সাল ২০০৬।
তখন আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। একটা সরকারি বিদ্যালয় এ লিখাপড়া করতাম। স্কুলটি ছিলো ঠিক আমার বাসার সামনে। বাসা আর স্কুলের ব্যবধান এ ছিলো শুধু মাত্র একটা রাস্তা। তাই যখন তখন ঘরে চলে আসার সুযোগ ছিলো। আসতামও।
একদিন টিফিন এর ছুটিতে বাসায় এসে আমি চমকে যাই। ছোট ছিলাম তো??? আর চঞ্চল ও ছিলাম বেশ। এখন যে নেই তা না। এখনো আছি। তবে মনে হচ্ছে মাত্রাটা কিঞ্চিৎ কমেছে। যা বলছিলাম…তখন ছোট ছিলাম তো??? ছোটদের খুশিও আবার বেশী হয়। আমার জন্য একটা পড়ার টেবিল বানানো হয়েছে!!!! তিন তাক ওয়ালা ডেক্স সহ। খুব খুশি হয়েছিলাম আমি।
এই টেবিলটা এখন বুড়ো হয়ে গেছে। গাছের পোকাগুলো আমার টেবিলটা কট কট…কুট কুট…কুটুশ কুটুশ করে খাচ্ছে। পোকাগুলোকেও আবার মারতে পারিনা আমি। মায়া হয়। কালো, লম্বা লম্বা শিং ওয়ালা লম্বাটে পোকা। সুন্দরই লাগে আমার। ঐ পোকাগুলো আবার খুব শান্ত প্রকৃতির হয়। তাদের দেখা পাওয়া খুব মুশকিল। অনেক দিন পর পর বের হয়ে আসে। এখনো আমি তাদের আমার পড়ার টেবিলে কাটকে গুড়ি করার কুট কুট করে হালকা শব্দ শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু দেখতে পাচ্ছিনা। পড়ার টেবিলের সাথে সাথে যেন আমি তাদেরও ভালোবেসে ফেলেছি। তাই চাইলেও মারতে পারিনা। মায়া হয়। আর ওরা দিব্যি আমার টেবিলে ফুটো করে চলেছে। আর ঘুণে ধরা আমার বেচারা পড়ার টেবিলটা বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা…টেবিলকে কি বেচারা বলা যায়??? কিচ্ছুক্ষণ আগে আমার টেবিলটা ব্যান্ডেজ করছিলাম। মানে টেবিলের ফুটোগুলো বন্দ করে দিচ্ছিলাম। প্রতিটা ফুটো বন্দ করে দিয়েছি। আচ্ছা…ভেতরে পোকাগুলো কি করে বেঁচে আছে??? টেবিলের কাঠ কামড়িয়ে??? ওদের কি অক্সিজেন এর প্রয়োজন হয় না??? নাকি বাতাসে মিশ্রিত অক্সিজেন পৌঁছানোর জন্য কোন পথ আছে তাদের??? তাহলে কি মানুষের মত পোকাড়াও গুপ্ত পথ ব্যবহার করে??? ইশ! যদি ডোরেমন সত্যিই থাকতো…..তাহলে আমি তার টর্চের মত গ্যাজেট টা দিয়ে নিজেকে ছোট করে দেখে আসতাম তাদের গুপ্ত পথ…তাদের গুপ্ত দুনিয়া।
১৮টি মন্তব্য
ইকবাল কবীর
ভালো লিখেছেন অনেক। ভালো লেগেছে খুব।
সায়মা নুর নাতাশা
ধন্যবাদ… 🙂
ইনজা
চমৎকার ভাবে আপনার ভালো লাগা প্রকাশ করেছেন দেখে মুগ্ধ হলাম।
সায়মা নুর নাতাশা
ধন্যবাদ বাপি… 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
হায়রে বোন টেবিলের সাথে কি আপনিও বুড় হয়ে গেছেন।
হ বোন আমার মনে হয় অক্সসিজেন কি তাঁদের লাগে না।
ভাল লাগলো সুন্দর।
সায়মা নুর নাতাশা
নাহ…আমি এখনো ছোটোই আছি 😀
ধন্যবাদ…
জিসান শা ইকরাম
বাহ! চমৎকার।
পড়ার টেবিল নিয়ে এমন চমৎকার ভাবনা এই প্রথম পড়লাম
টেবিলকে বেচারা বলা যায় কিনা? বলুন, ভালবেসে কোনকিছুকে যা ইচ্ছে বলা যায়।
ঘুনে পোকা গুলো আপনার টেবিলকে শেষ করে দিচ্ছে আর আপনি দশ বছর যাবত তাদের প্রতি মায়া দেখিয়ে আসছেন
এদের বাঁচার জন্য যে অক্সিজেন দরকার তা যে কোনো ছিদ্র দিয়ে পাচ্ছে এরা, যা আপনার নজর এড়িয়ে গিয়েছে।
যা গুপ্ত পথ।
যাদু জানলে আপনাকে পোকা বানিয়ে দিতাম, যাতে দেখে আসতে পারেন আপনার পোকা বন্ধুরা কি করে 🙂
ভালো লেগেছে আপনার লেখা।
সায়মা নুর নাতাশা
হুম…ভালোবাসলে…ভালোবাসার যে কোনোকিছুকে ভালোবেসে অনেক কিছু বলা যায়।
মায়া…নীরিহ পোকাগুলো…একরকম মায়া আছে এদের অবয়বে…সুন্দর ই লাগে দেখতে…শান্ত শান্ত পোকা… 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
বেশ লিখেছেন।
সায়মা নুর নাতাশা
ধন্যবাদ নীলা আপু… <3
মেহেরী তাজ
আপনি সোনেলায় নতুন নাকি আমি আপনাকে পরে দেখছি জানি না তবে ওসোনেলায় স্বাগতম। লেখা বেশ হয়েছে! পোকা হওয়ার শখ এও কিন্তু এক্কেবারে নতুন….. 🙂
সায়মা নুর নাতাশা
জ্বি আপু…নতুন।
ধন্যবাদ… 🙂
সকাল স্বপ্ন
ভালো লাগার—– লেখা—
সায়মা নুর নাতাশা
ধন্যবাদ… 🙂
মৌনতা রিতু
অনেক ভাললাগা রেখে যাচ্ছি। আমি দেখতে পাচ্ছি ছোট সেই তোমার আনন্দ উল্লাস। পোকার আসা যাওয়া দেখছ মুগ্ধ হয়ে। দোয়াকরি ডোরেমনের গেজেট পেয়ে যাও।
তোমার লেখা পড়ে আমার পোটলার মানে আমার ছোট ছেলের টেবিলটার কথা মনে পড়ল। আমার দুই ছেলেকেই আমি ডাইনিং টেবিলে পড়াই। বড়টার রিডিং টেবিল বানানো হল। ছোটটার মন খারাপ। দুবছর পর ওকে যখন বানিয়ে দিলাম, কি তার আনন্দ!
ভালোথেকো। সুন্দর লেখ তুমি। লিখে যাও সব অনুভূতিগুলো।
সায়মা নুর নাতাশা
ধন্যবাদ ম্যাম…
এতোদিনে মনে হয় ওদের টেবিলেও পোকার আগমন ঘটেছে 😀
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
অন্যরকম একটা লেখা পড়লাম।
ইন্টারেস্টিং।
ভাল থাকবেন
সায়মা নুর নাতাশা
ধন্যবাদ…
চেষ্টা করবো আরও ইন্টারেস্টিং কিছু দেওয়ার… 😀