মাঝে মাঝে সন্ধ্যা হতেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি, ফিরে আসি মধ্যরাতে। আবার কখনও বা বেরিয়ে যাই মাঝরাতে, ফিরে আসি ভোরের আযানের পরে। এমনটা করার কারন হল, আমি মনে করি নিজের আত্মা কে পরিশুদ্ধ করতে মাঝে মাঝে কিছু সময় একান্তভাবে ব্যয় করে প্রয়োজন। যে সময়টাতে থাকবে না কোন দুনিয়াবি চিন্তা। থাকবে শুধু আমার আমি, আর আমার আত্মবিবেক।
এমনই এক সন্ধায় হাটছিলাম রাস্তায় জিবনের বিভিন্ন রঙের সুস্বাদ এবং বিষাদ দুটোই নেব বলে। দেখছিলাম চা-ওয়ালা মামার চা বিক্রি। হঠাৎ কোথা থেকে যেন এক পত্রিকাওয়ালা এসে বলল “মামা পেপার লাগবে ?”। আমি বললাম না প্রয়োজন নেই। সে আমার দিকে তাকিয়ে রুদ্রকন্ঠে দৃপ্তভাবে বলল “মামা ভিক্ষা তো করছি না, বিক্রি করছি”। তার এই কথাখানির মূল্য এক মুহূর্তে বুঝতে পেরে লজ্জিত হলাম। তারা পরিশ্রমী, সুযোগ চায়। আমরা তো তাদের সুযোগ দেওয়া দূরে থাক, ভালো করে তাকাই না পর্যন্ত নিচু স্তরের বলে। কেন স্তর কি বিধাতার সৃষ্টি ???
মন খারাপ হয়ে গেল। ফিরে আসার পথে যা দেখলাম তা আরও অমানবিক, পাশবিক। দেখলাম সাদা টুপি পরা এক ভিখারি কে। তার পা দুটো অপরিপূর্ণ। অর্থাৎ হাঁটু পর্যন্ত আছে, বাকিটুক আর নেই। বিধাতার এমনি ইচ্ছা যে তার শারীরিক সীমাবদ্ধতা এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। সে কথাও বলতে পারেনা। লোক ডেকে যে বলবে আমায় সাহায্য করুন সেই ক্ষমতাটুকুও নেই। তাই পথচারীদের পা জড়িয়ে ধরছে আর মুখ দিয়ে অস্পষ্ট শব্দ উচ্চারন করছে। হঠাৎ এক ভদ্রলোক ওই ভিখারির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ভিখারি বরাবরের মত পা জড়িয়ে ধরল। এরপর যা ঘটল তা বাস্তব হতে পারে বলে মেনে নেওয়া কঠিন। সেই কথিত ভদ্রলোক ভিখারিটিকে প্রায় লাথি মেরে বসলেন। আর বলতে থাকলেন “কুত্তা, ছোটলোক, তুই আমার পা ধরিস ? তোর হাতে কি ময়লা নেই? কি করলি আমার প্যান্টটাকে ?” প্রতিবাদ আর কি করব, ঘটনার আকস্মিকতায় আমি বাকদরুদ্ধ, হতবিহব্বল ,স্তব্ধ হয়ে গেছি। এ যে অমানুষিকতারও নামান্তর। কি দেখলাম এ ????
হে নজরুল তুমি বলেছিলেঃ-
“গাহি
সাম্যের গান
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান”
আমি বুঝেছিলাম সেই বোবা, নির্বাক, পদবিহিন ভিখারির মুখের উচ্চারিত অস্পষ্ট আওয়াজের মানে কি। সে বলছিল যে “আমি মানুষ, পশু নই”। আর আমি ভাবছিলাম সেই মুখোশধারি ভদ্রলোকের কথা, মনে মনে বলছিলাম……
“তুই বেজন্মা”
১৩টি মন্তব্য
অনিকেত নন্দিনী
সমাজে এমন বেজন্মার সংখ্যা নেহাত কম নয় কিন্তু!
মাসুদ আলম
অতি সত্য বলেছেন আপনি। তবে আমার কি মনে হয় জানেন, এরা শুধু বেজন্মা নয়। সেইসাথে অবশ্যই পাগল। কারন আমার মতে একজন সুস্থ মস্তিস্কের, চিন্তাধারার ব্যক্তি এমন কাজ করতে পারে না।
ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন।
মেহেরী তাজ
আজ মন খারাপের দিন। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।
রোজ রাতে বের হন বুঝি? তবেগুলো চোখে পরতেই থাকবে। আপনার নৈশভ্রমন ভালো কাটুক……..
তানজির খান
ভাল হয়েছে মাসুদ আলম।
লীলাবতী
আপনি নতুন এখানে।একটি কথা বলি।আপনি অপেক্ষা করেন কোন পাঠক আপনার লেখা পড়ে মন্তব্য করলো কিনা, এরপরে আপনি তার জবাব দেন।এখন সবাই যদি আপনার মত অপেক্ষা করে তাহলে তো কেউ কারো লেখা পড়বেন না। নিজের লেখা পড়াতে হলে অন্যের লেখা পড়তে হবে।মন্তব্য করতে হবে।
মাসুদ আলম
হা, প্রায় রাতেই আমি বের হই। মন খারাপ না করে দিগুন উদ্যম এ আসুন ওই সব হতদরিদ্র মানুষদের পাশে দাড়াই। আর কিছু না পারলে একটু ভাল ব্যবহার তো করি।
ভাল থাকবেন মেহেরী তাজ। ধন্যবাদ।
মাসুদ আলম
ধন্যবাদ গুরু। তানজির খান
মাসুদ আলম
আসলে সবার প্রতিক্রিয়া জানার পর উত্তর দেই। তবে আপনার কথা আমি সাদরে গ্রহন করলাম। মনে থাকবে। ধন্যবাদ।
লীলাবতী
মোঃ মজিবর রহমান
হুম! আমরা সমাজের সেই নিকৃষ্ট মানুসে র একজন!!!!!
মাসুদ আলম
এভাবে ভাববেননা। কেউ অধম থে পারে, তা বলে আর কেও উত্তম হবে না???
ইমন
🙁
স্বপ্ন নীলা
খুবই কষ্ট পেলাম, এমন নিষ্ঠুর আর নির্দয় মানুষও সমাজে আছে !! ভাবতেই কষ্ট হয়, ওরা মানুষ নামের কলংক —
মাসুদ আলম
হা এমন মানুষ আছে। তাদের সং্খাই বেশি।
ভালো থাকবেন সপ্ননীলা।