নাম্বারে কল দিও।আমি বিদেশ যাব না, তোমাকে বিয়ে করে এখানে সুখের স্বর্গ রচনা করবো।
ইতি,
তোমার বন্ধু গুন্ডা ছেলে (আরিয়ান চৌধুরী আরাফ)
বাইরে গাড়ির হর্ন শোনা গেল আরাফ ছাদে দাঁড়িয়ে নিচে তাকাল সাদা জিপটা বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রিতা কিচেনে আরাফের জন্য রান্না করতেছে, রন্টি,রনি পড়তে বসেছে তাই আরাফ এই সময়টুকু একা ছাদে কাটাবে বলে চলে আসছে।
রাতের আকাশ অনেক সুন্দর যখন আরাফের মন খারাপ হতো ছাদে এসে তাঁরা দেখতো।
এখন বয়স হয়েছে তাই আকাশ,চাঁদ,তাঁরা আর কাছে টানে না তবে একাকীত্ব মনে কষ্ট দেয়।
কিছুক্ষনের মধ্যেই নিচে দরজায় কলিংবেল বেজে উঠল, আরাফ বুঝল আরমান বাসায় ফিরছে।
আরাফ আর বিলম্ব না করে সিঁড়ি বেয়ে ৪তলায় নিচে নেমে আসলো।
আরে বড় ভাইয়া বলেই আরমানকে জড়িয়ে ধরল, আরমান এত বছর পর ছোট ভাইকে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হলো।
কেমন আছো ছোট.?
দেশে কবে আসছো, কিছুই জানালে না।
-বড় ভাইয়া তোমাদের সারপ্রাইজ দিব বলে কাউকে কিছু না জানিয়ে দেশে আসছি।
এই-তো আজ ৬ দিন হলো,মাকে না করছিলাম তোমাকে বলতে বাসায় এসে চমকে দিব বলে।
ওয়াও গুড সারপ্রাইজ সত্যি ছোট তোমাকে দেখে খুব খুশি হলাম।
রিতা পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলো দু ভাইয়ের একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ,ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিল।
আচ্ছা দু-ভাই মিলে দাঁড়িয়ে কতক্ষন কথা বলবে বসো তারপর ধীরে সস্তিতে কথা বলো।
হ্যাঁ তাইতো ছোট বসো বসো,সত্যি এতবছর পর তোমাকে কাছে পেয়েছি বলেই আরাফকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিল।
-আপ্পি তুমি আরাফ ভাইয়াকে কল দিয়েছিলে.?
তোমাদের কি কথা হলো তা বলো..!
আমি সাথে সাথে গুন্ডা ছেলের নাম্বারে কল দেই, কিন্তু নাম্বারটা সুইচ অফ ছিলো।
হয়ত রাগে,অভিমান,অনেকটা কষ্ট বুকে চেপে গুন্ডা ছেলেটা জাপানে চলে গেছে।
কারন আমি তার লেখা ডাইরিতে পড়তে ৩ বছর সময় নিয়েছিলাম, আরাফ হয়ত ৩ মাস পরেই জাপান চলে গিয়েছিলো বলেই প্রিয়ার কান্না।
-আরাফ ভাইয়া তোমার দেওয়া আঘাত সহ্য করতে না পেরে হয়ত সেদিন বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলো।
-গত ৭ বছর প্রতিদিন আমি আরাফ ভাইয়ার নাম্বারে একবার কল দেই।
আমার এমনি দূর্ভাগ্য আজো তার নাম্বারটা সুইচ অফ..।
-আপ্পি অপেক্ষার প্রহর খুব কষ্টের তাই না রে..?
-কষ্টের কি না জানি না! তবে না মরে বেঁচে থাকার মতো।
মারা যাচ্ছি তবু শ্বাসটা চলছে,আরাফের প্রতি করা অন্যয় গুলো,আমার অপরাধ বোধ, আমার হেয়ালিপনা, আমার অবুঝ কাম খেয়ালি মনোভাব সবকিছু আমাকে খুব কষ্ট দেয় রে মিতু।
না পারি কাউকে বলতে না পারি সইতে এই কষ্ট মর্মে মর্মে উপলব্দি করি এই কষ্টের শেষ নেই।
-আপ্পি তুমি তো এখন পড়াশোনা শেষ করে, ভালো চাকরি করছো।
একজন শিক্ষিত সফল মেয়ে প্রতিষ্ঠিত ম্যাজিস্ট্রেড। তারপরও বিয়ে করছো না কেন.?
তবে কি তুমি আজো আরাফ ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছো..?
না রে পাগলী সেই সৌভাগ্য কি আমার আছে! আরাফ ভাইয়া এতবছরে হয়ত বিয়ে করে সংসারী হয়েগেছে। তবে গত ৭ বছর ধরেই গুন্ডা ছেলেটাকে ভালোবাসি,একটু একটু হৃদয়ের সবটা জুড়ে তাকে নিয়ে স্বপ্ন সাজিয়েছি,হয়ত আমার এই অপেক্ষা তার জন্যই।
তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য হয়ত আজো বেঁচে আছি…
-আপ্পি তোমার প্রতিক্ষা বিফলে যাবে না আমার বিশ্বাস তোমাদের আবার দেখা হবে..
তা দু-বোনে কি এত কথা হচ্ছে এত সময় ধরে বলেই জিসানের বউ রুমে ঢুকলো।
জিসান মিতুর বড় ভাইয়ার স্ত্রী মিতু পছন্দ করেই ভাইকে বিয়ে করিয়েছিলো।
ভাবি বসেন বলেই প্রিয়া জায়গা ছেড়ে একটু পিচনে বসলো, মিতু তখনো স্বাভাবিক হতে পারছিলো পারছিলানা।
প্রিয়া প্রসঙ্গ পাল্টাল ভাবি মিতুর সাথে গল্প করছিলাম রোহানের সাথে পরিচয় কিভাবে হলো সেটা জানলাম।
ও আচ্ছা তা মিতু রানী, বালিশে মুখ ঢেকে কি করা হচ্ছে, রোহান বাবুকে মিস করছেন বুঝি।
মিতু মুখ তুলে তাকাল দু-চোখে পানি..
একি আমার ননদী দেখি সত্যি সত্যি কাঁদছে।
মিতু আর কান্না থামাতে পারল না, ভাবিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
বড় ভাইয়া তুমি ক্লান্ত যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
-হ্যাঁ যাবো বাবা মারা যাবার পর তুমি সেই যে জাপান গেলে তারপর আজ ৬বছর পর দেশে ফিরলে।
তোমাকে কত বছর পর দেখলাম বলেই চোখ মুছল আরমান।
আরাফের চোখেও পানি সরি ভাইয়া বলেই আরমানের কাঁধে হাত রাখলো। ভাইয়া কি ছেলে মানুষি করছো।
……চলবে।
১২টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়ার মনে ভালবাসার প্রকাশটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দাদা ভাই।
আরাফ প্রিয়ার সুন্দর একটা পরিণতি আমাদের সবার কাম্য।
তারপর মানুষের মন কখন পরিবর্তন হয়ে যায় আমরা কেউ জানি না, তাই দেখা যাক গল্পের মোড় কোন দিকে যায়।
এই পর্বের মাধ্যমে সোনেলা ব্লকে আমার ৫০তম পোষ্ট পূর্ণ হলো।
দোয়া করবেন দাদা উপন্যাসের বাকি পর্ব গুলো যেন ভালো ভাবে লিখে শেষ করতে পারি।
পরের পর্ব গুলো পড়ার অনুরোধ রইল দাদা।
ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইল।
শুভ ব্লগিং।
জয়তু সোনেলা ব্লগ
হালিম নজরুল
আমি জাপান চলে যাবার সিন্ধান্ত নিয়েছি,কিন্তু যাবার আগে জানা হলো না।এই পিচ্চি প্রিয়ার মনে গুন্ডা ছেলেটার জন্য কোন ভালোবাসার জন্ম হলো কিনা।
—————– গল্পের আরেকটা বাঁক। সুন্দর্।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রানিত হলাম,সত্যি বলতে উপন্যাসের এই কথাটা আমারও খুব ভালো লেগেছে।
দেখা যাক শেষ পর্যন্ত গল্পের মোড় কোন দিকে যায়, পরের পর্ব দেখার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকুন।
ফয়জুল মহী
অসাধারণ লেখা । ভালো লাগলো পড়ে
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
সব সময় এভাবে উৎসাহ্ দিয়ে পাশে থাকবেন।
সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ, পরের পর্ব দেখার আমন্ত্রন রইল।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
প্রিয়া শেষপর্যন্ত ভালোবাসা বুঝতে পারলো , কিন্তু অনেক কিছু হারিয়ে গেল আরাফের বাবা, প্রিয়ার দাদু চলে গেল । শুভ কামনা রইলো আগামী পর্বের জন্য
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দিদি ভাই।
প্রিয়ার হয়ত সামনে আরো অনেক কিছু হারাবে কারন সময় থাকতে সে সময়ের মূল্যয়ন করতে পারে নাই।
প্রিয়ার দাদুমনি, আরাফের বাবা ওরা চেয়েছিলো আরাফ প্রিয়ার বিয়েটা হোক কিন্তু প্রিয়ার অবুঝ মন মানসিকতা সেদিন সবাইকে কাঁদিয়েছিলো।
দেখা যাক পরের পর্বে কি ঘটে…
ভালো থাকবেন।
শামীম চৌধুরী
আপনার গল্পের ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখাবেন কবে? গত পর্বের চেয়ে ভাল লাগলো।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইজান।
ম্যাজিস্ট্রেট ম্যাডামকে সবাই চিনেন তবে নতুনদের সামনে
খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশ করবো।
মতামত পেয়ে ভালো লাগছে ভাইজান, পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
ডায়েরীটা তাহলে প্রিয়া পড়েছিলো!
আরাফ অভিমানে দেশ ছেড়ে জাপান চলে গেলো। প্রিয়ার অবুঝ উপেক্ষায় সব তছনছ হয়ে গেলো। যখন হুশ হলো প্রিয়ার তখন অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে।
পরের পর্বে যাই।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাই সময় নিয়ে আগের পর্বরগুলো পড়ার জন্য।
প্রিয়া আরাফের ভালোবাসা বুঝল তবে সেটা অনেক পরে।
ভালো থাকুন,
শুভ কামনা রইল।