
সিলেটে ৪-৫ টা জঙ্গি ধরতে এতো সময় লাগছে কেন? আমাদের আর্মি এতো দূর্বল কেন? এতো কোটি কোটি টাকা দিয়ে আর্মি রেখে কি লাভ? হাজার কোটি টাকা বাজেট দিয়ে কি লাভ? চার পাচ টা জঙ্গিকে যদি চারদিনেও ধরতে না পারে? ;?
ফেসবুকে অনেককেই এইরকম অভিযোগ করতে দেখলাম। স্বাভাবিক, আমরা বাংলাদেশীরা ময়দানে নেমে কিছু করার চেয়ে বাইরে বসে কমেন্ট্রি দিতে ভালোবাসি।
প্রথমেই বলি “অপারেশন থান্ডারবোল্ট” (গুলশান হলি আর্টিসান) আর “অপারেশন টোয়ালাইট”(সিলেটের আতিয়া মহল) এর ভেতর কৌশলগত কারনে বিস্তর ফারাক আছে। যারা অভিযান শেষ হতে এত সময় লাগছে কেন বলে অভিযোগ করছেন, আর্মি কমান্ডোদের সামর্থ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তারা হয়তো ভুলে গেছেন সিলেটের জালালাবাদের এই প্যারা-কমান্ডোরাই মাত্র ১৩ মিনিটে গুলশানে সফলভাবে অভিযান সমাপ্ত করেছিলো।
আসুন বিশ্লেষন করি, সিলেটে অভিযানে কেন এত সময় লাগলোঃ
উদ্ধার অভিযানঃ
সিলেটের আতিয়া মহলে নিচ তলায় জঙ্গিরা অবস্থান করায় ভবনের বাসিন্দারা জিম্মি হয়ে পরে, তাই তাদের নিরাপদে উদ্ধারে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দেয়া হয়। মূল ফটক সহ ভবনে ঢোকার বিভিন্ন পথে উচুমাত্রার বিস্ফোরক পুতে রাখা হয়েছিলো তাই কোন ঝুকি নেয়া হয়নি। এর ভেতর ঝড় ও বজ্রপাত শুরু হওয়ায় উদ্ধার অভিযানে বিলম্ব হয়। বিকল্প পথে পাশের ভবনের ছাদে মই লাগিয়ে কমান্ডোরা পাচতলায় গিয়ে সেটা বিপদমুক্ত করেন, তারপর থেকে বাসিন্দাদের উদ্ধার করেন, এছাড়া নিচতলার লোকজনকে গ্রিল কেটে ও দেয়াল ছিদ্র করে সরিয়ে নেয়া হয়। সরিয়ে নেয়ার পরই জঙ্গিরা বিষ্ফোরন ঘটায়।
সেনাবাহিনী, প্যারাকমান্ডো, সোয়াট, র্যাব, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভবনের ৩ জন গর্ভবতী মহিলা সহ মোট ৭৮ জন বাসিন্দাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
উচ্চপ্রশিক্ষিত জঙ্গিঃ
আতিয়া মহলের জঙ্গিদের প্রথম অবস্থায় জীবিত অবস্থায় গ্রেফতারের চেষ্টা চলছিলো, কিন্তু এই জঙ্গিরা অত্যন্ত প্রশিক্ষিত। কমান্ডোদের ছোড়া গ্রেনেড ক্যাচ ধরে আবার কমান্ডোদের দিকেই ছুড়ে মেরেছে। টিয়ারসেল মারলে আগুন জালিয়ে প্রতিহত করেছে। এছাড়া জঙ্গিরা বিষ্ফোরক তৈরী ও স্থাপনে প্রশিক্ষিত। তারা ভবনের বিভিন্ন জায়গায় উচু মাত্রার বিষ্ফোরক (IED – improvised explosive device) স্থাপন করে রেখেছে।
বাইরের হামলাঃ
ভবনের বাইরেও বিভিন্ন স্থানে বোমা বিষ্ফোরন ঘটেছে। পুলিশের ধারনা আতিয়া মহলের ঘটনার প্রেক্ষিতেই এই ঘটনা ঘটেছে। এই বিষ্ফোরনে ২ জন পুলিশ সহ ৬ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
ক্ষয়ক্ষতি ও প্রানহানি যত কমানো যায়, সেই ব্যাপারটা মাথায় রেখেই এই অভিযান চালানো হয়েছে। তাই সময় একটু বেশি লাগাই কি স্বাভাবিক নয়? অভিযান শেষ হলেও এখনও ভেতরে বিষ্ফোরক থাকায় ভবনটি ঝুকিপূর্ণ।
অভিযোগ করার আগে এই ভিডিওটা দেখেন, এই দুই আর্মি কমান্ডোর সাহস দেখে তারপর আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখেন। তারপর না হয় তাদের সাহস-সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুইলেন
বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, প্যারাকমান্ডো, সোয়াট, র্যাব, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কে শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জানাই। -{@
তথ্যসূত্রঃ
বিবিসি, বাংলানিউজ, বিডিনিউজ, প্রথম আলো
ছবিঃ
ISPR, Google
———————————————————————-
ছোটবেলায় খুব ইচ্ছা ছিলো আর্মি জয়েন করবো, পারি নি। কিন্তু আর্মি-কমান্ডো-সোয়াটদের অভিযান দেখে এখনও অনুপ্রানিত হই। আর কেউ সক্ষমতা নিয়ে কোন অভিযোগ করলে বিরক্ত হই।
যারা জঙ্গি হামলাকে সরকারের ইশারায় পুলিশের নাটক বলছেন, ৬ জন মানুষের প্রাণও নিশ্চয়ই তাদের কাছে নাটক। তাদেরকে কিছু বলার নাই। কারন তাদেরকে আমি মানুষ হিসেবে গন্য করি না।
৯টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
আমরা বাইরে থেকে যা মন চায় বলে যেতে থাকি। কিন্তু ওখানে যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, তাঁদের কথা কেউই ভাবিনা।
সুন্দর একটি পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।
প্রিন্স হেক্টর
আপনাকেও ধন্যবাদ 🙂
নীহারিকা
দুরে বসে অনেককিছুই বলা যায়। যুদ্ধক্ষেত্রে যারা থাকেন শুধু তারাই বুঝতে পারেন সেখানকার পরিস্থিতি। আর আমাদের পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী সহ অন্যান্য বাহিনীগুলো সকল প্রতিকুল পরিস্থিতিতেই কিন্ত জীবন বাজী রেখে কাজ করেন। যার প্রমাণ আমরা দেখতেই পাই।
আমার মতে সমালোচনা করলেও যে কোন ভালো কাজের মূল্যায়নও সকলের করা উচিৎ।
পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ।
প্রিন্স হেক্টর
আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা যৌক্তিক সমালোচনা করি না ;?
ইঞ্জা
আপনার সাথে একমত পোষণ করছি, যারা বাইরে থেকে ফেইসবুকে আস্ফালন করে ওরা কি জানে এইসব বিষয়ে, ধন্যবাদ আপনাকে দারুণ এই পোষ্টির জন্য।
প্রিন্স হেক্টর
ধন্যবাদ ইঞ্জা 🙂
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা
মেহেরী তাজ
যারা বলার তারা বলবেই। ফেসবুকে লেখে দুনিয়া উদ্ধার হলে প্রত্যেক দিন বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার সৈন্য মরতো না!
ভালো পোষ্ট।
মৌনতা রিতু
গতকাল রাতেই কথা বলছিলাম এক বান্ধবীর সাথে। ওর স্বামী মেজর। এখন ঢাকাতেই আছে। ওর কাছেই শুনলাম, আযাদ সাহেবকে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠিয়েছে। যাকে বলে ক্লিনিক্যাল ডেথ। লাইফ সাপোর্ট খুলে দিলেই বাকিটুকু সব শেষ। তিনটা বাচ্চা তার। এখনো অনেক ছোট। ভাবি শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। স্বাভাবিক। আমি আমার মেমন সোনাকে রংপুর ক্যাডেটে কলেজে পড়তে দিয়ে বলেছি,”বাবা এখন সুযোগ হবে তোমার এই দেশের জন্য কিছু করার।”
ভাই, এই পোষ্ট দিয়ে অনেক বড় একটা দায়িত্বের কাজ করেছেন। আসলে বাংলাদেশের কিছু মানুষের মাথায় শয়তানি মগজ সব সময় কাজ করে তাই তারা সব কিছুতেই সাজানো মনে করে।
ভাল থাকুন। ভাল পোষ্ট।