
“আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-সাত)
– হেসে ফেলল।
আকরাম সাহেব (আরাফের বাবা) তখন বয়স আর কত হবে ৩০-৩৫ বেশ সুন্দর ছিলেন মানুষটা সাদা শার্ট পড়া ছবিটা সেটা মনোয়ারা তাদের ১০তম বিবাহ্ বার্ষিকিতে কিনে উপহার দিয়েছিলেন স্বামী আকরামকে সেটা খুব যত্ন করে রেখেছিলেন।
মনোয়ারাকে দিয়েছিলেন হালকা সাদা আর হলুদ সুতোর পুঁতির কাজ করা শাড়ি বাচ্চারা খুব পছন্দ করেছিলো মনোয়ারা আর আকরামের উপহার গুলো।
স্ত্রীর প্রতি কেয়ারিং ছিলেন খুব ভালো মানুষ ছিলেন, সারাদিন স্কুল পড়ানোর পরও স্ত্রীর কাজে সাহায্য করতেন এত গুলো ছেলে মেয়ে তাদের সকালে স্কুলের জন্য রেডি করা, ড্রেস পড়ানো, খাওয়া স্কুলে দিয়ে যাওয়া সব দুজনে মিলে করতেন ভাবনাতে হারিয়ে গেল।
মনোযারা…!
আকরাম সাহেব ডাকল।
জ্বী -আসছি বলেই মনোয়ারা ভিতরের সিঁড়ি বেয়ে হেঁটে উপরে চলে আসলো আকরামের রুমে, আমার মোবাইলা খোঁজে পাচ্ছি না একটু খোঁজে দেও না বললেন আকরাম সাহেব।
মনোয়ারা হাসি যে আর থামছে না অকরাম সাহেব অবাক হয়ে বললেন ভোরের হাসি ভালো না আরাফ শুয়ে আছে ওর ঘুম ভেঙ্গে যাবে কয়েকদিন ধরে খুব লং জার্নি করছে ছেলেটা একটু বিশ্রাম করুক একটু পরে আবার কলেজ যাবে, সেখানে ক্লাস বিশ্রামের আর সময় কোথায় ছেলেটার। আগে আমার ঘড়ি খোঁজে দেও একটু বাইরে যাব বলেই পাঞ্জাবী পড়ে নিলেন আকরাম সাহেব মনোয়ারা মোবাইলটা এগিয়ে দিলেন কোথায় পেয়েছো..?
আমি ৫ মিনিট ধরে খোঁজে পেলাম না।
মহারাজ আপনার মোবাইলটা আমার বালিশের নিচে পড়ে ছিলো ভালো করে খোঁজলেই পেতেন! নাকি অন্য ঘটনা আছে।
হা হা হা হা ঘুম ভাঙ্গলে দেখি তুমি বিছানায় নেই আমি একটু সিফাত সাহেবের সাথে দেখা করতে যাব, তুমি বলো এই ৪০ বছরে কখনো এমন হয়েছে যে তোমার মুখটা না দেখে বাসা থেকে বাইরে গিয়েছি..?
নাহ্, আমি জানি তো একটু হাঁটাহাঁটি করছিলাম তুমি ঘুমিয়ে ছিলে তো এত সকালে বের হওনা।
আকরাম সাহেব বেরিয়ে গেলেন, সাবধানে যেও আর তাড়াতাড়ি ফিরে এসো বলে মনোয়ারা হাত নেড়ে স্বামীকে বিদায় দিতে সদর দরজা পর্যন্ত আসলেন।
এক কাপ চা হবে..! আসছি বলেই মিরা চায়ের কাপটা আজাদের দিকে এগিয়ে দিল চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আজাদ বললো কি ব্যাপার বলতেই চা রেডি..!
হুম তুমি তো সকালে প্রথম চা খেয়ে তারপর দিন শুরু করো তাই আমি চা বসিয়ে অন্য কাজ করছিলাম।
ওরে আমার লক্ষী বউ-রে কত ভালো তুমি, প্রিয়ার রুম থেকে পড়ার আওয়াজ আসছে না তাই মিরা ওদিকে গেল প্রিয়া অংক করছে মনটা খারাপ মনে হলো প্রিয়ার..! প্রিয়া
কি হয়েছে অংক না বুঝলে বাবার সাহায্য নাও মন খারাপ কেন..?
নাহ্, মম অংক বুঝি তো মেম ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে সমস্যা নেই তবুও দরকার হলে আব্বুকে দেখিয়ে নিব বলে মুচকি হাসলো প্রিয়া, মিরা জানালার পাশে দাঁড়াল একটা বিড়াল মিঞ মিঞ করে দৌড় দিল প্রিয়া চমকে গেল, এইকুটুতেই ভয় হেসে ফেলল মিরা আচ্ছা পড়া শেষ করে নেও আমি রান্না করতে কিচেনে গেলাম।
পাশের মিনি টেবিলে এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে আছে ম্যাগাজিন গুলো, শার্টটা পড়ে আছে, পত্রিকাটা খোলা হয়ত রাত জেগে কেউ পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ছে, মোবাইলটা পড়ে আছে বিছানার এক পাশে মনোয়ারা অবাক হয়ে চেয়ে আছে।
আরাফের কি হয়েছে ছেলেটা কখনো এমন ছিলো না রুমে সবকিছু সাজানো গুছানো থাকে আজ মনোয়ারা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না, মা তুমি কখন এলে আমাকে ডাকতে পারতে বলেই মাথার পিচনে বালিশটা রেখে খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো আরাফ।
আম্মু কিছু বলবে..?
না বাবা, রাতে ফিরছো তখন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম তাই এখন আসলাম ঘুম ভেঙ্গেছে কি না দেখতে রাতে ভালো ঘুম হয়নি বুঝি চোখ গুলো এত লাল কেন..?
প্রশ্ন করলেন মনোয়ারা।
আরাফ মনে মনে লজ্জা পেল প্রিয়ার বাসা থেকে ফেরার পথে বাসের প্রায় সবটা সময় তার চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি ঝরছে কেন সে জানে না, বাসায় ফিরে নরম বিছানায় তাকে ঘুমের রাজ্যে নিতে পারে নাই সারারাত প্রিয়াকে ভেবে ঘুম আসে নাই তাই চোখ লাল কিন্তু মাকে তা বলা যাবে না। আরাফ প্রসঙ্গ ঘুরাল মা সকালে তোমার হাতের চা না খেলে শরীর,মনে শক্তি পাই না মনোয়ারা হাসলো পাগল ছেলে ফ্রেশ হয়ে আস আমি গেলাম।
সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে প্রিয়া স্কুলে যায় মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে আরাফ কলেজ, নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
মনোয়ারা সমাজ সেবা করে বেড়ায় আর আকরাম সাহেব মসজিদে সময় দেন নামাজ পড়ে, আজাদ এর কাছে বিল্ডিং এর কাজের খবর নেয় মাঝে মধ্যে এক, দু-বার আরাফের বড় দু-ভাই আরমান,আরাফাত সবাই ময়মনসিংহে প্রিয়াদের বাসায় বেড়িয়ে আসে এবং আজাদ মিরার খুব প্রশংসা করে, অনেক বছর পর আরমান আজাদের দেখা সেটাই মুগ্ধ করে সবাইকে।
ততদিনে বিল্ডিং এর কাজ শেষ দু-রুম ভাড়া হয়েছে বাকি গুলোর জন্য আজাদ ভালো ছোট পরিবার খোঁজছে। প্রিয়া পরীক্ষায় দেয় ভালো রেজাল্ট করে আজাদ মেয়ের ভালো রেজাল্ট ফোন করে আকরাম সাহেবকে জানায়, আরাফ শুনে খুব খুশি হয় প্রিয়ার জন্য বাবার কাছে একটা গ্রিফ্ট কিনে দেয় প্রিয়ার জন্মদিনে উপহার হিসাবে।
ছোট একটা কাচের ঘর চারপাশে নানা রং এর ফুল,পাখি অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য একটা বাচ্চা মেয়ে প্রিয়ার বয়সী গোলাপী ফগ করে দাঁড়িয়ে আছে সামনে আরাফের বয়সী একটা ছেলে কালো সার্ট,কালো প্যান্ট পড়ে হাঁটু ঘেরে বসে মেয়েটাক জন্মদিনের উইস করছে গ্রিফ্ট পেয়ে প্রিয়া খুব খুশি হয় যত্ন করে তা ওর রুমে সাজিয়ে রাখে।
মেয়েরা গুণকেই ভালোবাসে, জেনে শুনে কোন মেয়ে চোর, ডাকাত,খুনীকে ভালোবাসে.?
ভালোবাসতে পারে না তাই তো শীলাও আরাফকে খুব ভালোবাসে সারাজীবনের জন্য চায়…
….চলবে।
সুরাইয়া নার্গিস আলিফ।
১৭টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
মেয়েরা গুণীকে ভালোবাসে তবে গুণী বেকার হলে আর না।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার
সুন্দর মতামতের জন্য।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা রইল।
তৌহিদ
আরাফ প্রিয়াকে দারুণ মিস করছে দেখছি। ভালোবাসাতো এমনই হয়। চলুক গল্প।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।
ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল।
তৌহিদ
আপনিও ভালো থাকবেন আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ঘটনা মোড় নিলো শীলার আগমনে। অপেক্ষায় রইলাম আগামী পর্বের। ধন্যবাদ আপনাকে
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ আপু।
আপনার সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রানীত হলাম।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল
সুপায়ন বড়ুয়া
শীলা আরাফের আগামী দিন গুলো
কেমন যায় সেই প্রতীক্ষায়।
শুভ কামনায়।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দাদা।
আপনার সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রানীত হলাম।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা রইল।
হালিম নজরুল
এবার গল্পে শীলার প্রবেশ, জমে উঠুক গল্প।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যে উৎসাহিত হলাম।
শুভ কামনা রইল।
জিসান শা ইকরাম
শীলা আসলো এই পর্বে, নাকি প্রিয়ার নাম লিখতে গিয়ে শীলা লিখেছেন?
অনেক চরিত্রের বর্ণনা পাঠকের চিন্তায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, এ দিকটা খেয়াল রাখবেন।
ভালো হচ্ছে গল্প।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
অবশ্যই বিষয় গুলো আমি খেয়াল রাখবো, প্রিয়ার নাম ভুল করে লিখি নাই গল্পের প্রয়োজনে শীলার আগমন ঘটেছে।
ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রানীত হলাম।
সুরাইয়া পারভীন
ভালো লেগেছে। পরের পর্বের জন্য শুভকামনা রইলো
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ আপু।
আপনার সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রানীত হলাম।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা রইল
এস.জেড বাবু
সুন্দর এগিয়ে যাচ্ছে গল্প-
প্রেম প্রেম জমে উঠেছে বেশ।
শুভকামনা
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনার সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রানীত হলাম।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল