জুলেখা। সুন্দরী, মর্ডান, স্মার্ট সব আধুনিক গুণে গুণান্বিত এই মেয়ে। তবে এই মেয়ের সবচেয়ে ভালো গুণ হলো নামাজ পড়েই হিন্দি সিরিয়াল দেখা :p
আব্দুল গফুর সামাদ! লোকে গফরা কইয়া ডাকে। চেয়ারম্যানের ডান হাত। সিকদার মেয়া ১৫ বছর ধইরা এলাকার চেয়ারম্যান। সিকদারের বিপক্ষে কেউ ভোটে দাঁড়াইলে গফরা দুনিয়া থেইক্যা তাকে গুডবাই কইরা দেয়। :@
তখন ছিলো বর্ষাকাল। আজম খানের সেই বিখ্যাত গানটা তখন চা দোকান দখল করছিলো।
গফরা সেই গানের মর্মাথ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। সুযোগের সৎব্যবহার করাই যেন এই গানের মূল পতিপাদ্য বিষয়।
গফরা গানটা ফুরফুরে মেজাজে থাকলে গুনগুনায়। সিকদার মেয়ার বিষয়টা নিয়া মনে ভীষণ খকটা! ঘরে সুন্দরী মাইয়্যা! গফরা যদি কিছু কইরা বসে!!! সমাজে মুখ দেখাবে কি করে!! গফরা লম্পট বইলা খ্যাত। তারে স্পেশাল নজরে রাখে সিকদার চেয়ারম্যান।
গফরা জীবনে চিরকুমার থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। কিন্তু চেয়ারম্যানের মাইয়্যা টারে তার মনে ধরছে। মুনিবের মেয়ে! নজর দেয়া মহাপাপ কিন্তু সময় এখন শীতকাল। :p
উষ্ণতা খুঁজে বেড়ায় গফরার বিশাল দেহ। মনে মনে পণ করলো বিয়ে যদি করে তবে জুলেখারেই করবে! বিদেশী সিগেরেটটা জ্বালিয়ে পরিকল্পনা করতে লাগলো! সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না। আঙ্গুল অবশ্যই বাঁকা করতে হবে।
জুলেখা একা ঘুমায়। তার ঘরটাও আলাদা। চেয়ারম্যান বাড়ি নাই। টাকা দিয়া চাকর বাকরগুলারে কিন্না নিছে।
রাত ২:২০ মিনিটে গফরা লম্পট জুলেখার ঘরে টোকা দিছে। জুলেখার সাড়া শব্দ নাই। আবার টোকা দিয়া দরজার কড়া নাড়লো এবার জুলেখা সজাগ হইছে তবে শব্দ করে না। হিন্দি সিরিয়াল দেখা এই মেয়ের মাথায় বুদ্ধির ঢেঁকি!! ভুঁত ভাবিয়া এটাচ বাথরুমে গিয়ে অযু করে তাহাজ্জুদ নামাজে দাঁড়াইয়া গেল!
গফরা লম্পট দরজার ফাঁক দিয়া এক নজর দেখে নিলো। আকাশ ভাইঙ্গা পড়লো তার মাথায়। এখন কিছু করলে জান্নাত তো দূরে জাহান্নামেও ঠাঁই হবে না গফরার। চোর হইলেও ঈমানদার টাইপ অবস্থা। ২০ হাজার টাকা জলে গেল। জব্বর একটা সুযোগ ছিলো। গফরা কেন জোর গলায় ডাক দিলো না সে তা বুঝতেছে না।
গফরা লম্পট সেদিন আর কিছু করলো না। রাতে ঘুমিয়েছে হতাশা আর এক অজানা তৃপ্তি নিয়া। হয়তো জীবনে একটা ভালো কাজ করছে সেজন্য তার আত্মা খুশি।
গফরা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে সে গাছে বাঁধা অবস্থায় আছে। শরীরে কাপড় আছে শুধু একটা ছোট হাফপ্যাণ্ট! সূর্য এখনো উঠে নাই। হালকা কুয়াশা পড়ছে। পাঁচ ছয়টা বাচ্চা পোলাপাইন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় গফরা ফ্যালফ্যাল কইরা তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। তারাও এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে গুফরার দিকে!
চেয়ারম্যানের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল পড়ছে। জীবনের সব কুকর্মের ফল আজ ভোগ করতে হলো তার মেয়েকে। চেয়ারম্যান মেয়ের ঘরটার দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখের জল ফেলছে!!
চারদিকে এখনো জানাজানি হয় নি। চেয়ারম্যান ধীরগতিতে তার মেয়ের ঘরের দিকে গেল। মেয়ে নামাজ পড়ে নামাজের বিছানায় বসে ছিলো!! রাতে ভূতের খটখট করা শব্দ সে এখনো মন থেকে সরাতে পারে নি।
সিকদার মেয়া দরজায় কড়া নাড়লো। মেয়ে চমকে উঠলো। সিকদার কাঁদো গলায় বলে উঠলো ” জুলেখা মারেএএএ দরজা টা খোল মা ”
জুলেখা হকচকিয়ে তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে দিলো। .
” কি হয়েছে আব্বু??
সিকদার মেয়া ভিতরের স্বাভাবিক অবস্থা দেখে কিছুটা চমকিত হলো।
” রাতে গফরা তোর ঘরে ঢুকছিলো??
না আব্বু! কি বলো এসব!! জানো রাতে আমার দরজায় ভূতে কড়া নাড়ছিলো! আমি ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। তখনই নামাজে দাঁড়িয়ে যাই। তারপর আর কোন শব্দ হয়নি।
সিকদারের মনে নতুন ভাবান্তর হলো। গফরার ভিতরে একটা ফেরেস্তা বসবাস করে। আর সে কি না কি ভাবলো।চাকর বাকর গুলাও বদের হাড্ডি!!! কি সব আজেবাজে কাহিনী বানাইয়া কইলো!!
সিকদার মনে মনে ঠিক করে ফেললো গফুরের সাথেই জুলেখার বিয়ে দিবে!
মাঘ মাসের ১৬ তারিখ। ধুমধাম করে গফুর আর জুলেখার বিয়ে হলো।
গল্পটা শীত কালে লিখেছিলাম , তখন পোষ্ট করা হয় নি ! শীত বিদায় নিয়াছে আর আমি এখন সেটা উন্মুক্ত করলাম 😀
৩৩টি মন্তব্য
ব্লগার সজীব
নজর দেয়ার সাথে শীতকালের সম্পর্ক কি? চিন্তার বিষয় ^:^ ^:^ ব্যাপক মজারু লেখা :p
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
সম্পর্ক আছে।
বুঝেন ও বটে।
তবে না বুঝার ভাব :p
ইদানিং মজারু ছাড়া কিছু পারি না 😀
ব্লগার সজীব
:D) :p
ছাইরাছ হেলাল
আমাদের এখানে বিয়ে-শাদিতে শীত-গ্রীষ্ম লাগে না।
তাই চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
তা লাগে না।
তবে শীতকাল ছাড়া বিয়া শাদি জমে না! :p
ইলিয়াস মাসুদ
আজকাল বাংলা ছিঃ-নেমা যে খুব দেখতাছেন তা বুগা যায়
দারুণ পড়লাম কিন্তু
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
আজকাল দেখা হয় না।
আগে দেখতাম!
এখন স্মৃতিচারণ করি।
দারুন পড়ছেন জেনে খুশি হইলাম। 🙂
অরুনি মায়া
আরে বাহ্ এ যে পুরাই বাংলা সিনেমা | আপনি নায়ক হয়ে সিনেমাটা বানিয়ে ফেলুন | আপনাকেই তো বাংলাদেশ খঁজছে :p
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
হা হা হা
নায়ক হলে সিনেমা বানামু!! :p
বাংলাদেশ আমারে খুঁজে না। খুঁজে মাল্টিটেলেন্টদের। আপনি হলেন তাদের একজন।
অরুনি মায়া
আমিতো গায়িকা নই,কবি নই,লেখিকা নই, বা নায়িকা হবার মত ভূবন ভুলানো রূপও নেই, তাহলে ট্যালেন্ট দেখলেন কই? 😮
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
আমি যাহা দেখি আপনি কি তাহা দেখেন!
এই খেলাটা খেলতে হবে ….
অপার্থিব
হাহাহা… ভাল লেগেছে গল্পটি।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
গল্প ভালো লাগছে?
না আজকেই পার্টি দিতে হবে!
গল্প যখন ভালো লাগছে বাকী কাজেও হাত দিতে হপে 😀
আবু খায়ের আনিছ
সুক্ষ্ম একটা বিষয় তুলে এনেছেন। ভালো লেগেছে গল্প। সিনেমা বেশি করে দেখুন।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
;(
সবাই খালি সিনেমা সিনেমা করে ক্যান!!
আবু খায়ের আনিছ
দর্শক কমে যাতে না যায় তাই।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
হা হা হা
নাসির সারওয়ার
ভালো রসবোধের সিনেমা বানাবো। পাত্র পাত্রীরা যোগাযোগ করন।
২০ হাজার টাকার বিষয়টা অস্পষ্টই থাক।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
সিনেমাতে পাত্র পাত্রী!!!
এ কেমন তর কথা!
জিসান শা ইকরাম
সুন্দরী, মর্ডান, স্মার্ট সব আধুনিক গুণে গুণান্বিত মেয়ের নাম জুলেখা!!!!!!!!!!!
এত্ত মর্ডান নাম রাখা শুরু হইছে নাকি? 🙂
গল্পটায় চমক আছে ভালোই
চলুক এমন গল্প।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
জুলেখা তো আধুনিক নামই।
মালেকা জরিনা সখিনা হৈলে এক কথা ছিলো।
গল্পে চমক ছিলো যেনে খুশি হইলাম। 🙂
জিসান শা ইকরাম
যাক আধুনিক , অতি আধুনিক না 🙂
খসড়া
আপনি সিরিয়ালের জব্বর রাইটার। শুভকামনা।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
হা হা হা!
আমি সিরিয়াল লেখক! ^:^
নীলাঞ্জনা নীলা
কি যে লিখি আমি! সিনেমা বানানো দরকার।
এমন কাহিনীর জন্য পাত্র-পাত্রী দরকার, বিজ্ঞাপন দিয়ে ফেলেন।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
ছিঃনেমা বানান এত সহজ কাজ নাহ্!
আমাকে দিয়া হবেও না।
অনিকেত নন্দিনী
জুলেখার মত সিরিয়াল দেখা ধার্মিক পাত্রী দরকার এই ছিঃনেমার পাত্রী থুক্কু নায়িকা চরিত্রে। নায়ক চরিত্রে কারে লইবেন উহা আপ্নের উপ্রেই ছাইড়া দিলাম। :p
কাহিনী কইলাম জব্বর লেখছেন। এইবার কাহিনী ফিতাবন্দী কইরা ফেলান। 😀
বিশ হাজার টাকা দিয়াও তো দফারফা হয় নাই। সেই তো কইয়া দিছে! বেইমানগুলিরে কানের নিচে চটকনা দিয়া টাকা ফিরাইয়া লইয়া জুলেখারে দেওয়া উচিত। হেতির নামাজে খাড়ানির লাইগ্যাই তো জুলেখার লগে গফরার বিয়ার বন্দোবস্ত হইতাছে। :p
গফরা আর জুলেখার বিবাহ উপলক্ষ্যে এত্তগুলান শুভেচ্ছা। -{@
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
বর্তমান সময়ে এরকম নায়িকার অভাব হবে না!
কিন্তু নায়ক পাইতে সমস্যা।
আপনার জানা শুনায় আছে নাকি!!
:D) :D) বিবাহ উপলক্ষে শুভেচ্ছা!!
অনিকেত নন্দিনী
এই ব্লগেই আছে কয়েকজন। শীর্ষে অবস্থানকারী পোস্টে কিছু ব্লগারের ছবি দেয়া আছে।
দেইখ্যা লন, বাইছ্যা লন। 😀
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
:D) :D) :D) :D)
শুন্য শুন্যালয়
😀 আমিতো আপনার গল্পের পাংখা হইয়া গেলাম রে ভাউ। ইহারেই মনে হয় ভাগ্য বলে, আর অইযে সিনেমার রিভিউ লেখছিলেন তাতে কিন্তু এই উপকারের কথা বলেন নাই। ক্যাম্নে ক্যাম্নে এমুন গল্পকার হওয়া যায়। ব্যাপক মজারু 😀
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
আহা!
এমন মন্বব্যথা দর্শন করিয়া আমার হৃদয় সুশীতল হইয়া গেল!
ছিঃনেমার রিভিউ সম্পর্কে কি ইঙ্গিত করিলেন বুঝিতে পারি নাই!
আমি এমন লিখি আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া। 🙂
মজারু করিয়া একখানা উপন্যাস লিখবো ভাবছি! এখন দেখছি বাস্তবায়ন করিতে হইবে। 😀
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
*মন্তব্য