আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-আট)

সুরাইয়া নার্গিস ৭ এপ্রিল ২০২০, মঙ্গলবার, ১০:৫৯:২৬পূর্বাহ্ন গল্প ১৬ মন্তব্য

“আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-আট)

কিন্তু আরাফ সেই কলেজ থেকে শীলাকে এড়িয়ে চলে কারণ আরাফ বন্ধুত্বের বাইরে শীলাকে অন্য চোখে দেখেনি শীলা তা জানে তবু ভালোবাসে যদি আরাফের মন গলে সেই আশায় তার চেষ্টা অব্যাহত।
শীলা অনেকক্ষন ধরে আরাফের জন্য কলেজ ক্যান্টিনে অপেক্ষা করছে ক্লাস শেষ করেই শীলাকে সময় দিবে আরাফ। সে কথাই সকালে হয়েছিলো শীলা পত্রিকা পাতাটা চোখের সামনে হেড লাইনের দিকে চেয়ে বলল, ওমা সুন্দর শিরোনাম দিয়েছে তো ‘পুলিশ এবং রাজনৈতিক নেতাদের মামা-ভাগ্নে সম্পর্ক” হি হি হি হি করে হেসে দিল শীলা, তারপর মনযোগ সহকারে নিরবে বাকিটা পড়তে থাকে।

প্রিয়ার নতুন স্কুল সকালে মম রিক্সায় ডেকে তুলে দেয় তবে নিতে আসতে হয় না, প্রিয়া একাই স্কুল থেকে বাসায় ফিরে মম এর কাজে সাহায্য করে। নতুন স্কুল, নতুন পরিবেশ তার অনেক বন্ধু-বান্ধবী হয়ে যায় মাঝে মাঝে প্রিয়া আরাফকে মিস করে গুন্ডা ছেলেটার কথা গুলো এখনো কানে বাজে।
গল্পের আড্ডায় আজাদ,মিরা প্রায়ই আরাফের কথা বলে প্রিয়াও দাদুমনির কাছে আরাফের কথা মন দিয়ে শোনে দাদুমনি মাঝে মাঝেই জানতে চায় সেদিন আরাফ তার আড়ালে কি বলছিলো। প্রিয়া হেসে অবুঝ এর মতো জবাব দেয় আরাফ ভাইয়া বলছিলো প্রিয়া আমি দাদুমনির জন্য না “আমি তোমার জন্য এসেছি” প্রিয়া, তোমাকে দেখবো বলে, তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে তারপর আমার মাথায় হাত রেখে চোখ মুছলো বলছে চোখে কিছু পড়েছিলো তাই পানি আসছে। দাদুমনি এবার মনে হয় আরাফের মনের কথা গুলো বুঝতে পারল কিন্তু ছোট্র অবুঝ প্রিয়ার এত ভারী কথা বুঝার বয়স হয়নি তো তাই আরাফকে নিয়ে আর ভাবে না সময়ের সাথে সাথে সব ভুলে গেছে পড়াশোনার বাইরে সে আর ভাবে না আরাফের জন্য দাদুমনির মনটা কেঁদে উঠল।
সে এই দু’দিনে বুঝতে পারছে আরাফ প্রিয়াকে কতটা ভালোবাসে কারণ প্রিয়ার বয়সেই আজাদের বাবার সঙ্গে তার বিয়ে হয় ছোট্র বলে স্বামীকে চিনত না দেখলেই চিৎকার করে কাঁদত তাই আজাদের নানা ৪-৫ দিন পর পর নিতে আসতেন। মেয়েকে সাথে নিতে আজাদ এর বাবাও যেতেন বাবার বাড়িতে ২-৩ মাস পরে শ্বশুড় বাড়ী আসতেন তবু মায়ের জন্য কাঁদতেন। আজাদের দাদা,দাদু খুব ভালো মানুষ ছিলেন নিজের সন্তানের মতোই ছোট বউকে আদর করতেন, সকল বিপদ থেকে রক্ষা করতেন,বুকে আগলে রাখতেন ভাবতে ভাবতে পুরনো স্মৃতি চারণে আজাদের বাবার কথা মনে পড়ে গেল কাঁদতে থাকলেন, প্রিয়া অবাক হয়ে দাদুমনিকে কান্নার কারন জানতে চাইলেন।
শোন দাদাুমনি আরাফ তোমাকে ভালোবাসে সেটা তুমি যেমন বুঝনি আমিও বুঝতাম না তোমার দাদাভাই আমাকে কতটা ভালোবাসতেন আজ তোমার দাদাভাইয়ের কথা খুব মনে পড়ছে। মানুষটা আমাকে না দেখে এক মুহূর্ত থাকতে পারতেন না সারাবাড়ি চিৎকার করে মাথায় তুলতেন আর আজ ৫ বছর তিনি বেঁচে নেই আমাকে না দেখে থাকেন কি করে ভাবতেই চোখে পানি চলে আসলো বলেই শাড়ির আচলে চোখ মুছলেন দাদুমনি। শুনে প্রিয়ার মনটাও খারাপ হয়ে গেল বাইরে পছন্ড রোদ রুমে ফ্যান চলছে তবুও প্রিয়া ঘামছে আরাফ ভাইয়ার কথা আজ খুব বেশি মনে পড়ছে।

মা আপনি প্রিয়াকে নিয়ে খেতে আসুন আমি টেবিলে খাবার দিয়ে দিতাছি বলেই কাছে আসলেন মিরা, মা আপনার চোখে পানি।
না বউমা প্রিয়ার সাথে তোমার শ্বশুড়ের কথা গল্প করছিলাম, তাই নাকি মা আমাকে রেখে দাদী,নাতনী গল্প হচ্ছে কোমর থেকে শাড়ির আচলটা খুলে মিরা মাথা ঢাকলেন এতক্ষন রান্নার জন্য শাড়ি কোমরে বেঁধেই কাজ করছিলো মিরা মায়ের গলা জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখলেন মা বাবা আপনাকে ভিষন ভালোবাসতো দেখুন না আপনার ছেলে ঠিক উল্টো আমাকে একটুও ভালোবাসে না হাসতে হাসতে আল্লা-দে কথা গুলো বলে শ্বাশুড়ী মায়ের পাশে বসলেন।
হি হি হি হি হি প্রিয়ার হাসি শুরু মম আমি আব্বুকে সব বলে দিব আব্বুর নামে বদনাম করছো, ওরে আমার দুষ্টুরে বলেই মিরা প্রিয়ার কান ধরতে যাবে অমনি শ্বাশুড়ী মা বললেন বউমা আজাদ কিন্তু তোমাকে দেখে ভালোবেসে নিজের পছন্দে বিয়ে করছে আমি সব জানি গো তারপরও তুমি বলছো আজাদ তোমাকে কম ভালোবাসে বলে মা হাসতে শুরু প্রিয়ার হাসি এবার দেখে কে শ্বাশুড়ী মায়ের মুখে মেয়ের সামনে এসব কথা শুনে মিরা কিছুটা লজ্জা পেল মুচকি হেসে বললো সত্যি মা আজাদের মতো স্বামী আপনার মতো মা ভাগ্য করে পাওয়া যায়।
প্রিয়া মুগ্ধ হয়ে সবার কথা শুনছিলো

আরাফ ক্লাস শেষ করে সোজা ক্যান্টিনে আসলো কারন শীলাকে এখানেই আসতে বলছিলো, শীলা মনযোগ দিয়ে কিছু পড়ছে হ্যাঁ যা ভেবেছিলাম তাই শীলা কোন কাজে সময় নষ্ট করে না সময়ের আগেই সেখানে উপস্থিত থাকে আজও তাই হয়েছে অপেক্ষা করতে করতে পত্রিকায় চোখ ভুলিয়ে সময়টা অতিবাহিত করছে এতক্ষন ধরে শীলা পত্রিকা পড়ছে মেয়েটা ধৈর্য আছে বলতে হবে কোন কাজে ক্লান্তি নেই তার পরেও ক্যান্টিনের কাছে চলে আসল শীলার দিকে চাইল আরাফ! গোলাপী রংটা আরাফের খুব প্রিয় শীলা সেটা জানে তাই কাপড় যাই পড়ুক গোলাপী রং মেশানো থাকবেই আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি শীলা গোলাপী রঙের সালোয়ার কামিজ পরে আছে। জামার মাঝে মাঝে লাল সবুজের কারুকাজ মেয়েরা ম্যাচিং জিনিসটা খুব ভালো বুঝে আরাফও কম না সব কিছুতেই সেও ম্যাচিং করে শীলা জামার সাথেই কপালে সবুজ লাল টিপ পরেও আকর্ষণীয় করেছে নিজেকে।
-কেমন আছো শীলা.?
-ভালো-মন্দের এভারেজ।
হা হা হা হা, ভালোই তো বললে।
-হুম, তারপর….

….চলবে!
সুরাইয়া নার্গিস আলিফ।

৬২৬জন ৫৫৩জন
0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ