ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। ইলিশ মূলত সামুদ্রিক মাছ। বাট প্রজননের সময় ইলিশ উজান ঠেলে লোনা পানি ছেড়ে মিঠাপানির নদীতে চলে আসে। ইলিশ যখন কনসিভ করে অর্থাৎ পেটে সদ্য ডিম আসে তখন ইলিশের গায়ে চর্বি জমে। অই সময়েই ইলিশ সবচেয়ে সুস্বাদু। যখন পেট ডিমে ভরে যায় তখন আস্তে আস্তে চর্বি কমে যায় আর ডিম ছাড়ার পর ইলিশের স্বাদ একেবারে কমে যায়। বেশ কয়েক বছর যাবত অপ্রাপ্ত বয়স্ক ইলিশের প্রেগন্যান্ট হওয়ার হার বেড়ে গেছে। জাটকা অবস্থাতেই পেট বাঝিয়ে কেলেংকারী অবস্থা!!!
কিছু ইলিশ চামে চামে বেশ বড় সাইজ হয়ে যায়। সেগুলো দেখতেই লোভনীয়, খেতে অত সুস্বাদু না। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি ৮০০-১২০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ সব দিক দিয়ে পারফেক্ট। এর চেয়ে ছোট বা এর চেয়ে বড় হলেই স্বাদ কম হবে। ইয়োরোপ আমেরিকানরা ইলিশ খায় না বললেই চলে। তবে প্রবাসী বাঙালীরা খায়। ফলে সারা বিশ্বেই ইলিশ কিনতে পাওয়া যায় বাজারে।
পদ্মায় ডিম ছেড়ে অবেক ইলিশ আরো উত্তরে যেতে যেতে গংগায় চলে যায়। সেই ইলিশে কোন স্বাদই নাই। তাই কলকাতার লোকজন এদেশের নদীর ইলিশ পছন্দ করে।
ইলিশের বিচরণ শুধু বঙ্গোপসাগরেই নয়। ভারত মহাসাগর, পারস্য উপসাগর, দক্ষিণ চীন সাগর, জাভা সাগর, টনকিন উপসাগর, পশ্চিম ও মধ্য প্রশান্ত মহাসাগর এবং এইসব এলাকার নদ-নদী ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র। সারা বিশ্ব সাঁতরে বেড়ায় ইলিশ। তবে বাংলাদেশেই ইলিশের বিচরণ সবচেয়ে বেশি এবং ধরাও পড়ে বেশি।
অভিজাত শ্রেণীর রেস্টুরেন্টে ইলিশের অই কালো অংশটা বাদ দিয়ে পরিবেশন করা হয়। অইটাকে আমরা বলতাম “হরিনের মাংশ”! সম্প্রতি সত্যিকারের হরিণের মাংশ(বিদেশ থেকে আনা) খেয়ে আমার আশৈশব এই বিশ্বাস ভেঙে যায়। হরিণের মাংস অখাদ্য!!!
বাংলাদেশ বিজ্ঞান গবেষণা ইন্সটিটিউট একবার টিনজাত ইলিশ এর সিস্টেম করেছিলেন যা মার্কেট পায়নি।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের ইলিশের উপর একটা বই আছে যাতে ১০০ টা রেসিপি আছে ইলিশের।
সমুদ্রের ইলিশ কিছুটা লম্বাটে আর নদীর ইলিশ কিছুটা গোলাকার (চ্যাপ্টা) হয়।
কিছু বদমাইশ সার্ডিন মাছকে বাচ্চা ইলিশ বলে বিক্রি করছে।
ইলিশ এমন একটা মাছ যা স্রেফ লবন দিয়ে সেদ্ধ করে দিলেও খেতে উপাদেয়।
আমার খাওয়া ইলিশের কিছু আইটেম বলি-
১) সাদা ইলিশ (শুধু প্রচুর পেয়াজ আর কাচা মরিচ দিয়ে রান্না)
২) শর্ষে ইলিশ
৩) কাচা কলা দিয়ে ইলিশ
৪) বেগুন দিয়ে ইলিশের ঝোল
৫) ইলিশ ভাজা
৬) ইলিশের মাথা দিয়ে কচুশাক
৭) ইলিশের দোপেয়াজি
৮) ইলিশের ডিম ভাজা ও রান্না
৯) ইলিশ ভর্তা
১০) নোনা ইলিশ
১১) কচু দিয়ে ইলিশ
১২) ইলিশ খিচুরি
১৩) ইলিশ পোলাও
১৪) কলাপাতা ইলিশ
উইকি কী বলে ইলিশ নিয়ে-
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
---|---|
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | Chordata |
শ্রেণী: | Actinopterygii |
বর্গ: | Clupeiformes |
পরিবার: | Clupeidae |
উপপরিবার: | Alosinae |
গণ: | Tenualosa |
প্রজাতি: | T. ilisha |
দ্বিপদী নাম | |
Tanualosa ilisha (F. Hamilton, 1822) |
বাংলা ভাষা, ভারতের আসাম এর ভাষায় ‘ইলিশ’ শব্দটি পাওয়া যায় এবং তেলেগু ভাষায় ইলিশকে পোলাসা (তেলুগু: పులస Pulasa বা Polasa) আখ্যায়িত করা হয়। পাকিস্তানের সিন্ধ ভাষায় বলা হয় পাল্লু মাছি (সিন্ধু: پلو مڇي Pallu Machhi), ওড়িয়া ভাষায় ইলিশী (ওড়িয়া: ଇଲିଶି Ilishii) গুজরাটে ইলিশ মাছ মোদেন (স্ত্রী) বা পালভা (পুরুষ) নামে পরিচিত। ইলিশ অর্থনৈতিক ভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ গ্রীষ্মমন্ডলীয় মাছ। বঙ্গোপসাগরের ব-দ্বীপাঞ্চল, পদ্মা–মেঘনা–যমুনা নদীর মোহনার হাওর থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা হয়। এটি সামুদ্রিক মাছ কিন্তু এই মাছ বড় নদীতে ডিম দেয়। ডিম ফুটে গেলে ও বাচ্চা বড় হলে (যাকে বাংলায় বলে জাটকা) ইলিশ মাছ সাগরে ফিরে যায়। সাগরে ফিরে যাবার পথে জেলেরা এই মাছ ধরে। এই মাছের অনেক ছোট ছোট কাটা রয়েছে তাই খুব সাবধানে খেতে হয়।[২]
যদিও ইলিশ লবণাক্ত জলের মাছ বা সামুদ্রিক মাছ, বেশিরভাগ সময় সে সাগরে থাকে কিন্তু বংশবিস্তারের জন্য প্রায় ১২০০ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে ভারতীয় উপমহাদেশে নদীতে পাড়ি জমায়। বাংলাদেশে নদীর সাধারণ দূরত্ব ৫০ কিমি থেকে ১০০ কিমি। ইলিশ প্রধানত বাংলাদেশের পদ্মা (গঙ্গার কিছু অংশ), মেঘনা (ব্রহ্মপুত্রের কিছু অংশ) এবং গোদাবরী নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
এতকাল জানা ছিল পদ্মার ইলিশই স্বাদে গন্ধে সেরা। বাঙালীর খাওয়া দাওয়া গ্রন্থে এই কথাটিকে চমকে দিয়েছেন লেখক শংকর। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান শেফ বিক্রমপুরের ছেলে আব্রাহাম গ্য ক্রুজের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, পদ্মার ইলিশের স্বাদকে যত সেরাই বলা হোক বাস্তবে সেরা স্বাদ টাইগ্রিস নদীর ইলিশের।
প্রতিবছর মার্চ এপ্রিলে ২০/২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরা নিষেধ থাকে। তখন কিছু অসাধু জেলে ইলিশ ধরে গোপনে বিক্রি করে কিছু অসভ্য কাস্টমারের কাছে।
সবার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়টায় ইলিশ কিনবেন না দাম যত কমই হোক। মুখে দেশপ্রেমের আলগা বুলি না দিয়ে কাজে দেখান আপনি দেশকে কতটা ভালোবাসেন।
১লা বৈশাখ পরে অই নিষেধাজ্ঞার সময়কালের মধ্যে।
অই দিন ইলিশ পান্তা বর্জন করুন। দেশের গোয়া মেরে দেশের “হাজার বছরের ” বানাইন্না ঐতিহ্য পালন করার কোন দরকার নাই!!!
২২টি মন্তব্য
নিতাই বাবু
বর্তমানে বাংলার ইলিশ নিয়ে প্রচুর গবেষণা-সহ আলোচনাও হচ্ছে। যা এক সময়ে তা ছিল না। একসময় আমাদের দেশের ইলিশ ভারত কিম্বা অন্যসব দেশে যেতো না। আমাদের দেশের ইলিশ, আমাদের দেশেই থেকে যেতো। তাই সেসময় আমরা এই ইলিশ মাছ খেতে ভয়ও পেতাম! দুই-তিন দিন একনাগাড়ে যদি কেউ বা কোনও পরিবার ইলিশ মাছ খেতো, তাহলে সেসময় ওই পরিবারের অনেকেরই কলেরা হয়ে যেতো। তাই তখনকার সময়ে এ-দেশের মানুষ খুব কম করে ইলিশ খেতো। এই তো সে-দিনের কথা, ১৯৯৮ সালের বন্যার ভয়াবহতার সময় কোনও কোনও জায়গায় বন্যার্তদের মাঝে ইলিশ মাছও বিতরণ করেছিল। এর কারণ ছিল, এতো ইলিশ মাছ শেষ করাই ছিল একমাত্র কারণ! আজ সেই ইলিশে কতরকমের বাহারি আয়োজন। সব মিলিয়ে এটি আমাদের দেশেরই গৌরব। ইলিশের জয় হোক। দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হোক এটাই চাই।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়।
শিপু ভাই
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ
ইঞ্জা
চমৎকার ইলিশ পোস্ট, বাংলাদেশ ও কলকাতা তথা পশ্চিম বঙ্গের ঘরে ঘরে এই ইলিশ খুবই পছন্দের এক মাছ, বিভিন্ন ধরণের ভাবে এই মাছ খাওয়া হয়, কাঁটার কারণে আমি অবশ্য এর পেটি ও ডিম পছন্দ করি।
তথ্যবহুল লেখাটির জন্য ধন্যবাদ ভাই।
শিপু ভাই
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা ভাই
বন্যা লিপি
ইলিশের গবেষণা মূলক, নান্দনিক ভাষার ব্যাবহারে চমৎকার লেখা।
আমার ছোটবেলাতে যখন দেখতাম আব্বা উজ্বল চোখ মুখ নিয়ে বাজার থেকে ফিরতেন! ধরেই নিতাম চটের ব্যাগে সুগন্ধা নদীর ইলিশ আছে। আম্মার চোখও খুশিতে ঝলসে উঠতো ।
ইলিশ এমনই এক মাছ, আমার আম্মার ভাষায় প্রতিদিন খেলেও রুচিতে বাঁধবে না। আপনার পছন্দের তালিকা বোধ করি বাঙালি পরিবারের সবারই মিলে যাবে।
তবে ইলিশ সংকটের এই মহা নিদান কালে আপনার মতের সাথে শতভাগ একমত।পথে যেতে যেতে যখন দেখি ইলিশের বাচ্চা (জাটকা) বিক্রি করার জন্য টুকরি সাজিয়ে বসতে! রাগ লাগে প্রচন্ড। উপায় থাকলে আমি যেন নিজে এদের সাজা দেই!
আর ঐ যে বললেন! বৈশাখ মাসের পয়লাদিনের ইলিশ খাওয়ার “বানাইন্না”রিতী’র কথা! রাগে শরীর রি রি করে আমার……. দাম যতই থাকুক, যেন কিনতেই হবে… নাহলে বৈশাখ মাস গোস্বা করবে বাংলায় আসতে।
শিপু ভাই
আমারো সেম ফিলিংস! খুব রাগ লাগে
জিসান শা ইকরাম
আমার সবচেয়ে প্রিয় মাছ ইলিশ সম্পর্কে জানলাম বেশ কিছু তথ্য।
ইলিশের যত রেসিপি আছে, আমার কাছে সেরা হচ্ছে কাচা কলা দিয়ে ইলিশ
এর মত স্বাদ আমি অন্য কিছুতে পাইনা।
বাস্তবে সেরা স্বাদ টাইগ্রিস নদীর ইলিশের! এই তথ্যটা জানা ছিলো না।
ধন্যবাদ এমন লেখার জন্য।
নিয়মিত লেখা চাই,
শুভ কামনা।
শিপু ভাই
ইলিশের সব আইটেমই প্রিয় আমার।
ধন্যবাদ মামা।
চেস্টা করছি একটু নিয়মিত হওয়ার।
জিসান শা ইকরাম
ইলিশ ধরা এখন বন্ধ, তারপরেও কিছু খবিশ, স্বার্থপর, অমানুষ রাতের আঁধারে ইলিশ মাছ ধরে।
এদের কিছু যদি ক্রস ফায়ারে মারা যেত তাহলে এটি বন্ধ হতো।
আমাদের এলাকায় জেলেরা আর নদীতে নামে না, কিছু বাজে লোক জেলেদের নৌকা ভাড়া নিয়ে রাতে মাছ ধরে। প্রতি রাতের জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দেয়া লাগে কর্তা ব্যাক্তিদের।
শিপু ভাই
পুলিশদের মেরে তাড়িয়ে দিচ্ছে কিছু কিছু জায়গায়
নাজমুল হুদা
বড়ু চন্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
আর শিপু ভাইয়ের ইলিশকীর্তন।
ইলিশ মাছের ঘ্রাণ অন্যরকম। আমার সবচেয়ে ইলিশ ভাজা আর ডিম ভুনা অনেক প্রিয় !
শিপু ভাই
এখন কোন ভাজা ভুনা চলবে না। 🤣🤣
নাজমুল হুদা
কেন চলতো না 🙊😀
তৌহিদ
বাহ! ইলিশ নিয়ে অনেক কিছু জানলাম আপনার লেখার মাধ্যমে। তবে আমি ইলিশ খুব একটা খেতে পারিনা। ভেজে দিলে খাই।
শিপু ভাই
আমি ইলিশের সব পদই খাই
সাবিনা ইয়াসমিন
আমার প্রিয় প্রিয়তম মাছ নিয়ে লিখেছেন!
অনেক অনেক ভালো লেগেছে বিস্তারিত লেখাটি।
ইলিশ পোলাউ! মাই লাভ 😍😍
শুভ কামনা 🌹🌹
শিপু ভাই
দাওয়াত দিয়েন
চাটিগাঁ থেকে বাহার
ইলিশ বৃত্তান্ত ভালই লিখেছেন।
যেভাবে কচি কচি ইলিশেরা পেঠে ডিম ধারণ করে তাতে মনে হয়ে ইদানীং ইলিশ সমাজে বাল্য বিবাহের প্রচলন হয়েছে!! (হাসির ইমো ক্যাম্নে দিতাম!)
শিপু ভাই
চরিত্র খারাপ হয়ে গেছে অল্প বয়সী ইলিশগুলার
আরজু মুক্তা
ইলিশের মুড়িঘণ্ট।
ভালোই লাগলো। জানলাম অনেক কিছু, স্বাদও নিলাম।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ 🙂