
পুনাখা জং (পুংতাং ডিছেন ফোটরাং জং হিসেবেও পরিচিত) যার অর্থ পরম সুখময় প্রাসাদ। জং অর্থাৎ বিভাগের প্রধান সরকারী এবং ধর্মীয় কার্যালয় । প্রাসাদটি ১৭৩৭-৩৮ সালে যাবদ্রারং রিনপোছে দ্বারা নির্মিত হয়েছিল যার স্থপতি ছিলেন নাগাওয়াং নামগিয়াল। এটি জং স্থাপত্যশিল্পের দ্বিতীয় পুরাতনতম এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাসাদ এবং তাদের নির্মিত রাজকীয় প্রাসাদগুলো অন্যতম একটি। জং এর এই প্রাসাদে তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্মের কাগ্যু গোত্রের দক্ষিণ দ্রুকপা বংশীয়সহ রাংজুং কাসারপানি বংশীয় সাধকদের দেহাবশেষ রয়েছে।
১৯৯৫ পর্যন্ত, যখন থিম্পুতে রাজধানী সরে আসে, পুনাখা জং ভূটান সরকারের প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। এটাকে ভুটানের ঐতিহ্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে ইউনেস্কো।
(২) রাজধানী থিম্পু থেকে এই ছোট্ট টেক্সিতে চড়ে আমাদের চারজনের টিম রওয়ানা হয়েছিলাম পুনাখা জং দেখার উদ্দেশ্যে।
(৩) থিম্পু থেকে পুনাখা যেতে মাঝপথে হয়ে যেতে হয় পাইন, ফারের ঘন অরণ্য বেষ্টিত ১০০০০ হাজার ফিটের দোচু লা পাসের দুর্গম আঁকাবাঁকা পথ। আর সেই উচ্চতা পাড়ি দিয়ে যখন নেমে এলাম সাড়ে চার হাজার ফিট উচ্চতায় পুনাখার কাছাকাছি তখন বাতাসের চাপের কারণে আমাদের কানে হচ্ছিল তীব্র ব্যাথা। তবু সামনে পুনাচু নদী ও তার আশাপাশের সৌন্দর্য্য দেখে সব ভুলে গেলাম।
(৪/৫) পথের ধারে কাটা ভরা ক্যাকটাসের এমন চমৎকার ফুল আর ফল দেখে হারিয়ে গেলাম আমরা অন্য জগতে।
(৬) পুনাখাতে লাঞ্চ সেরে বেড়িয়ে পড়লাম, পুনাখা জং দেখতে। পুনাখা শহর থেকে আরও ২/৩ কিলোমিটার পরে পথের ডান দিকেই দু’টি নদীর সঙ্গমস্থল। পুনাখা-জংয়ের সামনে দিয়ে বয়ে আসা নদী পুনামোচু ও জংয়ের পাশ দিয়ে বয়ে আসা নদী পুনাফোচু (সংক্ষেপে মোচু (মাতা) ও ফোচু (পিতা))-র মিলিত ধারাই পুনাচু নামে প্রবাহিত হয়েছে ওয়াংদি দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কালিখোলাতে ভূটান – ভারত সীমা অতিত্রম করেছে এবং অবশেষে ব্রহ্মপুত্র নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। সেই মিলিত স্থলে দাড়িয়ে পুনাখা জং কে এমন চমৎকার রূপে দেখা যায়।
(৭) সামনে খড়স্রোতা নদী পুনামোচু, তার ওপাড়ে নীল পারদের ফুটে থাকা ফুল গাছগুলোর ভেতর দাড়িয়ে থাকা পুনাখা জং যেন একটা সত্যিকারের স্বর্গ।
(৮) জং এ প্রবেশ করতে হলে পুনামোচু নদীর উপরে এই চমৎকার ব্রীজটা পাড়ি দিতে হবে।
(৯) ব্রীজের ভেতরটা এমন।
(১০) ব্রীজে ঢোকার মুখেই দুইপাশে পড়বে এমন দুটো ঘুড়ির নাটাইয়ের মতো চাকতি, বৌদ্ধ ধর্মের লোকেরা এগুলো ডান দিকে ঘুরায় আর কিছু একটা জপে। এতে করে ওদের পাপ মোচন হয়।
(১১) প্রায় দোতলা সমান উঁচু সিমেন্ট আর কাঠের সিঁড়ি চড়েই জংয়ে প্রবেশ করতে হয়।
(১২/১৩) সিড়ি বেয়ে ভেতরে প্রবেশের শুরুতেই অনেকখানি উন্মুক্ত ও সুপরিচ্ছন্ন আঙিনা, সেখানে বড় একটি চোর্তেন ও ধর্মীয় তাৎপর্যবাহী একটি অশ্বত্থগাছ। আরও ভিতরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য বিরাট হলঘর। সব শেষে সুসজ্জিত এক বুদ্ধমন্দির। মন্দিরের প্রবেশদ্বারের ডান পাশের দেওয়ালে রয়েছে ভুটানি লোকগাথায় ‘জীবনচক্র’-র ছবি। আর ভিতরে বুদ্ধদেবের বিশাল স্বর্ণমূর্তি ও অসীম নীরবতা।
আয়তন, নির্মাণশৈলী ও কাঠের নকশার নিরিখে পুনাখা-জং যেমন এক কথায় অনন্য ও যথেষ্ট সুপরিকল্পিত, তেমনই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণও বটে। ঐতিহাসিক ভাবেই ভুটানরাজের রাজ্যাভিষেকও হয় এই জংয়েই অবস্থিত প্রধান লামার দফতরে।
(১৪) ক্যামেরার পেছনে থাকতে আর ভালো লাগছিলোনা, তাই ক্যামেরায় টাইম সেট করে বন্ধুদের সাথে দাড়িয়ে একটা স্মতি রেখে দিলাম।
(১৫) জং এর পেছনের অংশ।
(১৬) জং এর পাশে একটা চালার উপর বসে থাকা এই পাখির নাম হুদহুদ বা মোহনচূড়া, পাখির পিছনে থাকা জিনিসটাকে কেউ আবার ডিম ভাববেন না যেনো, ওটা একটা পাথর 😉
(১৭) এটা পুনাখা জং এর পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী পুনাফোচু যার উৎপত্তি ভূটানের লিঘসি এবং লায়া পাহাড় থেকে। আর এর আশপাশের ছবি দেখলে মনটা জুড়িয়ে যায়, ইচ্ছে করে আর কটা দিন থেকে যাই এখানেই।
(১৮) পুনাফোচু ধরে জং থেকে আরো পিছনে এগিয়ে গেলে চমৎকার একটা ঝুলন্ত লোহার ব্রীজ যার ওপাশে ভুটানী গ্রামগুলোকে দেখতে ছবির মতো সুন্দর।
(১৯) সেই ঝুলন্ত ব্রীজের পাশে দাড়িয়ে পুনাখা জং এর পেছনের অংশটাকে এমনি দেখায়।
(২০) পুনাখা জং দেখা শেষ করে এক সময় আমরা ছুটে চললাম আমাদের পরবর্তি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
১৮টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভিন
দুর্দান্ত সব ছবি। বর্ণনা ও চমৎকার।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, ভালো থাকুন, সব সময়।
নিতাই বাবু
১৯৯১ ইং সালের মাঝা-মাঝি সময়ে আমার এক বন্ধুর সাথে ভারত গিয়েছিলাম। কোলকাতা বাঘা যতিন কিছুদিন থেকে গিয়েছিলাম জলপাইগুড়ি জেলার ভুটান সংলগ্ন এলাকা বীরপাড়া। সেখানে আমার বড়দি’র বাড়ি। বড়দি’র বাড়ি থেকে ভুটানের গুমটু, ফুলসিলিং এবং সামসি এলাকা অল্পকিছুদূর। ভুটানের এই তিনটি এলাকা আমার জন্য ছিল স্বর্গ। আমি প্রতিদিন বিকালবেলা এক-এক এলাকায় ঘুরতে যেতাম। কিন্তু ভুটানের রাজধানী থিম্পু যাওয়া হয়নি।
এখন দুঃখ লাগে! তা হলো, তখনকার সময়ে এখনকার মতো হাতে হাতে মোবাইল ফোন ছিল না। যদি থাকতো, তাহলে কারোর মোবাইল দিয়ে হলেও, ভুটানের সেসব জাগার কিছু ছবি তুলে রাখা যেত। এখন আপনার এই পোস্ট দেখে সেসময়ে ভুটানে ঘুরাঘুরির কথা মনে পড়ে গেল। আপনার পোস্টে আপলোড করা ছবি দেখে আবারও সেখানে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এই জীবনে তা আর সম্ভব হবে না, শ্রদ্ধেয় দাদা।
কামাল উদ্দিন
আমি ভুটানে ঢুকেছি আপনার দিদির বাড়ির পাশ দিয়াই। অর্থাৎ ফুন্টলসিং দিয়াই আমি থিম্পু গিয়াছিলাম। প্রায় আট ঘন্টার পাহাড়ি আঁকাবাকা পথ, ওই পথটাকে বলাই যায় স্বর্গএ যাওয়ায় পথ…………..শুভ কামনা জানবেন দাদা।
নিতাই বাবু
ভারত থেকে বাই রোডে ভুটান যাতে দুটিমাত্র রাস্তা। একটি হলো সামচি ভুটান। আরেকটা হলো “ফুন্টসিলিং” যেটা সেখানকার মানুষের কাছে “ফুলসিলিং” নামে পরিচিত। আপনি হয়তো শিলিগুড়ি থেকে “সেবক” ব্রিজ পাড় হয়ে গৌহাটি মিজোরাম হাইওয়ে দিয়ে ফুলসিলিং গিয়েছিলেন। “সেবক” ব্রিজ থেকে একটি পাহাড়ি রাস্তা চলে গিয়েছে সিকিম। আর একটি গৌহাটি মিজোরাম। ভারত থেকে সিকিম যাবার রাস্তাও কিন্তু এই সেবক রোড। সিকিম যেতে হলে সেবক হয়েই যেতে হবে। আর আমার বোনের বাড়ি গৌহাটি মিজোরাম হাইওয়ের মাঝপথে চা বাগান ঘেরা “বীরপাড়া। আপনার পরবর্তী মন্তব্য আশা করছি।
কামাল উদ্দিন
খুব শীঘ্রই আমি সিকিম যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, হয়তো বীরপাড়া চা বাগান দেখেই যাবো
এস.জেড বাবু
আমার চোখে বেষ্ট ছবি ৯নং – ব্রিজের ভেতরটা-
যেন শিল্পীর তুলিতে জলরংয়ে আঁকা।
চমৎকার ছবি তোলার দক্ষতা আপনার।
সমৃদ্ধ জীবন কামনা করছি।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাই, আপনিও সুখে থাকুন, সব সময়
ছাইরাছ হেলাল
সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখলাম, দেখলাম।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ হেলাল ভাই, ভুটানের প্রকৃতি সত্যিই অনেক বেশী সুন্দর
আরজু মুক্তা
ওয়াও! প্রকৃতি রঙে ভরা।
কামাল উদ্দিন
শুভেচ্ছা জানবেন আপু
তৌহিদ
পুনাখা জং সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। চমৎকার সব ছবিতে অনেক ভাবে প্রকৃতিকে দেখলাম।
সুন্দর ভ্রমণ পোস্টের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
কামাল উদ্দিন
আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ তৌহিদ ভাই
জিসান শা ইকরাম
চমৎকার ছবি ব্লগ,
দেখার আগ্রহ জন্মেছে।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
সুন্দরের প্রতি আগ্রহ সবারই থাকে ভাই………..শুভ কামনা জানবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভুটান ভ্রমন করতে আজ ভালোই লাগলো। আপনি এভাবে ক্রমাগত লিখতে থাকলে বিশ্ব ভ্রমন ব্লগে বসেই করে নিতে পারবো। 🙂
ছবি নং-১৭,
দারুন! সব দেশের নদীর পানির রঙ যদিও দেখতে এক রকম হয়না, তবুও খুব আপন লাগে।
শুভ কামনা 🌹🌹
কামাল উদ্দিন
বিশ্ব ভ্রমণ করার ইচ্ছে আমার প্রবল, কিন্তু সীমাবদ্ধতা প্রচুর, তাই হয়তো 🙁