আজম সাহেব খুবই কষ্ট পাচ্ছেন।মানুষ কেমন যান্ত্রিক হয়ে গেল।ঘরে বসেই সব কিছুই অনায়াসেই পাচ্ছেন,পকেটেই থাকে দুনিয়ার সব তথ্য ভন্ডার তাই তার একটু লোভ হলো অন লাইন জগৎটাকে একটু চেখে দেখবার।পাশেই ছিলো তার একটি কম্পিউটার।ইউজ না করার কারনে ধূলো বালি পড়ে ছিলো। তা নিজেই একটু একটু ফু দিয়ে পরিষ্কার করে তা চালু করলেন।যেহেতু শিক্ষিত তাই ওটা চালাতে তার কোন সমস্যা হলো না।
পাচ বছর পর
এ পাচঁটি বছরে সে বদলেনি একটুও বদলে গেছে তার চির শত্রু ফেবুক জ্বরের প্রতি আসক্তির হাওয়া,বলা যায় স্বামী স্ত্রী সমান তালে প্রায় প্রতিযোগিতার বন্ধু বান্ধুবী সংখ্যা বাড়াতে থাকেন।এর মধ্যে তার গ্রুপিংয়ে আছে দেশের সুনাম ধন্য মাটি ও মানুষের কথা বলে তার অনলাইন জন্ম ভুমি ব্লগ সোনেলা ব্লগ, সোনেলা দিগন্তে জল সিড়িঁর ধারে” আরো আছে মানবতার হাত ছানি দিয়ে মুক্ত বিহঙ্গে স্বাধীন ভাবে উড়ে চলা এক রঙ্গা এক ঘুড়ি,জল ছবি প্রকাশন কুড়েঁঘর প্রকাশনী,আগামীর জন্য আমরা,, রঙধনু সাহিত্য গ্রুপ,দুর্জয় বাংলা,,নক্ষত্র ব্লগ,সামু,আমরা ব্লগার,দাড়িকমা প্রকাশনী। আছে কিছু প্রিয় মানুষের মুখ -{@ হেলাল৴জিসান ভাইয়া,ভুমিহীন,নীল দাদা,পাশা ভাই,নাসির আহম্মেদ কাবুল,শফিকুল ইসলাম কহিনুর,শিপু ভাই,সবুজ ভাই,ইঞ্জা ভাই,সৈয়দ আলীউল আমিন, নীল কণ্ঠ জয়,জায়েদ হোসেন লাকী,ম্যাক্স তামিম,রুদ্রা আমিন,অনিমেস রহমান,শামিম রহমান আবির,শওকাত মিথুন,মজিবর ভাই,নিতাই দাদা,দীপ মাহমুদ,সঞ্চয় কুমার,হামিদ আহসান,আহম্মেদ রব্বানী,সোহেল আহম্মেদ,,শহিদুল হক,চারু হক,আনিস,ব্লগার সজীব,তরিকুল ইসলাম,,সাইদ মিল্টন,বায়রিক শুভ্রা আবুল কালাম আজাদ,আহমেদ ইশতিয়াক,পার্থসারথি বসু –সে যদিও ভারতীয় কলকাতার বাংলাদেশের প্রতি রয়েছে তার অনন্য ভালবাসা।এই পাচ বছরে আরো অনেক বন্ধুই এড হয়েছিলো তার মধ্যে যা তৎক্ষণাত মনে এসেছে তাই বলা হলো,তবে তারা প্রত্যকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।এমন সব বন্ধুদের সাথী করে প্রত্যাহ ফেবুকিং ব্যাস্ততায় কাটছে তার সময়,মাঝে মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন।এর মধ্যে ছদ্ম নাম ও নকল ছবিওয়ালা আইডি সে বয়কট করে চলেন।তার বোধগম্য হয় না যদি সত্যি কথাই লিখি তবে কেনো এতো ভয়।ফেবুক তার ভাল লাগে কারন এখানে উঠে অন্যায়ের প্রতিবাদের ঝড় এবং নিত্য নতুন খবর পাওয়া যায় যা অনেক সময় অন লাইন সংবাদ পত্রের আগেই জানা যায়।খারাপ লাগে যখন একটি প্রতিষ্ঠিত অন লাইন পত্রিকায় মিথ্যে খবর প্রকাশ করেন।অফিসের কাজ শেষ করে বাড়ীর পথে রওয়ানা দিলেন আজম সাহেব।
আজম সাহেবের বিশাল বাড়ী তবে দুতলা বিশিষ্ট।ড্রইং রুমের ভিতরে সিড়ি দিয়ে দুতলায় যেতে হয়।ছেলে এক জন সবে মাত্র ক্লাশ নাইনে আর দুই মেয়ে যাদের এক জন মৌ কলেজ ফাষ্ট ইয়ারে আর এক জন সুমী ল কলেজে অনার্স পড়ছেন।তার এই দুই মেয়েও মা বাবার মতো ফেবুকার।মৌ ফেবুকে পরিচয় হয়ে এক ছেলের সাথে অদেখা প্রেম করে চলছেন দীর্ঘ দিন।মা কিছুটা টের পেলেও বাবা এর কিছুই জানেন না।
বাসায় ঢুকেই আজম সাহেব তার স্ত্রী ও ছোট মেয়ে মৌকে বাসায় ড্রইং রুমে পেয়ে বেশ অবাক হলেন,যাদের সময় নেই বাসায় সময় দেবার তারাই এ অবেলায় বাসায়।তবে মা মেয়ে এমন চুপ চাপ যে দুজন দুদিকে মুখ করে বসে আছেন যা আজম সাহেবকে ভাবায়।
-কি খবর তোমরা এ সময় বাসায়।
কেউ কোন কথা বলছেন না।আজম সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তার চোখে অস্পষ্ট জল।সে মেয়ের দিকে এগুলেন।
-কি মা মণি মন খারাপ।
আজম সাহেব মেয়ের পাশে বসতেই মেয়ে মুখ কালো করে উঠে চলে গেলেন দুতলায়।অবাক হলেও আজম সাহেব উঠে দাড়িয়ে কোট টাই খুলতে খুলতে তার ওয়াইফকে জিজ্ঞাসা করলেন।
-কি ব্যাপার বলোত!কিছু হয়েছে নাকি….মৌ এভাবে উঠে চলে গেল যে?
-কি আর হবে,,,মান সন্মান বুঝি সবিই গেলো।
আজম সাহেব তার ওয়াইফের পাশে চিন্তিত মনে বসলেন।
-মানে?খোলে বলো।
-আমি কিছু জানি না তুমি তোমার মেয়েকে জিজ্ঞাসা করো?
-এটা কোন কথা হলো!মেয়ে তোমাকে যতটা সহজে যতটা ক্লিয়ার বলবে আমাকে কি সেই ভাবে বলবে?
-ঐ ফেবুকে একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক করেছে।দীর্ঘ দিন ধরেই.. গত পরশু ঐ ছেলেটার সাথে দেখা করতে গিয়ে ব্লাক মেইলের ধান্দায় পড়েছে।
-মানে!
-মানে আবার কি ছেলেটা এখন পাচ লাখ টাকা চাচ্ছে নতুবা…।
-নতুবা কি?
-নতুবা ছেলেটা বলছে তোমার মেয়ের কি যেনো কি ওর কাছে আছে তা মিডিয়ায় প্রকাশ করে দিবে।
আজম সাহেব বেচারা এতো কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে এতো দুর মানে সমাজের একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তিদের স্থানে এসেছেন আর তারই মেয়ে….না আজম সাহেব আর কিছু ভাবতে পারছেন না।ওয়াইফকে শাসাচ্ছেন।
-এই তোমার জন্য মেয়েটা আজ বিপদে দিকে গেছে।কত করে তোমাকে বললাম সংসারের দিকে খেয়াল দাও।ছেলে মেয়েরা কখন কি করছে তা লক্ষ্য রাখো।কৈ কে শুনে কার কথা।এবার হলোতো!তা এবার ফেবুকে স্ট্যাটাস দাও!নাকি এটাও ফেবুককে জানিয়ে দিয়েছো?
ক্ষোভ জিদে মন ভিষিয়ে উঠে।আজম তৎক্ষনাত তার রুমে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে চিন্তায় মগ্ন যে ভাবে হউক এ বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে কিন্তু কি ভাবে?ঘরের কম্পিউটারটি ওপেন করে ফেবুকে কি যেন খোজতে থাকেন।এক সময় পেয়ে গেলেন।তার বাল্যকালের এক বন্ধুর খোজ পেলেন পেশা ঘাটতে গিয়ে দেখলেন অন্য থানার বড় দারোগা।দুহাত উচু করে ইউরেকা বলে আজম সাহেব চিৎকার করে উঠেন।তার রুমে ঢুকে তা দেখে একটু ভয়ার্ত মনে তার ওয়াইফ জিজ্ঞাসা করলেন।
-কি হলো তুমি হঠাৎ এমন করলে যে….।
-বসো….আজম সাহেব সেই পুলিশ অফিসারের সাথে চ্যাটিংয়ে গেলেন।ভাগ্য ভাল বন্ধুকে অনলাইনেই পেলেন।চ্যাটিংয়ে পরিচয় হয় উভয় খুশিতে আটখানা বহু দিন পর ক্লোজ বন্ধুর খোজ পেলেন।তার পর আজম সাহেব তার সমস্যার কথা বুঝিয়ে বলাতে বন্ধুর উত্তর আসে।
-টাকা আছে?
-অবশ্যই কত লাগবে?
-আরে সালা আমার জন্য নয় যেই ছেলেটা ব্লাক মেইল করেছে তাকে দিবো।
-কি বলিস তুই,টাকা দিয়ে দিলেতো আর তোর লাগবে না।
-তাই!যদি ছেলেটা টাকা নিয়েও ঐ ভিডিওটি না দেয় তখন কি করবি?
-তাইতো! আমার মাথা ঠিক নাইরে তুই যা ভাল মনে করিস কর।
-ঠিক আছে তবে আমিতো তোর থানার না প্রথমে তোর থানার যিনি আছেন তার সাথে কথা বলে আমি সব ব্যাবস্থা করছি।তুই কেবল ঐ ছেলেটা কবে কখন কোথায় টাকগুলো নিতে আসবে তা জানাবি বাকী কাজ আমি করব ওকে।আর একটি কথা ছেলেটি যেনো জানতে না পারে আমাদের এ প্লানের কথা।প্লানটা কি জানো?আমি তোর মেয়ের বাপ হয়ে টাকা দিতে যাবো,ঠিক আছে তবে এক্ষুণি আমাকে কনফার্ম করো ছেলেটি তোমাকে চিনে কি না
তার ওয়াইফকে ডাক দিতে বলল মৌকে।মৌ তৎক্ষণাত এলে জিজ্ঞাস করে জানতে পারলেন যে না’ ছেলেটি আজম সাহেবকে চিনেন না।কারন মেয়ের সাথে দীর্ঘদিন কেবল ফেবুকেই যোগাযোগ হয়েছিলো।অঘটন যা হয়েছে তা প্রথম সাক্ষাতেই হয়েছে।
-তাহলে ঐ কথাই রইল।
-ওকে…ধন্যবাদ দোস্ত…তুই বাচাইলি আমারে।
আজম সাহেব চ্যাটিং বন্ধ করে এক বার মেয়ের দিকে তাকালেন।মেয়ে মাথা নীচু করে আছেন।
-আয় এখানে বস্।
মেয়েকে ডাক দিয়ে তার পাশের চেয়ারটিতে বসতে বললেন, সে কাদো কাদো নয়নে বাবার সামনে বসলো। বাবা দাড়িয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মেয়েকে শান্তনা দিয়ে নিজের চোখের দু’ফোটা জলও ফেললেন।এ সমাজে যাদের ঘরে মেয়ে আছে তাদের চোখে ঘুম নেই,নেই শান্তি চিত্তে;মনে হয় এ সমাজে মেয়ে হয়ে জন্মানোটাই আজন্মের পাপ।
-ভাবিস না মা,সব ঠিক হয়ে যাবে।
তিন দিন পর
আজম সাহেব ছেলেটির নিকট থেকে এরই মধ্যে ঠায় ঠিকানা কালেক্ট করলেন তার মেয়ের মোবাইলে মেয়ের মাধ্যমে কথা বলে।ছেলেটির সাথে কথা হলো সাক্ষাৎ হবে কেবল টাকা’ আজম সাহেব এবং তার মেয়ে মৌ,এছাড়া অন্য কেউ যেন না জানে সে ব্যাপারে বেশ সতর্ক করে দিলেন ছেলেটি।বলা বাহুল্য এর মধ্যে আজম সাহেবের ব্যাবহৃত পুরো পরিবারে মোবাইলের লিংক সংযোগ ছিলো থানার টেলিকমিনিকেশনের সাথে।তাদের সব কথাই পুলিশ লিংক সংযোগে জানতে পারেন এবং প্লানিং মতো আজম সাহেবের বন্ধু পুলিশ অফিসার,সে মৌয়ের পিতা সেজা টাকার ব্যাগটি নিয়ে নিদিষ্ট স্থানে পৌছেন।পুলিশ অফিসার তার পরনের কোর্টের এক অংশে স্যাটেলাইট সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে যা দিয়ে থানার কন্ট্রোল রুমেও টিভিতে সহজেই ঘনটনার পরিস্থিতি বুঝতে পারবেন এবং সেই সাথে যে কোন অপরাধী ধরতে কমান্ড প্রয়োগ করতে পারবেন অপারেসনস কর্মকর্তারা।পুলিশের বিশেষ অভিযানে বন্ধু পুলিশের তত্বাবধানে ছেলেটি এক সময় ধরা পড়লো।
মেয়েকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়ে আজম সাহেব বন্ধুর সাথে হাসতে হাসতে চলে গেলেন কোন এক আড্ডাস্থলের দিকে।চলার পথে পুলিশ বন্ধু আজম সাহেবকে আবারো বিচলিত করলেন।
-দোস্ত এবার না হয় তোমার মেয়ে বেচে গেলো কিন্তু তুমি বাচবে কি করে?
বিষ্ময়ে হঠাৎ দাড়িয়ে পড়লেন আজম সাহেব।
-তার মানে?
-তুমি তোমার ফেবুকে রাষ্ট্র বিরোধী লেখা পোষ্ট করায় ৫৭ ধারায় তোমাকে গ্রেফতার করবেন তোমার থানার দারোগা।
-হা হা হা বন্ধু বোধ হয় জানো না আমি এখন তুখোর ফেবুকার।সব খবরই আমার জানা আছে বন্ধু।তোমরা ফেসে গেছো..হা হা হা এখন ৫৭ ধারায় কাউকে গ্রেফতার করতে হলে পুলিশ হেড কোয়ার্টারের পূর্ব অনুমতি নিতে হবে হা হা হা বুঝলে।
-ঠিকই বলেছো বন্ধু,আমরা ফেসে গেছি ফেসে যাই;কখনো আইনের মারপ্যাচে কখনো বা রাজনৈতিক নেতাদের হুকুমে।
কথার সমুদ্রে ডুবে যায় বেলা নতুন আশায় নতুন ভাবে চলায় একটি নতুন ভোঁরের অপেক্ষায়।
গল্পে পূর্বঅনুমতি ব্যাতিত অনেকের ফেবুক আইডি যোগ করা হয়েছে।সে জন্য দুঃখিত।
ছবি ও তথ্য : অনলাইন।
৫টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
মনির ভাই, সমসাময়িক ঘটনার দুর্ঘটনার সার্বিক চিত্র তুল ধরেছেন। ফেবু সব ঠিক কিন্তু আমাদের ন্যাচার খারাপ আর তাঁর জন্য আমরাই ভ্যগি। ধন্যবাদ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ঠিক বলছেন।ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
সরি হবে ভুগি ।
নিতাই বাবু
মনির দাদা নমস্কার গ্রহণ করবেন। দাদা, ফেসবুক নিয়ে সমসাময়িক পোস্টখানা খুবই গুরুত্ব বহন করে। দাদা, আমি নিজেই আজ কিছুদিন যাবত ফেসবুক ডিএক্টিভেট করে রেখেছি। বিরক্ত লাগে, যখন দেখি দেশের স্বনামধন্য ব্যক্তিরা ফেসবুকে কারণে অকারণে সময় অসময়ে নানারকম ছবি, নানারকম স্ট্যাটাস আপলোড করে। খারাপ লাগে! খুবই খারাপ লাগে!
শুন্য শুন্যালয়
ইন্টারনেটের নেশায় বুদ হয়ে গেছে সবাই। ফেসবুক বন্ধ করে দিলেও আর লাভ হবে বলে মনেহয় না। জেনেশুনেও সবাই তলিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন।