খেলনা গাড়িটাকে খুলে ভেতর থেকে ইঞ্জিনটাকে বের করে সে কি আনন্দ মেধার।এবার ভাবছে এ ছোট্ট ইঞ্জিনটাকে নিয়ে নতুন কি করা যায়। এবার সে ঘুরে ফিরে চারপাশ ভেবে নতুন ইঞ্জিনটার জন্য অবশেষে একজন অতি প্রয়োজনীয় যাত্রী খুঁজে আনল, তাও আবার একটা মাছি। মাছি হয়েছে তো কি হয়েছে, তার কি গাড়িতে চড়ার শখ হয় না? মাছিকে সূতোয় বেঁধে ইঞ্জিনে চড়ানো হল। তারপর সেটাকে চালু করা হল। ইঞ্জিনকে চলতে দেখে মেধার সে কি আনন্দ! আর এদিকে মাছি বাবাজির প্রাণ যায় যায় অবস্থা। এভাবে কিছুক্ষণ খেলার পর তার ছোট বোন এসে বলল, এভাবে বাঁধাতে মাছিটার কষ্ট হচ্ছে। মাছিটা মারা যেতে পারে। এটা শুনে মাছিটার প্রতি তারও মায়া জন্ম নিল। সে মাছিটাকে ছেড়ে দিল। এদিকে মেজো নানু এসে মেধার ঘরে ঢুকলেন, আর মাথা চুলকে ভাবতে লাগলেন নতুন আর কি কথা বলে মেধার জেদ তোলা যায়।
সারাদিনে ওনার এই একটাই কাজ, কার সংসারে ঢুকে তার হাঁড়ির খবর জোগার করবেন, কার ছেলেমেয়ের বিরুদ্ধে কি অপবাদ দেবেন, কাকে কিভাবে হেনস্তা করবেন, আর কোথায়, কখন,কিভাবে কোন পয়সাওয়ালা ধনী ব্যক্তিকে তেল মাখাবেন। ওনার স্বামী মারা গেছেন অনেকদিন আগে। স্বামী বেঁচে থাকতেও তাঁর প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য বিশেষ পালন করেছেন বলে জানা যায়নি। তখনো তিনি পরের সংসারে আগুন লাগানো আর পয়সাওয়ালাদের তেল মাখানোর দায়িত্বই পালন করতেন। তাঁর মুখে নিজের ছেলেমেয়ে ছাড়া অন্য কারো ছেলে মেয়ের কোন প্রশংসা কোনদিন খুব একটা শোনা যায় নি। ওনার সকল ছেলে মেয়ে নিজ নিজ সংসারে ব্যাস্ত থাকে। তিনি একেক সময় একেক সন্তানের বাসায় সফর করেই জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু তা আর হল কি করে। সকল বউমা তো এ অত্যাচার মেনে নেবে না। তাছাড়াও মেধার নানু পয়সাওয়ালা ব্যাক্তি।তার পিছু না নিলে হবে কি করে। তিনি মেধাদের বাসায় থাকবেন আর তাদেরকে জ্বালাতন করবেন না, তা কখনো হয়?
যাই হোক, সংসারের অত মারপ্যাঁচ বোঝার মত মেধা মেধার নেই, তবে তার ছোট বোনটি ছোট হলেও সে সবকিছুই বোঝে এবং তার বুদ্ধি খাটিয়ে বড় ভাইটিকে আগলে রাখে।মেধার বয়সী ডিজিটাল ছেলেরা আজকাল ছোটবড় সব মেয়েদের নিয়ে কল্পনার জাল বুনতে শুরু করে দেয়, এতে অবাক হবার কিছু নেই। সেখানে মেধা আজো খেলনা গাড়ি নিয়ে খেলে, বোনের মাথার গন্ধ শুঁকে, বোনের মাথায় চুমু খেয়ে আদর করে। মনে এতটুকু কালিমা নেই তার। এটা বরং ভাবনার বিষয়। তার মায়ের চিন্তা, ভবিষ্যত কি হবে এ ছেলের? বড় হয়ে কিছু যদি নাই করতে পারে,তবে বিয়ে,সংসার এসব কি জুটবে না তার কপালে? মেধার মা ও সাদা মনের, কোথাও এতটুকু কালিমা নেই তাঁর। আজকাল এমন মানুষ খুব একটা দেখা যায় না। আল্লাহ যেন অনেক যত্ন করে গড়ে তুলেছেন তাদের মনের ছাঁচ।
মেজো নানু ঘরে ঢুকেই দেখলেন একানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বই,খাতা,গ্রাফ কাগজ আরো কত কী। মা এসব গোছাচ্ছেন। তাই দেখে তিনি ধমকে ওঠলেন,
“একি মা,তুমি এসব গোছাচ্ছ কেন? এসব যার জিনিস সে গোছাবে। আমার ছেলেমেয়েরা যখন ছোট ছিল, আমিতো তাদের কোন জিনিস গুছিয়ে দেইনি।তারা নিজে নিজে গুছিয়েছে।(যেন জন্ম থেকেই তার ছেলেমেয়েরা সব শিখে পড়ে পৃথিবীতে এসেছিল!) তুমি সরে এস।যার বই তাকে গোছাতে দাও। এত বড় ছেলে,নিজের কাজ নিজে করতে পারেনা? আমার ছেলেরাতো নিজের খাবার বাসনটাও নিজেরা ধুয়ে রাখে।”
(তাঁর চাকরিজীবী বিবাহিত ধামড়া ছেলেদের সাথে কৈশরের পথে পা দেয়া মেধার তুলনা সত্যিই অসাধারন লাগে শুনতে!)
কি আর করা, নানুর কড়া গলা শুনে ভয়ে থতমত খেয়ে মেধা সব একাই গোছাতে লাগল। আর মনে মনে রাগ হল।কিন্তু বড়দের কিচ্ছু বলা যাবে না, তার বাবার আদেশ।তাই কিছু বলতেও পারলনা। মেজো নানু বাসায় আসলে আর যেতে চায় না। যতদিন থাকে ততদিন সে একটু মায়ের কোলের কাছে বসে ঠিকমত আদরও খেতে পারেনা। তখন তার অবস্থাটা এমন হয়, ঠিক যেন “প্রভুহীন পথের কুকুর”। মা চলে গেলেন টিভির ঘরে। কর্ণেলের বাসায় রান্না করা,কাপড় ধোয়া,ঘর মোছা ইত্যাদি প্রতিটা কাজেরি আলাদা আলাদা লোক আছে বলে মেধার মাকে তেমন কিছুই করতে হয় না। ফলে তাঁর একমাত্র কাজ ছেলেমেয়েদের অনেক আদর করা এবং দেখাশোনা করা। কিন্তু সেটাও মেজো নানু বা এই কিসিমের লোকজন এলে সম্ভব হয়না। যাই হোক, সে বুঝে গেল এবার থেকে কদিন তার মায়ের আদর খাওয়া বন্ধ। সারাক্ষণ নিজ বাড়িতেই কারা ভোগ করতে হবে।
চলবে……..
Neera Sadeea
11.12.16
১৪টি মন্তব্য
ইঞ্জা
এই ধরণের মানে মেধার নানুটার মতো কিছু মহিলা আছে শুধু শুধু মানুষের দোষ ধরে বেড়ায় যা আমার সহ্যই হয়না তেমনই একজন আমার বড় খালা শাশুড়ি, উনাকে এক কথার পরিপ্রেক্ষিতে এমন কড়া জবাব দিয়েছিলাম যে উনি আর এখন আমার বাসার পাশ দিয়েও হাটেন না। 😀
নীরা সাদীয়া
এমন জবাব দিতে পারলে খুব ভাল হত। কিন্তু মেধাদের মাথায় সে মেধাটুকুও নেই যে শুভরাত্রি।
ইঞ্জা
হবে আপু হবে এক সময় মেধারা জবাব দেবে।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
নানুর ক্যারেক্টার মজা লাগলো।
ভালোই।
চালিয়ে যান।
নীরা সাদীয়া
হুম। তবে এসব নানুরা যাদের জীবনে ঢোকে তাদের অতিষ্ঠ করে তোলে। শুভরাত্রি।
নীলাঞ্জনা নীলা
মেঝো নানুর মতো মানুষের সংখ্যা খুব বেশী এই পৃথিবীতে।
গল্প ভালো লাগছে। চলতে থাকুক।
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন নীলাঞ্জনা দিদি। এরকম মানুষের সংখ্যা প্রচুর।
নাজমুস সাকিব রহমান
পুরোটা একসাথে পড়ে জানাব। লিখতে থাকুন। শুভেচ্ছা।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ। পাশেই থাকবেন আশা করি ভাইয়া।
অলিভার
গল্প ভালো এগুচ্ছে।
চরিত্রগুলিও তাদের পেখম মেলতে শুরু করেছে। ছোট ছোট বর্ণনায় তাদের প্রকৃতির যথেষ্ট রঙ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে আপনার গল্পে।
আপাতত গল্পের ভেতরকার ভালো মন্দ নিয়ে কোন মন্তব্যে গেলাম না, একদম শেষে গিয়ে না হয় তা চিন্তা করা যাবে।
লিখতে থাকুন হাত খুলে 🙂 🙂
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ ভাই অলিভার। পাশেই থাকবেন আশা করি।শুভকামনা রইল। :D)
অলিভার
-{@ -{@
মৌনতা রিতু
ছোটবোন ভাইটিকে আগলে রাখছে, অংশটুকু পড়ে ভাল লাগল। আমিও না ছোটবেলায় ফড়িং এর লেজে সুতা বেঁধে ছেড়ে দিতাম। একদিন মাইর খাইছিলাম এটক নিয়ে। সেই থেকে আর করতাম না।
গল্প লেখার হাত খুব পাকা বোঝা যাচ্ছে।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ আপু। বাস্তবের সাথে মিলে যাওয়ায় আমি বেশ খুশি। শুভকামনা রইল।