
যৌতুকের জন্য ইলেকট্রিক টেস্টার দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে!
যৌতুকের বলি মেয়েটির নাম সুখী (যার কপালে সুখ বলে কিছু নেই)। ঈদের আগের দিন স্বামী, দেবর, ভাসুর ও ননদ মিলে হাত-পা বেঁধে এ কাজটি করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সাভারের জিঞ্জিরা এলাকায়। স্বামী রবিউল এখন সাভার থানা-পুলিশের হাতে। ঘটনার সময় একজন বুকের ওপর বসেছে, একজন চোখে লাইট ধরেছে, আর আরেকজন ইলেকট্রিক টেস্টার দিয়ে চোখ উঠানোর কাজ করেছে।
হাসপাতালে নেয়ার পর জরুরীভিত্তিতে সুখীর চোখের জন্য তিনটি ইনজেকশনের প্রয়োজন দেখা দেয়, একেকটির দাম এক হাজারেরও বেশি। কিন্তু সুখীর বাবার সেই সামর্থ্য নেই দেখে ডাক্তার নিজের পকেট থেকেই একটি ইনজেকশন কেনার দাম দেন।
এ অবস্থায় মেয়েটির পরিণতি কি?
জানা যায়, সুখীর স্বামী শ্বশুর থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলো। মাত্র মাস খানেক আগে সে বিদেশ থেকে একেবারে চলে এসেছে। আসার পর থেকেই আবার স্ত্রীর কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। এর আগেও এ কারনে সুখীকে মারধর করা, ঘরে বন্দী করে রাখা, খাবার না দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বিচার-সালিস হয়েছে। সুখীর মা-বাবা অনেক বার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন মেয়েকে আর শ্বশুরবাড়ি পাঠাবেন না। এবারও স্বামী বিদেশ থেকে আসার পর সাত দিনের মাথায় মারধরের ঘটনায় মেয়েকে নিয়ে আসেন তাঁরা। কিন্তু সুখী মা-বাবা কাউকে কিছু না বলে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর কাছে চলে যায়। আর এ যাওয়াই তাঁর কাল হয়ে উঠে।
বিয়ে নারী-পুরুষের একসাথে বসবাসের একটি ধর্মীয় ও সামাজিক স্বীকৃতি। সামান্য কারনে বিবাহ-বিচ্ছেদকে আমি সমর্থন করি না কিন্তু তারমানে এই নয় যে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে সম্পর্কটিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। একটা মানুষের সাথে বসবাস করার কিছুদিন পর থেকেই বুঝা যায় তার সাথে বাকী জীবনটা কেমন যাবে। যে মানুষের কাছে ব্যক্তি মানুষ থেকে অন্য বিষয়াদি গুরুত্ব পায়, আখেড়ে তার অবস্থান কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এটুকু বোধ নিয়ে যে মেয়েরা চলতে পারে না, তাদের জীবন এমন পরিণতির দিকেই এগিয়ে যায়।
আবেগ সেখানেই দেখানো উচিত, যেখানে এর মূল্যায়ন হয়।
কয়েক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রুমানা মঞ্জুরের জীবনেও এমন ঘটনা ঘটে।
এই ভিডিওতে শুনুন তাঁর করুন কাহিনী।
সবচেয়ে আগে জীবন। তাঁর জন্যই জীবনকে উৎসর্গ করা যায়, যে জীবনের মূল্য বুঝে।
আর যে বুঝে না, তাঁকে ছুড়ে ফেলাই উত্তম।
যৌতুক একটি ভয়ানক সামাজিক ব্যাধি। যৌতুককে না বলুন।
১৬টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
নারীরা অনেক ক্ষেত্রে সচেতন নয়
অবশ্য এজন্য দায়ী আমাদের সমাজ ব্যবস্থা
একজন নারীকে তার সমগ্র জীবনে কোন না কোন পুরুষের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়
আর এই নিয়মটা আমরাই তৈরী করে দিয়েছি।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
সমাজের ধারাটাই তো পুরুষতান্ত্রিক, তবুও এ সমস্যা মোকাবেলা করা যেতো যদি নারীরা সচেতন ও স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করতো।
প্রজন্ম ৭১
কবে আমাদের নারীরা এসব বুঝবেন?এমন খবরে অসহায় লাগে খুব।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
মেয়েরা মায়ের জাত বলেই হয়তো তাদের আবেগ একটু বেশি, তা না হলে মায়ের কোল দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ আশ্রয় হতো না।
কিন্ত বুঝতে হবে, যেখানে আবেগের মুল্য নেই সেখানে আবেগের প্রকাশ অর্থহীন ও হাস্যকর।
লীলাবতী
আপু এত ভালো এবং গুরুত্বপুর্ন পোষ্ট দিয়ে উধাও হয়ে গেলে চলে?আমরা নারীরা একটি অবলম্বন ধরে বেঁচে থাকতে চাই।বিয়ের পরে স্বামীরা হন সবচেয়ে আপন।তাই বারবার তার কাছেই ফিরে যেতে হয়।এবিষয়ে সামাজিক সচেতনতা দরকার।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
কোথায় যে উদাও হলাম গো লীলা!! ২৪ ঘন্টার ভেতরে পোষ্ট দিয়ে ঘুমালাম, ৮+২ ঘন্টা ডিউটি করলাম, রান্নাবান্না করে খেয়ে তারপর আবার চলে আসলাম। ২৪ ঘন্টা কিন্তু শেষ হয়ে যায় নি, আর অল্পক্ষণ বাকী। তাড়াতাড়ি ক্লিক। হাহাহাহাহা…..
হ্যাঁ, আপন! যদি আপন হয় তবেই ফিরে যাওয়া, নতুবা নয়। নিজেকে মেয়েমানুষ নয় মানুষ ভাবতে হবে।
রিমি রুম্মান
আহা রে! যে লোকটা কোনদিন তাঁর মেয়েটিকে উল্টা হাতেও একটা চড় দেন নাই, আদরে মানুষ করেছেন কন্যাকে। সে তাঁর চোখে একি দেখলেন। তাঁদের আরও সচেতন হবার দরকার ছিল। সংসার টিকিয়ে রাখার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
মা-বাবা মেয়েকে ঠিকই সাপোর্ট দিয়ে নিজেদের কাছে রেখেছিলেন, বরং মেয়ে নিজেই তাঁদের না জানিয়ে স্বামীর হাত ধরে চলে গেলো!
কেনো যে মেয়েরা আবেগকে কন্ট্রোল করতে পারে না। এখন সমাজও আগের অবস্থায় নেই, যে জাত গেলো, কূল গেলো বলে সোরগোল উঠবে।
অনিকেত নন্দিনী
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সবার আগে মূল্যায়ন করা হয় লোকে কী বলবে সেইটা। মনে করে দেখুন কয়েক মাস আগেই এক ডাক্তারকে কী করুণভাবে মৃত্যুর মিছিলে শামিল হতে হলো। কী দোষ ছিলো তার? সে তো তার বাবাকে ফোন করে বলেছিলোই সমস্যার কথা। সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য বাবা জানালেন তিন দিন পর এসে সবার সাথে কথা বলে সব ঠিক করে দেবেন। সেই ঠিক করা আর হলোনা।
আমাদের দেশে অধিকাংশ পরিবারেই এই দৃশ্য। জামাই কটু কথা বলেছে? ও হতেই পারে। বেচারা বাইরে খাটাখাটি করে। তার মেজাজ খারাপ হতেই পারে। চড় মেরেছে? ও কিছুনা। স্বামীর হাতে টুকিটাকি মার খেলে কিছু হয়না, যেখানে মারে সে জায়গা বেহেশতে যায় কিন্তু স্বামীর সংসার থেকে মেয়ে ফিরে এলে জাত যায়, সমাজের সামনে মুখ দেখাবার জো থাকেনা।
সমস্যা আমাদের মানসিকতায়।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
না ম্যম, সমাজ এখন আর আগের অবস্থায় নেই বরং মেয়েরাই নিজেরা হীনমন্যতায় ভোগে। কখনো কখনো সন্তানের নিরাপত্তাহীনতা বা ভবিষ্যৎ ভেবে এক পা আগালে পাঁচ পা পিছিয়ে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা একটা ফ্যাক্টর।
আর সমাজের কথা চিন্তা করে জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলা একেবারেই ঠিক নয়।
নীলাঞ্জনা নীলা
কন্যা সন্তানকে যেদিন থেকে বাবা-মায়েরা ভার ভাববে না, সেদিন গিয়ে যৌতুক বন্ধ হবে। তার আগে নয়। একটা ছেলের জন্য ৪/৫ জন মেয়ের পরেও বাচ্চা নেয়। মেয়েদেরকে কতোটা ছোট করে বাবা-মায়েরা?
অনেক কষ্ট হয় এসব লেখা পড়লে। বুকে যন্ত্রণা হয়।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
মা-বাবারা যেমন কন্যা সন্তানকে ভার মনে করে, তেমনি কন্যা সন্তান স্বনির্ভর হলেও তার উপর ডিপেন্ড করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কারন সমাজ তা স্বাভাবিকভাবে দেখে না বলে এক ধরনের হীনমন্যতায় ভোগে।
আজিম ফাইফ ও ফাইভ
কঠোর-কঠিন এবং অতি দ্রুত সাজা চাই এসমস্ত ফালতু পুরুষের। এসমস্ত জঘন্য পুরুষের প্রতি অনুকম্পা থাকবে কেন কারো?
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অবশ্যই কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। তা না হলে ক্রমাগত তা বাড়তেই থাকবে।
খেয়ালী মেয়ে
এই ব্যাধি থেকে সমাজ যে কবে সুস্থ হয়ে উঠবে?……….
মারজানা ফেরদৌস রুবা
যেদিন সামাজিকভাবে যৌতুক নেয়াকে লজ্জাকর বিষয় হিসাবে দেখবে, সেদিন হয়তো কিছু কমবে।
যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি।