বাংলা ভাষা

রুমন আশরাফ ১১ নভেম্বর ২০১৯, সোমবার, ১১:৫৩:২২পূর্বাহ্ন সাহিত্য ১৪ মন্তব্য

বাংলা ভাষার স্থায়িত্ব নিয়ে আমি বেশ সন্দিহান। দিনদিন বাংলা ভাষার উপর যেভাবে অহেতুক বল প্রয়োগ করা হচ্ছে তাতে এর স্থায়িত্ব কতদিন থাকবে তা বেশ চিন্তার বিষয়।

 

বাল্যকালে পাঠশালায় না গিয়ে যখন ঘরে বসে আদর্শলিপি পড়তাম, তখন বেশ কিছু বর্ণের সাথে পরিচিত ছিলাম, যেগুলোর অস্তিত্ব এখন আর নেই। , এবং বর্ণ সমূহ স্বরবর্ণ হতে বহু আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। বাংলা বর্ণমালায় একসময় ‘ক্ষ’ এর প্রচলন থাকলেও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তা বর্ণমালা হতে অপসারণ করেন। ক এবং ষ মিলে একত্রে ‘ক্ষ’ হয় বলে তিনি একে যুক্তবর্ণ হিসেবে অভিহিত করেন। অর্থাৎ বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী বাংলা বর্ণমালায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়। মানুষের সুবিধা এবং বানান ভুল হতে কিছুটা রক্ষার জন্যও এমন পরিবর্তন করা হয়। তবুও আমরা আজও ভুল করি। এমনকি ভুল লিখতেও ভুল করি।

 

২০১৭ সালে প্রথম শ্রেণীর জাতীয় পাঠ্য পুস্তকে বেশ কিছু ভুল ছিল। নতুন ছাত্রছাত্রীদের বছরটি শুরুই হয়েছিলো ভুলে ভরা বই হাতে নিয়ে। ভুল বানান সম্বলিত এমন পুস্তকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে কতটা লজ্জিত ছিল জানি না। তবে আমার কাছে ব্যাপারটি ছিল বেশ ঘৃণা এবং কষ্টের।

 

আমরা অনেকেই আমাদের সন্তানদের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য ইংরেজি মাধ্যমে পড়াই। ব্যাপারটিকে আমি নেতিবাচক হিসেবে দেখি না। কিন্তু ওদিকে যে আমার সন্তান উল্টাপাল্টা বাংলা বলা কিংবা লিখা শুরু করে দিয়েছে সেদিকে লক্ষ্য রাখি না। এদেশে গত ১০ বছরে কি পরিমাণ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বেড়েছে তা সহজেই আমরা অনুমান করতে পারি।

 

ইদানিং কিছুকিছু ইয়ো ইয়ো টাইপের ছেলেপুলেকে প্রায়ই দেখি, যারা কথায় কথায় ইংরেজি আওরায়। বাংলা ভাষাকে সেকেলে মনে করে। এদের মধ্যে আবার অনেকেই আছে যারা বাংলাকে ইংরেজির মতো করে বলে। আমি মনেমনে ভাবি, বাংলায় কথা বলতেই তোদের যে অবস্থা লিখতে বললে না জানি কি করবি!!

 

রাস্তাঘাট, দোকানপাট কিংবা আশেপাশে বাংলা বানানে ব্যাপক ভুল দেখি। সেদিন গেলাম প্রগতি সরণি। এই ‘সরণি’ বানান নিয়েও দেখলাম বিভিন্ন তামাশা। কোনও কোনও জায়গায় লেখা দেখলাম, সরনি, সরণী, স্বরনি এবং স্মরণী।

 

আমাদের সময়ে মেট্রিক কিংবা এস.এস.সি পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে ৬০/৭০ নম্বর পাওয়া বেশ দুরূহ ছিল। আর এখন বেশীরভাগ ছাত্রছাত্রীই শতকরা ৮০ নম্বর পায়। সবই সৃজনশীল পদ্ধতির অবদান! অথচ এদের মধ্যে অনেকেই ‘এ’ এবং ‘ত্র’ এর মধ্যে পার্থক্যই বোঝে না। আপনি যদি ওদের লিখতে বলেন, “পাঁচশত টাকা মাত্র”, ওরা লিখেবে, “পাঁচশত টাকা মাএ”। এদিকে আবার শুরু হয়েছে ‘ঈ’ এবং ‘ই’ নিয়ে হট্টগোল।

 

এত কিছুর পরেও এটাই প্রত্যাশা,

সঠিক বাংলা ভাষা টিকে থাকুক, এই মোদের আশা।

১৯৮০জন ১৮৫৩জন
0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ