
হুমায়ুন আহমেদ যতদিন বেচে ছিলেন, আমি তার যে কোনো বই এক বসায় না পড়লে মনে শান্তি পেতাম না। এমনও সময় গেছে ইলেট্রিসিটি চলে গেছে, বই এর ভিতর এমন এক জায়গায় ডুবে আছি সামনে আগাতে না পারলে ভেসে উঠতে হবে। মোমবাতি জ্বালিয়ে ওই অবস্থায় ও পড়া চালিয়ে গেছি। অফিসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে, ই-বুকগুলো গিলেছি হাভাতের মতো।
তার মিসির আলী চরিত্রের থেকে আমার হিমু চরিত্রটি বেশী ভাল লাগতো। এটা যে কেনো সেটা কখনো বোঝার চেষ্টা করিনি। মিসির আলী বেশী ভারিক্কি অথবা জ্ঞানী বলে? কিংবা হিমুর ভিতরে এক সাধারণ যুবকের কিছু অসাধারণ কর্মকান্ড চোখে পড়ে বলে? নাকি রুপার মত এক লাবন্যময়ী নারী যে হিমুর জন্য এক সাগর ভালবাসা হৃদয়ে নিয়ে উন্মুখ হয়ে থাকে যদিও সে জানে হিমু আসবে না তার জন্য?
অনেক চিন্তা করলাম।
নাহ! হুমায়ুন আহমেদ এর লিখার জন্য আমার ভিতরে এক মায়া সৃষ্টি হয়েছে। যদিও হিমু চরিত্রের দ্বারা তিনি এই জীবনে সব কিছু থেকে ‘মায়া’ বা ‘মোহ’কে কাটানোর শিক্ষা দিয়েছেন। আমিও সেই মায়া কাটানোর অনুশীলন করা শুরু করেছিলাম। আমার যেটা বেশি ভাল লাগতো, সেখানে আমি জোর করে খারাপ লাগাতাম… ভাল কোনো কিছু মনের ভিতরে দেখার ইচ্ছে জেগে উঠলেই সেখান থেকে ভেগে যেতাম… ফেসবুকে এসে লাইক দেয়াটাও বাদ দিয়েছিলাম… যাকে ভাললাগে তার সাথে ইচ্ছে করে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতাম যাতে সে আমাকে ঘৃণা করে। এভাবে কাটাচ্ছিলাম আমার সময়।
কিন্তু একদিন হঠাত করে অনুভব করলাম, আমি যতই মায়াকে কাটাতে চাচ্ছি – মায়া আমাকে আরো বেশী করে জড়িয়ে নিচ্ছে… সর্বত্র। আমি আমার পরিবার থেকে সমাজ জীবনের সকল স্তরে মায়ার বাঁধনে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছিলাম। প্রকৃতিও আমার চোখের ভিতরে এতোটা মায়া ঢেলে দিচ্ছিলো যে, আকাশ-মেঘ পানি-বাতাস এবং গাছপালা- যেদিকেই তাকাই আমি হারিয়ে যেতে থাকি… মায়ার গভীর থেকে গভীরতর অংশে।
যেদিন কোনাবাড়ীতে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের ১০ তলা গার্মেন্টসটিতে আগুন লাগে, সেদিন বন্ধু বিপ্লব সুদুর অস্ট্রেলিয়া থেকে আমাকে ফোন করে আমি ঠিক আছি কিনা জানতে চেয়েছে.. খুলনা থেকে আম্মা সেই মুহুর্তে কোথায় আছি- ভাল আছি কিনা জানতে চেয়েছেন। মোবাইল বন্ধ থাকায় চাটগা থেকে বন্ধু মনসুর সে রাতে আমাকে পায় নাই.. পরের দিন ফোনে পেয়ে আমি কেমন আছি জানতে চেয়েছে, সেইফে থাকার অনুরোধ করেছে।
এগুলো কি মায়া নয়?
… আমার বউ কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমাকে ফোন করে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করে রেখে দেবার আগ মুহুর্তে জিজ্ঞেস করতো,
– কেমন আছ তুমি?!
আমার চারপাশে কলিগদের দ্বারা বেষ্টিত এই আমি একটু হেসে ফোন রেখে দিতাম। বউ সেই হাসিটা কি দেখতে পেতো? দু’পাশে দুইজন অদৃশ্য মানুষ তাদের মায়াকে দেখাতে না পারলেও মায়ার অস্তিত্ত কে অস্বীকার ও করতে পারে না। আমি আমার প্রিয়তমাকে কেমন আছি এই কথাটুকু ও ভালভাবে বলার সঠিক সময়টুকু পেতাম না।
এই অনুভুতি ও কি মায়া নয়?
কোনো এক জায়গা থেকে কেউ একজন যখন আমাকে বলতো,
– সাবধানে থেকো… বউ দিবসে সাভারে দেখেশুনে যেও।
আমি অদৃশ্য এক মায়ার জালে আটক হতাম।
এই সবার মায়াকে দূরে ঠেলে দিলেই কি আমি মহাপুরুষ হয়ে যাবো?
কি লাভ এমন মহাপুরুষ হয়ে যদি মায়ায়ই সবাইকে জড়াতে না পারি? … কিংবা নিজেই ওদের মায়ায় জড়িয়ে থাকতে না পারি!
মহাপুরুষের কাজটা কি? সবাইকে মায়ায় জড়িয়ে রাখা নয় কি? মায়ায় জড়িয়ে নিয়েই মায়া কাটানো শিক্ষা দেয়া অধিকতর সহজ বলে মনে হয় আমার কাছে।
এই জগতটাই কি একটা মায়া নয়?
#ব্যক্তিগত_স্ট্যাটাস
১৫টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
মায়া কাটানো অনেক কঠিন। বিশেষ করে প্রিয়জনদের থেকে।
আসলে মায়া দিয়ে বেঁধে নিয়েই জীবন।
মামুন
সহমত আপনার সাথে।
আসলেই মায়া কাটানো কঠিন।
সুন্দর আপনার অনুভব!
শুভেচ্ছা জানুন।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালো থাকুন।
মোঃ মজিবর রহমান
এই মায়াময় শহুরে জিবনে এনে দেয় শস্তির নির্যাস জা জিবনে দেয় প্রশান্তি।
মামুন
সুন্দর বলেছেন প্রিয়প্রিয় ভাই।
আসলেই তাই।
শুভেচ্ছা আপনার জন্য।
লীলাবতী
এত বেহুশ হলে চলে? ভুলে না হয় পোস্ট দেয়ার সময় শিরোনাম দেননি, এটি মানা যায়। কিন্তু এরপরে এসে মন্তব্যের জবাব তো দিলেন। আপনার চোখ কি অন্য কোথাও খুলে রেখে এসেছেন? নাকি ছোখে ছানি পড়েছে?
এমন বেহুশ হয়ে সোনেলায় আসবেজ না আর। চোখ এবং হুশ এর চিকিৎসা নিন।
মামুন
আমি দু:খিত 🙁
ঘুম চোখে আসলেই অন্য কোথায়ও চোখ দু’টি খুলে রেখে এসেছিলাম 🙂
আপনি মনে করিয়ে দেবার শুভেচ্ছা গ্রহন করুন।
আমি আজীবন নারীদের কাছ থেকে এভাবে পরিশুদ্ধ হয়েই এসেছি- ঘরে বাইরে সর্বত্র।
তারপর ও ভুল মানুষেরই হয়।
ভালো থাকুন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
কোথা থেকে কি হলো বুঝতে পারছি না লীলাপু -{@
মামুন
চোখে ছানি পড়েছে?
চোখ আর হুশ এর চিকিতসা নিন।
এভাবে আর আসবেন না কখনো।
বাহ! অপূর্ব লাগলো একজন লীলাবতীর জবানে!! :c :c
লীলাবতী
আমি যা বলতে চেয়েছি তার ১০% ও লিখিনি। এই সাইটের প্রতি আপনার মনযোগ কতটা তা আপনার বেহুশ অবস্থা দেখে বুঝা যায়। ভবিষ্যতে আবার এমন বেহুশ হয়ে দেখুন, শতভাগই বলবো।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সাবধানে থেকো… বউ দিবসে সাভারে দেখেশুনে যেও।
আমি অদৃশ্য এক মায়ার জালে আটক হতাম।
হ্যা এ সে-ই হচ্ছে জীবনের শেষাংশ…এখানে এতো মায়া বিরাজমান যা চিন্তা করা যায় না।
মায়ায় মায়ায় হলো বন্ধু
দুইয়ে মিলে এক কায়ায়। -{@
মামুন
ধন্যবাদ প্রিয় মনির ভাই। আপনার সুন্দর অনুভূতি আপ্লুত করলো।
কেবল আপনার আর সোনেলার মতো পরিচ্ছন্ন ব্লগের মায়ার টানে এখানে আসা। লেখা পোষ্ট করা কিংবা মন্তব্য পাওয়াটা মূখ্য নয়। আমি নিরবচ্ছিন্ন লিখে যাই। পোষ্ট করার কিংবা প্রেরণা দেবার ঘনিষ্টজনের অভাব নেই আমার।
ভালো থাকুন আপনারা সবাই। জীবনের এক ক্রান্তিকাল পার করছি আমি। ছোটখাট পদস্খলন হতেই পারে।
(-3 (-3
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
রাগ গোস্সা মান অভিমান যাই ঘটুকনা কেনো তা কেবল ব্যাক্তি পর্যায়ে এই ব্লগটা একটি ছোট পরিবার এটাকে সকল ব্যাক্তির উধ্বে রাখা হয়েছে।সুতরাং এখানে আমার যেমন অধিকার ঠিক আপনারও তেমনি অধিকার আছে আর এটাই সোনেলার নীতি।আপনারা আছেন বলেই সোনেলা একটি পরিছন্ন পরিবার।সাথেই থাকবেন এই আশা টুকু করছি। -{@ ধন্যবাদ।
অয়োময় অবান্তর
চমৎকার লেখেছেন। আসলেই মায়া মনে হয় মাকড়শারজালের মত, ছাড়াতে গেলে আরও বেশী জড়িয়ে পড়া হয়।
মায়া না কাটিয়েই মহাপুরুষ হয়ে উঠুন – এই শুভ কামনা রইল।
অলিভার
হুমায়ুন আহমেদ স্যরের লিখা পড়তে পড়তে একটা সময় মন ভাবতে শুরু করেছিল যে মিসির আলি আর হিমু দুটোই বাস্তব কোন চরিত্র।
হিমু’র মাধ্যমে যেভাবে স্যর মায়ার সৃষ্টি করেছিলেন সেই একই ভাবে মায়ার ভেতর থেকে বের হবার পথও যেন বের করার চেষ্টা করেছিলেন মিসির আলির মাধ্যমে। তবে ব্যক্তিগত ভাবে হিমু চরিত্রটার থেকে মিসির আলির চরিত্রটাই আমাকে বেশি আকর্ষন করত। তার পর্যবেক্ষন, ঘটনায় সিম্পেসিটি নিয়ে আসা, বড় অংশটাকে ফোকাস না করে ছোট ছোট ফ্যক্টকে ফোকাস করার মত ব্যপার গুলি বোধ করি মিসির আলি চরিত্রটির মাধ্যমেই আরও ভালো বুঝতে শিখেছিলাম। এক দিক থেকে হিসেব করলে হুমায়ুন আহমেদ স্যর মিসির আলি আর হিমু চরিত্র দুটো নির্মান করে পাঠকদের জন্যে এই দুয়ের মাঝে ব্যলেন্স তৈরি করেছিলেন।
আর মায়া নিয়ে নতুন করে কিছু বললাম না। আপনিই এর যথার্থ ব্যখ্যা করেছেন -{@