প্রেম তুমি (শেষ পর্ব)
জুলি বলে চলেছে, আমি পালিয়ে পাশের এক মার্কেটে ঢুকে পড়লাম ওখানে আমাদের বন্ধু সোহেল, সোহেলকে মনে আছে আমাদের সারাক্ষন হাসাতো ও দেখি এক দোকানে বসা আর সেই আমাকে দেখে বের হয়ে এলো আর জিজ্ঞেস করলো আমি কোথা থেকে, আমি তো প্রথমে চিনতেই পারিনি ও পরিচয় দিলেই তারপর চিনলাম, সে আমাকে মার্কেটের পিছন দিক দিয়ে বের করে নিয়ে এলো আমায় আর ওর বাসায় নিয়ে গেলো, বললো তুমি নাকি এইখানে, মানে বান্দরবন থাকো শুনেছে আরো বললো তুমি নাকি অনেক কিছু হয়ে গিয়েছো আর সকালে ওই নিয়ে আসবে এখানে।
পরের দিন সকালে ওর সাথে রওনা হবো তার আগে ওর কাছে খবর এলো ওর মা অসুস্থ, খুব দুঃখ প্রকাশ করে সে নিজেই একটা বাসে তুলে দিলো বিকালে আর বললো পোঁছে যেন একটা রিং দিই তাকে সাথে তোমার ঠিকানাটা দিয়ে দিলো, পথে আসতে আসতেই বাস গেলো নষ্ট হয়ে আর এগুলো না, আমরা সবাই নেমে গিয়ে অন্য গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করছি দেখলাম এক কালো রঙের জীপ এসে থামলো আমাদের সামনে, দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো বাবা আর ভাইয়া, আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম, থরথর করে কাঁপছিলাম বাবা এসে বলল গাড়ীতে উঠো, আমি সাহস সঞ্চয় করে না করলাম তখন বাবা বলল ভয় নেই চল, তোকে আকাশের কাঁছে পোঁছিয়ে দেবো, আমরা জানি আকাশ কই থাকে, চল তোকে দিয়ে আসি, আমি গাড়ীতে উঠে বসলাম, মনটা খুশি হয়ে উঠলো তোমার দেখা পাবো আর বাবা ভাইও রাজি হয়ে গেছে এখন।
জুলি উঠে আকাশের পাশে এসে বসে আর ওকে জড়িয়ে ধরে আবার কাঁদতে লাগলো, আকাশ বলল তুমি কাঁদছ কেনো, এইতো তুমি আমার কাছে চলে এসেছো, এরপরেও জুলি কাঁদছে, অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ ওকে বুকে টেনে নিলো, মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে “তুমি আর কেঁদোনা, ভুলে যাও ওইসব এখন তুমি আমার কাছেই আছো। জুলি বলছে “আকাশ, তুমি বিয়ে কেন করনি এতোদিন, তুমি কি আসলেই আমাকে ভুলতে পারোনি”?
না পারিনি আর কেনোই বা ভুলবো তোমাকে, ভালোবেসেছি কি ভুলে থাকার জন্য, তুমিওতো ভুলোনি, ভুলেছো কি? জুলি খুব জোরে জোরে মাথা ঝাকায় আর বলে না আমি তোমাকে এক মূহুর্তের জন্যও ভুলিনি কখনো বলেই আকাশের কপাল, গাল, ঠোঁট চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিতে লাগলো। তারপর একটু শান্ত হয়ে আসার পর বলল “জানো ওরা আমাকে মিথ্যে বলেছে, ওরা চায়নি আমি তোমার কাছে আসি, ওরা মাঝ পথে গাড়ী থামিয়ে দিলো, আমাকে জোর কিরে গাড়ী থেকে নামালো আর গালাগালি দিয়ে বলল তুই আমাদের ইজ্জত নিয়ে খেলবি আর আমরা শুধু দেখেই যাবো কিভাবে ভাবতে পারলি বলেই বাবা তার পিস্তল বেড় করলো আমাকে মারার জন্য, ভাইয়া এসে বাবাকে বাধা দিলো আর বললো ওকে আপনি আগে জিজ্ঞেস করেন ও ওর মত বদলাবে কিনা, ও যদি রাজি হয় আমরা ওকে নিয়ে চলে যাবো কিন্তু বাবা কীন কিছুতেই ছাড় দিতে রাজি নয় আর ওদের এই তর্ক বিতর্কের মাঝেই আমি সুযোগ ভুঝেই পাশের জঙ্গলে পালিয়ে গেলাম অন্ধকারে, জানো আমি অনেক কষ্ট করে তোমাকে খুঁজে পেয়েছি কিন্তু ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, ওরা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে, দেখো ওরা কি করেছে।
অনেক দূর থেকে একটা শব্দ হচ্ছে, আসতে আসতে শব্দটা আরো বড় হচ্ছে, খুব বিরক্ত বোধ করছিলো, হটাৎ জেগে উঠলো আকাশ ধরমর করে, বুকটা হাঁপড়ের মত উঠানামা করছে, চারিদিকে দিনের আলো ভরে রয়েছে। এদিক ওইদিক তাকাচ্ছে আর ডাকছে জুলি জুলি করে, এখনো ঘোরের মাঝে আছে সে। একটু ধাতস্থ হয়ে উঠলো পরক্ষনেই, বুঝতে পারলো মিউজিক শুনতে শুনতে সোফাতেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো আর সপ্ন দেখছিলো জুলি এসেছে তার কাছে, তার ভালোবাসা যাকে ও ভালোবেসে ছিলো মন উজাড় করে কিন্তু পাইনি। বড় এক নিশ্বাস ছাড়লো এর মাঝে ফোনের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেছে, স্রাগ করলো আর মনে মনে বললো যে ফোন করেছে সে দরকার হলে আবার করবে, নিজ রুমে চলে গেল সে ফ্রেস হওয়ার জন্য, একেবারে গোসল করে বের হয়ে গায়ে এক ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী গায়ে চড়ালো।
নীচে নেমে আসলো ও টেবিলে সালাম কাকা ব্রেকফাস্ট দিচ্ছে, সে বসে জুসের গ্লাসটা টেনে নিলো, মনটা ভারী হয়ে আছে, বারবার জুলির কথা মনে পড়ছে। ঘরের কলিং বেল বেজে উঠলো, সালাম কাকা দরজা খুলতে গেলো, আকাশ অমলেটের প্লেট টেনে নিয়ে ব্রেডে মাখন লাগিয়ে খাওয়া শুরু করলো, সালাম কাকা সামনে এসে বললো দরজায় থানা থেকে লোক এসেছে, আপনার সাথে দেখা করতে চাই, আকাশ আধ খাওয়া খাবার রেখে উঠে গেলো, ড্রয়িংরুমে এসে দেখলো এস আই সোলেমান দাঁড়িয়ে, আকাশকে দেখে সালাম দিয়ে বললো “স্যার আপনাকে সালাম দিয়েছে, কয়েকবার ফোন দিয়ে আপনাকে না পেয়ে আমাকে পাঠালো”, আকাশ বললো কেন কোন সমস্যা? না স্যার তেমন কিছু না, আপনি গেলেই বুঝতে পারবেন। আকাশ তাকে একটু অপেক্ষা করতে বললো, কিচ্ছুক্ষন পরেই সে নিজের জীপে রওনা হয়ে গেলো, কিছু দূর আসার পর সোলেমান বলল, স্যার ডানের রোডে যেতে হবে, আকাশ একটু আশ্চর্য হোলেও কিছু না বলেই ডানের রোড ধরলো, মিনিট ১৫ চালানোর পর সোলেমান বললো, স্যার ওই সামনে সাইড করে রাখুন। গাড়ী থেকে দুজনেই নামলো আর সোলেমানের দেখানো পথে হেঁটে পাহাড় থেকে নিচে নামতে লাগলো, নীচে অনেক লোকের ভীড় দেখা যাচ্ছে, আকাশ নিচে নেমে এলে ওসি বান্দরবন এগিয়ে আসলো আর সালাম দিয়ে বলল আকাশ স্যার আসেন আমার সাথে, একটা ডেডবডি পাওয়া গেছে আর তার হাতের মুঠিতে আপনার নাম ঠিকানা লেখা একটা কাগজ পাওয়া গেছে আর এই কথা শুনেই আকাশের শরীর কাঁপতে লাগলো আর ওসি কি বলছে তা আর শুনতেই পাচ্ছেনা, কান যেন ভোঁ ভোঁ করছে, ওসি ওকে নিয়ে এলো মৃত দেহের সামনে, সাদা কাপড়ে ঢাকা, ওসির ইশারায় এক কনেস্টেবল ঢাকা দেওয়া মুখটার কাপড় তুলে ধরতে গেল আর হটাৎ এক হাওয়া এসে কাপড়টা পুরোই উড়িয়ে নিলো আর আকাশ হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লো, সে খুব আলতো করে মুখে হাত ভুলাতে লাগলো, তারপর যেন ব্যাথা না পায় তেমন করে অনেক আদরে মাথাটা তুলে নিলো নিজের কোলে, চোখ দিয়ে ধরধর করে জল পড়ছে, অনেক আবেশে কপালে চুমু দিলো, তারপর ঢলে পড়ে গেল ওখানেই।
চলে গেলো আকাশ একেবারের জন্যেই যেখান থেকে আর কেউ ফিরে আসেনা, যেখানে সে ফিরে পেলো তার প্রিয়তমা জুলিকে, তারা একে অপরকে নিয়ে চলে গেলো অন্য লোকে।।
সমাপ্ত।
২০টি মন্তব্য
মামুন
ভাল লাগল। বাকী পর্বগুলি পড়ে নেব।
শুভেচ্ছা জানবেন।
ইঞ্জা
অক্লান্ত ধন্যবাদ ভাই। 🙂
ব্লগার সজীব
স্বপ্নের বাস্তবায়ন এমন হয় কেনো? মিলন ও তো হতে পারতো।
ইঞ্জা
আমি বুঝাতে চেয়েছি জুলি আসলেই এসেছিল আকাশের কাছে কিন্তু আত্মা হয়ে, সপ্নে। কিছু কিছু ভালোবাসার হয়ত এমনই মিলন হয় অন্যলোকে।
ব্লগার সজীব
ভাইয়া আপনি বিভাগ নির্বাচন সঠিক করে দিন। এটি তো গল্প। আপনি বিবিধ বিভাগে প্রকাশ করেছেন।
ইঞ্জা
ওমা বলেন কি এইসবও আছে নাকি এইখানে, নতুন বল্গার হিসাবে মাফ করে দিন প্লিজ। 🙂
জিসান শা ইকরাম
আপনার লেখা খুঁজে পেতে বিভাগ নির্বাচনটা জরুরী। গল্প বিভাগে পাঠক ক্লিক করলে সোনেলায় প্রকাশিত সব গল্প গুলো পাঠকের সামনে চলে আসবে। আপনার লেখাটি কিন্তু পাঠক এর সামনে আসবে না।
আপনি সম্ভবত কোন কিছু সিলেক্ট করেননি, তাই বিবিধ বিভাগে প্রকাশ পেয়েছে।
ইঞ্জা
আসলেই জানা ছিলোনা ভাইজান, ভবিষ্যতে খেয়াল রাখবো।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বাস্তবেতো প্রেম এখন দূহৃ ব্যাপার কল্পনাতে হলে ক্ষতি কি তবুও হয় না কেনো?সুন্দর লেখা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ও ফুলেল শুভেচ্ছা
মেহেরী তাজ
এটা কি হইলো?? ;(
সমাপ্ত টা কি অন্য ভালো মানে যাকে বলে হ্যাপি ইন্ডিং তা হইতে পারতো না?? ;(
ইঞ্জা
হ্যাপি এন্ডিং সব প্রেমের বেলায় হলে তো কথায় ছিলোনা আপু, সবাই প্রেম করতো কিন্তু কিছু ভালোবাসা স্বয়ং সৃষ্টিকর্থা অন্যলোকের জন্যও হয়ত রেখে দেন।
আন্তরিক ধন্যবাদ আপু কারন বুঝতে পারছি আপনাদের গল্পটি ভালো লেগেছে। 🙂
জিসান শা ইকরাম
সমাপ্তিটা বেদনাদায়ক,
ভালোই লিখছেন ভাই।
ইঞ্জা
অবিরাম ধন্যবাদ ভাইজান, খুব আনন্দিত হলাম আপনাদের মত বোদ্ধা পাঠক পেয়ে। 🙂
আবু খায়ের আনিছ
ভালো লিখেছেন, বেদনাদায়ক সমাপ্তি। প্রেমের গল্প গুলো এমন হয় কেন? শুধুই বেদনার?
ইঞ্জা
হয়ত বেধনায় গল্পকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করে, ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আচ্ছা এভাবে বিষাদ মাখিয়ে শেষ করে দিতে পারলেন? 🙁
ঠিক হলোনা, মন খারাপ করিয়ে দিলেন।
ইঞ্জা
তাহলে কি সফল হলাম গল্প লেখাতে?
ধন্যবাদ আপু আমি সম্মানিত হলাম আপনাদের মতো বোদ্ধা পাঠক পেয়ে। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
গল্প চাই। আমার খুব প্রিয় ছোট গল্প। লিখুন না যদি সময় থাকে।
ইঞ্জা
দেখি আপু, অভ্যাস নেই তো চেষ্টা করবো।