একটা গান আছেনা…
“জীবনে ভালবেসে করেছি ভুল
বুঝিনি পাথরে ফুটবেনা ফুল”
পাথরে ফুটবেনা ফুল! জিনিসটা যে সত্যি না, তা বুঝতে পেরেছিলাম সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়ে। হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বাড়ি থেকে ফেরার পথে একটি ছোট মেয়ে আমার পাঁশ দিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ সে অদ্ভুত রকমের একটি ফুল আমার হাতে দিয়ে বলল…
ভাইয়া এটি আপনার জন্য।
থ্যাংকইউ। আমি পকেট থেকে কিছু টাকা বের করতেই বলল…
ভাইয়া এটি আপনাকে গিফট দিয়েছি।
মনে কর এই টাকা আমি তোমাকে দিয়েছি ছোট বোন মনে করে। এবার নিবে?
ঠিক আছে।
নিয়ে চলে গেল।
এবার আমি মহা চিন্তায় পড়লাম। পাথরের উপর অসম্ভব সুন্দর একটি ফুলের মত দেখতে। এটি কি?
আমার সাথে থাকা ফ্রেন্ডরা আমার থেকে অনেক সামনে চলে গিয়েছিল। তাঁদের ডাক দিয়ে দেখালাম। সবাই অবাক!! পাথরের উপর ফুল?
শেষে আমাদের সাথে থাকা লোকটি (ট্যুরিস্ট গাইড) বলল, এটি একটি সামুদ্রিক উদ্ভিদ। যা পাথরের উপরেই জন্মায়!
৩৬-৩৭-৩৬। গত তিন দিনে সিলেটের তাপমাত্রা। যাহা ছিল সিলেটে এ বছরের রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রা। প্রতিদিনই সন্ধ্যা শেষে নিয়ম করে বৃষ্টি নামে। শেষের দিনে তাপমাত্রা একটু কম হলেও বাইরে থাকায় বুঝেছি গরম কাহাঁকে বলে? এবং আমরা তিনজনে পণ করেছি আজ বৃষ্টিতে ভিজে তবেই বাসা ফিরব। এবং যথা সময়ে বৃষ্টি এলো। আমরাও শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা হাঁটতে লাগলাম। ঝুম বৃষ্টি দিচ্ছে। সবাই যেখানে বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য তোলজোড় করতেছে সে যায়গায় আমরা ভিজতেছি। আমরা তিন চরিত্র। আমাদের সাথে থাকা এক চরিত্র হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠল
‘এ! পাইয়ালিছি!! পাইয়ালিছি!!!’
কি পাইলি? কি পাইলি?
পাঁচ টাকার কয়েন।
এজ্জন্য এত জোরে চিৎকার?
আরে, …… (হঠাৎ আরো জোরে চিৎকার। তবে এবার অন্য কেঁউ)
পেছনে থাকাতেই দেখি ৪/৫ টা ছোট ছেলেমেয়ে বয়স ৬/৭ হবে আমাদের পিছু নিছে। কি আজিব ব্যাপার! সময় এখন ১১.৩০। এটা কি ঢাকা শহর? যে, ওরা দিন শেষে ফুটপাত ঘুমুবে? এদের কি পরিবারের কেঁউ নেই?
[সিলেটে মাজারের পাগলছাগলেরা ফুটপাথে ঘুমায়। সচরাচর ফুটপাথে ঘুমুতে কাউকে দেখা যায় না।]
ওদের নিয়ে অনেক সময় হৈচৈ দিছি। পরে আসার পথে মনে হল…
তাঁদেরকে নিয়ে কিছুই কি করার নেই আমাদের?
ওরা কি এ ভাবেই বড় হবে?
ওরাই তো পথের ফুল! আমরা এদের সুন্দর নাম দিয়েছি টোকাই!!
ধুর! ছাই!! কি সব আবুলতাবুল চিন্তা করছি? দেশের দায়িত্ব কি আমি নিছি?
২০টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
হ্যাঁ আমাদের ভাবনা এইটাই, দেশের দায়িত্ব কী আমি নিছি? পথের এই ফুলগুলোর মধ্যে কত সম্ভাবনা যে পথেই শেষ হয়ে যায়, তার কোন ঠিক নেই।
গাজী বুরহান
এই ভাবনা থেকে মনে হয় আমাদের বের হতে হবে।আমরা মাঝে মাঝে ভুলে যাই যে, ওরাও মানুষ।
জাতি হিসেবে আমরা কত্ত কিউট।
ইঞ্জা
কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেছেন লেখক যা মানবতারই একটি অংশ।
গাজী বুরহান
কঠিন বাস্তবটাকে তুলে ধরার সামান্য চেষ্টা। মানবতার সংজ্ঞা কি জানা নেই।
নীলাঞ্জনা নীলা
কয়েকটি শব্দ আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারিনা। তার মধ্যে একটি হলো “টোকাই।” কতো সুন্দর সুন্দর পথশিশুরা প্রচুর মেধা থাকা সত্ত্বেও তাদের জীবনটা সেই পথেই কাটে। কে ভাববে এদের নিয়ে? মধ্যবিত্তরাই যেটুকু ভাবে, কিন্তু উচ্চবিত্তরা ফিরেও তাকায়না।
আপনি সিলেট থাকেন?
ঢাকার মতো এখন সিলেটেও বুঝি ফুটপাতে শোয় মানুষ?
গাজী বুরহান
ছোট শব্দ ‘টোকাই’। ঘৃণিত একটি শব্দ ‘টোকাই’। অথচ এই শব্দের ভেতর আছে প্রায় অর্ধেক বাংলাদেশ। উচ্চবিত্তরা ফিরে চাইবে কি? তাঁদের কাছে এ জাতীয় সময়ই নেই। উল্টো তাঁদের দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করিয়ে নেয়। তারা পা বাঁড়ায় অন্ধকার জগতের দিকে।
ইয়েস! আমার বাসা সিলেটে।
আগে দেখা যেত না। তবে ইদানীং একটু-আধটু দেখা যায়।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমি সিলেট এম.সি কলেজে অনার্স করেছিলাম ১৯৯৭ সালে।
গাজী বুরহান
(y)
আবু খায়ের আনিছ
স্বপ্ন বিলাস………………..
না করতে পারি না। কেন পারি না জানেন? কারণ এগুলো আমাদের কম্য নয়। দারিদ্র বিমোচন করার কথা বলে দারিদ্রতের নিঃশ্বেষ করে দিয়ে কিভাবে করব।
কিছুদিন আগে অষ্ট্রেলিয়ার ইকোনোমিকাল মডেল পড়ছিলাম। ওদের চিন্তা ভাবনা আর আমাদের চিন্তা ভাবনায় আকাশ পাতাল তফাৎ। আমরা নিজেদের পন্য নিজেরা ক্রয় করি না, আমরা কখনো ভাবি না এই টাকা দিয়ে কি হবে।
মৌনতা রিতু
ঠিক বলেছেন। আমরা একজন ইনকাম করি, তার ঘাড়ে দশজন খাইতে ভালবাসি। পাকিস্তান মোটেও সহ্য করি না, কিন্তু পাকিস্তানি লন কাপড় খুবই পছন্দ। আহা! চাইনিজ জিনিস ঘরে আনতে না আনতেই শেষ, তবুও কিনি।
অস্ট্রেলিয়া, বছরের একটা অংশ গম ওরা সমুদ্রে ফেলে দেয়, যেন মাছের সমস্যা না হয়। আমরা গুদামে পচাই। তা না হলে বিদেশ থেকে পঁচা গম কিনি। চিনি, বস্তা বস্তা গুদামে রেখে ওর উপর মুত্র ত্যাগ করে, পিঁপড়া খায়।
আবু খায়ের আনিছ
হ্যা আপু। আমাদের অনেক সমস্যা। ইকোনোমিকালী চিন্তা করলে এই সমস্যাগুলো আরো প্রকট আকার ধারণ করে। এখানে মানবিকতা দিয়ে দেখা হয়েছে, যদি অর্থনীতি দিয়ে দেখা হতো তাহলে চিত্রটা আরো করুণ হয়ে যেতো।
সুন্দর একটা কথা মনে পড়লো। সাধারণ ভাবে আমরা চিন্তা করি একজন বড়লোক হওয়া মানে দশজনের কমসংস্থান এর ব্যবস্থা হওয়া। ধনীকে গরিব করে কখনো ধনী হওয়া যাবে না।
আমাদের দেশের অবস্থাটা ভিন্ন। আমরা কে কাকে বাশঁ দিতে পারি সেটাই বড় কথা। আমার এক বন্ধু বলে, ১৬ কোটি বাঙালীর ৩২ কোটি হাত, যার অর্ধেক অন্যকে দেওয়ার জন্য আর অর্ধেক নিজেকে প্রতিহত করার জন্য নিয়োজিত থাকে। কাজ করবে তাহলে কোন হাত দিয়ে।
গাজী বুরহান
স্বপ্ন বিলাস…?
হয়তবা!
তবে ভাইয়া, আমাদের কি কিছুই করার নেই?
পাকিস্তান মোটেও সহ্য করি না, কিন্তু পাকিস্তানি লন কাপড় খুবই পছন্দ।
খাঁটি কথা। ইন্ডিয়াদের বেলায় একই কাহিনী।
মৌনতা রিতু
অনেক সময় এদের কারনেই এদের জন্যে কিছু করা সম্ভব হয় না। আমি নিজে অনেক প্রমান দেখেছি। আসলে কাঁচা টাকার নেশা অনেক।
তার উপর নিজেদের পরিবার তো আছেই। মোটামুটি একটা আইন দরকার।
একটা সিস্টেম দরকার। শহরমুখি মানুষ কমানো দরকার।
পাথরেও ফুল ফোটে। এই ফুলকেই যত্ন রাখার দায়িত্ব সবারই।
সুন্দর ভাবে শুরু করে জীবনের বাস্ততবতায় নিয়ে গেলেন। অনেক ধন্যবাদ।
পোষ্টে ভাললাগা রইল।
গাজী বুরহান
তবে এদেরও খিদে লাগে। দিনে দুবেলা খাবার চায়, কিন্তু পায় না। দিন শেষে আশ্রয়স্থল খোঁজে, মেলে তবে ফুটপাতে । উপায় না দেখে কেঁউ হাত বাঁড়ায়, আবার কেঁউ পা বাঁড়ায়।
আর অবশ্যই সবার উপরে পরিবার তারপরে অন্যকিছু। তবে শেষে ওদের জন্য কিছু করা চাই। সেটা আমার যতটা দায়িত্ব তারচেয়ে বেশি এ রাষ্ট্রের, তারচেয়ে বেশি যুবক সমাজের। ধন্যবাদ আপুকে।
আনিছ ভাইয়ার শেষ প্রতিউত্তরটা অসাধারণ ছিল। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
মিষ্টি জিন
কিছু বলতে পারছিনা ভাইয়া.. 🙁
ভাললাগার পোষ্ট..
গাজী বুরহান
কওন লাগবেনা আপ্পি। অনুভূতিটা বুঝতে পারছি। ধন্যবাদ আপ্পি।
জিসান শা ইকরাম
আমরা এতেই অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছি,
এদের জন্য যা করা হয়, তা নিজেদের নাম জহির করার জন্য করা হয়,
কার্যকরী তেমন কিছুই করা হয়।
বিভিন্ন ইভেন্ট দেখা যায় ফেইসবুকে, এদের জন্য অনেক কিছু করা হচ্ছে,
কিন্তু ফটো আসবে, ইভেন্টবাজদের, সেলিব্রিটি হবার ধান্ধা সব।
হয়ত একদিন সত্যি সত্যি কিছু করা হবে এদের জন্য……।
গাজী বুরহান
যারা এসব করে তারা নিজেরাও জানেনা যে তারা কত বড় ফকির!
অনিকেত নন্দিনী
আমাদের খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যায়। এসব নিয়ে ইভেন্ট খুলে টাকা যোগাড় করা হলেও তার কতোটুকু যথার্থভাবে কাজে লাগে সেইটাও একটা খোলা রহস্য।
গাজী বুরহান
সত্যি বলেছেন। কারো উপর বিশ্বাস রাখা এখন দায়