দিনের আলোর সাথে এখন আর আমার কথা হয় না। আলোর অহমিকায় দিন বরাবরই স্বার্থপরের মত আচরণ করে গেছে এই আমার সঙ্গে। আমি যতবারই আলোক উজ্জ্বল দিনকে আমার কথাগুলি বলেছিলাম, ঠিক ততবারই সে আমার কথা গুলি অন্য সকল কথার আড়ালে লুকিয়ে নিয়েছে। আমি অবাক হয়ে দেখেছি ঐ শত সহস্র কথার ভিড়ে আমার কথা গুলিকে হারিয়ে ফেলতে, আমাকে হারিয়ে ফেলতে।
আমি এখন রাতের সাথে কথা বলি। রাতের কাছে আলো না থাকতে পারে কিন্তু তার সংগ্রহে থাকা স্নিগ্ধতা নিয়ে সে কখনোই বড়াই করে বেড়ায় নি। বরং আগ্রহী শ্রোতার মত নীরবে সে আমার কথা গুলি শুনে গেছে খুবই মনোযোগ দিয়ে। কখনোই কোন কথা শুনে বিরক্তি ভাব ফুটিয়ে তোলেনি, কিংবা বৈরি মনোভাবের প্রকাশ ঘটাবার অবকাশ দেয়নি।
বরাবরই যখন আমার কথা ফুরিয়েছে তখন সে বিদায় নিয়েছে আলগোছে। আমার দুঃখ গুলি, বিষণ্ণতায় ভরা কথা গুলি, আমার কষ্ট গুলি, অপূরণে পরিপূর্ণ অনুভূতির অভিব্যক্তি গুলি সে বয়ে বেড়িয়েছে দুনিয়ার এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে। সারা দুনিয়া খুঁজে ঐসবের বিপরীতে আমার জন্যে কুড়িয়ে নিয়ে এনেছে প্রশান্তি। আত্মতৃপ্ততায় সিক্ত করে আবারও আমার জমে থাকা কথা গুলি শুনতে বসে পড়েছে গা ঘেঁষিয়ে।
কখনো কখনো তার এইসব কাণ্ডকারখানা দেখে বিরক্তও হয়েছি। নিজের ক্ষোভ ঢেলে তার স্নিগ্ধতাকে তিরস্কার করেছি। অপমানের ষোলকলা পূর্ণ করে দূর দূর করে তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছি। তার দেয়া উপহারের আত্মতৃপ্তিকে রাজপথে ঢেলে দিয়ে আমার নোংরা নগ্ন পায়ে মাড়িয়ে দিয়েছি তারই সামনে। উপহাস করেছি তার এই বোবা অস্তিত্বকে নিয়ে।
এতকিছুর পরেও সে তার মনে বিদ্বেষ নিয়ে ফিরে আসেনি, আনে নি কোন পরিবর্তন তার কোমলিয়তায়। কেড়ে নেয়নি তার দেয়া উপহারের ঐ আত্মতৃপ্তিগুলিকে, ছুড়ে দেয়নি কোন অভিশাপ তার বোবা অস্তিত্বকে নিয়ে উপহাস করায় শাস্তি রূপে। বরং আরও বিনীত হয়ে পরম বন্ধুর মত ফিরে এসেছে। নিজের অক্ষমতায় লজ্জা পেয়ে পশ্চিম দিগন্ত রাঙ্গা করে তাতে মুগ্ধ হতে বাধ্য করেছে। কোমল সন্ধ্যা হতে গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে এই আমার কথা গুলিকে মনে মনে সাজিয়ে নেবার জন্যে। আর তারপর নির্জন রাতে আবারও গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনে গেছে আমার সকল অভিযোগ, অপ্রাপ্তি আর অশান্ত সকল আর্তনাদ গুলিকে। আমি বরাবরই তার এই মহান হৃদয়ের সামনে নিজেকে হারিয়েছি। হারিয়েছি মনের অশান্ত অংশটাকে তার কোমল নিস্তব্ধ অন্ধকারে।
আমি অন্ধকারের মানুষ। আলোর দেশে নিরুদ্দেশ হয়ে অন্ধকারেই আপন পথ খুঁজে নিয়েছি অবসরে…
২০টি মন্তব্য
নীলাদ্রি
সে হয়তো আপনার নাহ, কারণ আপনার হলে
সে আর কারো কাছে যেতো না বা এত ডাকাডাকিও
করা লাগতো নাহ যাইহোক অসাধারণ
লিখেছেন অসংখ্য অনুভূতি মিশ্রণে…..
অলিভার
সে কিন্তু বারবারই ফিরে ফিরে এসেছে শত লাঞ্ছনার পরেও।
সময় নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ 🙂
স্বপ্ন নীলা
অসম্ভব সুন্দর হয়েছে — যে অন্ধকারের ভিতর পথ খুঁজে নেয় এবং অন্যকে আলো দেখাতে পারে সেইতো সত্যিকারের মানুষ
শুভকামনা রইল
অলিভার
অন্ধকারের পর অন্ধকারের মতই অন্ধ হয়। বিপদকে কখনোই আলাদা করে পথিককে দেখিয়ে দেয় না। তবুও কিছু মানুষ ঐ অন্ধকারেই ভালো থাকে।
সময় নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ 🙂
জিসান শা ইকরাম
অন্ধকার ভালো না।
লেখা ভালো হয়েছে।
অলিভার
অন্ধকারের পথটা মোটাই ভালো নয়। তবুও রাতের মত এমন মনযোগী শ্রোতা দ্বিতীয়টি হয় না।
ধন্যবাদ ভাইয়া সময় নিয়ে লেখাটি দেখার জন্যে 🙂
আবু খায়ের আনিছ
অনেক আবেগ আর অনুভুতি মিশ্রিত কথা।
আমি অন্ধকারের মানুষ। আলোর দেশে নিরুদ্দেশ হয়ে অন্ধকারেই আপন পথ খুঁজে নিয়েছি অবসরে…
ভালো লাগল। শুভ কামনা আপনার জন্য।
অলিভার
সময় নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ 🙂
শুভেচ্ছা নিরন্তর 🙂
লীলাবতী
ছবির দিকে তাকিয়েই আছি।লেখাটি পড়ছি তখনো মাথায় ছবির দৃশ্যটি ভাসছে।দারুন ভালো লাগলো ভাইয়া।রাত আসলে একান্ত একার।
অলিভার
রাত প্রায় সবার জন্যে একার। কিন্তু এর বাইরেও কিছু মানুষ আছে যাদের জন্যে “নিজের” বলে কোন সময় থাকে না।
সময় নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ 🙂
ব্লগার সজীব
অন্ধকারের প্রেমে পড়তে হবে দেখছি 🙂 (y)
অলিভার
কে জানে! হয়তো পড়েই আছেন শুধু আলাদা করে ভেবে দেখেননি কখনো 🙂
শুভেচ্ছা জানবেন 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
সুন্দর তুমি অন্ধকার!
মনকাড়া অন্ধকারের বুননে মসৃণ কারুকাজ। (y) -{@
অলিভার
ধন্যবাদ আপু 🙂
খেয়ালী মেয়ে
রাতের নির্জনতা আমারও অনেক ভালো লাগে 🙂
ভালো লাগলো আপনার লেখাটা (y)
অলিভার
নির্জনতা ভালো লাগে না এমন লোক বোধ করি নেই। তবে অন্ধকার নয়, আলোতেও মানুষ তার নির্জনতা খুঁজে নিতে পারে।
সময় নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ 🙂
শুভেচ্ছা জানবেন 🙂
স্বপ্ন
আত্মকথা ভালো লাগলো ভাইয়া,একটি আলাদা ভিন্ন ধরনের লেখা।
অলিভার
ধন্যবাদ 🙂
নিরানন্দের লেখা, একবার, দু’বার পড়তে ভালো লাগে। বারংবার এইসব ভালো লাগে না।
শুভেচ্ছা জানবেন 🙂
শুন্য শুন্যালয়
অন্ধকার ভীতি কাটিয়ে দিলেন দেখছি। কিন্তু অন্ধকার কোথায়? চারিদিকে আলো আর আলো। রাতের বাঁতি, চাঁদের আলো।
একা একা কথা বলার অভ্যাস ভালো না :p
অলিভার
সেটাই কিন্তু একটা বড় ধরণের সমস্যা। সত্যিই, অন্ধকার কোথায়! আমরা তো তাকে দূর করার জন্যে চারিদিক আলোকিত করে রাখছি। তবে এর মাঝেও অন্ধকার ধরা দেয়। যে ধরতে পারে তার হয়েই ফিরে ফিরে আসে।
ইয়ে… মানে…. অন্য মানুষের সাথে রাত-বিরাতে কথা বললে মানুষ খারাপ ভাববে। তাই একা একা কথা বলাই নিরাপদ :p