
প্রিয় নবীণা 💗
বৈরী আবহাওয়ায় এক ঝাঁক বিষন্নতা আচ্ছন্ন করে আছে মনের চার পাশ। আকাশের বুকে দলে দলে ভেসে যাচ্ছে মেঘের শাবক । হেমন্তের প্রান্তে সোনা ঝরা বৃষ্টি বাড়িয়ে যায় শীতের তাপর ।
প্রতিকুল আবহাওয়ায় স্থবির জনজীবন। বারান্দা বেয়ে জানালার ফাঁকে মৃদু সমীরণ এসে উষ্ণতায় দখল নিয়েছে চার দেয়াল।
একাকীত্বের প্রহর, উষ্ণতায় শিতল, ভাবনায় জেগে উঠে এক ঝাঁক স্মৃতির পালক।
তখন আমার স্কুল জীবন, বর্ষার এক অপরাহ্নে, ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরছিলাম । পথিমধ্যে বৃষ্টি নেমে এলো। বড়, মোটা আম গাছ দেখে তার ছায়ায় আশ্রয় নিলাম ।
বৃষ্টি ক্রমাগত বেড়েই চলছিল । আমার সর্বাঙ্গ ভিজে হিম হয়ে গিয়েছিলাম । থর থর করে মৃদু কাঁপছিলাম ও বটে ।
হঠাৎ বারো বছরের এক বালিকার মিষ্টি কন্ঠ শুনতে পেলাম । পিছন থেকে ডেকে আমায় একটা ছাতা বাড়িয়ে দিল, আমি নিলাম না । তারপর বলল ” ঘরে আসেন, এভাবে ভিজলে জ্বর আসবে “।
আমি তাও শুনলাম না । এক পা, দু পা করে হাঁটতে শুরু করে দিলাম, বাড়ির উদ্দ্যেশে ।
এর পর থেকে স্কুলে আসা যাওয়ার পথে দেখি, ঐ মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি তাকে চিনি না, জানি না, তবুও তার চোখে চোখ পড়লে, সংগোপনে টান অনুভব করি ।
এর বছর ছয়েক পর, এক বর্ষণ মুখর দুপুরে, তোমার হাত ধরে বৃষ্টির রিম ঝিম শুনছিলাম, । বৃষ্টির রিম ঝিমের সাথে তাল মিলিয়ে তুমি আবৃতি করতে শুরু করলে ঃ
বাদল ঝরা মধ্য দুপুরে
তোমার হাত ধরে উষ্ণতায়’ ভিজে
বার বার হারিয়ে ফেলি যেন
আমি নিজেকে নিজে । ”
আবৃতি শেষে মায়াবী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলে, আমার উৎসুক চোখে।
তারপর ভেজা ঠোটের উষ্ণতায় কেঁপে কেঁপে বললে ” ছয় বছর আগে এই বৃষ্টিই তোমাকে ভালবাসতে শিখিয়েছিল। তুমি ছাতা নাওনি, ঘরের ভেতর আসোনি, সেই দিনের সেই কষ্ট আজো অনুভব করি “।আজ তুমি পাশে নেই, তুমি কি জানো নবীণা ?
সেই থেকে আমি, তোমার পাশা পাশি বৃষ্টিকে ও ভালবেসে ফেলেছি । তুমি আর বৃষ্টি, অষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছো আমার জীবনে ।
তোমাকে হারালেও আমি, বৃষ্টিকে হারাইনি।
বৃষ্টির ঠোটে চুমো দিয়ে, আমি তোমার ঠোটের উষ্ণতা মাখি। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে আমি কবিতার খাতা খুলে বসি। অদৃশ্য কেউ যেন এখনো আমাকে গুন গুনিয়ে শুনিয়ে যায় ঃ
তুমি মোর বাতায়ন তলে
এক বার এসে দেখো হে প্রিয়
তব অনুরাগে কত সাড়া মোর
স্বপ্ন আর ভাবনায় ভাবনীয় “।বৃষ্টি শেষে এক রাশ বিষন্নতায় চার দেয়ালে খিল দেই । হয়ত ভাল আছি, নয়তো ভাল নেই, তুমি হীনা। তবুও তুমি ভাল থেকো, সব সময়, অনন্তকাল ।
আজ আর নয়।
শেষান্তে
তোমার সেকুল
১১টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভিন
তুমি আর বৃষ্টি, অষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছো আমার জীবনে ।
তোমাকে হারালেও আমি, বৃষ্টিকে হারাইনি।
বৃষ্টির ঠোটে চুমো দিয়ে, আমি তোমার ঠোটের উষ্ণতা মাখি।
ওয়াও চমৎকার
চিঠি পাঠে মুগ্ধতা অনিমেষ
কামরুল ইসলাম
ধন্যবাদ,
সুন্দর মন্তব্য করেছেন,
অনেক শুভ কামনা
জিসান শা ইকরাম
নবীণাকে হাড়িয়ে বৃষ্টিকে পেলেন!
ভালোই তো হয়েছে।
চিঠি ভাল লেগেছে ভাই,
শুভ কামনা।
কামরুল ইসলাম
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা ভাই
এস.জেড বাবু
এর পর থেকে স্কুলে আসা যাওয়ার পথে দেখি, ঐ মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি তাকে চিনি না, জানি না, তবুও তার চোখে চোখ পড়লে, সংগোপনে টান অনুভব করি ।
///
তুমি মোর বাতায়ন তলে
এক বার এসে দেখো হে প্রিয়
তব অনুরাগে কত সাড়া মোর
স্বপ্ন আর ভাবনায় ভাবনীয় “।
মুগ্ধকর চিঠি ভাইজান
সহজ সরল ভাষায় যথার্থ প্রকাশ।
দারুন লেগেছে।
কামরুল ইসলাম
ধন্যবাদ,
সুন্দর মন্তব্য করেছেন
অনেক শুভ কামনা
তৌহিদ
দারুণ একখান আবেগময় চিঠি পড়লাম ভাই। নবীনারা হাড়িয়ে গেলেও বৃষ্টি কিন্তু সবাইকে শীতল পরশে জড়িয়ে রাখে। তাতেই না হয় গা ভিজিয়ে নেব সবাই।
ভালো থাকবেন ভাই।
কামরুল ইসলাম
ধন্যবাদ,
সুন্দর মন্তব্য করেছেন ।
অনেক শুভ কামনা,
কামাল উদ্দিন
এক সময় প্রেম পত্রের বই ঘেটে এমন চিঠি লেখার চেষ্টা করতাম, লেখার পর সঠিক যায়গায় পাঠানোর টেনশনটাও কম ছিল না। সেই চিঠি পাঠানো অনেক নবীণারাই আমাদের জীবন থেকে হারিয়েছে, আপনার চিঠি মনকে নষ্ট্যালজিক করে দিল…………শুভ কামনা সব সময়।
কামরুল ইসলাম
ধন্যবাদ
সুন্দর বলেছেন।
অনেক শুভ কামনা
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও অনেক শুভ কামনা ভাইজান।