
“চুরিবিদ্যা বড় বিদ্যা, না পরিলে ধরা।”
সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গলো, “বাবা গো, মা গো” “আর করবার নং চুরি!” ( আর করবো না চুরি।) চোখ কচলাতে কচলাতে গিয়ে দেখি চোরকে গাছের সাথে বেঁধে পিটাচ্ছে। আমাদের পাড়ার সব চোরকে মারার জন্য যিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। সেই গাজী ব্যাপারী। মারের চোটে বেচারি পায়খানা, প্রসাব করে একাকার। চোর মসজিদের দান বাক্স খুলে টাকা নিয়েছিলো। কিন্তু বোকামি করলো, যখন মেঝেতে বসে গুণতে শুরু করলো। আরে, টাকা নিয়েছো, ভালো। পালিয়ে যাও।
প্রাচীন চৌষট্টি কলার মধ্যেকার একটি কলা যে চুরিবিদ্যা, এ কথা অবিদিত নয়। একটা জোকস আছে, চোর মধ্যরাতে ঘরে ঢুকে ‘বৌ’ এর কান থেকে গহণা নিয়ে গেছে। এখন বৌ কেমনে বলে, আমি তো জেগেইছিলাম। গহনা গেলো কোথায়?
বিটিভি তে একটা নাটক দেখেছিলাম। সে চরিত্রটি ছিলো বামুনের। কিন্তু চুরিবিদ্যায়য় নিজের দক্ষতা নিয়ে গর্ব করতে এবং কারারক্ষীররা তার কাছে কতটা অসহায়, তা নিয়ে মজা করতো। বলতো, ” আমি বিড়ালের মতো নিঃশব্দে ঘরে ঢুকে হরিণের মতো ঘর থেকে বের হয়ে যেতে পারি। চিলের মতো লক্ষ্যবস্তু ধরতে পারি। কুকুরের মতো ঘ্রাণশক্তি প্রখর আমার।”
প্রাচীন কালের বাংলা সাহিত্য এবং বিভিন্ন পালাগানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে “চোরবন্দনা”! সেখানে চোর শুধু দাগি আসামি নয়, বরং নানা প্রতিভার অধিকারি। আবার এই পেশায় কেউ শখে আসেনা, বরং আসে অসহায়ত্বের বশে। যেমন: চট্টগ্রাম ও নোয়াখালি অঞ্চলে প্রচলিত গীতিকা ‘কাফনচোরার’ নায়ক মনসুর চুরি করে সোজা বলে:
আমার কাফনচোরা নাম
দুনিয়াতে করি আমি
দাগবাজি কাম।।
নাহি অন্য পেশা আমার
চুরি করে খাই।”
ভিনদেশি চোরের প্রতিভায় সন্তুষ্ট হয়ে রাজারা নিজের কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন। এমন ঘটনাও কম নয়।
একলোক যশোর সীমান্ত দিয়ে প্রায়ই এদিক ওদিক যায়। ওখানকার কাস্টম অফিসার জিজ্ঞেস করলেই বলতো, “স্যার বালুর বস্তা।” কিন্তু স্যারের সন্দেহ যায়না। পরেরবার তাকে পরীক্ষা করে দেখেন আসলোই বালু। এর পরেও অফিসারের ঘুম হয়না। এভাবে ছমাস যাওয়ার পর। অফিসার বলে, নির্মল, চলো চা খাই। চা খেতে খেতে বললো, এই কাজের সাথে তো অনেকদিন ধরেই আছি আর তুমি যে কিছু একটা পাচার করো তা বুঝি। প্রমাণ পাইনা। তুমি যদি সত্য কথা বলো, তাহলে তোমাকে ধরবোনা। স্যার, আমি তো সাইকেল পাচার করি।
বোঝেন, চোরের বুদ্ধিমত্তা।
বাংলার চোরের খপ্পর থেকে রেহাই পাননি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। ১৯১৮ সালে তাঁর প্রিয় একটা ফাউন্টেন পেন চুরি হয়ে যায়। যদিও পুলিশ তা উদ্ধার করে, ফেরত দিয়েছিলো।
ডাকাতের চরিত্র একটু পুরুষাকার, একটু মহত্ত্ব আছে। রবিনহুড, বনহুর, কালোভ্রমর পড়ে, হিরোইজম সমন্ধে ধারণা জন্মায়।
আজও পত্রিকা খুললে, চোখ বুলালে দেখা যায় ” চোরকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে সমবেত জনতা। কিন্তু নাগরিক জীবনে বড় বড় ডাকাত পুঁজিবাজার, ব্যাংক, প্লেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া করছে — তাদের নাগাল কি পাচ্ছি?
প্রশ্নের উত্তর চোরের আড়ালে ঢাকা পরে যায়।
২৪টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রথম হাজিরা দিলাম।
অনেকদিন পর লেখা নিয়ে এলেন। আশেপাশে ঘুরে আসুন। কমেন্ট নিয়ে আসছি 🙂
সুরাইয়া পারভিন
চোরকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে সমবেত জনতা। কিন্তু নাগরিক জীবনে বড় বড় ডাকাত পুঁজিবাজার, ব্যাংক, প্লেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া করছে — তাদের নাগাল কি পাচ্ছি?
প্রশ্নের উত্তর চোরের আড়ালে ঢাকা পরে যায়
চমৎকার লিখেছেন।
আরজু মুক্তা
শুভেচ্ছা অবিরাম।
কামাল উদ্দিন
এখন চলছে পেয়াজ বাজারে পুকুর চুরি, তবে চোরের সাইকেল পাচারের গল্পটা অসাধারণ!
আরজু মুক্তা
হা হা। গল্পটা শুনেই এটা লিখেছি।
কামাল উদ্দিন
এমন আরো চাই
কামাল উদ্দিন
আপনার সাবলীল লেখায় চমৎকৃত আমি।
আরজু মুক্তা
শুকরিয়া
জিসান শা ইকরাম
আমরা ছোট চোরদের ধরে পিটাই।
আর বড় চোরদের সন্মান করি, তাদের জন্য ভি আই পি ব্যবস্থা। মসজিদের সামনের কাতারে তাদের স্থান দেই, তাদের সম্মর্ধনা দেই, মেডেল দেই।
ভালো লিখেছ৷
নিয়মিত এসো ব্লগে।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
ঠিক তাই।
এস.জেড বাবু
ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা চুরি হয়, সে প্রশ্ন ঢাকা পড়ে আছে নিত্যকার খবরের আড়ালে।
অসাধারণ লিখেছেন, কষ্ট হয় খুব- যখন দেখি পড়তে পড়তে চোর- বলা যায় চেইন অব চোর অন এভরি ষ্টেপ।
একটা পরিবর্তন আসুক- সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে নতুন কোন রবিনহুড আসুক।
আরজু মুক্তা
আসুক একজন রবিনহুড।
এস.জেড বাবু
একদিন না একদিন তেমন কেউ আসবেই।
ছাইরাছ হেলাল
হাজার কোটি টাকা যখন কোন ব্যাপার-ই না,
তখন আর এমন কুট্টি চোর নিয়ে জাতি কী করিবে!
নিয়মিত হন!
আরজু মুক্তা
ছোট চোরই তো বড় হয়।
তৌহিদ
জোচ্চরে ছেয়ে যাচ্ছে চারপাশ আর আমরা বধীরের ন্যয় সব দেখে যাচ্ছি। আগের দিনের চোরদের নাকি কিছুটা হলেও বিবেক ছিলো কিন্তু এখন প্রকাশ্যে যারা পুকুর চুরি করছে এরা হলো কুখ্যাত ডাকাত।
চোখে আঙুল দিয়ে বাস্তবতা দেখিয়ে দিলেন লেখায়। নিয়মিত আসুন ব্লগে।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ।
শুভকামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
চোরে চোরে মাসতুতো ভাই, কথাটি এমনি এমনি বলা হয়না। এক জন আরেক জনকে তখনি সম্মান দেয়, যখন সে অন্যজনের থেকে বেশি অভিজ্ঞ হয়। চোরদের বেলায়ও তাই। বড় চোর সালাম পায়, আর ছ্যাঁচড়া চোর পরেপরে মার খায়। ভালো লিখেছেন।
ব্লগে নিয়মিত হন। কমেন্ট করে ফার্স্ট হবার ইচ্ছেটা কি এখনো আছে?
শুভ কামনা 🌹🌹
আরজু মুক্তা
হুম, ফার্স্ট হওয়ার ইচ্ছে আছে। একটু ঝামেলা।
শুভকামনা, জানবেন।
কামাল উদ্দিন
গভীর রাতে শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল হাশেম আলীর। আলো জ্বালতেই দেখলেন একটা চোর পালিয়ে যাওয়ার চেয্টা করছে। হাশেম আলী পথ আটকাল।
– খবরদার, যা ভরেছিস সব রেখে তারপর যা।
– সব রাখব কেন? অর্ধেক জিনিস তো পাশের বাড়ির কুতুব আলীর।
আরজু মুক্তা
এটাই বাস্তব। সব চোর
সঞ্জয় মালাকার
চোরকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে সমবেত জনতা। কিন্তু নাগরিক জীবনে বড় বড় ডাকাত পুঁজিবাজার, ব্যাংক, প্লেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া করছে — তাদের নাগাল কি পাচ্ছি?
দিদি এসব ডিজিটাল চুর সরকার পালে তাইধরতে পারিনা।
ধন্যবাদ দিদি শুভ কামনা 🌹🌹
আরজু মুক্তা
দাদা, ঠিক। সরকার পালে। কিছু করার নেই।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
খুব মজা করে লিখেছেন। ভালো লাগলো।