
আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-৩২)
রাহাত আরাফকে একবার চোখ ভরে দেখবো বলে আজো বেঁচে আছি।আমাদের দুঃসময়ে আরাফের অবদান অনস্বীকার্য বাবারে কাছে বস দুচোখ কোন ভাবেই ভুলা সম্ভব না। হ্যাঁ আজকের রাহাতের অর্থ সম্পদ, কুটিপতি,সম্মান সবকিছু রাহাতের দান এগুলো ভুলব কি করে মা! আমার শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আরাফকে ভুলব না মা তোমাকে কথা দিলা।
জানো ঊর্মি জীবনে অনেক কষ্ট করেছি দু- বেলা না খেয়ে এক বেলা খেয়ে বেঁচে ছিলাম সেই সময় আরাফ একজন ফেরেস্তার মতো আমার জীবনে আসলো।
বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে আমার সকল অভাব দূর করে দিল আমাকে তার ব্যবসার অংশিদার করে দিল।
তারপর আর পিচনে ফিরে তাকাতে হয় নি সেই দিনের সেই রাহাত মিয়া আজকের রাহাত চৌধুরী টাকা কি না পারে।
কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে রাহাতের চোখে পানি, হে রে বাবা আরাফ মানুষ না ফেরেস্তা।
ঊর্মি দেখলো শ্বাশুড়ী মা আর স্বামীর চোখে পানি সে কথার মোড় ঘুমাল মনি, জনি তোমরা রেডি বাবা দাদু কিন্তু রেডি হয়ে গেছে।
জ্বী মা-মনি আমরা দুজনেই রেডি বলেই সামনে দাঁড়াল। রাহাত চোখ মুছে বললো মা ঊর্মি তুমি রেডি তো.?
হ্যাঁ মা আপনার কি অবস্থা।
হু হু হু হু বউমা আমি বয়স্ক মানুষ সাজগুজের কি আছে! আমিও রেডি চল তাহলে সবাই আর রেডি করো না বিকাল হয়ে যাচ্ছে রাতেই ফিরতে হবে।
আচ্ছা তুমি যাও ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলো আমি জনি,মনি মা কে নিয়ে নিচে আসবো।
ওকে তোমারা তাড়াতাড়ি নিচে এসো আমি গেলাম…!
আরাফ বাবা কাছে একটু বস তো দু-চোখ ভরে তোকে একটু দেখি বলে মনোয়ারা চোখ মুছল। সন্তানেরা দূরে থাকলে বাবা মায়ের যে কি কষ্ট হয় তোরা তা বুঝবি না, আরে সন্তানের বাবা হও তারপর বুঝবে।
মা! মা তুমি এমন পাগলামি করছো কেন আমি একেবারেই দেশে চলে আসছি। এখন থেকে তোমার আঁচলের নিচেই থাকবো বলেই মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল আরাফ।
মনোয়ারার চোখে সেই ছোট আরাফ যাকে কোলে নিয়ে তার বেশির ভাগ সময় কাটত।
সবার পরে যখন আর সন্তান নিবে না বলে সিদ্ধান্ত নিলাম ঠিক তখনি
আরাফের অস্তিত্ব অনুভব করলাম। সেই শিশুটাই একসময় বাবা মায়ের সবচেয়ে প্রিয় সন্তান হয়ে যাবে গেল আজকের আরাফ।
মা! বলো।
আরমান ভাইয়া,আরাফাত ভাইয়া কবে আসছিলো.?
মনোয়ারা কিছুক্ষন চুপ করে থাকে মাসখানেক হবে রিতা রন্টিকে নিয়ে আসছিলো বলছিলো আরমান ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে গেছে।
বাসায় ফিরলে আসবে তারপর আর আসে নাই, আরাফাত আসার সময় পায় না।
এই বাসাটা একদিন সবার প্রয়োজন ছিলো এখন সবাই নিজের বাসা করেছে, আলাদা ব্যবসা করে সন্তান বউকে নিয়ে সুখে আছে এটাই আমার শান্তি বৃদ্ধ মাকে দেখার প্রয়োজন নেই তাই কেউ আসে না। আচ্ছা বাবা তুই বল কিছু টাকা পাঠালেই মায়ের প্রতি সন্তানের কর্তব্য পালন করা হয়ে যায়..
মনোয়ারার আক্ষেপ আরাফকে কষ্ট দিল ওদের দোষ দিয়ে লাভ কি,, আমিও তো বাবা মা ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমালাম মাসে কিছু টাকা ওনাদের খরচ দিয়ে দায়ীত্ব শেষ করতাম।
মা একদম কাঁদবে না চোখ মুছ সবাই ব্যস্ত এটা বুঝতে হবে, আর চিন্তা নেই আমি আছি তো তোমার কাছে।
জানিস বাবা বলে মুচকি হাসলেন মনোয়ারা বলো মা! রহিমার মেয়েটা বেশ চঞ্চল হয়েছে সারা বাড়ি হৈ হুল্লরে মাথায় তুলে রাখে ঘুমন্ত বাড়িতে প্রাণ প্রিয়ে পায়।
খুব ভালো খবর, মনোয়ারা ৪-৫ বছর ধরে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা একে একে আরাফকে শোনায়।
আরাফ মনযোগ দিয়ে মায়ের গল্পে শুনে…
এক হাতে লাগেজ, অন্যহাতে মোবাইল রিক্সা থেকে নেমে কয়েক কদম হেঁটে বাড়ির বিশাল গেটে ঢুকতেই একটা কুকুর চোখে পড়ল। খুব শান্ত আর নীরব তবে অপরিচিত কাউকে দেখলে ঘেউ ঘেউ করে সাবধান করে দেয় প্রিয়াকে ঘেউ ঘেউ করলো সে মিষ্টি হাসি দিয়ে বুজাল বুঝতে পেরেছে।
গেটে দারোয়ান নেই তাই কারো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না।
কারন এই বিশাল গেটের দোতলা বাড়ির মালিক আর কেউ না প্রিয়ার মামা শেখর সাহবে।
অনেক বছর পর মামার বাড়িতে বেড়াতে আসছে প্রিয়া উপলক্ষ মামাত বোন মিতুর বিয়ে। তিনতলা বাড়ির সামনে বাগান আরেক পাশে খানিকটা খালি জায়গা যেখানে নানা,নানু শুয়ে আছেন।
প্রিয়া সদর দরজার দিকে চেয়ে চলতে শুরু করলো দরজার সামনে দাঁড়াল বন্ধ কলিংবেল চাপতেই একজন সুঠাম, কর্মঠ দেহের লোক দরজা খুলে দিল প্রিয়া সালাম দিতেই। বললো কাকে চাই..?
এটা শেখর সাহেবের বাসা।
জ্বী ম্যাডাম।
মিতু কলিংবেল শুনে দোতলা সিঁড়ি বেয়ে নিচে আসছিলো প্রিয়াকে দেখেই এক দৌঁড়ে আপ্পি,আপ্পি বলে নিচে নেমে এসে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরল। বুঝতে বাকি রইল না প্রিয়া এ বাড়ির পুরনো আত্নীয় সুঠাম দেহের লোকটা চলে গেল।
বাবা! বাবা নিচে নেমে আস এসে দেখ ড্রইং রুমে তোমার জন্য কি সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে..!উপর থেকে উওর আসলো আসছি মা-মনি।
সালাম স্যার বলেই দারোয়ান গেট খুলে দিল।
-ওয়া আলাইকুম আসসালাম। করিম চাচা কেমন আছেন.?
-জ্বী স্যার ভালো আছি।
-করিম চাচা, আমার মা আর আপনাদের বউমা বলে ঊর্মির দিকে তাকাল।
-সবাই ভালো আছেন, জ্বী আলহামদুলিল্লাহ্ আপনি?
-ভালো আছি। এরা বুঝি তোমার ছেলে মেয়ে?
-জ্বী চাচা মনি, জনি।
-আপনারা ভিতরে যান আরাফ বাবা বাসায় আছেন।
সবাই ভিতরে প্রবেশ করলো সামনেই একটা কবরস্থান, রাহাত এটা কার কবর?
মা আরাফের বাবা আকরাম আঙ্কেলের কবর।
ওহ্ আচ্ছা বলেই সবাই সামনে এগিয়ে চলল।
সদর দরজায় এসে রাহাত কলিংবেল চাপল, মনোয়ারা ডাকল রহিমা দেখ তো কে আসলো। রহিমা দরজা খুলে দিল আরে রাহাত ভাইজান যে ভিতরে আসেন, ওনি আন্টি?
-জ্বী।
রহিমা রাহাতের মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করলো।
ওনি তোমাদের ভাবী ঊর্মি।
ও আচ্ছা কেমন আছেন ভাবি.?
কি রে রহিমা কার সাথে এত কথা বলিস, কে আসছে?
জ্বী খালাম্মা রাহাত ভাইজান আসছে সাথে আন্টি,ভাবিও আসছে।
বেঁচে থাকো মা, আন্টি আপনাদের বউমা ঊর্মি মনোয়ারাকে সালাম করে উঠে দাঁড়ল।
দারুন সুন্দর মামনি, এতদিন পর আন্টি দেখতে দেখার সময় হলো।
না আন্টি আমি আসতে চাইছিলাম, আপনার ছেলে সময় পায় না। মরোয়ারা মুসচি হাসল,আন্টি আমার আম্মা।
কেমন আছেন আপা?
ভালো।
আপনি?
ভালো আছি।
আপনারা বসেন।
রহিমা উপরে গিয়ে আরাফকে বলো রাহাত আসছে, শ্রেয়াকেও নিচে আসতে বলো।
জ্বী খালাম্মা আপনারা সবাই বসুন আমি চা,নাস্তা নিয়ে আসতেছি বলেই রহিমা সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল।
রহিমা এ বাড়ির পুরনো কাজের লোক বললে ভুল হবে আমার আরেক সন্তান রহিমা।
কাজের মেয়ের প্রতি মনোয়ারের মমত্ববোধ দেখে সবাই মুগ্ধ হলো।
রাহাত বলেই আরাফ চিৎকার করলো রাহাত ও সোফা ছেড়ে উঠে গিয়ে আরাফকে জড়িয়ে ধরলো কতদিন পর দেখা কেমন আছিস দোস্ত?
তোকে দেখে মনটা খুশিতে ভরে গেল।
…..চলবে।
১৪টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সাথেই আছি। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দিদি ভাই।
আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রানিত হলাম।
সব সময় এভাবে উৎসাহ্ দিয়ে পাশে থাকার অনুরোধ রইল।
ভালো থাকুন।
শুভ কামনা রইল।
ফয়জুল মহী
ভীষণ ভালো লাগলো লেখা । সুখময় হোক সাহিত্যে বিচরণ ।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রানিত হলাম।
সব সময় এভাবে উৎসাহ্ দিয়ে পাশে থাকার অনুরোধ রইল।
ভালো থাকুন।
শুভ কামনা রইল।
সুপায়ন বড়ুয়া
গল্পে নতুন মোড় ভালই লাগলো।
চালিয়ে যান। শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দাদা।
আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রানিত হলাম।
সব সময় এভাবে উৎসাহ্ দিয়ে পাশে থাকার অনুরোধ রইল।
ভালো থাকুন।
শুভ কামনা রইল।
সাবিনা ইয়াসমিন
চলুক, সব গুলো পর্বই পড়বো ইনশাআল্লাহ।
শুভ কামনা রইলো 🌹🌹
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ আপু।
আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রানিত হলাম। সময় করে সব গুলো পর্ব পড়ে নিবেন।
সব সময় এভাবে উৎসাহ্ দিয়ে পাশে থাকার অনুরোধ রইল।
ভালো থাকুন।
শুভ কামনা রইল।
তৌহিদ
আরাফের সম্পর্কে নতুন কিছু জানললাম। ছেলেটা ভালোই মনে হচ্ছে। ভালো থাকুন আপু।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রানিত হলাম।
সব সময় এভাবে উৎসাহ্ দিয়ে পাশে থাকার অনুরোধ রইল।
ভালো থাকুন।
শুভ কামনা রইল।
হালিম নজরুল
পড়তে পড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, বাকিটা পরে পড়ব।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রানিত হলাম।
সব সময় এভাবে উৎসাহ্ দিয়ে পাশে থাকার অনুরোধ রইল।
ভালো থাকুন।
শুভ কামনা রইল।
জিসান শা ইকরাম
অবশেষে আসলো আরাফ। মায়ের কোলে মাথা রাখা আরাফকে যেন দেখতে পেলাম।
দুই বন্ধুর মিলনটিও দেখলাম।
পরের পর্বে যাচ্ছি।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইজান।
দ্বীর্ঘ ৬ বছর পর আরাফের দেশে ফেরা,পরিবারের কাছে ফেরা।
দুই বন্ধুর পরিবারের দেখা, সব মিলিয়ে আমার কাছেও ভালো লাগছে।
দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি হয়..
ভালো থাকবেন ভাইজান।
শুভ কামনা রইল।