
হিমুর ফোন বাজছে। দু-তিনবার বেজে উঠলো। আবার বাজতে শুরু করেছে। বাথরুমের কাছে গিয়ে বললাম হিমু, তোর ফোন বাজছে। হিমু প্রতিত্তোরে বললো – রিসিভ করে কথা বল।
ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সুশ্রী কন্ঠের আওয়াজ ভেসে আসলো। এতো সুন্দর নরম কন্ঠস্বরের নিরুত্তাপ আহবানে কিছুটা সময় স্তব্ধ বনে বন্য প্রাণীর ছবি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কি বলবো বুঝে ওঠার আগেই বললো – স্যার, আপনি কি হিমু সাহেব বলছেন?
হুমম, হিমু বলছি।
সুশ্রী বললো – স্যার, আপনার নামে একটি হলুদ খাম এসেছে। দয়া করে নিয়ে যাবেন।
ও আচ্ছা, আপনাদের ঠিকানাটা একটু বলবেন প্লিজ।
সুশ্রী বললো – অবশ্যই স্যার। কেন নয়। লিখুন…।
হিমু এসে গায়ে হাত দিলে আমি চমকে উঠি। কে কে বলে কিছুটা চিৎকার করেও উঠি। মনে হচ্ছিল কোন এক অজানা রঙ্গমঞ্চে রূপবতীর সাথে ভাবের আদানপ্রদান হচ্ছিল। কিন্তু হুট করে দিবাস্বপ্ন ভেঙে গেলো। ‘মানুষ দিবাস্বপ্ন দেখে’ কথাটি বিশ্বাস করিনি কখনো। কিন্তু আজ…।
কি রে কি হলো তোর?
না রে কিছু হয়নি।
হিমু – তাহলে এরকম ‘থ’ হয়ে বসে আছিস কেন?
এমনিতেই।
হিমু – কে কল দিয়েছিল রে?
কুরিয়ার সার্ভিস থেকে এক মেয়ে। তোর নামে নাকি একটি হলুদ খাম এসেছে। কিন্তু নাম ঠিকানা নেই।
হিমু – কি বলিস? আমার নামে আবার খাম পাঠাবে কে? তাও আবার নাম ছাড়া।
আমি কি জানি? চল বিকেল বেলায় হাঁটতে হাঁটতে নিয়ে আসবো।
হিমু – হুমম, ঠিকই বলেছিস।
তারপর থেকে ঘড়ির কাঁটা আর ঘুরছিলো না। বিকেল বিকেল করে বিকেলটায় আর আসছিলো না। বারবার ঘড়ির কাঁটার দিকে নজর দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে পড়ছিলাম। অসহ্য জ্বালাতনের জঞ্জাল ঝঞ্জাটে এই প্রথম রোগী।
কুরিয়ার সার্ভিসের মেয়েটি সুশ্রী কন্ঠের মতোই অপরুপ রূপবতী দেখতে। কন্ঠ আর রূপের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। নেই কোন তারতম্য কিংবা গড়মিল। প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ার উপক্রম। হিমুকে আস্তে করে বললাম – মেয়েটিকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। হিমু বললো – দাঁড়া ব্যবস্থা করছি।
টেবিলের উপর হলুদ খাম। পত্রটি হিমুর হাতে। ততক্ষণে হিমুর চোখের কোণে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়াগড়ি খাচ্ছিলো। পলক পড়লেই দুফোঁটা গড়িয়ে যাবে বুক অবধি। আঁকড়ে ধরে রাখা টা পুরোটাই অযোগ্য অধ্যায়। অবশেষে গড়িয়ে পড়লো। হিমুর পিছনে দাঁড়িয়ে বললাম – এটা কার পত্র রে?
হিমু – আমার গ্রামের সুহাসিনীর।
ও আচ্ছা।
হিমু – (নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে)।
তো এতোদিন পরে কেন?
হিমু – ও ফিরতে চাই। কিন্তু আমিতো নতুন…।
১৬টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আহা নাড়া দিয়ে যাওয়ার মত।
চলুক।
নৃ মাসুদ রানা
চলছে হিমু পরিবহনের গাড়ি…
জিসান শা ইকরাম
সুহাসিনীর ফিরে আসার দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে!
আহারে 🙁
হিমু ভালোই প্রভাব বিস্তার করেছে আপনাকে বুঝতে পারছি 🙂
শুভ কামনা।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয় কবিবর.. আসলেই।
এস.জেড বাবু
টেবিলের উপর হলুদ খাম। পত্রটি হিমুর হাতে। ততক্ষণে হিমুর চোখের কোণে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়াগড়ি খাচ্ছিলো। পলক পড়লেই দুফোঁটা গড়িয়ে যাবে বুক অবধি। আঁকড়ে ধরে রাখা টা পুরোটাই অযোগ্য অধ্যায়।
কি চমৎকার লিখেন- একদম যেমনটা চাই
চমৎকার এগুচ্ছে ভাইজান
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয় কবিবর, দোয়া করবেন যেন আরও বেশি বেশি লিখতে পারি।
এস.জেড বাবু
দোয়া ও শুভকামনা সবসময় ভাই।
নিতাই বাবু
“হিমুর হাতে হলুদ খাম” শিরোনামে গল্পটা পড়লাম! আমার খুব ভালো লেগেছে। শুভেচ্ছা জানবেন।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ কবিবর। আশাকরি পরবর্তী গল্পগুলোও পর্যায় ক্রমে পড়বেন।
নিতাই বাবু
অবশ্যই দাদা!
সুরাইয়া পারভিন
যদি ফিরে আসার হয় তবে সুহাসিনীরা দূরে যায় কেনো?
যখন দূরে যায় তখন ফিরতে চায় কেনো?
ভালো লেগেছে গল্পটি
নৃ মাসুদ রানা
এটাই করুণ নিয়তি..
আকবর হোসেন রবিন
ভাই আপনি তো হিমুর মধ্যে ডুবে গেছেন।
নৃ মাসুদ রানা
হুমম, ঠিকই বলেছেন
রুমন আশরাফ
ভাল লাগলো পড়ে।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ