
“আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-৩৬)
আরাফের সাথে আমার প্রথম পরিচিয় তখন আমার বয়স ১২ বছর আমি পঞ্চম শেণিতে পাড়ি। আরাফ ভাইয়া তখন ঢাকা কলেজের প্রফেসর জাপান থেকে পিএইচডি করে দেশে ফিরছে।
আব্বুর স্কুল শিক্ষক আকরাম আঙ্কেলের ছেলে, ময়মনসিংহে আমাদের বাসার পাশেই ওদের জমি কেনা ছিলো সেখানে বিল্ডিং এর কাজ চলছিলো।
সেটার দেখাশোনা করতে এসেই প্রথম আমাদের দেখা হয়।
-ওয়াও আপ্পি মিতু হেসে দিল এত ছোট বয়সে তুমি প্রেমে পড়েছিলে হি হি হি হি..!
-নাহ্! প্রথম দেখাতে আরাফ আমাকে পছন্দ করে, খুব ভালোবেসে ফেলে। আরাফ ভাইয়া দেখতে পাঞ্জাব ছবির নায়কদের মতো ছিলো। ফর্স,লম্বা চাওড়া খুব সুন্দর একজন সু-পুরুষ তাই আমি তার নাম দিলাম গুন্ডা ছেলে।আরাফ ঢাকা চলে গেল তার ঠিক দুদিন পরে গুন্ডা ছেলে আবার ময়মনসিংহ আসে আমাকে দেখতে।
-দারুন তো আপ্পি তুমি বলে যাও বলেই মিতু পিচনে বালিশ দিয়ে আরাম করে শুয়ে পড়ল।
-প্রিয়া বলতে শুরু করলো, যাবার বেলায় হাটু ঘেরে আমার সামনে বসে বলছিলো “পিচ্চি প্রিয়া আমি তোমার জন্য এসেছি” আমি তোমাকে ভালোবাসি। তারপর আমি তার দু-চোখে পানি দেখেছিলাম। আরাফ আমাকে বিভিন্ন ভাবে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করছিলো কিন্তু আমি তার ভালোবাসাটা বুঝতে পারিনি।
-মিতু সন্ধ্যা হয়েগেছে সেই খবর আছে যাও রুমের আলোটা জ্বালিয়ে দেও।
-মিতু প্রিয়ার কথা শুনে বিছানা ছেড়ে নেমে গেল পশ্চিম পাশের আলমিরার উপরে বোর্ড সেখানে গিয়ে সুইচ দিবে।
প্রিয়া পিচন থেকে ডাকলো মিতু এত আলো আমার চোখে ধরে ডীম লাইটা জ্বালিয়ে দে রুমটা একটু অন্ধকার থাকুক।
-আচ্ছা আপ্পি বলেই মিতু ডীম লাইটা জ্বালিয়ে দিল প্রিয়ার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো মিতু তা খেয়াল করেনি।
-আপ্পির তারপর কি হলো বলো না প্লীজ। তাহলে ভালোবাসি বললো কবে.?
-তারপর আমি যখন অষ্টম শ্রেণিতে ফাইনাল পরীক্ষা দিব তখন গুন্ডা ছেলে দাদুমনির মাধ্যমে আমার কাছে জানতে চায়। আমি তাকে ভালোবাসি কি না.?
আমি সোজা না করে দেই আরাফকে আমি বড় ভাইয়ের চোখে দেখি ভালোবাসি না।
আমার কথায় আরাফ ভাইয়া খুব কষ্ট পায় ঢাকা ফিরে যায়।
-দুঃখজনক ঘটনা আপ্পি, আরাফ ভাইয়া নাকি খুব সুন্দর ছিলো! তাহলে তোমার পছন্দ হয়নি কেন.?
-আরে পাগল পছন্দ হবে না কেন! ভাই হিসাবে ভালোবাসতাম তখন তো ছোট ছিলাম তাই ওনার ভালোবাসাটা বুঝতে পারি নাই।
-তারপর।
-তারপর, একদিন হঠাৎ আকরাম আঙ্কেল,মনোয়ারা আন্টি,আরাফ ভাইয়া সবাই ময়মনসিংহে এসে হাজির উপলক্ষ আমাদের বিয়ে নিয়ে কথা বলা।
প্রথমমত দাদুমনি,আব্বু,আম্মু রাজি হয়ে যায় ঢাকা শহরে নামকরা ধনী,কয়েকটা বাসা,ছেলে পিএইচডি করা,কলেজের প্রফেসর সব মিলিয়ে রাজ কপাল আমার রাজি না হওয়ার কারন নেই।
গুন্ডা ছেলের আচার ব্যবহারে দেখতে শোনতে আরাফ ভাইয়া হাজারে একজন ছেলে দু পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে ঠিক করা হলো।
-গুড নিউজ আপ্পি।
-হ্যাঁ।
কিন্তু তখন আমার বয়স ছিলো মাত্র ১৪ বছর বাল্যবিবাহটা আমি চাইনি। তারচেয়ে বড় কথা আমার প্রেম, ভালোবাসা,বিয়ে বুঝার মতো বয়স হয়নি। তবে কম বয়সে দেখতে বেশ বড় হয়ে গিয়েছিলাম,সুন্দর ছিলাম যেটা আরাফের হৃদয় কেড়ে নিয়েছিলো বলেই প্রিয়া মুচকি হাসল।
আমি চেয়েছিলাম পড়াশোনাটা শেষ করে তারপর বিয়ে করতে, মনোয়ারা আন্টি বলছিলেন বিয়ের পরও পড়াশোনা করার সুযোগ দিবে।
কিন্তু আমার জেদের কাছে সবাই হার মানল, বিয়েটা হয়নি।
আরাফের বুক ফাঁটা আর্তনাত সেদিন মনোয়ারা আন্টি,আকরাম আঙ্কেল,আব্বু,আম্মু, দাদুমনি সবার চোখে পানি ঝরিয়ে ছিলো।
যা আমি বুঝতে অক্ষম ছিলাম ছোট বলে বুঝতে পারি নাই।
-মিতুর জানার আগ্রহটা আরো বেড়ে গেল।
আপ্পি সবটা বলো আমি শোনব…!
-ওনারা সবাই খুব কষ্ট পেল তবু আমি বিয়েতে রাজি হলাম না। আরাফ ভাইয়া সময় নিল আমি যেদিন তার ভালোবাসা বুঝতে পারব সেদিন আমাদের বিয়ে হবে।
সবাই খুশি হলো গুন্ডা ছেলের সাথে পিচ্চি প্রিয়ার খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
আরাফ খুশি মনে ঢাকা ফিরল, তবে মাঝে মাঝে আব্বুর কাছে ফোন দিত আমরা কথা বলতাম।
নিয়মিত আমার পড়াশোনার খোঁজ নিত বেশি কথা বলতো না যদি আমার পড়াশোনার ক্ষতি হয়।
-কিন্তু গত দু-বছরেও আমার মনের কোন পরিবর্তন হয়নি।
আমি তখন ক্লাস টেন এ পড়ি আরাফ ভাইয়ার পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল।
সে আবার ময়মনসিংহে আসে আমার সাথে দেখা করতে।
-মিতু এবার প্রিয়ার কথায় আশার আলো দেখতে পায়।
-আমি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি গুন্ডা ছেলেকে ভুলে যাই সামনে এস.এস.সি পরীক্ষা ক্লাস,কোচিং স্কুল শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরা নিয়মিত রুটিন।
আপ্পি আরাফ ভাইয়ার সাথে সেদিন দেখা হয়েছিলো.?
কি কথা হয়েছিলো বলো শুনি।
প্রিয়া একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো আমি কোচিং থেকে ফিরে শোনলাম গুন্ডা থেকে আসছিলো।
আমার জন্য অনেকক্ষন অপেক্ষা করে চলে গেছে ঠিক তখনি আমি বাসায় ফিরে আসি কিন্তু আমাদের দেখা হয়নি।
ও ভেড়ি সেড আপ্পি।
তারপর আর আসে নাই.?
-প্রিয়ার ফোনটা বেজে উঠল আব্বু ফোন করছে বলেই প্রিয়া মোবাইলটা হাতে নিল।
রিসিভ করে আব্বু বলতেই ওপাশ থেকেই মিরা বললো মা, আমি মম বলছি।
-মম কেমন আছো.?
-ভালো,তুমি কেমন আছো.?
-ভালো আছি।
-মামার বাসায় গিয়ে তো মমকে ভুলেই গেছ বলেই হাসল মিরা।
-না মম তোমাদের ভুলি নাই। বুঝই তো বিয়ে বাড়ি সবাইকে সময় দিতে হয় একটু ব্যস্ত থাকি।
-আরে সমস্যা নেই মা আমি মজা করছি, মিতুর বিয়েতে নিশ্চিতে আনন্দ করো।
-তুমি খেয়েছো না মম,মিতুর সাথে গল্প করতেছি, একটু পরে খাব।
-ও আচ্ছা মিতুর বর এর ছবি দেখছো, কেমন দেখতে.?
-খুব সুন্দর ছেলে,মিতুর সাথে মানাবে ভালো।
আচ্ছা আমি বিয়ের ছবি তুলে নিয়ে আসবো তখন তোমরা দেখে নিও।
-আচ্ছা আব্বু কোথায়, কেমন আছে.?
-তোমার আব্বু ভালো আছেন।
-ওগো শোনছো!প্রিয়া তোমার সাথে কথা বলবে।
-হ্যাঁ দাও,মা কেমন আছিস.?
-ভালো আব্বু।তোমার শরীর কেমন আছে.? ঠিকমতো ঔষধ খাচ্ছো.? সকাল হাঁটতে গিয়েছিলে.?
-ওরে বাবা আস্তে সব একসাথে বললে জবাব দিব কি করে মা।
হ্যাঁ, রাতে খাবার খেয়েছি,ঔষধ খেয়েছি, সকালে ঘুম ভাঙ্গতে দেরি হয়েছিলো তাই বাসায় ব্যায়াম করেছি শরীর ভালো আছে।
-গুড,চলবে।
বেশি রাত জাগবে না তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে।
-আচ্ছা মা, তুমি সাবধানে থেকো।
-ওকে আব্বু।
রাখছি তাহলে আল্লাহ্ হাফেজ বলে প্রিয়া মোবাইল রাখলো।
মিতু আবার আরাফের প্রসঙ্গে জানতে চায়….
-গুন্ডা ছেলের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছিল কাউকে বলতে পারি নাই। কয়েক দিন পর আম্মু আমার হাতে একটা ডাইরি তুলে দিলেন, আরাফ ভাইয়া আমাকে একটা চিরখুট লিখে গিয়েছিলো।
-ওয়াও দারুন ব্যাপার তো!
তাড়াতাড়ি বলো।
সেই চিঠিতে কি লিখা ছিলো.?
-মিতু সেই চিঠি আমি পড়ি নাই।
-তা কেন আপ্পি.? তোমরা এত ভালো বন্ধু শুধুমাত্র তোমার জন্য সে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে আসছিলো। একবার দেখা করতে, একটু কথা বলতে অথচ তুমি সেই ডাইরিটা একবার খুলে দেখ নাই অবাক কান্ড।
আপ্পি এখন কিন্তু তোমার প্রতি আমার রাগ হচ্ছে।
-গুন্ড ছেলেকে হয়ত বিয়ের জন্য ভালোবাসতে পারি নাই। কিন্ত বড় ভাই হিসাবে খুব ভালোবাসতাম,বন্ধু হিসাবে ভালোবাসতাম। আমার সাথে দেখা না করে চলে যাওয়াতে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
…..চলবে।
১২টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দারুন। চালিয়ে যান। সাথেই আছি। শুভ কামনা রইলো।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দিদি ভাই।
ভালো লাগলো, দোয়া করবেন সব সময়।
পর্ব গুলো যেন ভালো ভাবে শেষ করতে পারি।
ভালো থাকবেন।
ফয়জুল মহী
চমৎকার । জীবনের বাস্তব চিত্র
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
উৎসাহমূলক সুন্দর মতামতে খুশি হলাম,সব সময় পাশে থাকবেন।
ভালো থাকবেন।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ভালোই লিখছেন। অপেক্ষায় আছি।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইজান।
সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম, দোয়া করবেন।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন।
নিতাই বাবু
এই পর্বটাও খুবই ভালো লেগেছে। পরের পর্বগুলো আর মিস করছি না বলেই ভাবছি! চালিয়ে যান। আশা করি সাথে আছি।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা।
আমি সত্যি মুগ্ধ হলাম আপনি মনযোগ দিয়ে আমার লেখা পর্ব গুলো পড়তেছেন।
দোয়া করবেন দাদা উপন্যাসটা শেষ পর্যন্ত যেন ভালো ভাবে লিখে শেষ করতে পারি।
পরের পর্ব দেখার অনুরোধ।
ভালো থাকবেন দাদা।
হালিম নজরুল
-গুন্ডা ছেলের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছিল কাউকে বলতে পারি নাই। কয়েক দিন পর আম্মু আমার হাতে একটা ডাইরি তুলে দিলেন, আরাফ ভাইয়া আমাকে একটা চিরখুট লিখে গিয়েছিলো।
————পর্বটি ভাল লাগল।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
প্রতিটা পর্বে পড়ে মতামত দিবার জন্য সত্যি কৃতজ্ঞতা জানাই।
দোয়া করবেন, পরের পর্ব পড়ার অনুরোধ থাকলো।
ভালো থাকবেন ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
মিতুর কাছে সব স্মৃতি বললো, হয়ত বলে কিছুটা হালকা হলো প্রিয়া।
আজ পর্বগুলো পড়ার ইচ্ছে আছে ইনশ আল্লাহ। ভালো লাগছে।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
আমার সব গুলো পর্ব পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই।
ভালো থাকুন,
শুভ কামনা রইল।