
আমি তোমার জন্য এসেছি- (পর্ব-৩৫)
শ্বাশুড় বাবা মারা যাবার পর আজাদ আঙ্কেল আর আসে নাই। প্রিয়াকে তখনি একবার দেখেছিলাম খুব সুন্দর মেয়েটা এখনো চোখে লেগে আছে কলাপাতা রঙের স্যালোয়ার কামিজ হালকা লাল সুতি ওড়না একেবারে পরীর মতো লাগছিলো।
আর কোনদিন ওরা আমাদের বাসায় আসেন নাই এখন তোমাদের যোগাযোগ হয় না…
আরাফ চুপ করে পত্রিকা পড়ছে আর চা খেয়ে যাচ্ছে।
আমি শ্বাশুড়ী মায়ের কাছে সব শুনেছিলাম খুব কষ্ট হয়েছে কিন্তু তুমি দেশের বাইরে থাকায় আর জানা হয়নি গল্পটা।
রিতা ভাবীর এমন প্রশ্নে অপ্রস্তুত আরাফ নিজেকে কিছুটা সামলে নেয়, বাদ দেও ভাবি পুরনো কথা ভাবতে চাই না।
রিতাও চায়নি প্রিয়াকে মনে করিয়ে আরাফকে কষ্ট দিতে। কিন্তু আরাফের গায়ে ফিরোজা শার্টটা প্রিয়াকে মনে করিয়ে দিল কারন মা বলছিলেন প্রিয়ার প্রিয় রং ফিরোজা।
আচ্ছা শোন রাতে খেয়ে তারপর যাবে, চাচ্চু,চাচ্চু বলেই রন্টু,রনি দৌঁড়ে এসে আরাফকে জড়িয়ে ধরল।
কতদিন পর ভাতিজা ভাতিজীকে দেখল আরাফ।
ব্যাগ থেকে ওদের জন্য জাপান থেকে আনা জামা কাপড়,খেলনা দিল তা দেখে তো রন্টি,রনি খুব খুশি। ব্যাগ থেকে একটা দামি মোবাইল,কমলা রঙের একটা জর্জেট শাড়ি বের করে রিতার হাতে দিল।
সার্ট,প্যান্ট পিচ, দামি একটা মোবাইল আরমান ভাইয়াকে দিও বলেই আরাফ রিতার দিকে ব্যাগটা এগিয়ে দিল।
সত্যি আরাফ তোমাকে আল্লাহ্ ধন, মন দুটোই দিয়েছেন।
-আরাফ মুচকি হাসল দোয়া করো ভাবি, আর জাপান যাব না দেশের ব্যবসা গুলোই দেখাশোনা করবো।
-খুব ভালো! মা বাসায় একাই থাকেন সময়, সুযোগ এর অভাবে মায়ের সাথে দেখা করতে পারি না তোমরা ওই বাড়িতে থাকলে মায়ের সময়টা ভালো কাটবে।
জ্বী ভাবি মা বয়স্ক মানুষ ওনার এখন একাকীত্ব দূর করার জন্য আপনজনদের ভালোবাসা প্রয়োজন।
চিন্তা করো না আমি শ্রেয়া আছি তো আর সমস্যা নেই।
ওহ্ সরি এত কথা বলেতে গিয়ে শ্রেয়ার ভুলেই গিয়েছিলাম। তারপর বলো শ্রেয়া কেমন আছেন.?
খুব ভালো আছে সারাদিন মায়ের পাশে থাকে আমাদের পারিবারিক গল্প শোনে।
তাই নাকি! হ্যাঁ।
মা আর শ্রেয়ার খুব ভালোই সময় কাটছে জেনে খুশি হলাম।
আচ্ছা তুমি বসো রাতে খেয়ে যাবে, আমি একটু কিচেনে গেলাম বলে রিতা চলে গেল।
শোন ভাবি! হ্যাঁ বলো।
রন্টি,রনিকে পাঠিয়ে দিও ওদের সাথে গল্প করবো।
আচ্ছা বসো..
বাইরে প্রচুর বাতাস মিতু জানালাটা খুলে দে তো! প্রিয়া আপ্পি মম জানালা খুলতে না করেছে।
কেন.? জানালার পাশেই বাজে ছেলেরা আড্ডা দেয়, আমাদের দেখলে ইয়াকি মারবে সামনে বিয়ে ওসব ঝামেলা আব্বু পছন্দ করেন না।
ওকে থাক খুলতে হবে না, বাসায় বসে থাকতে আর ভালো লাগে না।
তো কি করবে.? চল ছোট মামার লাইব্রেরীতে যাই।
প্রিয়া আপ্পি ছোট মামার কথা বলে মনটা খারাপ করে দিলে!
কেন.?
ছোট মামা লাইব্রেরী ভাড়া দিয়ে দিসে ওটা অন্য কেউ চালায়।
জানো জিসান ভাইয়া,আমি মনি, মিম আমরা সবাই ফ্রি সময় লাইব্রেরীতে যেতাম কত রকমের বই পড়তাম, এখন বই পড়াটা খুব মিস করি।
সো সেড।
হ্যাঁ আপ্পি যখন মনি দেশের বাইরে পড়াশোনার জন্য চলে গেল তখন মামার ব্যস্ততা বেড়ে গেল।
সব কিছু একা দেখাশোনা করাট সম্ভব হচ্ছিল না তাই বন্ধ করলো
আমি কিছুই জানি না, আজ শোনলাম।
কবে বন্ধ করলো.!
ওই বছর খানেক হবে।
মিতু জানিস ছোটবেলা নানার বাড়িতে আসলেই বিকালে ছোট মামার লাইব্রেরীতে বসে বই পড়তাম।
ছোটদের বই,বড়দের বই,দেশ বিদেশের বই। জানা অজানা কত গল্প থাকবো সেই সব বইয়ের পাতায়।
সত্যি ছোটবেলাটা বেশি সুন্দর ছিলো কেন যে বড় হলাম আক্ষেপের সুরে কথা গুলো বললো প্রিয়া।
মিতু রহস্যময় মুচকি হাসি দিল।
প্রিয়া আড় চোখে সবটা দেখল, মিতু ঘটনা কি আমার জানামতে সবার কাছে ছোটবেলাটা প্রিয় আর তোর কাছে বড়বেলা প্রিয় কারন কি.?
মিতু হাসলো প্রিয়া আপ্পি ছোটবেলাটা পড়াশোনা আব্বু,আম্মুর ভালোবাসা শাসনে বড় হয়েছি।
তো!
বড়বেলা রোহানকে পেয়েছি..!
তাই বলো মেয়ে দেখি রোহানকে পেয়ে আগের ২০ বছর ভুলে গেছে হি হি হি হি।
প্রিয়া আপ্পি লজ্জা দিও না, সত্যি বলছি আপ্পি রোহান আমার জীবনে পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
প্রিয়া হেসে বললো লজ্জা নারে পাগলি মেয়েরা প্রথম প্রেমে পড়লে এমনি মনে করে।
বিয়েটা হোক সংসারী হও তারপর স্বামীর বাড়ি থেকে এসে যখন বলবে তুমি সুখি তখনি আমরা খুশি হব।
তারপর রোহানের সাথে পরিচয় কিভাবে বলো শুনি।
মিতু আনন্দে আত্মহারা সত্যি আপ্পি তুমি সব শোনবে!
হ্যাঁ বলো আমি সব শোনতে চাই।
মিতু! মিতু একটু এদিকে আস মা।
জ্বী আম্মু আসছি বলেই মিতু বিছানা ছেড়ে নেমে গেল।
প্রিয়া আপ্পি মা ডাকছে, আমি দেখা করে আসছি বলেই মিতু মামীর রুমে চলে গেল।
প্রিয়ার চোখে পানি হয়ত তার জীবনটা আজ মিতুর মতো কারো ভালোবাসা পূর্ণতা পেত, কারো হাত ধরে জীবনের সুন্দর সময় গুলো কাটাত,কারো মায়ায় জীবনের সুখ, দুঃখ গুলো ভাগাভাগি করে নিত।
তা আর হলো না! এত কিছুর মাঝেও জীবনের সবচেয়ে বড় অপূর্ণতা আজো কাউকে ভালোবাসতে পারেনি, আজো আরাফের শূন্যতা জীবনে হাহাকার করে।
আরাফের ভালোবাসা বুঝতে না পারার অক্ষমতা আজো প্রিয়াকে কাঁদায়! আরাফের সেইদিনের কষ্ট আজো প্রিয়ার
ভিতরে চুরমার করে দেয়, সব থেকেও আজ প্রিয়া নিঃস্ব।
আপ্পি তোমার চোখে পানি! আরে নাহ্ রে পাগলি চোখে কি জানি পড়ছে।
বলেই ওড়না দিয়ে চোখ মুছল প্রিয়া, কান্না আড়াল করে বললো তারপর রোহান সাহেবের গল্প বল।
হুম বলবো, রোহানের সাথে আমার পরিচয় দু-বছর আগে এক বান্ধবীর বিয়েতে।
তারপর..
কি হলো আমাকে বল।
মিতু বলতে শুরু করলো প্রথম রোহানকে আমার পছন্দ ছিলো না।
প্রিয়া প্রশ্ন করলো কেন.?
আপ্পি বড় লোকের ছেলেরা প্রেম করে সময় কাটায় বিয়ে না, পরে রোহান অনেক কষ্টে আমার সাথে মিট করে।
আমরা দুজনেই কথা বলি রোহান নিজের সম্পর্কে আমাকে সব জানায়, আমিও আমার পরিবার সম্পর্কে সব বলি।
তারপর রোহানকে বিশ্বাস করলাম, রোহান বলছিলো প্রেমটা দুজনের ইচ্ছায় হলেও বিয়েটা দু-পরিবারকে নিয়েই করবো।
গুড তারমানে রোহান ছেলেটা ভালো, সে তার প্রমিস রাখছে!
হ্যাঁ আপ্পি।
সব মিলিয়ে রোহান খুব ভালো ছেলে, আমাদের দু-বছরের চেনাজানা তারপর বিয়ে হতে চললো।
প্রিয়া আপ্পি একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করবো.?
হ্যাঁ বলো।
আরাফ কে.?
কেন.?
আম্মুর কাছে মাঝে মাঝে গল্প শোনতাম।
আরাফ নামের কেউ একজন তোমাকে খুব ভালোবাসতো, তোমাদের বিয়েরও কথা হইছিলো।
আজাদ আঙ্কেলের স্যারের ছেলে ঢাকা কলেজে পড়ায়।
আপ্পি আরাফ ভাইয়া এখন কোথায় থাকে.?
তোমাদের যোগাযোগ হয় না.?
জানি না বলেই প্রিয়ার দু-চোখে শ্রাবনের ধারা বেয়ে চললো। তা থামানোর ক্ষমতা পৃথিবীর কারো নেই, আপ্পি! আপ্পি
সরি, আমাকে ক্ষমা করে দেও প্লীজ আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি…
আর কোন প্রশ্ন করবো না প্লীজ তুমি কেঁদো না।
প্রিয়া মুখে কিছু বললো না নিরবে চোখে পানি ফেলে চললো।
মিতু কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না মনে মনে ভাবলো আরাফ ভাইয়া হয়ত আপ্পিকে ভুলে গেছে তাই আপ্পির এতো কষ্ট…!
…..চলবে।
১৩টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপু অনেক সুন্দর ভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। ভালো লাগলো। শুভ কামনা রইলো আগামী পর্বের জন্য
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দিদি ভাই।
সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম, সব সময় পাশে থাকুন।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা রইল।
হালিম নজরুল
কলাপাতা রঙের পোশাক কিন্তু আমার খুব প্রিয়।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
কলাপাতা রঙের পোশাক কিন্তু আমারও খুব ভালো লাগে, আব্বুর প্রিয় রং।
অনেক ভালো থাকবেন ভাইয়া, সুন্দর মতামতে মুগ্ধ হলাম।
ভালো থাকবেন।
তৌহিদ
আরাফকে প্রিয়া অনেক ভালোবাসে বোঝা যাচ্ছে। চলুক গল্প। ভালো থাকুন আপু।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
জ্বী ভাইয়া আরাফের ভালোবাসাটা প্রথমত একতরফা ছিলো, এখন প্রিয়াও আরাফকে ভালোবাসে।
দেখা যাক সামনের পর্বে কি আসে, গল্পের মোড় কোনদিকে যায়।
ভালো থাকুন ভাইয়া।
ফয়জুল মহী
উপভোগ্য লেখা। সুখময় হোক সাহিত্যে বিচরণ ।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
দোয়া করবেন ভাইয়া আরো ভালো কিছু লিখে আপনাদের সবার মনে জায়গা করে নিতে পারি।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন।
সুপায়ন বড়ুয়া
প্রিয়াকি অবশেষে আরাফকে মিস করছে ?
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দাদা।
প্রিয়ার মনে অনেকবছর ধরেই আরাফকে মিস করে কিন্তু আরাফ তা জানে না।
মূলত আরাফ জাপান যাবার পরেই প্রিয়া আরাফকে মিস করতে শুরু করেছে।
বর্তমানে আরাফ দেশে আসছে দেখা যাক, পরের পর্বে কি আসে।
ভালো থাকবেন দাদা।
শামীম চৌধুরী
অগ্রগতি ভালই হচ্ছে আপু। পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। শুভ কামনা রইলো।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইজান।
এত ব্যস্ততার পরও সময় করে আমার লেখা পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
চেষ্টা করছি ভালোভাবে গল্পটা এগিয়ে নিয়ে যেতে জানি না কতটা সফল হব তবু আপনার সবার উৎসাহ্ পেলে আরো ভালো কিছু লিখতে পারবো।
ভালো থাকুন।
জিসান শা ইকরাম
মিতুর কাছে তার বড় বেলাটা ভালো লাগে – এটি একটি নতুন কথা জানলাম।
মিতু নিজের অজান্তেই প্রিয়ার মনে কস্ট দিয়ে ফেললো। প্রিয়ার প্রেম যেন সার্থক হয়।
সুন্দর উপস্থাপনা।
শুভ কামনা।