iDxJmGLYdGEv

সেলিম চিশতী ছিলেন বাদশাহ আকবরের পীর। আজমীরের খাজাবাবার দরগায় দেখলাম গান বাজনা চলছে সমানে, এখানেও দেখলাম সেই একই অবস্থা। আমাদের বাংলাদেশের মাজারে গান বাজনা করলে আর উপায় থাকত না। খাজাবাবা মঈনুদ্দিন চিশতী ও সেলিম চিশতী দুইজনই নাকি গান ভালবাসতেন। আমরা এক এক করে এবাদতখানা থেকে আরম্ভ করে আবুল ফজলের বাড়ি, হামামখানা, ধর্মশালা, মিনা মসজিদ, যোধাবাঈ মহল ও সেলিম গড় দেখতে শুরু করলাম।

এক একজনে এক একটা জায়গা দেখতে চায়। আমি দেখতে চেয়েছিলাম তানসেনের বাড়ি। শেষপর্যন্ত তানসেনের বাড়ি দেখতে গেলাম। তাঁর বাড়িটা প্রাসাদের বাইরে, পাহাড়ের উপর ছোট্ট একটা বাড়ি। বোধহয় সঙ্গীত সাধনায় ব্যাঘাত হবে, তাই তিনি দূরে থাকতেই ভালবাসতেন। আমার মন যেন সান্ত্বনা পেল না তানসেনের বাড়ি দেখে। যা হোক, বহুদিনের কথা, এ বাড়িতে তিনি ছিলেন কি না শেষ পর্যন্ত তারই বা ঠিক কি? সম্রাট তো এত অর্থ খরচ করে যে প্রাসাদ ও দুর্গ তৈরি করলেন, দু’বছরের বেশি থাকতে পারেন নাই, আবার আগ্রা দুর্গে ফিরে যেতে হয়েছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, পানির অভাবের জন্য। আমার মন স্বীকার করতে চায় না যে, পানির জন্য তিনি চলে যান। মনে হয় অন্য কোন কারণ ছিল। আট বর্গমাইল জায়গা নিয়ে ফতেহপুর সিক্রি, রাজপ্রাসাদ ও দুর্গ গড়ে তুলেন– যার মধ্যে দুই হাজার নয়শত ঘর ছিল। আগ্রা দুর্গে ছিল প্রায় পাঁচশত ঘর। ফতেহপুর সিক্রিতে সম্রাটের সমস্ত অমাত্যবৃন্দের থাকার জায়গা হয়েও ষাট হাজার সৈন্য থাকতে পারত। সম্রাট আকবরের শক্তি ও সামর্থ্য ছিল। তিনি এদের জন্য পানির ব্যবস্থা করতে পারেন নাই, পানির কষ্টেই তিনি ফতেহপুর সিক্রি ছেড়ে আসেন, এটা যেন বিশ্বাস করতে মন চাইল না।

আমাদের আবার সন্ধ্যায় ট্রেন ধরতে হবে। লোকাল ট্রেন আগ্রা থেকে তুন্দলা পর্যন্ত যায়। ফতেহপুর সিক্রির পাশেই একটা ডাকবাংলো আছে। আমরা সকলেই কিছু খেয়ে নিয়ে রওয়ানা করলাম সেকেন্দ্রায়, যেখানে সম্রাট আকবর চিরনিদ্রায় শায়িত। এই সমাধিস্থান তিনি নিজেই ঠিক করে গিয়েছিলেন। দিল্লি থেকে শুরু করে অনেক রাজা বাদশার সমাধি আমি দেখেছি, কিন্তু সেকেন্দ্রায় আকবরের সমাধির ভাবগম্ভীর ও সাদাসিধে পরিবেশটা আমার বেশ লেগেছিল। সমস্ত জায়গাটা জুড়ে অনেক রকমের গাছপালায় ভরা, ফল ও ফুলের গাছ! সমাধিটা সাদা পাথরের তৈরি।

আমাদের সময় হয়ে এসেছ, ফিরতে হবে। চৌধুরী সাহেব তাড়া দিলেন। আমরাও গাড়িতে উঠে বসলাম। আগ্রায় ফিরে এসেই মালপত্র নিয়ে রওয়ানা করলাম তুন্দলা স্টেশনে। এসে দেখি বাংলাদেশের অনেক সহকর্মীই এখানে আছেন। অনেক ভিড়। মালপত্র চৌধুরী সাহেবের প্রথম শ্রেণির গাড়িতে ফেলে আমরা তাড়াতাড়ি উঠে পড়তে চেষ্টা করলাম। যখন সকলেই উঠে গেছে ট্রেনে, আমি আর উঠতে না পেরে ফার্স্ট ক্লাসের দরজার হাতল ধরে দাঁড়ালাম। আমার সাথে আরেক বন্ধু ছিল। পরের স্টেশনে যে কোন বগিতে উঠে পড়ব। অনেক ধাক্কাধাক্কি করলাম, প্রথম শ্রেণির ভদ্রলোক দরোজা খুললেন না। ট্রেন ভীষণ জোরে চলছে, আমাদের ভয় হতে লাগল, একবার হাত ছুটে গেলে আর উপায় নাই। আমি দুই হাতলের মধ্যে দুই হাত ভরে দিলাম, ওকে বুকের কাছে রাখলাম। মেলট্রেন–স্টেশন কাছাকাছি হবে না।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং-৫৯ ও ৬০)

★ পর্ব-৫০ প্রকাশের পর ধারাবাহিক প্রকাশ কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকবে।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পর্ব-৪৬)

৬২৩জন ৬২৩জন
0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ