
-প্রায় ৫ ফুট ৪ হবে। তোমার সাথে মানাবে ভালো এই যুগে এত লম্বা মেয়ে পাওয়া যায় না। ঢাকা শহরে নিজেদের তিনটা বাসা আছে। গ্রামের প্রচুর জমিজমা আছে। বংশ মর্যাদা ভালো। পরিবার সামাজিক অবস্থান সবদিক থেকে আমাদের সাথে মিলবে ভালো।
তোমার মতামত পেলে, আমি মেজর শফিক সাহেবকে বিয়ের ব্যাপারে আমাদের বাসায় আসতে বলবো। না হয় তুমি কবে তানিয়াকে দেখতে যেতে চাও আমাকে জানাবে, আমি সেই সময় অফিস ছুটি নিব।
সবার কথা শুনে আরাফ কি বলবে বুঝতে পারছিলো না, মেজর শফিক সাহেব সম্পর্কে সে খুব ভালো ভাবেই জানে। শফিক সাহেব খুব ভালো মানুষ তানিয়াও নিশ্চয় মেয়ে হিসাবে খারাপ হবে না, রাজ্যসহ রাজত্ব কে না চায়।
আচ্ছা বড় ভাইয়া আমি একটু ভেবে কয়েকদিন পর তোমাকে জানাই সমস্যা নেই তো…!
-আরে নাহ! তুমি তানিয়া সম্পর্কে খোঁজ নেও। আমার কাছে ওর মোবাইল নাম্বার আছে তোমরা কথা বলো, দুজন দুজন সম্পর্কে চেনা জানা হোক। তারপর ভালো লাগলে না হয় বিয়েটা হবে, আমরা তোমাকে জোর করছি না সময় নিয়ে জানাও।
-ধন্যবাদ ভাইয়া, আমি তাহলে রুমে যাই তোমরা কথা বলো।
-ওকে যাও বিয়ে তোমাকে করতেই হবে বলে দিলাম কোন না চলবে না হাসতে হাসতে কথা গুলো বললেন বড় ভাবি রিতা
আরাফ নিজের রুমে চলে গেল।
অফিসের ফাইলে সেই সন্ধ্যা থেকে মুখ গুজে আছো,রুমে যে আরেকটা প্রাণ আছে সেটার কোন খেয়াল নেই -মিরা কিছুটা অভিমানে কথা গুলো বলে চলছে।
আজাদ তখনও কিছু ফাইল মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো। মিরার কথা শুনতে না পারলেও রুমে আসাটা বুঝতে পেরেছে, কারন মিরা এই মাত্র ড্রেসিন টেবিলের সামনে বসছে বেতের মোড়াটা ঢান দিয়ে।
মিরা! কিছু বললে.?
নাহ্! কিছু না, তোমার সন্তান সামলানো, সংসারের কাজ করা,তোমাদের দেখাশোনা করা ছাড়া এই পরিবারে আমার কি কোন কাজ আছে।
মিরার কথার মাঝে কেমন জানি একটা রহস্যের গন্ধ পেল আজাদ। আচ্ছা! মিরা তো কখনো এসব কথা বলে না ভাবতে ভাবতে ফাইল থেকে চোখ দুটো সরিয়ে মিরার দিতে তাকাল আজাদ।
লম্বা, ফর্সা, সুকেশী, সুনয়না, একজন মহিলা বসে আছে। এটা আর কেউ নয় আমার স্ত্রী মিরা! অবাক হলো আজাদ। বিছানার সামনের ফাইল গুলো ড্রয়ার খুলে রাখল।
রাত তখন গভীর চারপাশে নিরবতা প্রিয়ার রুমের লাইটটা তখন জ্বলছে। প্রিয়া পড়তে বসেছে, মা ঘুমাচ্ছে, ঘড়িতে চেয়ে দেখল আজাদৃ রাত ১১ টা বাজে।
আজাদ বিছানা থেকে নেমে আস্তে আস্তে মিরার পাশে গিয়ে দাঁড়াল, বাইরে চাঁদের আলো দেখা যায় মনে হচ্ছে আজ পূর্ণিমা রাত, মিরা চুলে খোপা বাঁধছিলো।
আজাদ চেয়ে দেখল মিরার খোঁপায় বেলি ফুল দিচ্ছে! আজাদের বুঝতে বাকি রইল না আজ ১৪ তারিখ মিরা আজাদের ১৫তম বিবাহ্ বার্ষিকী। বছরের এই একটা দিন মিরা স্বামীর জন্য আলাদা ভাবে সাজগোজ করে আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
বড় একটা ভুল হয়ে গেল মিরা কয়েকদিন আগে কথাটা আজাদকে মনে করিয়ে দিয়েছিলো, ১৪ তারিখ দুপুরে আমরা সবাই বাইরে খাব।
অফিসের কাজের চাপে সব ভুলে গিয়েছি মনে করে আজাদ খুব কষ্ট পেল। যাইহোক মিরা দিনের বিষয়টা ভুলে যাওয়া নিয়ে একটুও রাগ করে নাই! তাই আজাদের জন্য রাতেও সেজেছে! ভেবেই মনটা ভালো হয়ে গেল।
আজাদ আলতু করে পিচনে থেকে মিরাকে জড়িয়ে ধরল, স্যরি বউ ভুলে গিয়েছিলাম বলে মিরার চুলে চুমু দিল আজাদ।
আয়নায় দু’জনের মুখ একসাথে ভেসে উঠল মিরা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল, ছাড় আমাকে বুড়া বয়সে আর ভিমরতি দেখাতে হবে না।
আহারে ভালোবাসা বলেই এক ঝটকায় আজাদের হাত থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয় মিরা।
সরে এসে বিছানায় বসে আছে চুপচাপ, আজাদ কাছে এসে দাঁড়াল এই চোখ,এই নাক, এই ঠোঁট চন্দন মাখা মুখ,গালের ওই ক্ষুদ্র তিল চমৎকার লাগছে। তোমার তুলনা শুধুই তুমি, I love you সোনা বউ।
এতক্ষন ধরে মিরা স্বামীর কাছে মনে মনে এটাই চাইছিলো মুচকি হাসলো মিরা। একটু ভালোবাসা পেলেই মেয়েরা সব রাগ,দুঃখ,মান -অভিমানব ভুলে যায় আজাদ বুঝে নিল।
সৌন্দর্যের প্রশংসায় মিরার মন চঞ্চল হয়ে উঠে।
আসলে অনেক পুরুষই ভালোবাসা দিতে জানে না; নারীর সৌন্দর্যের মূল্যায়ন করতে পারে না; বলা ত দূরের কথা সারাজীবন সংসার করেও স্ত্রীর মন পায় না বা পেতেও চেষ্টা করে না। শুধু একই ছাদের নিচে জীবন কাটিয়ে দেয়, প্রকৃত ভালোবাসার সাদ তারা পায় না।
মিরার মুচকি হাসিটা বুঝিয়ে দেয় সবকিছু ঠিক আছে, সত্যি মিরা যখন হাসে তখন মনে হয় সাদা গোলাপ ফুঁটেছে আজাদ মিরার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
মিরা মুখ তুলে আজাদের দিকে চেয়ে থাকে। এ বন্ধন তো জন্ম জন্মান্তরের রাগ, অভিমান, হাসি, আনন্দ,দুখ,কষ্ট মিলেই জীবন এগুলো মনে রাখলে জীবনে সুখি হওয়া যায় না। মিরার এমন কথায় আজাদ মুগ্ধ হয় স্ত্রীর কপালে একটা চুমু একে দেয় প্রমিস করে সারাজীবন এভাবে ভালোবেসে পাশে থাকবে।
মান -অভিমানের পালা শেষ করে আজাদ, মিরা দু’জন- দু’জনকে ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নেয়। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ হিসাবে ভেবে নেয়, যে জীবনে অর্থের অভাব হলেও কোনদিন ভালোবাসার অভাব হবে না।
….চলবে।
সুরাইয়া নার্গিস আলিফ।
১৪টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চমৎকার লিখছেন। আরাফ কি রাজত্ব আর রাজকন্যা র লোভে প্রিয়াকে ভুলে যাবে! অপেক্ষায় রইলাম আগামী পর্বের। ভালো থাকুন। শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
সুরাইয়া নার্গিস
শুভ নববর্ষ দিদি ভাই।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল, সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম দিদি।
রাজত্ব আর রাজকন্যা এগুলোর লোভ সব মানুষের মধ্যে থাকে, আরাফও তার ব্যতিক্রম নয়।
দেখা যাক প্রিয়ার ভালোবাসা নাকি তানিয়ার রাজত্বসহ রাজকন্যা আরাফ কোনটা বেচে নেয়।
জানতে হলে পরবর্তী পর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে দিদি ভাই, দেখা যাক গল্পের মোড় কোনদিকে যায়।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
প্রদীপ চক্রবর্তী
বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ধারাবাহিক গল্প।
পরের পর্বের অপেক্ষায় দিদি…!
সুরাইয়া নার্গিস
শুভ নববর্ষ দাদা ভাইয়া।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল, সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম।
এভাবেই উৎসাহমূলক মন্তব্য জানিয়ে সব সময় পাশে থাকবেন এই কামনা রইল।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
কার দিকে ঝুঁকবে আরাফ? প্রিয়া না কি তানিয়া?
আজাদ আর মিরার প্রেমময় বিবাহবার্ষিকী উদযাপন খুব সুন্দর ভাবে দিলেন।
ভালো লেগেছে এই পর্ব খুব।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
শুভ নববর্ষ ভাইয়া।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল, আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম।
দেখা যাক আরাফ রাজ্যসহ রাজত্ব নাকি প্রিয়া কাকে বেচে নেয়।
গল্পের মোড় কোনদিকে যায় জানতে হলে পরের পর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
অনেক ভালো লাগছে ভাইয়া আপনার মন্তব্য দেখে, এভাবে পাশে থাকবেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
ফয়জুল মহী
নববর্ষে জাতীর জন্য সুখবর কামনা করি। শুভেচ্ছা আপনাকে ।
সুরাইয়া নার্গিস
শুভ নববর্ষ ভাইয়া।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল, সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম।
এভাবেই উৎসাহমূলক মন্তব্য জানিয়ে সব সময় পাশে থাকবেন এই কামনা রইল।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
সুপায়ন বড়ুয়া
“একটু ভালোবাসা পেলেই মেয়েরা সব রাগ,দুঃখ,মান -অভিমানব ভুলে যায় । “
তা কি সত্যি আপু ?
নব বর্ষ বলে কথা ?
না হলে কেমনে মেনে নেয়
শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
শুভ নববর্ষ দাদা ভাইয়া।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল, সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম।
একটু ভালোবাসা পেলে মেয়েরা সব রাগ-কষ্ট, মান-অভিমান সব ভুলে যায় আজাদের মতামত এটা 😊
আমিও একমত দাদা 😷।
এভাবেই উৎসাহমূলক মন্তব্য জানিয়ে সব সময় পাশে থাকবেন এই কামনা রইল।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
হালিম নজরুল
ত্রিমুখি প্রেম কোনদিকে মোড় নেয় সেটিই এখন দেখার বিষয়।
সুরাইয়া নার্গিস
শুভ নববর্ষ ভাইয়া।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল, আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম।
দেখা যাক আরাফ রাজ্যসহ রাজত্ব নাকি প্রিয়া কাকে বেচে নেয়।
গল্পের মোড় কোনদিকে যায় জানতে হলে পরের পর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
অনেক ভালো লাগছে ভাইয়া আপনার মন্তব্য দেখে, এভাবে পাশে থাকবেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
সুরাইয়া পারভীন
এই পর্বটা বেশি ভালো লেগেছে আমার কাছে। কিছু প্রিয়/অপ্রিয় সত্য প্রকাশ পেয়েছে। দেখাই যাক না রাজ্যসহ রাজকন্যা নাকি ভালোবাসা কার হবে জয়?
তৌহিদ
প্রেমের আবার বুড়ো বয়স কি? মনতো সারাজীবনেই কচি ই থেকে যায় তাইনা? এভাবে ডেট ভোলা ঠিক নয়। ভাত কপালে জুটবেনা তাহলে।
সুন্দর লিখেছেন আপু।